জাতির পিতার জ্বালানি নীতি অনুসরণ করে দেশ উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে : প্রধানমন্ত্রী

137

ঢাকা, ৮ আগস্ট, ২০২০(বাসস) : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জাতির পিতার জ্বালানি নীতি অনুসরণ করে সরকার দেশকে উন্নয়নের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
তিনি বলেন ‘জাতির পিতার জ্বালানি নীতি অনুসরণ করে বর্তমান সরকার দেশের জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, নতুন নতুন জ্বালানির উৎস উদ্ভাবন, জ্বালানিসমৃদ্ধ দেশসহ আঞ্চলিক সহযোগিতা সম্প্রসারণের মাধ্যমে দেশকে উন্নয়নের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।’
শেখ হাসিনা আগামীকাল ৯ আগস্ট জাতীয় জ্বালানি নিরাপত্তা দিবস উপলক্ষে আজ দেয়া
এক বাণীতে একথা বলেন।
জ্বালানি নিরাপত্তা অর্জনে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক পদক্ষেপকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য ৯ আগস্ট ‘জাতীয় জ্বালানি নিরাপত্তা দিবস-২০২০’ পালন করার জন্য তিনি সংশ্লিষ্ট সবাইকে শুভেচ্ছা জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু ১৯৭৫ সালের ৯ আগস্ট তৎকালীন ব্রিটিশ তেল কোম্পানি শেল অয়েল-এর নিকট থেকে ৫টি গ্যাসক্ষেত্র নামমাত্র মূল্যে ক্রয় করে রাষ্ট্রীয় মালিকানায় হস্তান্তরের কার্যক্রম সম্পন্ন করেন। ফলে দেশের সম্পদের ওপর জনগণের ব্যবহারের অধিকার নিশ্চিত হয়। তাঁর এই দূরদর্শী সিদ্ধান্ত জাতীয় অর্থনীতিতে ইতিবাচক ও সুদূর প্রসারী প্রভাব ফেলেছে।
২০০৯ সালের জানুয়ারিতে গ্যাস উৎপাদনের পরিমাণ ছিল দৈনিক ১,৭৪৪ মিলিয়ন ঘনফুট উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের সরকারের সময়ে বিভিন্নমুখী উদ্যোগ গ্রহণ ও সফল বাস্তবায়নের ফলে দেশীয় উৎপাদিত গ্যাস ও আমদানিকৃত এলএনজিসহ বর্তমান সরকারের সময়ে গ্যাস সরবরাহ সক্ষমতা দৈনিক ৩,৭৫০ মিলিয়ন ঘনফুট পর্যন্ত উন্নীত হয়েছে। ফলে বিদ্যুৎ, ক্যাপটিভ পাওয়ার, সার, শিল্প, গৃহস্থালি, সিএনজি, ব্যবসা-বাণিজ্যে বর্ধিত হারে নিরবচ্ছিন্নভাবে গ্যাস সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে, যা সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে অব্যাহতভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে।’
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে সুন্দলপুর, শ্রীকাইল, রূপগঞ্জ ও ভোলা নর্থ নামে মোট ৪টি নতুন গ্যাসক্ষেত্র আবিস্কৃত হয়েছে। বাপেক্স এর সক্ষমতা বৃদ্ধিতে ৪টি আধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন রিগ ক্রয় ও ১টি রিগ পুনর্বাসন করাসহ অনুসন্ধান কার্যক্রম পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন যন্ত্রাংশ ক্রয় করা হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইনে গ্যাসের চাপ সমুন্নত রাখতে ৩টি গ্যাস কম্প্রেসর স্টেশন (মুচাই, আশুগঞ্জ ও এলেঙ্গা) স্থাপন করা হয়েছে। গ্যাস নেটওয়ার্ক রাজশাহীতে সম্প্রসারণ করা হয়েছে এবং বগুড়া-রংপুর-সৈয়দপুর পাইপলাইন নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ আমরা জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ২টি ভাসমান এলএনজি টার্মিনালের মাধ্যমে এলএনজি আমদানি করে গ্যাসের ঘাটতি পূরণসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করছি, যা জ্বালানি নিরাপত্তায় একটি মাইলফলক হয়ে থাকবে। ২০৪১ সাল পর্যন্ত গ্যাসের চাহিদার ওপর ভিত্তি করে মাতারবাড়িতে দৈনিক ১,০০০ ঘনফুট ক্ষমতার ১টি স্থলভিত্তিক এলএনজি টার্মিনাল স্থাপনের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে বলেও উরেøখ করেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘ইতোমধ্যে ভারত ও মিয়ানমারের সাথে সমুদ্র বিরোধ নিষ্পত্তির মাধ্যমে বঙ্গোপসাগরের বিশাল সমুদ্র এলাকায় গ্যাস ও তেল অনুসন্ধান এবং উৎপাদন কার্যক্রম হাতে নিয়েছি। বর্তমানে অগভীর সমুদ্রের ৩টি ব্লকে এবং গভীর সমুদ্রের ১টি ব্লকে ৫টি আন্তর্জাতিক তেল কোম্পানি একক ও যৌথভাবে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান কাজে নিয়োজিত রয়েছে। এছাড়া তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের লক্ষ্যে অনশোর ও অফশোরের জন্য আলাদা পিএসসি প্রণয়ন করাসহ আফশোরের জন্য বিডিং রাউন্ড আহ্বানের কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে।’
এসব উদ্যোগ বর্তমান সরকারের রূপকল্প অনুযায়ী বাংলাদেশকে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে পরিণত করার ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রাখবে আশা করে তিনি সবাইকে এসব উদ্যোগকে সমর্থন, শক্তিশালী ও বাস্তবায়ন করার আহবান জানান।।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২০২০ সাল আমাদের জন্য একটি তাৎপর্যপূর্ণ বছর। এ বছর আমরা জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী ‘মুজিববর্ষ) উদযাপন করছি। এই মহান নেতার জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষ্যে আমরা বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করি।
তবে প্রাণঘাতী মহামারী করোনাভাইরাসের কারণে পরিকল্পনা মাফিক অনুষ্ঠানসমূহ উদযাপন করতে পারছেন না উল্লেখ করে তিনি বলেন, জনগণের সার্বিক কল্যাণের কথা বিবেচনা করে জনসমাগম হয় এমন অনুষ্ঠান স্থগিত করা হয়েছে। টেলিভিশন, বেতার এবং ডিজিটাল মাধ্যমে কিছু কিছু অনুষ্ঠান আয়োজন করা হচ্ছে।’
প্রধানমন্ত্রী জাতীয় জ্বালানি নিরাপত্তা দিবস-২০২০ উপলক্ষে গৃহীত সকল কর্মসূচির সাফল্য কামনা করেন।