২৪ ঘন্টায় মারা গেছেন ২৮ জন, সুস্থ ২,১৭৬

430

ঢাকা, ৩১ জুলাই, ২০২০ (বাসস) : দেশে শনাক্তের ১৪৬তম দিনে গত ২৪ ঘন্টায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ২৮ জন মৃত্যুবরণ করেছেন। আর সুস্থ হয়েছেন ২ হাজার ১৭৬ জন।
গতকালের চেয়ে আজ ২০ জন কম মৃত্যুবরণ করেছেন। গতকাল ৪৮ জন মৃত্যুবরণ করেছিলেন। এখন পর্যন্ত দেশে এ ভাইরাসে মৃত্যুবরণ করেছেন মোট ৩ হাজার ১১১ জন। করোনা শনাক্তের বিবেচনায় আজ মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৩১ শতাংশ। আগের দিনও এই হার ছিল ১ দশমিক ৩১ শতাংশ।
আজ দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদফতরের করোনাভাইরাস সংক্রান্ত নিয়মিত অনলাইন হেলথ বুলেটিনে অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা এসব তথ্য জানান।
অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা জানান, করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে গত ২৪ ঘন্টায় হাসপাতাল এবং বাসায় মিলিয়ে সুস্থ হয়েছেন ২ হাজার ১৭৬ জন। গতকালের চেয়ে আজ ৪৯২ জন কম সুস্থ হয়েছেন। গতকাল সুস্থ হয়েছিলেন ২ হাজার ৬৬৮ জন। এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ১ লাখ ৩৫ হাজার ১৩৬ জন।
তিনি জানান, আজ শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৫৬ দশমিক ৮৬ শতাংশ। আগের দিন এই হার ছিল ৫৬ দশমিক ৬১ শতাংশ। আগের দিনের চেয়ে আজ সুস্থতার হার শূন্য দশমিক ২৫ শতাংশ বেশি।
অতিরিক্ত মহাপরিচালক জানান, গত ২৪ ঘন্টায় ১২ হাজার ৬১৪ জনের নমুনা পরীক্ষায় ২ হাজার ৭৭২ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। গতকালের চেয়ে আজ ৭৭ জন বেশি শনাক্ত হয়েছেন। গতকাল ১২ হাজার ৬৩৭ জনের নমুনা পরীক্ষায় শনাক্ত হয়েছিলেন ২ হাজার ৬৯৫ জন।
তিনি জানান, দেশে এ পর্যন্ত মোট ১১ লাখ ৭৬ হাজার ৮০৯ জনের নমুনা পরীক্ষায় ২ লাখ ৩৭ হাজার ৬৬১ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। মোট পরীক্ষার বিবেচনায় শনাক্তের হার ২০ দশমিক ২০ শতাংশ। গত ২৪ ঘন্টায় নমুনা পরীক্ষার বিবেচনায় শনাক্তের হার ২১ দশমিক ৯৮ শতাংশ। আগের দিন এ হার ছিল ২০ দশমিক ৮৩ শতাংশ। আগের দিনের চেয়ে আজ শনাক্তের হার ১ দশমিক ১৫ শতাংশ বেশি।
ডা. নাসিমা সুলতানা জানান, ‘করোনাভাইরাস শনাক্তে গত ২৪ ঘন্টায় নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে ১৩ হাজার ১৭০ জনের। আগের দিন সংগ্রহ করা হয়েছিল ১২ হাজার ৬৬৭ জনের। গতকালের চেয়ে আজ ৫০৩টি নমুনা বেশি সংগ্রহ করা হয়েছে। গত ২৪ ঘন্টায় দেশের ৮২টি পরীক্ষাগারে নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ১২ হাজার ৬১৪ জনের। আগের দিন নমুনা পরীক্ষা হয়েছিল ১২ হাজার ৯৩৭ জনের। গত ২৪ ঘন্টায় আগের দিনের চেয়ে ৩২৩টি কম নমুনা পরীক্ষা হয়েছে।
তিনি বলেন, মৃত্যুবরণকারীদের মধ্যে ২২ জন পুরুষ জন ও ৬ জন নারী। এখন পর্যন্ত ২ হাজার ৪৪৬ জন পুরুষ; ৭৮ দশমিক ৬২ শতাংশ এবং ৬৬৫ জন নারী করোনায় মারা গেছেন; ২১ দশমিক ৩৮ শতাংশ। ২৪ ঘণ্টায় ২৮ জনই হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেছেন।
নাসিমা সুলতানা বলেন, ২৪ ঘন্টায় মৃত্যুবরণকারীদের বয়স বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ৭১ থেকে ৮০ বছরের মধ্যে ৪ জন, ৬১ থেকে ৭০ বছরের মধ্যে ১০ জন, ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে ৭ জন, ৪১থেকে ৫০ বছরের মধ্যে ২ জন, ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে ৩ জন, ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে ২ জন। এ পর্যন্ত শূন্য থেকে ১০ বছরের মধ্যে মারা গেছেন ১৮ জন; যা শূন্য দশমিক ৫৮ শতাংশ; ১১ থেকে ২০ বছরের মধ্যে ৩০ জন; যা শূন্য দশমিক ৯৬ শতাংশ; ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে ৮৭ জন; যা ২ দশমিক ৮০ শতাংশ; ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে ২০৫ জন; যা ৬ দশমিক ৫৯ শতাংশ; ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে ৪৩৭ জন, যা ১৪ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ; ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে ৮৯৭ জন, যা ২৮ দশমিক ৮৩ শতাংশ এবং ষাটের অধিক ১ হাজার ৪৩৭ জন, যা ৪৬ দশমিক ১৯ শতাংশ।
তিনি বলেন, বিভাগভিত্তিক মৃত্যুবরণকারীদের মধ্যে ঢাকা বিভাগে ১৩ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৮ জন, খুলনা বিভাগে ২ জন, রাজশাহী ৩ জন, বরিশাল বিভাগে ১ জন, রংপুর বিভাগে ১ জন। এ পর্যন্ত বিভাগভিত্তিক মৃতের সংখ্যা এবং শতকরা হারে দেখা গেছে, ঢাকা বিভাগে ১ হাজার ৪৮৮ জন; যা ৪৭ দশমিক ৮৩ শতাংশ; চট্টগ্রাম বিভাগে ৭৫৯ জন, যা ২৪ দশমিক ৪০ শতাংশ; রাজশাহীতে ১৮৫ জন, যা ৫ দশমিক ৯৫ শতাংশ; খুলনা বিভাগে ২২১ জন, যা ৭ দশমিক ১০ শতাংশ; বরিশাল বিভাগে ১২২ জন, যা ৩ দশমিক ৯২ শতাংশ; সিলেট বিভাগে ১৫১ জন, যা ৪ দশমিক ৮৫ শতাংশ; রংপুর বিভাগে ১৭৮ জন, যা ৩ দশমিক ৭৯ শতাংশ এবং ময়মনসিংহ বিভাগে ৬৭ জন, যা ২ দশমিক ১৫ শতাংশ।
অতিরিক্ত মহাপরিচালক জানান, ‘ঢাকা মহানগরীতে কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালে সাধারণ শয্যায় ভর্তি রোগীর সংখ্যা ২ হাজার ৩৪ জন, আইসিইউ শয্যায় ভর্তি আছে ১৯৭ জন। চট্টগ্রাম মহানগরীতে সাধারণ শয্যায় ভর্তিকৃত রোগীর সংখ্যা ২৯৬ জন, আইসিইউ শয্যায় ভর্তি আছে ২১ জন। সারাদেশে অন্যান্য হাসপাতালে সাধারণ শয্যায় ভর্তিকৃত রোগীর সংখ্যা ১ হাজার ৪৬৭ জন এবং আইসিইউ শয্যায় ভর্তিকৃত রোগীর সংখ্যা ১১৩ জন। সারাদেশে হাসপাতালে সাধারণ শয্যা সংখ্যা ১৫ হাজার ২৪০টি, রোগী ভর্তি আছে ৩ হাজার ৭৯৭ জন এবং শয্যা খালি আছে ১১ হাজার ৪৪৩টি। সারাদেশে আইসিইউ শয্যা সংখ্যা ৫৫০টি, রোগী ভর্তি আছে ৩৩১ জন এবং খালি আছে ২২৫টি। সারাদেশে অক্সিজেন সিলিন্ডারের সংখ্যা ১২ হাজার ৩৫২টি। সারাদেশে হাই ফ্লো নেজাল ক্যানেলা সংখ্যা ৩১৭টি এবং অক্সিজেন কনসেনট্রেটর ১৫৭টি।
০১৩১৩-৭৯১১৩০, ০১৩১৩-৭৯১১৩৮, ০১৩১৩৭৯১১৩৯ এবং ০১৩১৩৭৯১১৪০ এই নম্বরগুলো থেকে হাসপাতালের সকল তথ্য পাওয়া যাবে। কোন হাসপাতালে কতটি শয্যা খালি আছে। কত রোগী ভর্তি ও কতজন ছাড় পেয়েছেন এবং আইসিইউ শয্যা খালি আছে কি না এই ফোন নম্বরগুলোতে ফোন করে জানা যাবে বলে তিনি জানান।
অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশনে রাখা হয়েছে ৭৫৯ জনকে। বর্তমানে আইসোলেশনে আছেন ১৮ হাজার ৩১০ জন। ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশন থেকে ছাড় পেয়েছেন ১ হাজার ১৭ জন, এখন পর্যন্ত ছাড় পেয়েছেন ৩২ হাজার ৪০০ জন। এখন পর্যন্ত আইসোলেশন করা হয়েছে ৫০ হাজার ৭১০ জনকে।
তিনি বলেন, প্রাতিষ্ঠানিক ও হোম কোয়ারেন্টিন মিলে ২৪ ঘণ্টায় কোয়ারেন্টিন করা হয়েছে ২ হাজার ৮৯ জন। এখন পর্যন্ত কোয়ারেন্টিন করা হয়েছে ৪ লাখ ৩৬ হাজার ৪৮৬ জনকে। কোয়ারেন্টিন থেকে গত ২৪ ঘণ্টায় ছাড় পেয়েছেন ২ হাজার ৬৯০ জন। এখন পর্যন্ত মোট ৩ লাখ ৭৯ হাজার ৬৬২ জন ছাড় পেয়েছেন। বর্তমানে মোট কোয়ারেন্টিনে আছেন ৫৬ হাজার ৮২৪ জন।
তিনি জানান, সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট পোর্টাল থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী কোভিড ১৯ বিষয়ক সুরক্ষা সামগ্রীর মধ্যে বিভিন্ন ক্যাটাগরির গ্লাভস ২৪ ঘন্টায় বিতরণ হয়েছে ২১ হাজার ৬৫৪টি, বিভিন্ন ক্যাটাগরি ও লেভেলের মাস্ক ২৪ ঘন্টায় বিতরণ হয়েছে ১ লাখ ৩৫ হাজার ১০৭টি, কাভার অল (পিপিই, গাউন, এপ্রোন, সুপ্রটেক্টর) ২৪ ঘন্টায় বিতরণ হয়েছে ৮ হাজার ৮৯২টি এবং ফেইসশিল্ড ও গগলস ২৪ ঘন্টায় বিতরণ হয়েছে ২ হাজার ১০৪টি।
অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা জানান, গত ২৪ ঘন্টায় স্বাস্থ্য বাতায়ন ১৬২৬৩ হটলাইন নম্বরে ফোন কল গ্রহণ করা হয়েছে ১০ হাজার ৫৭০টি, ৩৩৩ নম্বরে ২৪ ঘন্টায় ফোনকল গ্রহণ করা হয়েছে ৫৯ হাজার ২০৩টি এবং আইইডিসিআর’র হটলাইনে ফোন এসেছে গত ২৪ ঘন্টায় ৪৬৫টি। সব মিলিয়ে ২৪ ঘন্টায় ফোনকল গ্রহণ করা হয়েছে ৭০ হাজার ২৩৮টি। এ পর্যন্ত ফোন কলের সংখ্যা ১ কোটি ৭৯ লাখ ৩০ হাজার ৬৩৯টি। এখন থেকে আইইডিসিআর’র হটলাইন ১০৬৫৫ নম্বরটি খোলা থাকবে বাকি নম্বরগুলো বন্ধ থাকবে ।
অতিরিক্ত মহাপরিচালক জানান, করোনাভাইরাস চিকিৎসা বিষয়ে এ পর্যন্ত ১৬ হাজার ৪৯৮ জন চিকিৎসক অনলাইনে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন। এদের মধ্যে ৪ হাজার ২১৭ জন স্বাস্থ্য বাতায়ন ও আইইডিসিয়ার’র হটলাইনগুলোতে স্বেচ্ছাভিত্তিতে সপ্তাহে ৭ দিন ২৪ ঘন্টা জনগণকে চিকিৎসাসেবা ও পরামর্শ দিচ্ছেন। এছাড়া ২৪ ঘন্টায় কোভিড বিষয়ক টেলিমেডিসিন সেবা গ্রহণ করেছেন ৩ হাজার ৮৩২ জন। এ পর্যন্ত শুধু কোভিড বিষয়ে স্বাস্থ্য সেবা গ্রহণ করেছেন ১ লাখ ৫২ হাজার ১৩৯ জন। প্রতিদিন ৩৫ জন চিকিৎসক ও ১০ জন স্বাস্থ্য তথ্যকর্মকর্তা দুই শিফটে মোট ৯০ জন টেলিমেডিসিন সেবা দিয়ে যাচ্ছেন বলে তিনি জানান।
তিনি জানান, দেশের বিমানবন্দর, নৌ, সমুদ্রবন্দর ও স্থল বন্দর দিয়ে গত ২৪ ঘন্টায় ৩ হাজার ১৪৮ জনসহ সর্বমোট বাংলাদেশে আগত ৭ লাখ ৯৩ হাজার ৫৯২ জনকে স্কিনিং করা হয়েছে।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার পরিস্থিতি তুলে ধরে অতিরিক্ত মহাপরিচালক জানান, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ৩০ জুলাই পর্যন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী ২৪ ঘন্টায় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ৫৭ হাজার ৭৯৪ জন। এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ১৯ লাখ ৪৯ হাজার ৮৫০ জন। ২৪ ঘন্টায় মৃত্যুবরণ করেছেন ৮৮৪ জন এবং এ পর্যন্ত ৪৩ হাজার ১১৭ জন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ৩০ জুলাই পর্যন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী সারাবিশ্বে ২৪ ঘন্টায় করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ২ লাখ ৫৩ হাজার ৭৯৩ জন। এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ১ কোটি ১ কোটি ৬৮ লাখ ১২ হাজার ৭৫৫ জন। ২৪ ঘন্টায় মৃত্যুবরণ করেছেন ৫ হাজার ৯৯৯ জন এবং এ পর্যন্ত ৬ লাখ ৬২ হাজার ৯৫ জন বলে তিনি জানান।
করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে সবাইকে ঘরে থাকা, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, জনসমাগম এড়িয়ে চলা, সর্বদা মুখে মাস্ক পরে থাকা, সাবান পানি দিয়ে বারবার ২০ সেকেন্ড ধরে হাত ধোয়া, বাইরে গেলে হ্যান্ড গ্লাভস ব্যবহার, বেশি বেশি পানি ও তরল জাতীয় খাবার, ভিটামিন সি ও ডি সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া, ডিম, মাছ, মাংস, টাটকা ফলমূল ও সবজি খাওয়াসহ শরীরকে ফিট রাখতে নিয়মিত হালকা ব্যায়াম এবং স্বাস্থ্য অধিদফতর ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ-নির্দেশনা মেনে চলার অনুরোধ জানানো হয়।
ডা. নাসিমা সুলতানা বলেন, ধূমপান থেকে বিরত থাকতে হবে, কারণ তা অতিরিক্ত ঝুঁকি তৈরি করে।