শোকের মাসে আওয়ামী লীগের কর্মসূচি

630

ঢাকা, ৩০ জুলাই, ২০২০ (বাসস) : শোকের মাস আগস্ট শুরু হচ্ছে আগামী শনিবার। ১৯৭৫ সালের এই মাসের ১৫ আগস্ট মানবতার শত্রু প্রতিক্রিয়াশীল ঘাতকচক্র বাঙালি জাতির মুক্তি আন্দোলনের মহানায়ক, বিশ্বের লাঞ্ছিত-বঞ্চিত-নিপীড়িত মানুষের মহান নেতা, বাংলর হাজার বছরের আরাধ্য পুরুষ, বাঙালির নিরন্তন প্রেরণার উৎস, স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের স্থপতি, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করে।
এরপর থেকে এই দিনটি মানবসভ্যতার ইতিহাসে ঘৃণ্য ও নৃশংসতম হত্যাকান্ডের কালিমালিপ্ত বেদনাবিধুর শোকের দিন হিসেবে পরিচিত। তাই আগস্ট মাসকে আওয়ামী লীগসহ জাতি পালন করে শোকের মাস হিসেবে।
সেদিন ইতিহাসের নিষ্ঠুরতম এই হত্যাকা-ে বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিনী, মহিয়সী নারী বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, বঙ্গবন্ধুর একমাত্র ভ্রাতা শেখ আবু নাসের, জাতির পিতার জ্যেষ্ঠ পুত্র বীর মুক্তিযোদ্ধা ক্যাপ্টেন শেখ কামাল, দ্বিতীয় পুত্র বীর মুক্তিযোদ্ধা লেফটেন্যান্ট শেখ জামাল, কনিষ্ঠ পুত্র নিষ্পাপ শিশু শেখ রাসেল, নবপরিণীতা পুত্রবধূ সুলতানা কামাল ও রোজী জামাল, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক শেখ ফজলুল হক মণি ও তাঁর অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী বেগম আরজু মণি, স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম সংগঠক ও জাতির পিতার ভগ্নিপতি আব্দুর রব সেরনিয়াবাত, তাঁর ছোট মেয়ে বেবী সেরনিয়াবাত, কনিষ্ঠ পুত্র আরিফ সেরনিয়াবাত, দৌহিত্র সুকান্ত আব্দুল্লাহ বাবু, ভাইয়ের ছেলে শহীদ সেরনিয়াবাত, আব্দুল নঈম খান রিন্টু, বঙ্গবন্ধুর প্রধান নিরাপত্তা অফিসার কর্নেল জামিল উদ্দিন আহমেদ ও কর্তব্যরত অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারী নৃশংসভাবে নিহত হন।
প্রতিবারের ন্যায় এবারও শোকার্ত বাঙালি জাতির সাথে একাত্ম হয়ে আওয়ামী লীগ ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন উপলক্ষে কেন্দ্রীয়ভাবে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। করোনা মহামারীর সংক্রমণ রোধে যথাযথ স্বাস্থ্য সুরক্ষাবিধি মেনে মাসব্যাপী শোক দিবসের বিভিন্ন কর্মসূচি পালনের জন্য আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের নেতা-কর্মী সমর্থক এবং সকল সহযোগী, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠনসমূহের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
একইসাথে আওয়ামী লীগের সকল সাংগঠনিক জেলা, মহানগর, উপজেলা, পৌর, ইউনিয়ন, ওয়ার্ডসহ সমস্ত শাখার নেতৃবৃন্দকে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে গৃহীত কেন্দ্রীয় কর্মসূচির সাথে সঙ্গতি রেখে কর্মসূচি পালনের অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।
আগামীকাল ৩১ আগস্ট রাত ১২টা ১ মিনিটে ১ আগস্টের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর অভিমুখে আলোর মিছিলের মধ্য দিয়ে মাসব্যাপী কর্মসূচি শুরু করবে স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগ। ১ আগস্ট শনিবার বিকেলে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরের সামনে রক্তদান ও প্লজমা সংগ্রহ এবং মাসব্যাপী বৃক্ষরোপন কর্মসূচির শুরু করবে স্বেচ্ছাসেবকল লীগ। এই কর্মসূচির উদ্বোধন করবেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। এছাড়াও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ও উত্তর আওয়ামী লীগ ঈদুল আযহার নামাজের পর ১৫ আগস্টের নিহত সকল শহীদদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে দোয়ার আয়োজন করেছে।
এ ছাড়া ৫ আগস্ট সকাল ৯ টায় শহীদ শেখ কামালের জন্মদিন উপলক্ষে ধানমন্ডি আবহানী ক্লাব প্রাঙ্গনে এবং সকাল ১০ টায় বনানী কবর স্থানে শ্রদ্ধাঘ্য অর্পণ, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল এর আয়োজন করা হবে। আওয়ামী লীগ, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ সহ সহযোগী সংগঠন গুলো এই কর্মসূচিতে অংশ গ্রহণ করবে।
৬ আগস্ট মহিলা আওয়ামী লীগ বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের জন্মদিন উপলক্ষে ভাচ্যুয়াল আলোচনা সভার আয়োজন করছে। ৮ আগস্ট বঙ্গমাতা শহীদ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের জন্মদিন উপলক্ষে সকাল ১০ টায় তাঁর কবরে শ্রদ্ধার্ঘ্য অপর্ণ, কোরানখানি, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল এর আয়োজন করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ সহ সহযোগী সংগঠন গুলো এই কর্মসূচিতে অংশ গ্রহণ করবে। এছাড়া যুব মহিলা লীগ ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে মোমবাতি প্রজ্জলন এর কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
বঙ্গমাতা শহীদ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের জন্মদিন উপলক্ষে ৯ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আলোচনা সভার আয়োজন করেছে মৎস্যজীবী লীগ। বঙ্গমাতার জন্মদিন উপলক্ষে ১১ আগস্ট আলোচনা সভার আয়োজন করেছে স্বেচ্ছাসেবক লীগ। তবে এই অনুষ্ঠানের সময় এখনো নির্ধারণ করা হয়নি।
এদিকে শোক দিবস উপলক্ষে ১৩ থেকে ১৫ আগস্ট ৩ দিন ব্যাপী আলোকচিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে স্বেচ্ছাসেবক লীগ। শোক দিবস উপলক্ষে আওয়ামী যুবলীগ ১৪ আগস্ট বনানী কবরো স্থানে পবিত্র কোরআন খতম ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করেছে।
১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন উপলক্ষে প্রতিবারের মতো এবারও কেন্দ্রীয়ভাবে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। ১৫ আগস্টের কর্মসূচিতে আছে- সূর্যোদয় ক্ষণে বঙ্গবন্ধু ভবন এবং কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সারা দেশে সংগঠনের সব স্তরের কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ ও কালো পতাকা উত্তোলন। সকাল ৯ টায় ধানমন্ডি-৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ। এ ছাড়াও ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ, সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন এবং নগরীর প্রতিটি শাখা থেকে শোক মিছিলসহ বঙ্গবন্ধু ভবনে শ্রদ্ধা নিবেদন।
সকাল ১০ টায় বনানী কবরস্থানে ১৫ আগস্টের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন, কবর জিয়ারত, ফাতেহা পাঠ, মোনাজাত ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়া সকাল ১০টায় গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন, ফাতেহা পাঠ, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল।
বাদ জোহর দেশের সব মসজিদে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল। মন্দির, প্যাগোডা, গির্জা, উপাসনালয়ে বিশেষ প্রার্থনা। দুপুরে অসচ্ছল, এতিম ও দুস্থ মানুষের মাঝে খাদ্য বিতরণ। বাদ আসর মহিলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে মিলাদ ও দোয়া মাহফিল।
১৭ আগস্ট সারাদেশে সিরিজ বোমা হামলাকারীদের বিচারের দাবীতে মানববন্ধন কর্মসূচির আয়োজন করেছে বাংলাদেশ আওয়ামী স্বেচ্ছাসবেক লীগ। এছাড়াও সিরিজ বোমা হামলা দিবস উপলক্ষে ছাত্রলীগ সকল সাংগঠনিক ইউনিটে (শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছাড়া) যথাযথভাবে স্বাস্থ্য বিধি মেনে কালো পতাকা উত্তোলন ও ১ মিনিট নিরবতা পালন করবে।
১৮ আগস্ট শোক দিবস উপলক্ষ্যে ভার্চুয়াল সভার আয়োজন করেছে মহিলা আওয়ামী লীগ। শোক দিবস উপলক্ষে ২০ আগস্ট যুব মহিলা লীগ আলোচনা সভার আয়োজন করছে। এছাড়াও একই দিন ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ সকল শহীদের আত্মার মাগফেরাত কামনায় দোয়া মাহফিল দুঃস্থদের মাঝে খাবার বিতরণ কর্মসূচি গ্রহণ করছে যুব লীগ।
গ্রেনেড হামলা দিবস উপলক্ষে ২১ আগস্ট সকাল ১০টা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগসহ সহযোগী সংগঠনসমূহ কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
গ্রেনেড হামলা দিবস উপলক্ষে ২২ আগস্ট ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে আলোচনা সভার আয়োজন করেছে তাঁতী লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ।
২৪ আগস্ট নারী নেত্রী বেগম আইভী রহমানের স্মরণে বনানী কবরস্থানে শ্রদ্ধা নিবেদন, দোয়া ও মিলাদ মাহফিলে অংশগ্রহণ করবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগসহ সহযোগী সংগঠনসমূহ।
জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে ২৫ আগস্ট যুবলীগ, ২৬ আগস্ট জাতীয় শ্রমিক লীগ ও মহিলা আওয়ামী লীগ, ২৮ আগস্ট ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা দিবস উপলক্ষে যুব মহিলা লীগ আলোচনা সভার আয়োজন করবে।
২৯ আগস্ট ১৫ আগস্ট ও ২১ আগস্টের পলাতক আসামিদের দেশে ফেরত এনে বিচারের রায় কার্যকর করার দাবিতে মানববন্ধন (সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে) কর্মসূচির আয়োজন করবে মহিলা শ্রমিক লীগ। ৩০ আগস্ট ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ এবং ৩১ আগস্ট বাংলাদেশ ছাত্রলীগের শোক দিবসের আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে।