দেশে করোনা সংক্রমণের হার কমেছে, বেড়েছে সুস্থতা

454

ঢাকা, ৩০ জুলাই, ২০২০ (বাসস) : দেশে করোনাভাইরাস শনাক্তের ১৪৫তম দিনে ২৪ ঘন্টায় এই ভাইরাসে সংক্রমণের হার কমেছে, বেড়েছে সুস্থতার হার।
গত ২৪ ঘন্টায় ১২ হাজার ৯৩৭ জনের নমুনা পরীক্ষায় ২ হাজার ৬৯৫ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। গতকাল ১৪ হাজার ১২৭ জনের নমুনা পরীক্ষায় শনাক্ত হয়েছিলেন ৩ হাজার ৯ জন। গতকালের চেয়ে আজ ৩১৪ জন কম শনাক্ত হয়েছে। গত ২৪ ঘন্টায় নমুনা পরীক্ষার বিবেচনায় শনাক্তের হার ২০ দশমিক ৮৩ শতাংশ। আগের দিন এই হার ছিল ২১ দশমিক ৩০ শতাংশ। আগের দিনের চেয়ে আজ শনাক্তের হার দশমিক ৪৭ শতাংশ কম।
দেশে এ পর্যন্ত মোট ১১ লাখ ৬৪ হাজার ১৯৫ জনের নমুনা পরীক্ষায় ২ লাখ ৩৪ হাজার ৮৮৯ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। মোট পরীক্ষার বিবেচনায় শনাক্তের হার ২০ দশমিক ১৮ শতাংশ।
আজ দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদফতরের করোনাভাইরাস সংক্রান্ত নিয়মিত অনলাইন হেলথ বুলেটিনে অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা এসব তথ্য জানান।
অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা জানান, করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে গত ২৪ ঘন্টায় হাসপাতাল এবং বাসায় মিলিয়ে সুস্থ হয়েছেন ২ হাজার ৬৬৮ জন। এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ১ লাখ ৩২ হাজার ৯৬০ জন। আজ শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৫৬ দশমিক ৬১ শতাংশ। আগের দিন এই হার ছিল ৫৬ দশমিক ১১ শতাংশ। আগের দিনের চেয়ে আজ সুস্থতার হার দশমিক ৫ শতাংশ বেশি।
তিনি জানান, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘন্টায় ৪৭ জন মৃত্যুবরণ করেছেন। গতকালের চেয়ে আজ ১২ জন বেশি মৃত্যুবরণ করেছেন। গতকাল ৩৫ জন মৃত্যুবরণ করেছিলেন। এখন পর্যন্ত দেশে এ ভাইরাসে মৃত্যুবরণ করেছেন ৩ হাজার ৮৩ জন। শনাক্তের বিবেচনায় আজ মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৩১ শতাংশ। আগের দিনও এই হার ছিল ১ দশমিক ৩১ শতাংশ।
অতিরিক্ত মহাপরিচালক জানান, ‘করোনাভাইরাস শনাক্তে গত ২৪ ঘন্টায় নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে ১২ হাজার ৬৬৭ জনের। আগের দিন সংগ্রহ করা হয়েছিল ১৪ হাজার ২৫৩ জনের। গতকালের চেয়ে আজ ১ হাজার ৫৮৬টি নমুনা কম সংগ্রহ করা হয়েছে। গত ২৪ ঘন্টায় দেশের ৮২টি পরীক্ষাগারে নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ১২ হাজার ৯৩৭ জনের। আগের দিন নমুনা পরীক্ষা হয়েছিল ১৪ হাজার ১২৭ জনের। গত ২৪ ঘন্টায় আগের দিনের চেয়ে ১ হাজার ১৯০টি কম নমুনা পরীক্ষা হয়েছে।
তিনি জানান, মৃত্যুবরণকারীদের মধ্যে পুরুষ ৩৬ জন এবং নারী ১২ জন। এখন পর্যন্ত মোট পুরুষ মারা গেছেন ২ হাজার ৪২৪ জন, যা ৭৮ দশমিক ৬২ শতাংশ এবং নারী মারা গেছেন ৬৫৯ জন, যা ২১ দশমিক ৩৮ শতাংশ। ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে মারা গেছেন ৪১ জন এবং বাড়িতে মারা গেছেন ৭ জন।
ডা. নাসিমা সুলতানা বলেন, ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যুবরণকারীদের বয়স বিবেচনায় ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে ১ জন, ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে ৪ জন, ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে ১৪ জন, ৬১ থেকে ৭০ বছরের মধ্যে ১২ জন, ৭১ থেকে ৮০ বছরের মধ্যে ১১ জন, ৮১ থেকে ৯০ বছরের মধ্যে ৫ জন এবং ৯১ থেকে ১শ’ বছরের মধ্যে ১ জন রয়েছেন। এ পর্যন্ত শূন্য থেকে ১০ বছরের মধ্যে মারা গেছেন ১৮ জন; যা দশমিক ৫৮ শতাংশ; ১১ থেকে ২০ বছরের মধ্যে ৩০ জন; যা দশমিক ৯৭ শতাংশ; ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে ৮৫ জন; যা ২ দশমিক ৭৬ শতাংশ; ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে ২০২ জন; যা ৬ দশমিক ৫৫ শতাংশ; ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে ৪৩৫ জন, যা ১৪ দশমিক ১১ শতাংশ; ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে ৮৯০ জন, যা ২৮ দশমিক ৮৭ শতাংশ এবং ষাটের অধিক ১ হাজার ৪২৩ জন, যা ৪৬ দশমিক ১৬ শতাংশ।
তিনি জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় বিভাগভিত্তিক মৃতের সংখ্যা ঢাকা বিভাগে ১৭ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ১২ জন, খুলনা ও সিলেট বিভাগে ৫ জন করে, রাজশাহীতে ৩ জন এবং বরিশাল, রংপুর ও ময়মনসিংহ বিভাগে ২ জন করে রয়েছেন। এ পর্যন্ত বিভাগভিত্তিক মৃতের সংখ্যা শতকরা হারে দেখা গেছে, ঢাকা বিভাগে ১ হাজার ৪৭৫ জন; যা ৪৭ দশমিক ৮৪ শতাংশ; চট্টগ্রাম বিভাগে ৭৫১ জন, যা ২৪ দশমিক ৩৬ শতাংশ; রাজশাহীতে ১৮২ জন, যা ৫ দশমিক ৯০ শতাংশ; খুলনা বিভাগে ২১৯ জন, যা ৭ দশমিক ১০ শতাংশ; বরিশাল বিভাগে ১০২ জন, যা ৩ দশমিক ৯২ শতাংশ; সিলেট বিভাগে ১৫১ জন, যা ৪ দশমিক ৯০ শতাংশ; রংপুর বিভাগে ১৭৭ জন, যা ৩ দশমিক ৮০ শতাংশ এবং ময়মনসিংহ বিভাগে ৬৭ জন, যা ২ দশমিক ১৭ শতাংশ।
অতিরিক্ত মহাপরিচালক জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশনে যুক্ত হয়েছেন ৬৩৫ জন, আর ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশন থেকে ছাড় পেয়েছন ৭৩৬ জন। এ পর্যন্ত আইসোলেশনে গেছেন মোট ৪৯ হাজার ৯৫১ জন, ছাড় পেয়েছেন ৩১ হাজার ৩৮৩ জন। বর্তমানে আইসোলেশনে আছেন ১৮ হাজার ৫৬৮ জন।
তিনি জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় কোয়ারেন্টিনে গেছেন ২ হাজার ৪৫৩ জন, এ পর্যন্ত কোয়ারেন্টিনে গেছেন ৪ লাখ ৩৪ হাজার ৩৯৭ জন। ২৪ ঘণ্টায় কোয়ারেন্টিন থেকে ছাড় পেয়েছেন ২ হাজার ২৭২ জন। এখন পর্যন্ত ছাড় পেয়েছেন ৩ লাখ ৭৬ হাজার ৯৭২ জন। বর্তমানে কোয়ারেন্টিনে যুক্ত আছেন ৫৭ হাজার ৪২৫ জন।
অতিরিক্ত মহাপরিচালক জানান, ‘ঢাকা মহানগরীতে কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালে সাধারণ শয্যায় ভর্তি রোগীর সংখ্যা ২ হাজার ৮৪ জন, আইসিইউ শয্যায় ভর্তি আছে ১৯৩ জন। চট্টগ্রাম মহানগরীতে সাধারণ শয্যায় ভর্তিকৃত রোগীর সংখ্যা ৩৫০ জন, আইসিইউ শয্যায় ভর্তি আছে ২৪ জন। সারাদেশে অন্যান্য হাসপাতালে সাধারণ শয্যায় ভর্তিকৃত রোগীর সংখ্যা ১ হাজার ৫৩৭ জন এবং আইসিইউ শয্যায় ভর্তিকৃত রোগীর সংখ্যা ১০৬ জন। সারাদেশে হাসপাতালে সাধারণ শয্যা সংখ্যা ১৫ হাজার ২৪০টি, রোগী ভর্তি আছে ৩ হাজার ৯৭১ জন এবং শয্যা খালি আছে ১১ হাজার ২৬৯টি। সারাদেশে আইসিইউ শয্যা সংখ্যা ৫৪৯টি, রোগী ভর্তি আছে ৩২৩ জন এবং খালি আছে ২২৬টি। সারাদেশে অক্সিজেন সিলিন্ডারের সংখ্যা ১২ হাজার ৩৫২টি। সারাদেশে হাই ফ্লো নেজাল ক্যানেলা সংখ্যা ৩১৪টি এবং অক্সিজেন কনসেনট্রেটর ১৫৭টি।
০১৩১৩-৭৯১১৩০, ০১৩১৩-৭৯১১৩৮, ০১৩১৩৭৯১১৩৯ এবং ০১৩১৩৭৯১১৪০ এই নম্বরগুলো থেকে হাসপাতালের সকল তথ্য পাওয়া যাবে। কোন হাসপাতালে কতটি শয্যা খালি আছে। কত রোগী ভর্তি ও কতজন ছাড় পেয়েছেন এবং আইসিইউ শয্যা খালি আছে কি না এই ফোন নম্বরগুলোতে ফোন করে জানা যাবে বলে তিনি জানান।
তিনি জানান, সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট পোর্টাল থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী কোভিড ১৯ বিষয়ক সুরক্ষা সামগ্রীর মধ্যে বিভিন্ন ক্যাটাগরির গ্লাভস ২৪ ঘন্টায় বিতরণ হয়েছে ৮ হাজার ৭৫২টি, বিভিন্ন ক্যাটাগরি ও লেভেলের মাস্ক ২৪ ঘন্টায় বিতরণ হয়েছে ৭ হাজার ৭৪০টি, কাভার অল (পিপিই, গাউন, এপ্রোন, সুপ্রটেক্টর) ২৪ ঘন্টায় বিতরণ হয়েছে ৩ হাজার ৩টি এবং ফেইসশিল্ড ও গগলস ২৪ ঘন্টায় বিতরণ হয়েছে ৬৬৭টি।
অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা জানান, গত ২৪ ঘন্টায় স্বাস্থ্য বাতায়ন ১৬২৬৩ হটলাইন নম্বরে ফোনকল গ্রহণ করা হয়েছে ১১ হাজার ৪১৪টি, ৩৩৩ এই নম্বরে ২৪ ঘন্টায় ফোনকল গ্রহণ করা হয়েছে ৬২ হাজার ৪৭০টি এবং আইইডিসিআর’র হটলাইনে ফোন এসেছে গত ২৪ ঘন্টায় ৪৮৫টি। সব মিলিয়ে ২৪ ঘন্টায় ফোনকল গ্রহণ করা হয়েছে ৭৪ হাজার ৩৬৯টি।
অতিরিক্ত মহাপরিচালক জানান, করোনাভাইরাস চিকিৎসা বিষয়ে এ পর্যন্ত ১৬ হাজার ৪৯৮ জন চিকিৎসক অনলাইনে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন। এদের মধ্যে ৪ হাজার ২১৭ জন স্বাস্থ্য বাতায়ন ও আইইডিসিয়ার’র হটলাইনগুলোতে স্বেচ্ছাভিত্তিতে সপ্তাহে ৭ দিন ২৪ ঘন্টা জনগণকে চিকিৎসাসেবা ও পরামর্শ দিচ্ছেন। এছাড়া ২৪ ঘন্টায় কোভিড বিষয়ক টেলিমেডিসিন সেবা গ্রহণ করেছেন ৪ হাজার ৫৩১ জন। এ পর্যন্ত শুধু কোভিড বিষয়ে স্বাস্থ্য সেবা গ্রহণ করেছেন ১ লাখ ৪৮ হাজার ৩১৬ জন। প্রতিদিন ৩৫ জন চিকিৎসক ও ১০ জন স্বাস্থ্য তথ্যকর্মকর্তা দুই শিফটে মোট ৯০ জন টেলিমেডিসিন সেবা দিয়ে যাচ্ছেন বলে তিনি জানান।
তিনি জানান, দেশের বিমানবন্দর, নৌ, সমুদ্রবন্দর ও স্থলবন্দর দিয়ে গত ২৪ ঘন্টায় ২ হাজার ৭শ’ জনসহ সর্বমোট বাংলাদেশে আগত ৭ লাখ ৮৯ হাজার ৪৪৪ জনকে স্কিনিং করা হয়েছে।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার পরিস্থিতি তুলে ধরে অতিরিক্ত মহাপরিচালক জানান, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২৯ জুলাই পর্যন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী ২৪ ঘন্টায় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ৫৩ হাজার ৬৭৬ জন। এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ১৮ লাখ ৯২ হাজার ৫৬ জন। ২৪ ঘন্টায় মৃত্যুবরণ করেছেন ৮৬৭ জন এবং এ পর্যন্ত ৪২ হাজার ২৩৩ জন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২৯ জুলাই পর্যন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী সারাবিশ্বে ২৪ ঘন্টায় করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ২ লাখ ১৫ হাজার ১২৭ জন। এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ১ কোটি ৬৪ লাখ ৫৮ হাজার ২৮৯ জন। ২৪ ঘন্টায় মৃত্যুবরণ করেছেন ৫ হাজার ২৭৪ জন এবং এ পর্যন্ত ৬ লাখ ৫৬ হাজার ৯৩ জন বলে তিনি জানান।
করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে সবাইকে ঘরে থাকা, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, জনসমাগম এড়িয়ে চলা, সর্বদা মুখে মাস্ক পরে থাকা, সাবান পানি দিয়ে বারবার ২০ সেকেন্ড ধরে হাত ধোয়া, বাইরে গেলে হ্যান্ড গ্লাভস ব্যবহার, বেশি বেশি পানি ও তরল জাতীয় খাবার, ভিটামিন সি ও ডি সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া, ডিম, মাছ, মাংস, টাটকা ফলমূল ও সবজি খাওয়াসহ শরীরকে ফিট রাখতে নিয়মিত হালকা ব্যায়াম এবং স্বাস্থ্য অধিদফতর ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ-নির্দেশনা মেনে চলার অনুরোধ জানানো হয়।
ডা.নাসিমা সুলতানা বলেন, ধূমপান থেকে বিরত থাকতে হবে, কারণ তা অতিরিক্ত ঝুঁকি তৈরি করে।