বাজিস-৫ : বরিশালে ১ লাখ ১০ হাজার গৃহহীন মানুষকে পুনর্বাসন করেছে সরকার

116

বাজিস-৫
বরিশাল-আশ্রয়ণ-প্রকল্প
বরিশালে ১ লাখ ১০ হাজার গৃহহীন মানুষকে পুনর্বাসন করেছে সরকার
॥ শুভব্রত দত্ত ॥
বরিশাল, ২৭ জুলাই ২০২০ (বাসস) : প্রধানমন্ত্রী’র ১০টি বিশেষ উদ্যোগের মধ্যে অন্যতম ‘আশ্রয়ণ প্রকল্প’এর আওতায় বরিশালের প্রায় ১ লাখ ১০ হাজার গৃহহীন হতদরিদ্র মানুষকে গৃহ, জীবন-জীবিকার ব্যবস্থা ও পুনর্বাসন করেছে বর্তমান সরকার।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জেলার ৮টি উপজেলায় সর্বমোট ২৭টি আশ্রয়ণ প্রকল্প রয়েছে। এরমধ্যে সদর উপজেলায় ১টি, মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলায় ১৩টি, আগৈলঝাড়া উপজেলায় ১টি, হিজলা উপজেলায় ৫টি, বানারীপাড়া উপজেলায় ৪টি, মুলাদী উপজেলায় ১টি, উজিরপুর উপজেলায় ১টি এবং গৌরনদী উপজেলায় ১টি আশ্রয়ণ প্রকল্প রয়েছে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে ১ হাজার ৭’শ ২৮টি পরিবারের প্রায় ১ লাখ ১০ হাজার গৃহহীন হতদরিদ্র মানুষের গৃহ ও জীবিকার ব্যবস্থা করেছে সরকার। একই সাথে সরকার ২৭টি আশ্রয়ণ প্রকল্পকে বিদ্যুৎ সংযোগের আওতায় এনেছে।
এ প্রসঙ্গে আলাপকালে সদর উপজেলার চরকাউয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ চরকরঞ্জি গ্রামের আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা মোসামৎ শাহানাজ বেগম জানান, প্রকল্পের শুরু থেকেই ১০টি ব্যারাকে ১’শ পরিবার এখানে বসবাস করে আসছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ সহযোিগতায় বিনামূল্যে বিদ্যুৎ সংযোগ পেয়ে আঁধার পেরিয়ে এখন আলোর মুখ দেখতে পাচ্ছে এখানকার বাসিন্দারা।
আশ্রয়ণ প্রকল্পের অপর এক বাসিন্দা মো. আরিফুর রহমান বলেন, মাথার গোজার মতো একটি ঠাঁই দিয়েছে বর্তমান সরকার প্রধান। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায়, আর্থসামাজিক উন্নয়ন ও স্বনির্ভর হতে বিনা শর্তে ঋন প্রদান করছে। সরকারের এমন সহযোগিতায় আমরা আমাদের সন্তানদের লেখাপড়া করাতে পারছি। এছাড়াও আগের চেয়ে আমাদের অবস্থার উন্নতি হয়েছে।
এবিষয়ে জেলা সমবায় অফিসার মোঃ মিজানুর রহমান জানান, বর্তমান সরকার পুনর্বাসিত পরিবারগুলোর জন্য সম্ভাব্য ক্ষেত্রে কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণ, মসজিদ নির্মাণ, কবরস্থান, পুকুর ও গবাদিপশু প্রতিপালনের জন্য সাধারণ জমির ব্যবস্থা করে আসছে। পাশাপাশি সরকার পুনর্বাসিত পরিবারের সদস্যদের বিভিন্ন উৎপাদনমুখী ও আয়বর্ধক কর্মকান্ডের জন্য ব্যবহারিক ও কারিগরী প্রশিক্ষণ প্রদান এবং প্রশিক্ষণ শেষে তাদের মধ্যে ক্ষুদ্র ঋণ বিতরণ করেছে। এরমধ্যে ক্ষুদ্র ব্যবসা, রিক্সা ক্রয়, হাঁস-মুরগী পালন, গরু মোটাতাজা করন, দর্জি প্রশিক্ষণসহ অন্যান্য।
সমবায় অফিসার আরো জানান, প্রকল্প এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ, মা ও শিশুর স্বাস্থ্য পরিচর্যা নিশ্চিতকরনের লক্ষ্যে পরিবার পরিকল্পনা বিভাগ পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। প্রাথমিক শিক্ষার আওতায় স্কুলগামী সকল শিশুকে স্কুলে যাওয়া নিশ্চিত করা হয়েছে। পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা ও সু-স্বাস্থ্য নিশ্চিতকরনের লক্ষ্যে প্রকল্প এলাকাগুলোতে স্যানিটারি ল্যাট্রিন ও গোসলখানা নির্মাণ করা হয়েছে। প্রকল্পের সকল সুবিধাভোগীর জন্য শতভাগ স্যানিটেশন নিশ্চিত করার পাশাপাশি বিশুদ্ধ পানির জন্য গভীর ও অগভীর নলকূপ স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া প্রকল্প এলাকায় রাস্তাঘাট করে দেয়া হচ্ছে। আশ্রয়ণ প্রকল্পে পুনর্বাসিত সুবিধাভোগিরা আত্ম-কর্মসংস্থানের মাধ্যমে স্বনির্ভর হয়ে উঠছেন। যেসব ভিক্ষুক এ প্রকল্পের সহায়তা পেয়েছেন তারা বর্তমানে নিজের ভাগ্য পরিবর্তন করে নিজেদের সম্মানজনক পেশায় প্রতিষ্ঠিত করে গড়ে তুলেছেন।
এব্যাপারে জেলা প্রশাসক এস.এম অজিয়র রহমান বলেন, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ অগ্রাধিকার এ প্রকল্পের মাধ্যমে সুবিধাভোগীদের কেবল একটি করে ঘরই করে দেয়া হয়নি, পাশাপাশি পরিবারের সদস্যদের চাহিদা মতো কর্মমূখী প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। প্রশিক্ষণ শেষে পরিবার প্রতি ৩০ হাজার টাকা করে সুদমুক্ত ঋণ দেয়া হয়। এ ঋণ নিয়ে প্রকল্পের বাসিন্দারা আয়বর্ধক কর্মকান্ডে যুক্ত হয়ে নিজেদের ভাগ্যের পরিবর্তন করেন।
জেলা প্রশাসক বলেন, প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হলো ভূমিহীন, গৃহহীন ও ছিন্নমূল অসহায় মানুষের আবসন সুবিধা দেয়া। পাশাপাশি ঋণ ও প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদের জীবিকা নির্বাহ করতে নিজেদেরকে সক্ষম করে তুলবে। প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্নপ্রসূত এ প্রকল্প সারাদেশের গৃহহীন প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর পুনর্বাসনসহ দারিদ্র্য বিমোচনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে।
বাসস/সংবাদদাতা/১১৩০/নূসী