বরগুনায় পশুর হাটে শেষ সময়ের অপেক্ষা: কামাররা ব্যস্ত সময় পার করছেন

323

বরগুনা, ২৭ জুলাই, ২০২০ (বাসস): জেলায় পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে গত দুই সপ্তাহ ধরে পশু-হাটগুলো গবাদি পশুতে সয়লাব থাকলে ও বিক্রি ছিলো কম। প্রধান গবাদি পশুর হাটগুলোতে ক্রেতা-বিক্রেতারা শেষ সময়ের জন্য অপেক্ষা করছেন।
অন্যদিকে গত পনের দিন ধরেই ব্যস্ত সময় পার করছেন স্থানীয় কামার শালার কর্মীরা। কোরবানীর পশু জবাই ও কাটাকুটির জন্য দা, কুড়াল, চাকু, ছুরি চাপাতি তৈরী ও মেরামত কাজ সকলেই বেশ তাড়াতাড়ি সেরে রাখছেন।
প্রাণি সম্পদ দপ্তর সূত্র জানিয়েছে, কোরবানীর জন্য জেলায় ৬ উপজেলায় প্রতি বছর গড়ে ১৫ হাজার গবাদি পশু চাহিদা রয়েছে। স্থানীয় খামারগুলোর প্রস্তুত রাখা গরু, ছাগল ও মহিষসহ হাট-বাজারের বিক্রির জন্য এ বছর প্রায় দ্বিগুন পশু রয়েছে।
বালিয়াতলী গ্রামের গরু ব্যবসায়ী আবুল কাশেম জানিয়েছে, গরুর বাজার ক্রেতা শুন্য ছিলো। আটটি বলদ নিয়ে গত দু’ হাটে এসেছি একটিও বিক্রি করতে পারিনি।
জেলার সবচেয়ে বড় আমতলী গবাদি পশুর হাট পরিচালনাকারী আলাউদ্দিন মৃধা জানিয়েছেন, কোরবানীর গত হাটগুলোতে গরু বিক্রি হয়নি। এতে আমাদের অনেক লোকসান হচ্ছে। আমতলী গরু হাটের ইজারাদার ও ইউপি চেয়ারম্যান মোতাহার উদ্দিন মৃধা জানান, এলাকার পশুতে কোরবানীর চাহিদা পূরণ হয়ে অনেক পশু অবিক্রিত থেকে যাবে। করোনার কারণে এ বছর পশুর দাম গত বছরের তুলনায় কম থাকবে।
বরগুনার পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন জানিয়েছেন, সামাজিক ও স্বাস্থ্যবিধি মেনেই কোরবানী উপলক্ষে পশুর বাজারগুলোতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে। জাল টাকা সনাক্তকরন মেশিনসহ সাদা পোশাকে পুলিশ হাট-বাজারে কাজ করছে।
অন্যদিকে কোরবানীর পশু জবাই করার জন্য বড় ছুরি, চামড়া ছাড়ানোর বিভিন্ন মাপের চাকু, হাড় মাংস কাটার বড়-মাঝারি আকারের দা, ছ্যানা, চাপাতি, বিভিন্ন মাপের বটি ইত্যাদি তৈরীতে ব্যস্ত সময় পার করছেন বরগুনার কামারেরা। বিক্রির জন্য তৈরী করা এসব ধারালো সরঞ্জাম শোভা পাচ্ছে তাদের দোকানে দোকানে। তুলনামূলক বেশী দাম ও বিক্রির সুবাদে সারা বছরের মন্দাভাব পুষিয়ে নিচ্ছেন কামারেরা।
কোরবানীর ঈদে কামারদের ব্যাপক প্রস্তুতি থাকে। এবারও তার ব্যত্যয় হয়নি। আধুনিক প্রযুক্তির ছোঁয়ায় তৈরি যন্ত্রপাতির সঙ্গে টেক্কার ব্যাপারটি মাথায় রেখে কামাররা তাদের সর্বোচ্চ মেধা ও শ্রম দিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন। জেলার বাইরে থেকে কারিগররা এসে রাত-দিন কাজ করছেন। কামারশালায় তৈরি এসব সরঞ্জামাদিতে মান ও ডিজাইনে অনেকটা ভিন্নতা আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। এমনটাই জানিয়েছেন কামারেরা।
নতুন সরঞ্জামাদি তৈরী করানোর পাশাপাশি পুরাতনগুলোও মেরামত ও সংস্কারের কাজে ক্রেতারা ভিড় করছেন দোকানগুলোতে। ঈদের শেষ রজনী পর্যন্ত দা-বটি-ছুরি-চাকু বিক্রি করে বিক্রেতারা। স্থানীয় কামার জগদীশ কর্মকার জানান, বছরের অন্যান্য সময়ে তুলনায় কোরবানী ঈদের সময়ে দা, বটি, চাকু, ছুরি, চাপাতির চাহিদা অনেক বেড়ে যায়। কোরবানীর পশু জবাই ও কাটাকুটি থেকে শুরু করে রান্নার চ’ড়ান্ত প্রস্তুতির জন্য অনেকেই নতুনভাবে ধারাল সরঞ্জামাদি তৈরী করান আবার অনেকে পুরোনোগুলো মেরামত করিয়ে নেন। কোরবানী ঈদের চাহিদা সামাল দিতে আরও দু’ সপ্তাহ আগে থেকে তারা কাজ করে যাচ্ছেন। তালতলী বন্দরের সুশীল কর্মকার, হলদিয়া বাজারের উত্তম কর্মকার বলেন, দম ফেলার সময় নেই। এ মৌসুমটাই আয়ের প্রধান সময়।
বাজারঘুরে দেখা গেছে, বর্তমানে প্রতিটি বড় মাপের ছুরি ৪-৭শ টাকা, চামড়া ছাড়ানোর চাকু ২০-৭০ টাকা, বিভিন্ন মাপের দা ৩শ-১০০০টাকা, বটি ২-৪শ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে।
বরগুনার জেলা চেয়ারম্যান ও সাবেক এমপি মো. দেলোয়ার হোসেন জানান, অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছরে কামারদের ব্যবসা ভালো চলছে। ক্রেতা ও বিক্রেতাদের সুবিধার কথা মাথায় রেখে স্থায়ী, অস্থায়ী ও মৌসুমি কামারশালা স্থাপনের জন্য জেলা পরিষদ জায়গা নির্ধারণ করে দিয়েছে। প্রকৃত ক্রেতা ছাড়া যার-তার কাছে ধারলো সরঞ্জামাদি বিক্রি করার ক্ষেত্রে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বনের জন্য কামারদের (কর্মকার সমিতিকে) নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।