দেশে গত ২৪ ঘন্টায় মারা গেছেন ৫৪ জন, সুস্থ ১,৭৯২

415

ঢাকা, ২৬ জুলাই, ২০২০ (বাসস) : দেশে করোনাভাইরাস শনাক্তের ১৪১তম দিনে গত ২৪ ঘন্টায় এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ৫৪ জন মৃত্যুবরণ করেছেন। আর সুস্থ হয়েছেন ১ হাজার ৭৯২ জন।
গতকালের চেয়ে আজ ১৬ জন বেশি মৃত্যুবরণ করেছেন। গতকাল ৩৮ জন মৃত্যুবরণ করেছিলেন। এখন পর্যন্ত দেশে এ ভাইরাসে মৃত্যুবরণ করেছেন ২ হাজার ৯২৮ জন। করোনা শনাক্তের বিবেচনায় আজ মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৩১ শতাংশ। আগের দিন এই হার ছিল ১ দশমিক ৩০ শতাংশ। আগের দিনের চেয়ে আজ মৃত্যুর হার দশমিক ০১ শতাংশ বেশি।
আজ দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদফতরের করোনাভাইরাস সংক্রান্ত নিয়মিত অনলাইন হেলথ বুলেটিনে অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা এসব তথ্য জানান।
অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা জানান, করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে গত ২৪ ঘন্টায় হাসপাতাল এবং বাসায় মিলিয়ে সুস্থ হয়েছেন ১ হাজার ৭৯২ জন। গতকালের চেয়ে আজ ৬৭৮ জন বেশি সুস্থ হয়েছেন। গতকাল সুস্থ হয়েছিলেন ১ হাজার ১১৪ জন। এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ১ লাখ ২৩ হাজার ৮৮২ জন।
তিনি জানান, আজ শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৫৪ দশমিক ৪৪ শতাংশ। আগের দিন এই হার ছিল ৫৫ দশমিক ২০ শতাংশ। আগের দিনের চেয়ে আজ সুস্থতার হার দশমিক ৭৬ শতাংশ কম।
অতিরিক্ত মহাপরিচালক জানান, গত ২৪ ঘন্টায় ১০ হাজার ৭৮ জনের নমুনা পরীক্ষায় ২ হাজার ২৭৫ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। গতকালের চেয়ে আজ ২৪৫ জন কম শনাক্ত হয়েছেন। গতকাল ১০ হাজার ৪৪৬ জনের নমুনা পরীক্ষায় শনাক্ত হয়েছিলেন ২ হাজার ৫২০ জন।
তিনি জানান, দেশে এ পর্যন্ত মোট ১১ লাখ ১১ হাজার ৫৫৮ জনের নমুনা পরীক্ষায় ২ লাখ ২৩ হাজার ৪৫৩ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। মোট পরীক্ষার বিবেচনায় শনাক্তের হার ২০ দশমিক ১০ শতাংশ। গত ২৪ ঘন্টায় নমুনা পরীক্ষার বিবেচনায় শনাক্তের হার ২২ দশমিক ৫৭ শতাংশ। আগের দিন এ হার ছিল ২৪ দশমিক ১২ শতাংশ। আগের দিনের চেয়ে আজ শনাক্তের হার ১ দশমিক ৫৫ শতাংশ কম।
ডা. নাসিমা সুলতানা জানান, ‘করোনাভাইরাস শনাক্তে গত ২৪ ঘন্টায় নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে ১০ হাজার ৪৪১ জনের। আগের দিন সংগ্রহ করা হয়েছিল ৯ হাজার ৬১৫ জনের। গতকালের চেয়ে আজ ৮২৬টি নমুনা বেশি সংগ্রহ করা হয়েছে। গত ২৪ ঘন্টায় দ্বীপ জেলা ভোলায় নতুন আরেকটি পরীক্ষাগারসহ দেশের ৮১টি পরীক্ষাগারে নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ১০ হাজার ৭৮ জনের। আগের দিন নমুনা পরীক্ষা হয়েছিল ১০ হাজার ৪৪৬ জনের। গত ২৪ ঘন্টায় আগের দিনের চেয়ে ৩৬৮টি কম নমুনা পরীক্ষা হয়েছে।
তিনি জানান, মৃত্যুবরণকারীদের মধ্যে ৪০ জন পুরুষ এবং ১৪ জন নারী। এদের মধ্যে হাসপাতালে মারা গেছেন ৪৮ জন এবং বাসায় মৃত্যুবরণ করেছেন ৬ জন। এখন পর্যন্ত মৃত্যুবরণকারীদের মধ্যে পুরুষ ২ হাজার ৩০৬ জন; ৭৮ দশমিক ৭৬ শতাংশ এবং নারী ৬২২ জন; ২১ দশমিক ২৪ শতাংশ।
অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা জানান, ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যুবরণকারীদের বয়স বিশ্লেষণে দেখা যায়, ৮১ থেকে ৯০ বছরের মধ্যে ৩ জন, ৭১ থেকে ৮০ বছরের মধ্যে ৭ জন, ৬১ থেকে ৭০ বছরের মধ্যে ১৭ জন, ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে ১৫ জন, ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে ৮ জন, ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে ৩ জন এবং ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে ১ জন রয়েছেন। এ পর্যন্ত যারা মৃত্যুবরণ করেছেন তাদের মধ্যে শূন্য থেকে ১০ বছরের মধ্যে ১৮ জন, ১১ থেকে ২০ বছরের মধ্যে ৩০ জন, ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে ৮৩ জন, ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে ১৯৭ জন, ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে ৪১৫ জন, ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে ৮৫২ জন, এবং ষাটোর্ধ্ব ১ হাজার ৩৩৩ জন।
২৪ ঘণ্টায় মৃত্যুবরণকারীদের মধ্যে ঢাকা বিভাগে ১৯ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ১০ জন, রংপুর বিভাগে ৩ জন, বরিশাল বিভাগে ১ জন, রাজশাহী বিভাগে ৭ জন, সিলেট বিভাগে ৬ জন এবং খুলনা বিভাগে ৮ জন রয়েছেন। এ পর্যন্ত বিভাগওয়ারী মৃতের সংখ্যা ঢাকা বিভাগে ১ হাজার ৪০৮ জন; যা ৪৮ দশমিক ০৯ শতাংশ; চট্টগ্রাম বিভাগে ৭২১ জন, যা ২৪ দশমিক ৬২ শতাংশ; রাজশাহী বিভাগে ১৭৪ জন, যা ৫ দশমিক ৯৪ শতাংশ; খুলনা বিভাগে ২০৬ জন, যা ৭ দশমিক ০৪ শতাংশ; বরিশাল বিভাগে ১১০ জন, যা ৩ দশমিক ৭৪ শতাংশ; সিলেট বিভাগে ১৪০ জন, যা ৪ দশমিক ৭৮ শতাংশ; রংপুর বিভাগে ১০৮ জন, যা ৩ দশমিক ৬৯ শতাংশ এবং ময়মনসিংহ বিভাগে ৬২ জন, যা ২ দশমিক ০৮ শতাংশ।
তিনি জানান, ‘ঢাকা মহানগরীতে কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালে সাধারণ শয্যায় ভর্তি রোগীর সংখ্যা ২ হাজার ২১৯ জন, আইসিইউ শয্যায় ভর্তি আছে ১৭১ জন। চট্টগ্রাম মহানগরীতে সাধারণ শয্যায় ভর্তিকৃত রোগীর সংখ্যা ৩১৭ জন, আইসিইউ শয্যায় ভর্তি আছে ২১ জন। সারাদেশে অন্যান্য হাসপাতালে সাধারণ শয্যায় ভর্তিকৃত রোগীর সংখ্যা ১ হাজার ৭৯০ জন এবং আইসিইউ শয্যায় ভর্তিকৃত রোগীর সংখ্যা ৯৩ জন। সারাদেশে হাসপাতালে সাধারণ শয্যা সংখ্যা ১৫ হাজার ১৮২টি, রোগী ভর্তি আছে ৪ হাজার ৩২৬ জন এবং শয্যা খালি আছে ১০ হাজার ৮৫৬টি। সারাদেশে আইসিইউ শয্যা সংখ্যা ৫৩৩টি, রোগী ভর্তি আছে ২৮৫ জন এবং খালি আছে ২৪৮টি। সারাদেশে অক্সিজেন সিলিন্ডারের সংখ্যা ১২ হাজার ৩২৬টি। সারাদেশে হাই ফ্লো নেজাল ক্যানেলা সংখ্যা ৩০৫টি এবং অক্সিজেন কনসেনট্রেটর ১১২টি।
০১৩১৩-৭৯১১৩০, ০১৩১৩-৭৯১১৩৮, ০১৩১৩৭৯১১৩৯ এবং ০১৩১৩৭৯১১৪০ এই নম্বরগুলো থেকে হাসপাতালের সকল তথ্য পাওয়া যাবে। কোন হাসপাতালে কতটি শয্যা খালি আছে। কত রোগী ভর্তি ও কতজন ছাড় পেয়েছেন এবং আইসিইউ শয্যা খালি আছে কি না এই ফোন নম্বরগুলোতে ফোন করে জানা যাবে বলে তিনি জানান।
অতিরিক্ত মহাপরিচালক জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশনে রাখা হয়েছে ৬৬৭ জনকে। বর্তমানে আইসোলেশনে আছেন ১৯ হাজার ১৩২ জন। ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশন থেকে ছাড় পেয়েছেন ৭৩৭ জন, এখন পর্যন্ত ছাড় পেয়েছেন ২৮ হাজার ৯৪ জন। এখন পর্যন্ত আইসোলেশন করা হয়েছে ৪৭ হাজার ২২৬ জনকে।
তিনি জানান, প্রাতিষ্ঠানিক ও হোম কোয়ারেন্টিন মিলে ২৪ ঘণ্টায় কোয়ারেন্টিন করা হয়েছে ২ হাজার ৮৫ জনকে। এখন পর্যন্ত কোয়ারেন্টিন করা হয়েছে ৪ লাখ ২৫ হাজার ৫৪৬ জনকে। কোয়ারেন্টিন থেকে গত ২৪ ঘণ্টায় ছাড় পেয়েছেন ২ হাজার ৭৩৬ জন, এখন পর্যন্ত ছাড় পেয়েছেন ৩ লাখ ৬৬ হাজার ৭৪৬ জন। বর্তমানে মোট কোয়ারেন্টিনে আছেন ৫৮ হাজার ৭৯৯ জন।
অতিরিক্ত মহাপরিচালক জানান, সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট পোর্টাল থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী কোভিড ১৯ বিষয়ক সুরক্ষা সামগ্রীর মধ্যে বিভিন্ন ক্যাটাগরির গ্লাভস ২৪ ঘন্টায় বিতরণ হয়েছে ৭ হাজার ৫০৬টি, বিভিন্ন ক্যাটাগরি ও লেভেলের মাস্ক ২৪ ঘন্টায় বিতরণ হয়েছে ১০ হাজার ৯৫৬টি, কাভার অল (পিপিই, গাউন, এপ্রোন, সুপ্রটেক্টর) ২৪ ঘন্টায় বিতরণ হয়েছে ৩ হাজার ৬২৫টি।
ডা. নাসিমা সুলতানা জানান, গত ২৪ ঘন্টায় স্বাস্থ্য বাতায়ন ১৬২৬৩ হটলাইন নম্বরে ফোনকল গ্রহণ করা হয়েছে ১২ হাজার ৮২৩টি, ৩৩৩ এই নম্বরে ২৪ ঘন্টায় ফোনকল গ্রহণ করা হয়েছে ৬৪ হাজার ৩৬৪টি এবং আইইডিসিআর’র হটলাইনে ফোন এসেছে গত ২৪ ঘন্টায় ৯৬৬টি।
তিনি জানান, করোনাভাইরাস চিকিৎসা বিষয়ে এ পর্যন্ত ১৬ হাজার ৪৯৮ জন চিকিৎসক অনলাইনে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন। এদের মধ্যে ৪ হাজার ২১৭ জন স্বাস্থ্য বাতায়ন ও আইইডিসিয়ার’র হটলাইনগুলোতে স্বেচ্ছাভিত্তিতে সপ্তাহে ৭ দিন ২৪ ঘন্টা জনগণকে চিকিৎসাসেবা ও পরামর্শ দিচ্ছেন। এছাড়া ২৪ ঘন্টায় কোভিড বিষয়ক টেলিমেডিসিন সেবা গ্রহণ করেছেন ৪ হাজার ৬৮৬ জন। এ পর্যন্ত শুধু কোভিড বিষয়ে স্বাস্থ্য সেবা গ্রহণ করেছেন ১ লাখ ৩২ হাজার ৭৭১ জন। প্রতিদিন ৩৫ জন চিকিৎসক ও ১০ জন স্বাস্থ্য তথ্যকর্মকর্তা দুই শিফটে মোট ৯০ জন টেলিমেডিসিন সেবা দিয়ে যাচ্ছেন বলে তিনি জানান।
ডা.নাসিমা সুলতানা জানান, দেশের বিমানবন্দর, নৌ, সমুদ্রবন্দর ও স্থলবন্দর দিয়ে গত ২৪ ঘন্টায় ২ হাজার ৬৬৮ জনসহ সর্বমোট বাংলাদেশে আগত ৭ লাখ ৮০ হাজার ২২৬ জনকে স্কিনিং করা হয়েছে।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার পরিস্থিতি তুলে ধরে অতিরিক্ত মহাপরিচালক জানান, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২৫ জুলাই পর্যন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী ২৪ ঘন্টায় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ৫৩ হাজার ৪৩০ জন। এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ১৬ লাখ ৭৮ হাজার ৯৯৪ জন। গত ২৪ ঘন্টায় মৃত্যুবরণ করেছেন ৮৮২ জন এবং এ পর্যন্ত ৩৮ হাজার ৯৯৩ জন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২৫ জুলাই পর্যন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী সারাবিশ্বে ২৪ ঘন্টায় করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ২ লাখ ৮৪ হাজার ৮৩ জন। এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ১ কোটি ৫৫ লাখ ৮১ হাজার ৯ জন। ২৪ ঘন্টায় মৃত্যুবরণ করেছেন ৬ হাজার ২৭০ জন এবং এ পর্যন্ত ৬ লাখ ৩৫ হাজার ১৭৩ জন বলে তিনি জানান।
করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে সবাইকে ঘরে থাকা, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, জনসমাগম এড়িয়ে চলা, সর্বদা মুখে মাস্ক পরে থাকা, সাবান পানি দিয়ে বারবার ২০ সেকেন্ড ধরে হাত ধোয়া, বাইরে গেলে হ্যান্ড গ্লাভস ব্যবহার, বেশি বেশি পানি ও তরল জাতীয় খাবার, ভিটামিন সি ও ডি সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া, ডিম, মাছ, মাংস, টাটকা ফলমূল ও সবজি খাওয়াসহ শরীরকে ফিট রাখতে নিয়মিত হালকা ব্যায়াম এবং স্বাস্থ্য অধিদফতর ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ-নির্দেশনা মেনে চলার অনুরোধ জানানো হয়।
তিনি বলেন, ধূমপান থেকে বিরত থাকতে হবে, কারণ তা অতিরিক্ত ঝুঁকি তৈরি করে।