১১ লক্ষাধিক নমুনা পরীক্ষায় করোনা শনাক্ত ২,২১,১৭৮

427

ঢাকা, ২৫ জুলাই, ২০২০ (বাসস) : দেশে করোনাভাইরাস শনাক্তের ১৪০তম দিন পর্যন্ত ১১ লাখ ১ হাজার ৪৮০ জনের নমুনা পরীক্ষায় ২ লাখ ২১ হাজার ১৭৮ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে।
মোট পরীক্ষার বিবেচনায় শনাক্তের হার ২০ দশমিক ০৮ শতাংশ।
আজ দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদফতরের করোনাভাইরাস সংক্রান্ত নিয়মিত অনলাইন হেলথ বুলেটিনে অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা এসব তথ্য জানান।
অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা জানান, গত ২৪ ঘন্টায় ১০ হাজার ৪৪৬ জনের নমুনা পরীক্ষায় ২ হাজার ৫২০ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। গতকালের চেয়ে আজ ২৮ জন কম শনাক্ত হয়েছেন। গতকাল ১২ হাজার ২৭ জনের নমুনা পরীক্ষায় শনাক্ত হয়েছিলেন ২ হাজার ৫৪৮ জন।
তিনি জানান, গত ২৪ ঘন্টায় নমুনা পরীক্ষার বিবেচনায় শনাক্তের হার ২৪ দশমিক ১২ শতাংশ। আগের দিন এ হার ছিল ২১ দশমিক ১৯ শতাংশ। আগের দিনের চেয়ে আজ শনাক্তের হার ২ দশমিক ৯৩ শতাংশ বেশি।
ডা. নাসিমা সুলতানা জানান, গত ২৪ ঘন্টায় এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ৩৮ জন মৃত্যুবরণ করেছেন। গতকালের চেয়ে আজ ৩ জন বেশি মৃত্যুবরণ করেছেন। গতকাল ৩৫ জন মৃত্যুবরণ করেছিলেন। এখন পর্যন্ত দেশে এ ভাইরাসে মৃত্যুবরণ করেছেন ২ হাজার ৮৭৪ জন। করোনা শনাক্তের বিবেচনায় আজ মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৩০ শতাংশ। আগের দিনও এই হার ছিল ১ দশমিক ৩০ শতাংশ।
অতিরিক্ত মহাপরিচালক জানান, করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে গত ২৪ ঘন্টায় হাসপাতাল এবং বাসায় মিলিয়ে সুস্থ হয়েছেন ১ হাজার ১১৪ জন। গতকালের চেয়ে আজ ৬৫৪ জন কম সুস্থ হয়েছেন। গতকাল সুস্থ হয়েছিলেন ১ হাজার ৭৬৮ জন। এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ১ লাখ ২২ হাজার ৯০ জন।
তিনি জানান, আজ শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৫৫ দশমিক ২০ শতাংশ। আগের দিন এই হার ছিল ৫৫ দশমিক ৩৩ শতাংশ। আগের দিনের চেয়ে আজ সুস্থতার হার দশমিক ১৩ শতাংশ কম।
ডা. নাসিমা সুলতানা জানান, ‘করোনাভাইরাস শনাক্তে গত ২৪ ঘন্টায় নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে ৯ হাজার ৬১৫ জনের। আগের দিন সংগ্রহ করা হয়েছিল ১২ হাজার ৩৬১ জনের। গতকালের চেয়ে আজ ২ হাজার ৭৪৬টি নমুনা কম সংগ্রহ করা হয়েছে। গত ২৪ ঘন্টায় দেশের ৮০টি পরীক্ষাগারে নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ১০ হাজার ৪৪৬ জনের। আগের দিন নমুনা পরীক্ষা হয়েছিল ১২ হাজার ২৭ জনের। গত ২৪ ঘন্টায় আগের দিনের চেয়ে ১ হাজার ৫৮১টি কম নমুনা পরীক্ষা হয়েছে।
তিনি জানান, মৃত্যুবরণকারীদের মধ্যে ২৯ জন পুরুষ এবং ৯ জন নারী। এদের মধ্যে হাসপাতালে মারা গেছেন ৩৪ জন, বাসায় মৃত্যুবরণ করেছেন ৩ জন এবং মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়েছে ১ জনকে। এখন পর্যন্ত মৃত্যুবরণকারীদের মধ্যে পুরুষ ২ হাজার ২৬৬ জন; ৭৮ দশমিক ৮৪ শতাংশ এবং নারী ৬০৮ জন; ২১ দশমিক ১৬ শতাংশ।
অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা বলেন, ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়াদের বয়স বিশ্লেষণে দেখা যায়, ১শ’ বছরের ওপরে ১ জন, ৮১ থেকে ৯০ বছরের মধ্যে ৪ জন, ৭১ থেকে ৮০ বছরের মধ্যে ৯ জন, ৬১ থেকে ৭০ বছরের মধ্যে ৮ জন, ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে ৭ জন, ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে ৬ জন এবং ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে ৩ জন রয়েছেন। এ পর্যন্ত যারা মৃত্যুবরণ করেছেন তাদের মধ্যে শূন্য থেকে ১০ বছরের মধ্যে ১৮ জন; দশমিক ৬৩ শতাংশ, ১১ থেকে ২০ বছরের মধ্যে ৩০ জন; ১ দশমিক ০৪ শতাংশ, ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে ৮২ জন; ২ দশমিক ৮৫ শতাংশ, ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে ১৯৪ জন; ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ, ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে ৪০৭ জন; ১৪ দশমিক ১৬ শতাংশ, ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে ৮৩৭; ২৯ দশমিক ১২ শতাংশ এবং ষাটোর্ধ্ব ১ হাজার ৩০৬ জন; ৪৫ দশমিক ৪৪ শতাংশ।
তিনি জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যুবরণকারীদের মধ্যে ঢাকা বিভাগে ১৭ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৪ জন, রংপুর বিভাগে ১ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ৩ জন, রাজশাহী বিভাগে ৮ জন, সিলেট বিভাগে ১ জন এবং খুলনা বিভাগে ৪ জন রয়েছেন। এ পর্যন্ত বিভাগওয়ারী মৃতের সংখ্যা ঢাকা বিভাগে ১ হাজার ৩৮৯ জন; যা ৪৮ দশমিক ৩৩ শতাংশ; চট্টগ্রাম বিভাগে ৭৭১ জন, যা ২৪ দশমিক ৪৭ শতাংশ; রাজশাহী বিভাগে ১৬৭ জন, যা ৫ দশমিক ৮১ শতাংশ; খুলনা বিভাগে ১৯৮ জন, যা ৬ দশমিক ৮৯ শতাংশ; বরিশাল বিভাগে ১০৯ জন, যা ৩ দশমিক ৭৯ শতাংশ; সিলেট বিভাগে ১৩৪ জন, যা ৪ দশমিক ৪৪ শতাংশ; রংপুর বিভাগে ১০৫ জন, যা ৩ দশমিক ৬৫ শতাংশ এবং ময়মনসিংহ বিভাগে ৬১ জন, যা ২ দশমিক ১২ শতাংশ।
তিনি জানান, ‘ঢাকা মহানগরীতে কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালে সাধারণ শয্যায় ভর্তি রোগীর সংখ্যা ২ হাজার ১০৭ জন, আইসিইউ শয্যায় ভর্তি আছে ১৭১ জন। চট্টগ্রাম মহানগরীতে সাধারণ শয্যায় ভর্তিকৃত রোগীর সংখ্যা ৩৩১ জন, আইসিইউ শয্যায় ভর্তি আছে ২২ জন। সারাদেশে অন্যান্য হাসপাতালে সাধারণ শয্যায় ভর্তিকৃত রোগীর সংখ্যা ১ হাজার ৮১১ জন এবং আইসিইউ শয্যায় ভর্তিকৃত রোগীর সংখ্যা ৯০ জন। সারাদেশে হাসপাতালে সাধারণ শয্যা সংখ্যা ১৫ হাজার ১৮২টি, রোগী ভর্তি আছে ৪ হাজার ৩০২ জন এবং শয্যা খালি আছে ১০ হাজার ৮৮০টি। সারাদেশে আইসিইউ শয্যা সংখ্যা ৫৩৩টি, রোগী ভর্তি আছে ২৮৩ জন এবং খালি আছে ২৫০টি। সারাদেশে অক্সিজেন সিলিন্ডারের সংখ্যা ১২ হাজার ৩২৬টি। সারাদেশে হাই ফ্লো নেজাল ক্যানেলা সংখ্যা ৩০৫টি এবং অক্সিজেন কনসেনট্রেটর ১১২টি।
০১৩১৩-৭৯১১৩০, ০১৩১৩-৭৯১১৩৮, ০১৩১৩৭৯১১৩৯ এবং ০১৩১৩৭৯১১৪০ এই নম্বরগুলো থেকে হাসপাতালের সকল তথ্য পাওয়া যাবে। কোন হাসপাতালে কতটি শয্যা খালি আছে। কত রোগী ভর্তি ও কতজন ছাড় পেয়েছেন এবং আইসিইউ শয্যা খালি আছে কি না এই ফোন নম্বরগুলোতে ফোন করে জানা যাবে বলে তিনি জানান।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশনে রাখা হয়েছে ৬৪৯ জনকে। বর্তমানে আইসোলেশনে আছেন ১৯ হাজার ২০২ জন। ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশন থেকে ছাড় পেয়েছেন ৪১৭ জন, এখন পর্যন্ত ছাড় পেয়েছেন ২৭ হাজার ৩৫৭ জন। এখন পর্যন্ত আইসোলেশন করা হয়েছে ৪৬ হাজার ৫৫৯ জনকে।
তিনি জানান, প্রাতিষ্ঠানিক ও হোম কোয়ারেন্টিন মিলে ২৪ ঘণ্টায় কোয়ারেন্টিন করা হয়েছে ১ হাজার ৭০৯ জনকে। এখন পর্যন্ত কোয়ারেন্টিন করা হয়েছে ৪ লাখ ২৩ হাজার ৪৬১ জনকে। কোয়ারেন্টিন থেকে গত ২৪ ঘণ্টায় ছাড় পেয়েছেন ১ হাজার ৭৮৯ জন, এখন পর্যন্ত ছাড় পেয়েছেন ৩ লাখ ৬৪ হাজার ১১ জন। বর্তমানে মোট কোয়ারেন্টিনে আছেন ৫৯ হাজার ৪৫০ জন।
অতিরিক্ত মহাপরিচালক জানান, সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট পোর্টাল থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী কোভিড ১৯ বিষয়ক সুরক্ষা সামগ্রীর মধ্যে বিভিন্ন ক্যাটাগরির গ্লাভস ২৪ ঘন্টায় বিতরণ হয়েছে ৩ হাজার ৬৬৩টি, বিভিন্ন ক্যাটাগরি ও লেভেলের মাস্ক ২৪ ঘন্টায় বিতরণ হয়েছে ১ হাজার ৮২৯টি, কাভার অল (পিপিই, গাউন, এপ্রোন, সুপ্রটেক্টর) ২৪ ঘন্টায় বিতরণ হয়েছে ১ হাজার ৫টি এবং ফেইসশিল্ড ও গগলস ২৪ ঘন্টায় বিতরণ হয়েছে ৯১৯টি।
ডা. নাসিমা সুলতানা জানান, গত ২৪ ঘন্টায় স্বাস্থ্য বাতায়ন ১৬২৬৩ হটলাইন নম্বরে ফোনকল গ্রহণ করা হয়েছে ১৪ হাজার ১২টি এবং এ পর্যন্ত ৭৪ লাখ ২৯ হাজার ৩৩৪টি। ৩৩৩ এই নম্বরে ২৪ ঘন্টায় ফোনকল গ্রহণ করা হয়েছে ৬৬ হাজার ২৮০টি এবং এ পর্যন্ত ৯৭ লাখ ৪০ হাজার ৮৯৬টি। আইইডিসিআর’র হটলাইনে ফোন এসেছে গত ২৪ ঘন্টায় ৮৪২টি এবং এ পর্যন্ত মোট ফোনকল গ্রহণ করা হয়েছে ৩ লাখ ৪ হাজার ৭৫৭টি। সবগুলো মিলিয়ে ২৪ ঘন্টায় ফোনকল গ্রহণ করা হয়েছে ৮১ হাজার ১৩৪টি এবং এ পর্যন্ত ফোনকল সংখ্যা ১ কোটি ৭৪ লাখ ৭৪ হাজার ৬৮৭টি।
তিনি জানান, করোনাভাইরাস চিকিৎসা বিষয়ে এ পর্যন্ত ১৬ হাজার ৪৯৮ জন চিকিৎসক অনলাইনে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন। এদের মধ্যে ৪ হাজার ২১৭ জন স্বাস্থ্য বাতায়ন ও আইইডিসিয়ার’র হটলাইনগুলোতে স্বেচ্ছাভিত্তিতে সপ্তাহে ৭ দিন ২৪ ঘন্টা জনগণকে চিকিৎসাসেবা ও পরামর্শ দিচ্ছেন। এছাড়া ২৪ ঘন্টায় কোভিড বিষয়ক টেলিমেডিসিন সেবা গ্রহণ করেছেন ৪ হাজার ৫১০ জন। এ পর্যন্ত শুধু কোভিড বিষয়ে স্বাস্থ্য সেবা গ্রহণ করেছেন ১ লাখ ২৫ হাজার ৮৫ জন। প্রতিদিন ৩৫ জন চিকিৎসক ও ১০ জন স্বাস্থ্য তথ্যকর্মকর্তা দুই শিফটে মোট ৯০ জন টেলিমেডিসিন সেবা দিয়ে যাচ্ছেন বলে তিনি জানান।
ডা. নাসিমা সুলতানা জানান, দেশের বিমানবন্দর, নৌ, সমুদ্রবন্দর ও স্থলবন্দর দিয়ে গত ২৪ ঘন্টায় ১ হাজার ৫৮৬ জনসহ সর্বমোট বাংলাদেশে আগত ৭ লাখ ৭৭ হাজার ৫৫৮ জনকে স্কিনিং করা হয়েছে।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার পরিস্থিতি তুলে ধরে অতিরিক্ত মহাপরিচালক জানান, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২৪ জুলাই পর্যন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী ২৪ ঘন্টায় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ৫৪ হাজার ২৪৭ জন। এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ১৬ লাখ ২৫ হাজার ৫৬৪ জন। ২৪ ঘন্টায় মৃত্যুবরণ করেছেন ৯০৮ জন এবং এ পর্যন্ত ৩৮ হাজার ১১১ জন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২৪ জুলাই পর্যন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী সারাবিশ্বে ২৪ ঘন্টায় করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ২ লাখ ৮৪ হাজার ১৯৬ জন। এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ১ কোটি ৫২ লাখ ৯৬ হাজার ৯২৬ জন। ২৪ ঘন্টায় মৃত্যুবরণ করেছেন ৯ হাজার ৭৫৩ জন এবং এ পর্যন্ত ৬ লাখ ২৮ হাজার ৯০৩ জন বলে তিনি জানান।
করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে সবাইকে ঘরে থাকা, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, জনসমাগম এড়িয়ে চলা, সর্বদা মুখে মাস্ক পরে থাকা, সাবান পানি দিয়ে বারবার ২০ সেকেন্ড ধরে হাত ধোয়া, বাইরে গেলে হ্যান্ড গ্লাভস ব্যবহার, বেশি বেশি পানি ও তরল জাতীয় খাবার, ভিটামিন সি ও ডি সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া, ডিম, মাছ, মাংস, টাটকা ফলমূল ও সবজি খাওয়াসহ শরীরকে ফিট রাখতে নিয়মিত হালকা ব্যায়াম এবং স্বাস্থ্য অধিদফতর ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ-নির্দেশনা মেনে চলার অনুরোধ জানানো হয়।
তিনি বলেন, ধূমপান থেকে বিরত থাকতে হবে, কারণ তা অতিরিক্ত ঝুঁকি তৈরি করে।