এ্যানফিল্ডে শিরোপা উদযাপন করলো লিভারপুল

262

লন্ডন, ২৩ জুলাই ২০২০ (বাসস) : ঘরের মাঠ এ্যানফিল্ডে শিরোপা জয় উদযপানের অর্থ হচ্ছে পুরো বিশ্বটাই তার হাতে মুঠোয়, লিভারপুলের গর্বিত ম্যানেজার জার্গেন ক্লপ গতকাল প্রিমিয়ার লিগে চেলসিকে ৫-৩ গোলে উড়িয়ে দিয়ে শিরোপার স্বাদ উপভোগের পর এই মন্তব্য করেছেন। যদিও করোনাভাইরাসের কারনে এই জয় উদযাপনে সামিল হতে পারেনি লিভারপুলের হাজার হাজার সমর্থক।
গত মাসেই অবশ্য রেডসের ৩০ বছরের শিরোপা খরা দুর নিশ্চিত হয়েছিল। বাকি ছিল শুধু আনুষ্ঠানিকতার। ঘরের মাঠে মৌসুমের শেষ ম্যাচে সেই আনন্দ উল্লাসের অপেক্ষা যেন আর শেষ হচ্ছিল না। ব্লুজদের আতিথেয়তা দেবার ম্যাচটিতে সেই আনন্দ উদযাপন করার সুযোগটি কাজে হাতছাড়া করতে চায়নি ক্লপ শিষ্যরা। নাটকীয় ম্যাচে দুর্দান্ত লিভারপুলকে আটকানোর সাধ্য ছিল না ফ্রাংক ল্যাম্পার্ডের শিষ্যদের। বারবার পিছিয়ে পড়েও ম্যাচে ফিরে আসার ইঙ্গিত ঠিকই দিয়েছিল চেলসি। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি।
ম্যাচ শেষে ক্লপ বলেছেন, ‘তোমাকে সব সময়ই সেরাটা দিতে হবে, যা তুমি পার। আজ আমাদের পরিবারকে এই ম্যাচ উপভোগের অনুমতি দেয়া হয়েছিল। এর অর্থ হচ্ছে পুরো পৃথিবীটাই আমার সাথে ছিল। সবকিছুই আরো ভাল হতে পারতো যদি সমর্থকরা সাথে থাকতো। কিন্তু আমরা সবাই জানি এই মুহূর্তে এটা অসম্ভব। কয়েক মাস আগে আমার তো মনে হয়েছির ফুটবল খেলাটাই অসম্ভব হয়ে যাবে। সত্যি কথা বলতে কি স্টেডিয়াম ভর্তি দর্শক থাকলে আমি আরো বেশী খুশী হতাম। কিন্তু পরিস্থিতি তো আমরা পরিবর্তন করতে পারবো না। আমরা শুধু একটা কাজই করার চেষ্টা করতে পারি, সমর্থকদের বোঝাতে পারি তাদের জন্যই আজ এই অর্জন। এটা সত্যিই একটি অসাধারণ মুহূর্ত।’
সমর্থকদের এই আয়োজনে থাকার অনুমতি না মিললেও লিভারপুলের হাতে শেষ পর্যন্ত প্রথমবারের মত প্রিমিয়ার লিগের শিরোপা উঠেছে। ম্যাচ শুরুর আগে স্টেডিয়াম ঘিড়ে অবশ্য সমর্থকদের ছোট ছোট জমায়েত লক্ষ্য করা গেছে। দ্বিতীয়ার্ধে স্টেডিয়ামের বাইরে একটু পরপরই আতশ বাজির আওয়াজে পুরো এ্যানফিল্ড এরিনা উৎসবের আমেজে পরিণত হয়েছিল।
মাঠের লড়াইয়ের শেষ ম্যাচটিকে স্মরণীয় করে রাখতে কোন কার্পণ্য করেনি রেডসরা। বিশেষ করে শিরোপা নিশ্চিতের পর পাঁচ ম্যাচে মাত্র দুটি জয় তুলে নেয়ায় লিভারপুলের কাছে অন্তত একটি ইতিবাচক ফলাফল দিয়ে শেষটা দেখতে চেয়েছিল সমর্থকরা। জার্মান ক্লপ আরো একবার তার ভক্ত-সমর্থকদের হতাশ করেননি। করোনার সংকট পুরোপুরি কাটিয়ে সার্বিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেই সমর্থকদের নিয়ে ঐতিহ্যবাহী প্যারেডের প্রতিশ্রুতি আগেই দিয়ে রেখেছিলেন ক্লপ। এ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘সবাই অবশ্যই পার্টির প্রস্তুতি নিচ্ছে। এটাই স্বাভাবিক। তবে আমি জানি না ভাইরাস থেকে আমরা কখন মুক্ত হবো। তখন সবাই মিলে একসাথে পার্টি করবো।’
এই পরাজয়ে চেলসি চতুর্থ স্থানে নেমে গেছে। চ্যাম্পিয়ন্স লিগে জায়গা করে নিতে রোববার স্ট্যামফোর্ড ব্রীজে উল্ফসের বিপক্ষে অন্তত এক পয়েন্ট অবশ্যই অর্জণ করতে হবে ল্যাম্পার্ডের দলকে। ল্যাম্পার্ড বলেন, ‘এটা সত্যিই বড় হতাশার। আমরা পুরো পরিস্থিতি বুঝতে পারছি। দারুন ফর্মে থাকা উল্ফসের বিপক্ষে যা করার আমাদেরই করতে হবে। পুরো বিষয়টি এখন সম্পূর্ণভাবেই আমাদের উপর নির্ভর করছে।’
ইতোমধ্যেই আগামী মৌসুমের জন্য টিমো ওয়ার্নার ও হাকিম জিয়েচকে দলে ভিড়িয়ে আক্রমনভাগ যথেষ্ঠ শক্তিশালী করেছে চেলসি। এছাড়াও বায়ার লেভারকুজেন থেকে কেই হাভার্টজকে দলে নিয়ে ৯০ মিলিয়ন ইউরো ব্যয় করারও দ্বারপ্রান্তে রয়েছে ব্লুজরা।
তবে ল্যাম্পার্ডকে অবশ্যই তার রক্ষনভাগ নিয়ে নতুন করে চিন্তা করতে হবে। এবারের পুরো মৌসুমে ঘরের বাইরে মাত্র একটি ম্যাচে তারা কোন গোল হজম করেনি। পুরো প্রিমিয়ার লিগ মৌসুমে চেলসি সব মিলয়ে ৫৪টি গোল হজম করেছে। গতকাল এ্যানফিল্ডে নেবি কেইটা, ট্রেন্ট আলেক্সান্দার-আর্নল্ড ও জর্জিনিও উইজনালডামের গোলে ৪৩ মিনিটেই ৩-০ গোলে এগিয়ে গিয়েছিল লিভারপুল। বিরতির ঠিক আগে অলিভার গিরুদের গোলে এক গোল পরিশোধ করে চেলসি। ৫৪ মিনিটে ব্রাজিলিয়ান তারকা রবার্তো ফিরমিনোর গোলে আবারো ব্যবধান বাড়িয়ে নেয় স্বাগতিকরা। পুরো মৌসুমে এ্যানফিল্ডে এটাই ফিরমিনোর প্রথম গোল।
বিস্ময়করভাবে ল্যাম্পার্ডের মূল একাদশে ছিলেন না যুক্তরাষ্ট্রের তারকা মিডফিল্ডার ক্রিস্টিয়ান পুলিসিচ। ৫৯ মিনিটে উইলিয়ানের পরিবর্তে মাঠে নেমেই দলের চেহারা পাল্টে দেন পুলিসিচ। ৬১ মিসিটে টামি আব্রাহামকে দিয়ে গোল করানো পর ৭৩ মিনিটে নিজেই গোল করে চেলসিকে লড়াইয়ে ফিরিয়েছিলেন এই মিডফিল্ডার। কিন্তু ৮৪ মিনিটে এন্ডি রবার্টসনের ক্রস থেকে এ্যালেক্স অক্সালেড-চেম্বারলিন গোল করে লিভারপুলের দাপুটে জয় নিশ্চিত করেন।