দেশে গত ২৪ ঘন্টায় মারা গেছেন ৫০ জন, সুস্থ ২,০০৬

369

ঢাকা, ২৩ জুলাই, ২০২০ (বাসস) : দেশে করোনাভাইরাস শনাক্তের ১৩৮তম দিনে ২৪ ঘন্টায় এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ৫০ জন মৃত্যুবরণ করেছেন। আর সুস্থ হয়েছেন ২ হাজার ৬ জন।
গতকালের চেয়ে আজ ৮ জন বেশি মৃত্যুবরণ করেছেন। গতকাল ৪২ জন মৃত্যুবরণ করেছিলেন। এখন পর্যন্ত দেশে এ ভাইরাসে মৃত্যুবরণ করেছেন ২ হাজার ৮০১ জন। করোনা শনাক্তের বিবেচনায় আজ মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৩০ শতাংশ। আগের দিন এই হার ছিল ১ দশমিক ২৯ শতাংশ। আগের দিনের চেয়ে আজ মৃত্যুর হার দশমিক ০১ শতাংশ বেশি।
আজ দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদফতরের করোনাভাইরাস সংক্রান্ত নিয়মিত অনলাইন হেলথ বুলেটিনে অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা এসব তথ্য জানান।
অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা জানান, করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে গত ২৪ ঘন্টায় হাসপাতাল এবং বাসায় মিলিয়ে সুস্থ হয়েছেন ২ হাজার ৬ জন। গতকালের চেয়ে আজ ২০১ জন বেশি সুস্থ হয়েছেন। গতকাল সুস্থ হয়েছিলেন ১ হাজার ৮০৫ জন। এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ১ লাখ ১৯ হাজার ২০৮ জন।
তিনি জানান, আজ শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৫৫ দশমিক ১৬ শতাংশ। আগের দিন এই হার ছিল ৫৪ দশমিক ৯৬ শতাংশ। আগের দিনের চেয়ে আজ সুস্থতার হার দশমিক ২ শতাংশ বেশি।
অতিরিক্ত মহাপরিচালক জানান, গত ২৪ ঘন্টায় ১২ হাজার ৩৯৮ জনের নমুনা পরীক্ষায় ২ হাজার ৮৫৬ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। গতকালের চেয়ে আজ ১১২ জন বেশি শনাক্ত হয়েছেন। গতকাল ১২ হাজার ৫০ জনের নমুনা পরীক্ষায় শনাক্ত হয়েছিলেন ২ হাজার ৭৪৪ জন।
তিনি জানান, দেশে এ পর্যন্ত মোট ১০ লাখ ৭৯ হাজার ৭ জনের নমুনা পরীক্ষায় ২ লাখ ১৬ হাজার ১১০ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। মোট পরীক্ষার বিবেচনায় শনাক্তের হার ২০ দশমিক ০৩ শতাংশ। গত ২৪ ঘন্টায় নমুনা পরীক্ষার বিবেচনায় শনাক্তের হার ২৩ দশমিক ০৪ শতাংশ। আগের দিন এ হার ছিল ২২ দশমিক ৭৭ শতাংশ। আগের দিনের চেয়ে আজ শনাক্তের হার দশমিক ২৭ শতাংশ বেশি।
ডা. নাসিমা সুলতানা জানান, ‘করোনাভাইরাস শনাক্তে গত ২৪ ঘন্টায় নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে ১২ হাজার ৯২ জনের। আগের দিন সংগ্রহ করা হয়েছিল ১১ হাজার ৯৭৬ জনের। গতকালের চেয়ে আজ ১১৬টি নমুনা বেশি সংগ্রহ করা হয়েছে। গত ২৪ ঘন্টায় দেশের ৮০টি পরীক্ষাগারে নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ১২ হাজার ৩৯৮ জনের। আগের দিন নমুনা পরীক্ষা হয়েছিল ১২ হাজার ৫০ জনের। গত ২৪ ঘন্টায় আগের দিনের চেয়ে ৩৪৮টি বেশি নমুনা পরীক্ষা হয়েছে।
তিনি জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যুবরণকারীদের মধ্যে ৪১ জন পুরুষ এবং ৯ জন নারী। এদের মধ্যে হাসপাতালে মারা গেছেন ৪৭ জন, বাসায় মৃত্যুবরণ করেছেন ৩ জন। এখন পর্যন্ত মৃত্যুবরণকারীদের মধ্যে পুরুষ ২ হাজার ২০৯ জন; ৭৮ দশমিক ৮৬ শতাংশ এবং নারী ৫৯২ জন; ২১ দশমিক ১৪ শতাংশ।
অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা বলেন, বয়স বিশ্লেষণে দেখা যায় যায়, ৮১ থেকে ৯০ বছরের মধ্যে ৪ জন, ৭১ থেকে ৮০ বছরের মধ্যে ৮ জন, ৬১ থেকে ৭০ বছরের মধ্যে ১৬ জন, ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে ১২ জন, ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে ৭ জন, ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে ৩ জন। এ পর্যন্ত যারা মৃত্যুবরণ করেছেন তাদের মধ্যে শূন্য থেকে ১০ বছরের মধ্যে ১৮ জন; দশমিক ৬৪ শতাংশ, ১১ থেকে ২০ বছরের মধ্যে ৩০ জন; ১ দশমিক ০৭ শতাংশ, ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে ৮২ জন; ২ দশমিক ৯৩ শতাংশ, ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে ১৯০ জন; ৬ দশমিক ৭৮ শতাংশ, ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে ৩৯৭ জন; ১৪ দশমিক ১৭ শতাংশ, ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে ৮২২; ২৯ দশমিক ৩৫ শতাংশ এবং ষাটোর্ধ্ব ১ হাজার ২৬২ জন; ৪৫ দশমিক ০৪ শতাংশ।
তিনি জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যুবরণকারীদের মধ্যে ঢাকা বিভাগে ২০ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৫ জন, রংপুর বিভাগে ৭ জন, বরিশাল বিভাগে ৪ জন, রাজশাহী বিভাগে ৬ জন, সিলেট বিভাগে ১ জন এবং খুলনা বিভাগে ৭ জন। এ পর্যন্ত বিভাগওয়ারী মৃতের সংখ্যা ঢাকা বিভাগে ১ হাজার ৩৬১ জন; যা ৪৮ দশমিক ৫৯ শতাংশ; চট্টগ্রাম বিভাগে ৭০১ জন, যা ২৫ দশমিক ০৩ শতাংশ; রাজশাহী বিভাগে ১৫৮ জন, যা ৫ দশমিক ৬৪ শতাংশ; খুলনা বিভাগে ১৮৮ জন, যা ৬ দশমিক ৭১ শতাংশ; বরিশাল বিভাগে ১০৬ জন, যা ৩ দশমিক ৭৮ শতাংশ; সিলেট বিভাগে ১২৯ জন, যা ৪ দশমিক ৬১ শতাংশ; রংপুর বিভাগে ১শ’ জন, যা ৩ দশমিক ৫৭ শতাংশ এবং ময়মনসিংহ বিভাগে ৫৮ জন, যা ২ দশমিক ০৭ শতাংশ।
অতিরিক্ত মহাপরিচালক জানান, ‘ঢাকা মহানগরীতে কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালে সাধারণ শয্যায় ভর্তি রোগীর সংখ্যা ২ হাজার ১৩৮ জন, ঢাকা মহানগরীতে আইসিইউ শয্যায় ভর্তি আছে ১৮৮ জন। চট্টগ্রাম মহানগরীতে সাধারণ শয্যায় ভর্তিকৃত রোগীর সংখ্যা ৩১০ জন, চট্টগ্রাম মহানগরীতে আইসিইউ শয্যায় ভর্তি আছে ২২ জন। সারাদেশে অন্যান্য হাসপাতালে সাধারণ শয্যায় ভর্তিকৃত রোগীর সংখ্যা ১ হাজার ৮শ’ জন, সারাদেশে অন্যান্য হাসপাতালে আইসিইউ শয্যায় ভর্তিকৃত রোগীর সংখ্যা ৯৩ জন। সারাদেশে হাসপাতালে সাধারণ শয্যা সংখ্যা ১৫ হাজার ১৩৪টি, রোগী ভর্তি আছে ৪ হাজার ২৪৮ জন এবং শয্যা খালি আছে ১০ হাজার ৮৮৬টি। সারাদেশে আইসিইউ শয্যা সংখ্যা ৫৩২টি, রোগী ভর্তি আছে ৩০৩ জন এবং খালি আছে ২২৯টি। সারাদেশে অক্সিজেন সিলিন্ডারের সংখ্যা ১২ হাজার ২৮৬টি। সারাদেশে হাই ফ্লো নেজাল ক্যানেলা সংখ্যা ৩০৩টি এবং অক্সিজেন কনসেনট্রেটর ১১২টি।
০১৩১৩-৭৯১১৩০, ০১৩১৩-৭৯১১৩৮, ০১৩১৩৭৯১১৩৯ এবং ০১৩১৩৭৯১১৪০ এই নম্বরগুলো থেকে হাসপাতালের সকল তথ্য পাওয়া যাবে। কোন হাসপাতালে কতটি শয্যা খালি আছে। কত রোগী ভর্তি ও কতজন ছাড় পেয়েছেন এবং আইসিইউ শয্যা খালি আছে কি না এই ফোন নম্বরগুলোতে ফোন করে জানা যাবে বলে তিনি জানান।
অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশনে রাখা হয়েছে ৬৯৭ জনকে। বর্তমানে আইসোলেশনে আছেন ১৮ হাজার ১৬০ জন। ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশন থেকে ছাড় পেয়েছেন ৬৩৩ জন। এখন পর্যন্ত ছাড় পেয়েছেন ২৬ হাজার ৩৪১ জন। এখন পর্যন্ত আইসোলেশন করা হয়েছে ৪৫ হাজার ২০১ জনকে।
তিনি বলেন, প্রাতিষ্ঠানিক ও হোম কোয়ারেন্টিন মিলে ২৪ ঘণ্টায় কোয়ারেন্টিন করা হয়েছে ২ হাজার ৮৫৯ জনকে। এখন পর্যন্ত কোয়ারেন্টিন করা হয়েছে ৪ লাখ ১৯ হাজার ৭৯১ জনকে। কোয়ারেন্টিন থেকে গত ২৪ ঘণ্টায় ছাড় পেয়েছেন ২ হাজার ৩২৪ জন। এখন পর্যন্ত ছাড় পেয়েছেন ৩ লাখ ৬০ হাজার ২শ’ জন। বর্তমানে মোট কোয়ারেন্টিনে আছেন ৫৯ হাজার ৫৯১ জন।
অতিরিক্ত মহাপরিচালক জানান, সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট পোর্টাল থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী কোভিড ১৯ বিষয়ক সুরক্ষা সামগ্রীর মধ্যে বিভিন্ন ক্যাটাগরির গ্লাভস ২৪ ঘন্টায় বিতরণ হয়েছে ৩৪ হাজার ৫৯৪টি, বিভিন্ন ক্যাটাগরি ও লেভেলের মাস্ক ২৪ ঘন্টায় বিতরণ হয়েছে ১০ হাজার ৯৯৮টি, ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী (পিপিই) ২৪ ঘন্টায় বিতরণ হয়েছে ৬ হাজার ৬৫২টি এবং ফেইসশিল্ড ও গগলস ২৪ ঘন্টায় বিতরণ হয়েছে ৪ হাজার ১০৮টি।
তিনি জানান, করোনাভাইরাস চিকিৎসা বিষয়ে এ পর্যন্ত ১৬ হাজার ৪৯৮ জন চিকিৎসক অনলাইনে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন। এদের মধ্যে ৪ হাজার ২১৭ জন স্বাস্থ্য বাতায়ন ও আইইডিসিয়ার’র হটলাইনগুলোতে স্বেচ্ছাভিত্তিতে সপ্তাহে ৭ দিন ২৪ ঘন্টা জনগণকে চিকিৎসাসেবা ও পরামর্শ দিচ্ছেন। এছাড়া ২৪ ঘন্টায় কোভিড বিষয়ক টেলিমেডিসিন সেবা গ্রহণ করেছেন ৪ হাজার ৪৪১ জন। এ পর্যন্ত শুধু কোভিড বিষয়ে স্বাস্থ্য সেবা গ্রহণ করেছেন ১ লাখ ১৫ হাজার ৯৭৫ জন। প্রতিদিন ৩৫ জন চিকিৎসক ও ১০ জন স্বাস্থ্য তথ্যকর্মকর্তা দুই শিফটে মোট ৯০ জন টেলিমেডিসিন সেবা দিয়ে যাচ্ছেন বলে তিনি জানান।
ডা.নাসিমা সুলতানা জানান, দেশের বিমানবন্দর, নৌ, সমুদ্রবন্দর ও স্থলবন্দর দিয়ে গত ২৪ ঘন্টায় ২ হাজার ৭৬৬ জনসহ সর্বমোট বাংলাদেশে আগত ৭ লাখ ৭৩ হাজার ৮৫৯ জনকে স্কিনিং করা হয়েছে।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার পরিস্থিতি তুলে ধরে অতিরিক্ত মহাপরিচালক জানান, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২২ জুলাই পর্যন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী ২৪ ঘন্টায় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ৪২ হাজার ৬৩৯ জন। এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ১৫ লাখ ২০ হাজার ৭৮০ জন। ২৪ ঘন্টায় মৃত্যুবরণ করেছেন ৭৭০ জন এবং এ পর্যন্ত ৩৫ হাজার ৮৯১ জন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২২ জুলাই পর্যন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী সারাবিশ্বে ২৪ ঘন্টায় করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ২ লাখ ২ হাজার ৭২৬ জন। এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ১ কোটি ৪৭ লাখ ৬৫ হাজার ২৫৬ জন। ২৪ ঘন্টায় মৃত্যুবরণ করেছেন ৪ হাজার ২৮৬ জন এবং এ পর্যন্ত ৬ লাখ ১২ হাজার ৫৪ জন বলে তিনি জানান।
করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে সবাইকে ঘরে থাকা, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, জনসমাগম এড়িয়ে চলা, সর্বদা মুখে মাস্ক পরে থাকা, সাবান পানি দিয়ে বারবার ২০ সেকেন্ড ধরে হাত ধোয়া, বাইরে গেলে হ্যান্ড গ্লাভস ব্যবহার, বেশি বেশি পানি ও তরল জাতীয় খাবার, ভিটামিন সি ও ডি সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া, ডিম, মাছ, মাংস, টাটকা ফলমূল ও সবজি খাওয়াসহ শরীরকে ফিট রাখতে নিয়মিত হালকা ব্যায়াম এবং স্বাস্থ্য অধিদফতর ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ-নির্দেশনা মেনে চলার অনুরোধ জানানো হয়।
তিনি বলেন, ধূমপান থেকে বিরত থাকতে হবে, কারণ তা অতিরিক্ত ঝুঁকি তৈরি করে।