২৪ ঘন্টায় মারা গেছেন ৪১ জন, সুস্থ ১,৮৪১

314

ঢাকা, ২১ জুলাই, ২০২০ (বাসস) : দেশে করোনাভাইরাস শনাক্তের ১৩৬তম দিনে ২৪ ঘন্টায় এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ৪১ জন মৃত্যুবরণ করেছেন। আর সুস্থ হয়েছেন ১ হাজার ৮৪১ জন।
গতকালের চেয়ে আজ ৯ জন কম মৃত্যুবরণ করেছেন। গতকাল ৫০ জন মৃত্যুবরণ করেছিলেন। এখন পর্যন্ত দেশে এ ভাইরাসে মৃত্যুবরণ করেছেন ২ হাজার ৭০৯ জন। করোনা শনাক্তের বিবেচনায় আজ মৃত্যুর হার ১ দশমিক ২৯ শতাংশ। আগের দিনও এই হার ছিল ১ দশমিক ২৯ শতাংশ।
আজ দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদফতরের করোনাভাইরাস সংক্রান্ত নিয়মিত অনলাইন হেলথ বুলেটিনে অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা এসব তথ্য জানান।
অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা জানান, করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে গত ২৪ ঘন্টায় হাসপাতাল এবং বাসায় মিলিয়ে সুস্থ হয়েছেন ১ হাজার ৮৪১ জন। গতকালের চেয়ে আজ ৭৩ জন কম সুস্থ হয়েছেন। গতকাল সুস্থ হয়েছিলেন ১ হাজার ৯১৪ জন। এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ১ লাখ ১৫ হাজার ৩৯৭ জন।
তিনি জানান, আজ শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৫৪ দশমিক ৮২ শতাংশ। আগের দিন এই হার ছিল ৫৪ দশমিক ৭৪ শতাংশ। আগের দিনের চেয়ে আজ সুস্থতার হার শূন্য দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ বেশি।
অতিরিক্ত মহাপরিচালক জানান, গত ২৪ ঘন্টায় ১২ হাজার ৮৯৮ জনের নমুনা পরীক্ষায় ৩ হাজার ৫৭ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। গতকালের চেয়ে আজ ১২৯ জন বেশি শনাক্ত হয়েছেন। গতকাল ১৩ হাজার ৩৬২ জনের নমুনা পরীক্ষায় শনাক্ত হয়েছিলেন ২ হাজার ৯২৮ জন।
তিনি জানান, দেশে এ পর্যন্ত মোট ১০ লাখ ৫৪ হাজার ৫৫৯ জনের নমুনা পরীক্ষায় ২ লাখ ১০ হাজার ৫১০ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। মোট পরীক্ষার বিবেচনায় শনাক্তের হার ১৯ দশমিক ৯৬ শতাংশ। গত ২৪ ঘন্টায় নমুনা পরীক্ষার বিবেচনায় শনাক্তের হার ২৩ দশমিক ৭০ শতাংশ। আগের দিন এ হার ছিল ২১ দশমিক ৯১ শতাংশ। আগের দিনের চেয়ে আজ শনাক্তের হার ১ দশমিক ৭৯ শতাংশ বেশি।
ডা. নাসিমা সুলতানা জানান, ‘করোনাভাইরাস শনাক্তে গত ২৪ ঘন্টায় নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে ১২ হাজার ১৪৯ জনের। আগের দিন সংগ্রহ করা হয়েছিল ১৩ হাজার ৩২৯ জনের। গতকালের চেয়ে আজ ১ হাজার ১৮০টি নমুনা কম সংগ্রহ করা হয়েছে। গত ২৪ ঘন্টায় দেশের ৮০টি পরীক্ষাগারে নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ১২ হাজার ৮৯৮ জনের। আগের দিন নমুনা পরীক্ষা হয়েছিল ১৩ হাজার ৩৬২ জনের। গত ২৪ ঘন্টায় আগের দিনের চেয়ে ৪৬৪টি কম নমুনা পরীক্ষা হয়েছে।
তিনি জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যুবরণকারীদের মধ্যে ৩৪ জন পুরুষ জন এবং ৭ জন নারী। এদের মধ্যে হাসপাতালে মারা গেছেন ৩১ জন, বাসায় মৃত্যুবরণ করেছেন ১০ জন।
অতিরিক্ত মহাপরিচালক বলেন, এখন পর্যন্ত মৃত্যুবরণকারীদের মধ্যে পুরুষ ২ হাজার ১৩৮ জন; ৭৮ দশমিক ৯২ শতাংশ এবং নারী ৫৭১ জন; ২১ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ। ২৪ ঘন্টায় মৃত্যুবরণকারীদের বয়স বিশ্লেষণে দেখা যায় যায়, ৮১ থেকে ৯০ বছরের মধ্যে ২ জন, ৭১ থেকে ৮০ বছরের মধ্যে ৭ জন, ৬১ থেকে ৭০ বছরের মধ্যে ১১ জন, ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে ১২ জন, ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে ৬ জন, ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে ২ জন, ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে ১ জন। এ পর্যন্ত যারা মৃত্যুবরণ করেছেন তাদের মধ্যে শূন্য থেকে ১০ বছরের মধ্যে ১৮ জন; দশমিক ৬৬ শতাংশ, ১১ থেকে ২০ বছরের মধ্যে ২৯ জন; ১ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ, ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে ৮১ জন; ২ দশমিক ৯৯ শতাংশ, ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে ১৮৪ জন; ৬ দশমিক ৭৯ শতাংশ, ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে ৩৮৭ জন; ১৪ দশমিক ২৯ শতাংশ, ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে ৭৯৯; ২৯ দশমিক ৪৯ শতাংশ এবং ষাটোর্ধ্ব ১ হাজার ২১১ জন; ৪৪ দশমিক ৭০ শতাংশ।
তিনি জানান, ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যুবরণকারীদের মধ্যে ঢাকা বিভাগে ১৫ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ১৫ জন, রংপুর বিভাগে ১ জন, রাজশাহী বিভাগে ৫ জন এবং খুলনা বিভাগে ৫ জন। এ পর্যন্ত বিভাগওয়ারী মৃতের সংখ্যা ঢাকা বিভাগে ১ হাজার ৩২০ জন; যা ৪৮ দশমিক ৭৩ শতাংশ; চট্টগ্রাম বিভাগে ৬৮৮ জন, যা ২৫ দশমিক ৪০ শতাংশ; রাজশাহী বিভাগে ১৪৯ জন, যা ৫ দশমিক ৫০ শতাংশ; খুলনা বিভাগে ১৭৮ জন, যা ৬ দশমিক ৫৭ শতাংশ; বরিশাল বিভাগে ১০০ জন, যা ৩ দশমিক ৬৯ শতাংশ; সিলেট বিভাগে ১২৫ জন, যা ৪ দশমিক ৬১ শতাংশ; রংপুর বিভাগে ৯১ জন, যা ৩ দশমিক ৩৬ শতাংশ এবং ময়মনসিংহ বিভাগে ৫৮ জন, যা ২ দশমিক ১৪ শতাংশ।
অতিরিক্ত মহাপরিচালক জানান, ‘ঢাকা মহানগরীতে কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালে সাধারণ শয্যা সংখ্যা ৬ হাজার ৩০৫টি, সাধারণ শয্যায় ভর্তি রোগীর সংখ্যা ২ হাজার ২১২ জন, ঢাকা মহানগরীতে আইসিইউ শয্যায় ভর্তি আছে ১৬৮ জন। চট্টগ্রাম মহানগরীতে সাধারণ শয্যা সংখ্যা ৬৫৭টি, সাধারণ শয্যায় ভর্তিকৃত রোগীর সংখ্যা ২৯০ জন, চট্টগ্রাম মহানগরীতে আইসিইউ শয্যা সংখ্যা ৩৯টি, আইসিইউ শয্যায় ভর্তি আছে ২২ জন এবং খালি আছে ১৭টি শয্যা। সারাদেশে অন্যান্য হাসপাতালে সাধারণ শয্যা সংখ্যা ৭ হাজার ৭০২টি, ভর্তিকৃত রোগীর সংখ্যা ১ হাজার ৭৫৯ জন, সারাদেশে অন্যান্য হাসপাতালে আইসিইউ শয্যা রয়েছে ১৯৩ টি, আইসিইউ শয্যায় ভর্তিকৃত রোগীর সংখ্যা ৯২ জন। সারাদেশে হাসপাতালে সাধারণ শয্যা সংখ্যা ১৫ হাজার ৪৬৮টি, রোগী ভর্তি আছে ৪ হাজার ২৬১ জন। সারাদেশে আইসিইউ শয্যা সংখ্যা ৫১১টি, রোগী ভর্তি আছে ২৮২ জন। সারাদেশে অক্সিজেন সিলিন্ডারের সংখ্যা ১২ হাজার ২৩৩টি। সারাদেশে হাই ফ্লো নেজাল ক্যানেলা সংখ্যা ২৭৭টি এবং অক্সিজেন কনসেনট্রেটর ১১০টি।
০১৩১৩-৭৯১১৩০, ০১৩১৩-৭৯১১৩৮, ০১৩১৩৭৯১১৩৯ এবং ০১৩১৩৭৯১১৪০ এই নম্বরগুলো থেকে হাসপাতালের সকল তথ্য পাওয়া যাবে। কোন হাসপাতালে কতটি শয্যা খালি আছে। কত রোগী ভর্তি ও কতজন ছাড় পেয়েছেন এবং আইসিইউ শয্যা খালি আছে কি না এই ফোন নম্বরগুলোতে ফোন করে জানা যাবে বলে তিনি জানান।
নাসিমা সুলতানা জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশনে রাখা হয়েছে ৭১০ জনকে। বর্তমানে আইসোলেশনে আছেন ১৮ হাজার ৬৭১ জন। ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশন থেকে ছাড় পেয়েছেন ৬৫১ জন, এখন পর্যন্ত ছাড় পেয়েছেন ২৫ হাজার ৯ জন। এখন পর্যন্ত আইসোলেশন করা হয়েছে ৪৩ হাজার ৬৮০ জনকে।
তিনি জানান, প্রাতিষ্ঠানিক ও হোম কোয়ারেন্টাইন মিলে ২৪ ঘণ্টায় কোয়ারেন্টাইন করা হয়েছে ২ হাজার ২২ জনকে। এখন পর্যন্ত কোয়ারেন্টাইন করা হয়েছে ৪ লাখ ১৪ হাজার ৫০৩ জনকে। কোয়ারেন্টাইন থেকে গত ২৪ ঘণ্টায় ছাড় পেয়েছেন ২ হাজার ৩৭৫ জন। এখন পর্যন্ত ছাড় পেয়েছেন ৩ লাখ ৫৫ হাজার ৪২৪ জন। বর্তমানে মোট কোয়ারেন্টাইনে আছেন ৫৯ হাজার ৭৯ জন।
ডা. নাসিমা সুলতানা জানান, গত ২৪ ঘন্টায় স্বাস্থ্য বাতায়ন ১৬২৬৩ হটলাইন নম্বরে ফোনকল গ্রহণ করা হয়েছে ১৯ হাজার ৫৮৬টি এবং এ পর্যন্ত ৭ কোটি ৩৬ লাখ ৯ হাজার ২৭৯টি। ৩৩৩ এই নম্বরে ২৪ ঘন্টায় ফোনকল গ্রহণ করা হয়েছে ৮০ হাজার ১৬৬টি। আইইডিসিআর’র হটলাইনে ফোন এসেছে গত ২৪ ঘন্টায় ৭৩৯টি এবং ২৪ ঘন্টায় মোট ফোনকল গ্রহণ করা হয়েছে ১ লাখ ৪৯১টি।
করোনাভাইরাস চিকিৎসা বিষয়ে এ পর্যন্ত ১৬ হাজার ৪৯৮ জন চিকিৎসক অনলাইনে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন। এদের মধ্যে ৪ হাজার ২১৭ জন স্বাস্থ্য বাতায়ন ও আইইডিসিয়ার’র হটলাইনগুলোতে স্বেচ্ছাভিত্তিতে সপ্তাহে ৭ দিন ২৪ ঘন্টা জনগণকে চিকিৎসাসেবা ও পরামর্শ দিচ্ছেন। এছাড়া ২৪ ঘন্টায় কোভিড বিষয়ক টেলিমেডিসিন সেবা গ্রহণ করেছেন ৪ হাজার ৭৬৫ জন। এ পর্যন্ত শুধু কোভিড বিষয়ে স্বাস্থ্য সেবা গ্রহণ করেছেন ১ লাখ ৬ হাজার ৮৯৮ জন। প্রতিদিন ৩৫ জন চিকিৎসক ও ১০ জন স্বাস্থ্য তথ্যকর্মকর্তা দুই শিফটে মোট ৯০ জন টেলিমেডিসিন সেবা দিয়ে যাচ্ছেন বলে তিনি জানান।
ডা.নাসিমা সুলতানা জানান, দেশের বিমানবন্দর, নৌ, সমুদ্রবন্দর ও স্থলবন্দর দিয়ে গত ২৪ ঘন্টায় ২ হাজার ৭৬ জনসহ সর্বমোট বাংলাদেশে আগত ৭ লাখ ৬৮ হাজার ৭২৯ জনকে স্কিনিং করা হয়েছে।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার পরিস্থিতি তুলে ধরে অতিরিক্ত মহাপরিচালক জানান, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০ জুলাই পর্যন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী ২৪ ঘন্টায় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ৪৪ হাজার ৭৩৪ জন। এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ১৪ লাখ ৩৬ হাজার ১৪১ জন। ২৪ ঘন্টায় মৃত্যুবরণ করেছেন ৮৪৫ জন এবং এ পর্যন্ত ৩৪ হাজার ৩৮৮ জন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০ জুলাই পর্যন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী সারাবিশ্বে ২৪ ঘন্টায় করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ২ লাখ ২৯ হাজার ৭৮০ জন। এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ১ কোটি ৪৩ লাখ ৪৮ হাজার ৮৫৮ জন। ২৪ ঘন্টায় মৃত্যুবরণ করেছেন ৫ হাজার ১১১ জন এবং এ পর্যন্ত ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৯১ জন বলে তিনি জানান।
বন্যায় সাপের কামড় থেকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে বুলেটিন উপস্থাপনের শুরুতে অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা বলেন, ‘বন্যায় সাপের কামড়ে মৃত্যু-এটা খুব স্বাভাবিক ঘটনা। সেজন্য বাড়ির ছোটদেরকে এবং সবাই এই সাপ বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘সবাই নিরাপদ পানি পান করবেন। পানি ফুটিয়ে অথবা পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট নিকটস্থ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স বা স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে সংগ্রহ করে আপনারা নিরাপদ পানি পান করবেন। যাতে পানিবাহিত রোগ থেকে নিজেকে মুক্ত রাখতে পারেন।’
করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে সবাইকে ঘরে থাকা, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, জনসমাগম এড়িয়ে চলা, সর্বদা মুখে মাস্ক পরে থাকা, সাবান পানি দিয়ে বারবার ২০ সেকেন্ড ধরে হাত ধোয়া, বাইরে গেলে হ্যান্ড গ্লাভস ব্যবহার, বেশি বেশি পানি ও তরল জাতীয় খাবার, ভিটামিন সি ও ডি সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া, ডিম, মাছ, মাংস, টাটকা ফলমূল ও সবজি খাওয়াসহ শরীরকে ফিট রাখতে নিয়মিত হালকা ব্যায়াম এবং স্বাস্থ্য অধিদফতর ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ-নির্দেশনা মেনে চলার অনুরোধ জানানো হয়।
তিনি বলেন, ধূমপান থেকে বিরত থাকতে হবে, কারণ তা অতিরিক্ত ঝুঁকি তৈরি করে।