সুনামগঞ্জে বাসা-বাড়ি থেকে বন্যার পানি নামা শুরু হলেও হাওর এলাকায় স্থিতিশীল

163

সুনামগঞ্জ, ১৮ই জুলাই ,২০২০ (বাসস) : জেলার বন্যা পরিস্থিতি উন্নতি হলে ও জন দুর্ভোগ বেড়েছে। জেলা শহরের আশপাশে বাসা বাড়ি থেকে পানি নামতে শুরু করলেও হাওর এলাকায় বন্যার পানি রয়েছে স্থিতিশীল। আবহাওয়া অধিদফতর কাল রোববার থেকে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনার কথা জানালে জেলার প্রধান নদী সমূহের পানি বৃদ্ধির আশংকায় লোকজনের মাঝে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।
গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত জেলার তাহিরপুর, বিশ^ম্ভরপুর, দোয়ারাবাজার, ছাতক ও জামালগঞ্জ উপজেলার সঙ্গে জেলা শহরের সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। উপর্যুপরি দু’দফা বন্যায় লন্ডভন্ড হয়েছে কাঁচা-পাকা রাস্তা, কাঁচা ঘরবাড়ি, হাজার হাজার হেক্টর উঠতি আউশ, রোপা আমনসহ মওসুমি ফসলের বীজতলা ও রবিশস্য।
সুনামগঞ্জ ঃ , পাহাড়ি ঢল আর ভারী বৃষ্টিপাতে সুনামগঞ্জে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি উন্নতি হলেও জনদুর্ভোগ বেড়েছে। গতকাল শুক্রবার বিকেল ৩ টায় সুরমা নদীর পানি সুনামগঞ্জ ষোলঘর পয়েন্টে বিপদ সীমার ২৪ সেন্টিমিটার নীচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল । আজ শনিবার সকাল ৯টায় সনামগঞ্জে সুরমাায় ২৯সেন্টিমিটার নীচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে ও ছাতকে বিপদ সীমার ৭৬সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে ।গত ২৪ ঘন্টায় সুনামগঞ্জে ৯০ মিলিমিটার এবং ছাতকে ১৫ মিলিমিটার রেকর্ড করা হয়েছে। বন্যার পানি ধীর গতিতে কমলে ও হাওর এলাকায় জনদুর্ভোগ দেখা দিয়েছে। গত ২৪ ঘন্টায় ২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের অফিসিয়াল ফেইসবুক পেজে জানানো হয়, সুনামগঞ্জ জেলার প্রধান নদী সমূহের পানি হ্রাস পাচ্ছে। পানি হ্রাস পাওয়ার এ প্রবণতা আগামী ১৯ জুলাই পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে এবং এ সময় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি অব্যাহত থাকতে পারে। মৌসুমী বায়ু বিস্তাারের সম্ভাবনার প্রেক্ষিতে ২০-২১ জুলাই হতে আবার জেলার প্রধান নদী সমূহের পানি বৃদ্ধি পেতে পারে। বৃষ্টিপাত পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে পানি বৃদ্ধির এ প্রবণতা ৪-৫ দিন স্থায়ী হতে পারে। এর ধারাবাহিকতায় জেলার সুরমা, কুশিয়ারা, যাদুকাটা নদীর পানি সমতল কোথাও কোথাও বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে। এর ফলে সুনামগঞ্জ জেলার নিম্নাঞ্চলের কোথাও কোথাও আবারও বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে এবং কোথাও কোথাও নতুন করে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, ১৫ মে পর্যন্ত হাওরের ফসল রক্ষার জন্য সুরমা নদীর পানি বিপদ সীমা ছিল ৬ দশমিক ৫০ সেন্টিমিটার এবং ১৫ মে’র পরে বিপদ সীমা হলো ৭ দশকি ৮০ সেন্টিমিটার। ৭ দশমিক ৮০ সেন্টিমিটার অতিক্রম করলেই বর্ষাকালে সুরমা নদীর পানি বিপদ সীমা ধরা হয়। গতকাল শক্রবার বিকেল পর্যন্ত তাহিরপুর, বিশ^ম্ভরপুর, দোয়ারাবাজার, ছাতক ও জামালগঞ্জ উপজেলার সঙ্গে জেলা শহরের সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।
দোয়ারাবাজার ঃ গত রোববার থেকে বৃষ্টিপাতের মাত্রা অনেকটা কমলেও ভাটিতে পানির টান না থাকায় সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজারে সুরমাসহ সকল নদী-নালা, খাল-বিল, হাওর, মাঠ ও রাস্তাাঘাট থেকে পানি নামছে ধীর গতিতে। ফলে বন্যার্ত পরিবার পরিজন ও জীর্ণশীর্ণ গবাদি পশু নিয়ে দুর্বিসহ অবস্থায় দিন কাটচ্ছেন। উপর্যুপরি দু’দফা বন্যায় লন্ডভন্ড হয়েছে উপজেলার ৯টি ইউনিয়নের কাঁচা-পাকা রাস্তা, কাঁচা ঘরবাড়ি, হাজার হাজার হেক্টর উঠতি আউশ, রোপা আমনসহ আগামি মওসুমি ফসলের বীজতলা ও রবিশস্য। শুধু তাই নয়, পরপর দু’দফা বন্যার পানিতে ভেসে গেছে সুরমা, বগুলা, লক্ষীপুর, নরসিংপুর ও দোয়ারা সদরসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের শত শত পুকুরের কয়েক কোটি টাকার মাছ ও পোণা।
অপরদিকে, খামারিদের কাছে বাকিতে মাছের খাদ্য সরবরাহ করায় উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলোর কাছে কয়েক কোটি টাকা দায়বদ্ধ রয়েছেন স্থানীয় ডিলাররাও। এবারের প্রথম দফা বন্যায় উপজেলা পরিষদের সম্মুখস্থ দু’টি দোকান ঘর নিমিষেই তলিয়ে গেছে সুরমার অথৈ গহ্বরে। ভাটিতে পানির টান না থাকায় প্রথম দফা বন্যার পানি না কমতেই সপ্তাহকাল ব্যবধানে আবারও টানা বর্ষণ ও আকস্মিক পাহাড়ি ঢলে ফের বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। এ ছাড়া গো-মহিষ, ছাগল পানির দামে বিক্রি হওয়াতে আসন্ন ঈদের খুশি নেই হাওর পাড়ের বানভাসি কৃষিজীবী পরিবারসহ ছিন্নমুল পরিবারগুলোতে। প্রধান অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে চলাচলের অযোগ্য গ্রামীণ জনপদের সবক’টি ভাঙাচোরা রাস্তাা। তাই বন্যা পরবর্তী বেহাল দশার রাস্তা গুলো দ্রুত সংস্কার করা হলে ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ী, প্রান্তিক বর্গাচাষী ও খেটে খাওয়া দিন মজুরসহ কৃষিনির্ভর পরিবারগুলো হাঁফ ছেড়ে বাঁচবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তারা।
এছাড়া উপজেলার ৯টি ইউনিয়নে এ যাবত বরাদ্দকৃত চালসহ বিভিন্ন ত্রাণ সামগ্রী অপ্রতুল বলে ভুক্তভোগীরা জানান। আসন্ন পবিত্র ঈদে বিশেষ ট্রাস্কফোর্সের মাধ্যমে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখাসহ চাহিদা মাফিক ত্রাণ সামগ্রী বরাদ্দের দাবিও জানিয়েছেন তারা। এ ছাড়া বকেয়া কৃষিঋণ মওকুফ করে বন্যা পরবর্তী পুনর্বাসনে বিনামূল্যে ধানের বীজ ও চারা বিতরণ, কৃষি ভর্তুকি প্রদানসহ বিনাসুদে নতুন ঋণ বিতরণের জোর দাবি জানান কৃষিজীবী পরিবারগুলো।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোনিয়া সুলতানা বলেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে জরিমানাসহ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে ত্রাণ সামগ্রীর বরাদ্দ বৃদ্ধি ছাড়াও বন্যা পরবর্তী কৃষি পুনর্বাসনসহ জরুরি চাহিদা কার্যকরের প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। কেননা বন্যাসহ যেকোনো দুূর্যোগ মোকাবেলায় জনগণের পাশে রয়েছে বর্তমান খাদ্যবান্ধব সরকার। দেশে পর্যাপ্ত খাদ্য মওজুদ রয়েছে।