ভোলায় আমার বাড়ি, আমার খামারে কাজলি রানীর ভাগ্য পরিবর্তন

332

।। হাসানাইন আহমেদ মুন্না ।।
ভোলা, ১৮ জুলাই, ২০২০ (বাসস) : জেলার উপজেলা সদরে আমার বাড়ি, আমার খামার প্রকল্পের মাধ্যমে ভাগ্য পরিবর্তন হয়েছে কাজলি রানী (৩৬) নামের এক নারীর। ১০ বছর আগে স্বামীর সাথে ছাড়াছাড়ি হয়ে যাওয়ার পর কাজলি রানী বড় ভাইয়ের সংসারে আশ্রয় নেন। সাথে ছিলো ৫ বছরের ছেলে হৃদয় হালদার। অনেক কষ্ট, অভিমান ও দ:ুখের দিন ছিলো সেইসব। কিন্তু একমাত্র ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসা শুরু হয় তার। মন খারাপ কাটানোর জন্য ভাইয়ের স্ত্রীর (ভাবী) কাছ থেকে শেখেন সেলাই’র কাজ। পরবর্তিতেত সেই কাজই হয় তার জীবিকা নির্বাহের প্রধান হাতিয়ার ।
কিন্তু ভাইয়ের সংসারে বোঝা হয়ে বেশি দিন থাকতে মন চাইছিলোনা তার। তাই প্রতিবেশি এক নারীর উৎসাহে ২০১৪ সালে আমার বাড়ি, আমার খাবার প্রকল্পের পূর্ব রোহিতা গ্রাম উন্নয়ন দলের সদস্য হন। আর এতে করেই বদলাতে থাকে তার জীবনধারা। সঞ্চিত অর্থ থেকে মাসে ২০০ টাকা করে জমা দিতে থাকেন। ২০১৫ সালে প্রকল্প থেকে ২০ হাজার টাকা ঋণ নেন কাজলি। এ টাকায় সেলাই মেশিন ও কাপড়-সূতা কিনে হাতের কাজ শুরু করেন। ক্রমশই বদলাতে থাকে তার দূরবস্থা। ছেলেকে নিয়ে এক সময় অনেক অর্থ কষ্টে থাকলেও এখন তিনি আত্বনির্ভরশীল।
সরেজমিনে সদর উপজেলার আলীনগর ইউনিয়নের পূর্ব রুহিতা গ্রামের কাজলি রানী’র বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, সেলাই মেশিনে জামা-কাপড় তৈরিতে ব্যস্ত তিনি। আশপাশের বিভিন্ন গ্রামের মেয়েরা তার কাছে সেলোয়ার কামিজ তৈরির বায়না দিয়ে যান। সেমতে তিনি কাপড় তৈরি করে দেন। এলাকায় বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে তার এ পোশাক তৈরির কাজ। কারণ মেয়েরা তার কাছে কাপড়ের মাপ দিতে কোন সংকোচবোধ করেনা। যেটা বাইরে দর্জির কাছে অনেকেরই সমস্যা হয়।
বাসস’র সাথে আলাপকালে কাজলি রানী জানান, আমার বাড়ি, আমার খামার প্রকল্পের সদস্য হওয়ার পর থেকে তার জীবনের হতাশা কেটে যায়। এখানকার বিভিন্ন বৈঠকে নানান পরামর্শ নতুন করে জীবনকে উজ্বীবিত করতে সহায়তা করেছে। এক কথায় জীবন সম্পর্কে তার প্রচলিত ধরানা পাল্টে দিয়েছে এ প্রকল্প। বর্তমানে একমাত্র ছেলে স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ে দশম শ্রেণীতে পড়ছে। সেলাই করে যা পান তা দিয়ে ভালোভাবেই চলে যায় তাদের মা-ছেলের সংসার।
তিনি আরো বলেন, প্রথম দিকে বিভিন্ন কাপড়ের দোকানের ওর্ডার করা কাজ করলেও এখন তা ছেড়ে দিয়েছেন। বর্তমানে সে তার নিজ গ্রাম ও এর আশা-পাশ এলাকার শুধু নারীদের পোশাক তৈরি করেন। আবার কোন কোন ক্ষেত্রে নিজে কাপড় কিনে মেয়েদের জন্য সেলোয়ার ও বাচ্চাদের পোশাক তৈরি করেন। তার ঘর থেকেই ক্রেতারা তা কিনে নিয়ে যান। যেহেতু সামনে কোরবানীর ঈদ। তাই এ মূহুর্তে কাজের বেশ চাপ রয়েছে বলে জানান তিনি।
এ গ্রাম উন্নয়ন দলের ম্যানেজার দিলীপ কুমার রায় বাসস’কে বলেন, আমাদের এ দলের একজন সফল উত্যোক্তা কাজলি রানী। সে তার মেধা ও চেষ্টায় পূর্বের অবস্থান পরিবর্তন করতে সক্ষম হয়েছেন। সে অত্যন্ত পরিশ্রমী একজন নারী। শুধু কাজলি রানী নয় এ দলে তনুশ্রী রায়, শান্তা রানীসহ অনন্ত ২৫ জন নারী সেলাই, হস্তশিল্পসহ বিভিন্ন আয়বর্ধক কাজে নিজেদের নিয়োজিত রেখেছেন। বর্তমানে তারা সকলেই ভালো রয়েছন।
কাজলি জানান, প্রথম ঋণ পরিশোধের পর ২০১৮ সালে আবারো ২০ হাজার টাকা ্ঋণ নেন। এ টাকায় তার কার্যক্রম আরো সম্প্রসারিত করেন। বর্তমানে সে ভাইয়ের ঘরের পাশে গড়ে তোলেন ছোট্র একটি ঘর। সেখানকার একটি কক্ষে চলে তার সেলাই’র কাজ। শুধু সে নয় অনেক অসহায় নারী আজকে এ প্রকল্পের মাধ্যমে সমাজে মর্যদার্
ফিরে পেয়েছে বলে জানান তিনি।
কাজলির প্রতিবেশী জোছনা রানী বলেন, সে ও তার মেয়েরা তাদের জামা কাপড় কাজলির কাছ থেকেই তৈরি করে থাকেন। এতে আর তাদের বাড়ির বাইরে যেতে হতে হয়না। তাই তাদের খরচও কম হয়। এছাড়া কাজলির কাজের মানও অনেক ভালো। এ গ্রামের অনেক নারীরাই তার (কাজলি) কাছে সেলাইর কাজ দিয়ে থাকেন।
প্রকল্পের সদর উপজেলা সমন্বয়কারী মো: জসিমউদ্দিন বাসস’কে বলেন, কাজলি রানী আমার বাড়ি, আমার খামার প্রকল্পের মাধ্যমে স্বাবলম্বী হয়েছেন। ঋণের টাকা সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে আজ সমাজের বুকে আত্বনির্ভরশীল হয়েছেন তিনি। এ প্রকল্পের মাধ্যমে সদরে এ পর্যন্ত ৩০ কোটি ৯০ লাখ টাকা ঋণ প্রদান করা হয়েছে। এছাড়া চলতি অর্থবছরে ঋণ দেয়া হয়েছে ৭ কোটি ১২ লাখ ৩০ হাজার টাকা।
তিনি আরো বলেন, বর্তমানে সদর উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নে ১১৭টি ওয়ার্ডে ৩১৮টি সমিতি চালু রয়েছে। এসব সমিতির ১৪ হাজার ৪৫৮জন সদস্যের মধ্যে নারী রয়েছেন ৬ হাজার ২২জন ও পুরুষ সদস্য ৮ হাজার ৪৩৬ জন।