নাটোরে গরু মহিষের সৌখিন খামার গড়েছেন রেকাত আলী

346

॥ ফারাজী আহম্মদ রফিক বাবন ॥
নাটোর, ১৬ জুলাই, ২০২০ (বাসস) : বিভিন্ন দেশের আকর্ষণীয় গরু আর মহিষের সমাহারে সৌখিন খামার গড়ে তুলেছেন রেকাত আলী। প্রতিদিন অসংখ্য দর্শনার্থী খামারে থাকা ষাটটা গরু আর নয়টা মহিষ দেখতে ভিড় করছেন।নাটোর সদর উপজেলার ডালসড়ক এলাকাতে ড্রিমল্যান্ড ফ্যাটিনিং এন্ড ডেইরি নামে বৈচিত্রময় এ খামারের অবস্থান। খামারে অসংখ্য দর্শনার্থী থাকলেও ক্রেতা সংকটে পড়েছে খামারটি।
পেশায় চাল ব্যবসায়ী রেকাত আলীর বরাবরই ঝোঁক ছিল বাড়িতে গরু পালন করার। চার বছর আগে বাণিজ্যিকভাবে শুরু করেন হৃষ্টপুষ্ট কার্যক্রম। নিজস্ব রাইস মিলের চারপাশ জুড়ে গড়ে তুলেছেন গরুর আবাসন, অদূরেই ঘাসের খামার। প্রতিবছর একটু একটু করে খামারের পরিধি বাড়ছে।
খামারে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে বিভিন্ন জাতের বিদেশী গরু। এরমধ্যে রয়েছে আমেরিকার বাহামা, ইংল্যান্ডের ফ্রিজিয়ান, নেপালের নেপালী বলদ, পাকিস্তানের শাহীওয়াল, ভারতের রাজস্থান,গুজরাট ও উলুবাড়িয়া জাতের গরু। লাল, সাদা, কালো রঙের এসব এক একটি গরু লম্বায় ৯ ফুট আর উচ্চতায় ৬ ফুটের বেশী। ওজনে কোন কোনটি এক টন ছাড়িয়ে গেছে। এক্ষেত্রে আমেরিকার বাহামা অগ্রগামী। রাজস্থানের রাজকীয় সিং অসাধারণ। নেপালের জাতটির গায়ের রঙ তো খানিকটা হরিণের মত। অতিকায় হলেও সব গরুই শান্ত ও নিরীহ প্রকৃতির। কাছে গেলে আদর খেতে গলা বাড়িয়ে দিচ্ছে গরুগুলো। খামার মালিকের সাথে গরুগুলোর সখ্যতা চোখে পড়ার মত। অপরিসীম মমত্ববোধ দিয়ে পালন করেছেন তিনি গরুগুলোকে।
এ খামারে শুধু গরু নয়, আছে বিহারী জাতের বিশাল পাঁচটি মহিষ। একই আকৃতির আকর্ষণীয় এসব মহিষ ওজনে পনের মণ ছাড়িয়েছে। শেডের বাইরে ঘাসে ভরা মাঠে কাঁদা-পানিতে সারাদিন ধরে গড়াগড়ি খায় চারটা সাদা রঙের মহিষ। থাইল্যান্ডের এ জাত আকারে তুলনামূলক ছোট। নিরীহ এ মহিষগুলো দর্শনার্থী দেখলেই অপার বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকে, আবার ছুটে পালায়। আচরণে খানিকটা হরিণের মত।
বিপুল সংখ্যক দর্শনার্থীকে এসব গরু আর মহিষ দেখার কৌতুহল নিয়ে খামারটি পরিদর্শন করতে দেখা যাচ্ছে। কলেজ শিক্ষক মাসুমা সুলতানা বললেন, গরুর খামার যে দর্শনীয় হতে পারে তা এ খামারে এসে বুঝলাম। তৃতীয় শ্রেণীর শিক্ষার্থী সিদরাতুল মুনতাহা ঘাস খেতে দিচ্ছিল গরুকে। ফিরে যাওয়ার তাগাদা দিতে বাবা-মাকে বললো, আরেকটু থাকি। গরুগুলোর সাথে অল্প সময়ের দেখাতেই মায়ার বাঁধনে জড়িয়ে গেছে যেন !
শুধু কোুরবানীর ঈদকে কেন্দ্র করেই নয়, সারা বছর ধরে এ খামারে কিছু না কিছু গরু থাকেই। গরুর পরিচর্যার জন্যে সার্বক্ষণিক নিয়োজিত আছেন আটজন কর্মচারী। তাদের দলনেতা বুলবুল আহমেদ জানান, গরুকে খাওয়ানো, গোসল করানো, অসুস্থতার দিকে নজর রাখাসহ সব কাজই আমরা করি। রাতে দুইজন দায়িত্ব পালন করেন। কর্মচারীদের মধ্যে তিনজন আবাসিক হওয়ায় তাদের পরিবারবর্গও আমাদের কাজে সহযোগিতা করে। অত্যন্ত পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন এ খামারের ব্যাপারে জানা গেল, গোবর হওয়ার সাথে সাথেই সরিয়ে নেওয়া হয়। আর তাই গরুগুলোর ত্বক ঝকঝকে।
খামারের অদূরেই নিজস্ব জমিতে চাষ করা হচ্ছে বিভিন্ন জাতের প্রয়োজনীয় ঘাস। নেপিয়ার, গোমা জাতের ঘাসছাড়াও আছে থাইল্যান্ডের পানচুন ঘাস। খামারের গরুগুলোর চাহিদা মিটেয়ে অন্য গরু প্রতিপালনকারীরা বিনা অর্থে এ খামারের ঘাস, বীজ পেয়ে থাকেন বলে জানান স্থানীয়রা। সমাজ সেবাসহ মানুষের কল্যাণে নিয়োজিত রেকাত আলী এলাকায় দাতা হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন।
রেকাত আলী বলেন, গরুর খামার আমার পেশা নয়, অনেকটা নেশার মত। হাজারো ব্যস্ততার ভিড়ে প্রতিদিন ওদের সাথে দেখা না হলে মনে স্বস্তি আসেনা। গরুগুলোর সাথে যেন আমার আতœার সম্পর্ক। রাইস মিলের সাথে গরুর খামার অত্যন্ত লাভজনক বলে জানান তিনি।
কোরবানীর হাটে তোলার আগেই দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ক্রেতারা গরু কিনতে খামারে ভিড় করে আসছিলেন প্রতিবছর। প্রখ্যাত সাদেক এগ্রো, বেঙ্গল ফার্ম ছিল ক্রেতাদের মধ্যে অন্যতম। তবে করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতিতে এবছর ব্যতিক্রম। এখনো পর্যন্ত কোন ক্রেতার দেখা মেলেনি। হতাশায় আছন্ন রেকাত আলী বলেন, গরু-মহিষগুলো বিক্রি করতে না পারলে পরবর্তী একবছরে শুধু খাবার খরচই লাগবে ৪০ লাখ টাকা।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে রেকাত আলী বলেন, পরিসর আরো বাড়াবো। একটা বায়োগ্যাস প্লান্টও গড়ে তুলতে চাই। তবে সবকিছু নির্ভর করছে, বাজারজাতকরণ পরিস্থিতির উপর ভিত্তি করে।
জেলা পশু সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ গোলাম মোস্তফা বলেন, রেকাত আলীর সমৃদ্ধ খামার নিয়ে আমরা গর্বিত। আমাদের চেস্টা থাকবে অনলাইন পশুর হাটের মাধ্যমে তাঁর খামারের গরু-মহিষগুলোকে বিপণন ব্যবস্থায় নিয়ে আসতে। তাকে সহযোগিতা ও সমর্থন দেয়ার ধারাবাহিক প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে।
নাটোরের জেলা প্রশাসক মোঃ শাহরিয়াজ বলেন, বৈচিত্র্যময় ও সমৃদ্ধ ড্রিমল্যান্ড ফ্যাটেনিং এন্ড ডেইরি ফার্ম সুন্দর পরিবেশে মেধা ও পরিশ্রমে গড়ে তোলা হয়েছে। এ খামার দেশের সম্পদ বৃদ্ধির কাজে নিয়োজিত থেকে দেশজ উৎপাদনে ভূমিকা রাখছে। এ ঈদে এ উৎপাদন বাজারজাতকরণ করতে পারলে এ উদ্যোগ সফলতা পাবে। এ ব্যাপারে সব রকমের প্রশাসনিক সহযোগিতা প্রদান করা হবে।