সাহেদ মূলত চতুর ধুরন্ধর ও অর্থলিপ্সু : র‌্যাব ডিজি

684

ঢাকা, ১৫ জুলাই, ২০২০ (বাসস) : রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান সাহেদকে একজন প্রতারক উল্লেখ করে র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) মহাপরিচালক (ডিজি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেছেন, সাহেদ করিম নিজেকে যতই ক্লিন ইমেজের ব্যক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চেষ্টা করুক না কেন, সে মূলত চতুর ধুরন্ধর, অর্থলিপ্সু।
তিনি বলেন, রাষ্ট্রের সনামধন্য ব্যক্তি ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সাথে তার ছবি উঠিয়ে সে মানুষের সাথে বিভিন্ন কৌশলে প্রতারনা করে আসছিল। তার বিরুদ্ধে ৫০টিও বেশি মামলা রয়েছে।
র‌্যাব ডিজি বলেন, আজকেই সাহেদ করিমকে ডিএমপি’র তদন্ত কর্মকর্তার কাছে হস্থান্তর করা হবে। পরবর্তী ব্যবস্থা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা নিবেন। যিনি তদন্ত করবেন তিনি একজন অভিজ্ঞ কর্মকর্তা, তার মেধা, দক্ষতার আলোকে এবং আইনের আলোকে উনি তার ব্যবস্থা নেবেন।
আজ বুধবার দুপুরে রাজধানীর উত্তরায় র‌্যাবের হেডকোয়ার্টার্সে আয়োজিত এক প্রেসব্রিফিংয়ে র‌্যাব ডিজি এসব তথ্য জানান।
বিকেলে গ্রেফতারকৃত সাহেদকে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের কার্যালয়ে হস্থান্তর করা হয়।
প্রেসব্রিফিংয়ে অন্যান্যদের মধ্যে র‌্যাবের গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান লে. কর্ণেল সারোয়ার বিন কাশেম, র‌্যাবের এডিজি (অপারেশন) কর্নেল তোফায়েল মোস্তফা সারোয়ার, আইনও গনমাধ্যম শাখার মূখপাত্র (পরিচালক) লে. কর্ণেল আশিক বিল্লাহ, র‌্যাব-১ এর কমান্ডিং অফিসার লে. কর্ণেল সাফী উল্লাহ বুলবুল, র‌্যাবের মিডিয়া শাখার সহকারী পরিচালক (এএসপি) সুজয় সরকার, এএসপি মোস্তাফিজুর রহমানসহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এসময় উপস্থিত ছিলেন।
র‌্যাব ডিজি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘ভুক্তভোগী যারা আমাদের কাছে আসছেন তাদেরকে আমরা আইনানুগ পরামর্শ দিচ্ছি। সহায়তা করছি, কীভাবে তিনি আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য থানায় যাবেন বা আমাদের কাছে যদি আসতে চান আমরা সে সহায়তা প্রদান করছি।
এক প্রশ্নে জবাবে র‌্যাব ডিজি বলেন, সাহেদ পালিয়ে থাকার সময় আমরা তাকে ফলো করেছি, সব পয়েন্ট যদি আমরা জানতে পারতাম তাহলে তখনই তাকে আমরা ধরতে পারতাম। আমরা যখনই জানতে পেরেছি এবং তাকে পিনপয়েন্ট করতে পেরেছি তখনই তাকে আমরা এ্যারেস্ট করেছি।
সাংবাদিকদের অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের গোয়েন্দা তৎপরতা অব্যাহত আছে। যেখান থেকে আমরা তথ্য পাচ্ছি যাচাই-বাছাই করে অভিযান পরিচালনা করেছি। এটাতো একটি চলমান প্রক্রিয়া। যেখানেই আমরা সুনির্দিষ্ট গোয়েন্দা তথ্য পাচ্ছি সেখানেই আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি।
র‌্যাবের মহাপরিচালক বলেন, ‘কিছুদিন আগে গত ১২ জুলাই আমরা এস এস এ হসপিটালে অভিযান পরিচালনা করেছি। এই হাসপাতালের মালিকের বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি। যেখানে আমরা তথ্য পাচ্ছি, সেখানেই আমরা গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করে হোক বা বিভিন্ন সূত্র হতে প্রাপ্ত তথ্য থেকে হোক যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তৎপর আছি।
র‌্যাবের ডিজি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, সাতক্ষীরা থেকে সাহেদকে গ্রেফতারের পর আমরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করেছি তারপর ঢাকায় আনা হয়েছে। ঢাকার উত্তরায় তাকে নিয়ে আমরা অভিযান পরিচালনা করেছি। সেখান থেকে আমরা ১ লাখ ৪৬ হাজার জাল টাকা উদ্ধার করেছি। আমরা যে তথ্য পাই এই তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান পরিচালনা করে থাকি।
র‌্যাব প্রধান বলেন, ধৃত সাহেদ ঢাকা থেকে অন্যত্র গিয়েছেন, আবার ঢাকাতেই এসেছেন। এক্ষত্রে কখনও তিনি নিজের ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহার করেছেন, কখনও পায়ে হেঁটে, আবার কখনও ট্রাকে কিংবা বহিরাগত গাড়ি ও ট্রাকযোগে চলাফেরা করেছেন।
তিনি বলেন, প্রাথমিক জিঞ্জাসাবাদে সে অনেক কথা বলেছে। সেসব কথা গুলো এখন তদন্তের স্বার্থে বলতে যাচিছনা। জিঞ্জাসাবাদ শেষে আজকেই তাকে হ্যান্ডওভার করা হবে।
তিনি আরও বলেন, ঘটনার পর থেকে একেক দিন একেক জায়গায় থাকতো সাহেদ। দীর্ঘ ৯ দিন সে ঢাকা, কুমিল্লা ও সাতক্ষীরাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় গা ঢাকা দিয়ে কৌশলে পালিয়ে ছিল। সরকারের নির্দেশে ও চুক্তিমতে বিনামূল্যে করোনাভাইরাসের রোগীদের পরীক্ষা করার কথা থাকলেও সাহেদ করোনা টেষ্ট্রের নামে সাড়ে ৩ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ৪ হাজার টাকা পর্যন্ত নিয়েছে। কোন কোন ক্ষেত্রে আরও বেশি টাকা কৌশলে হাতিয়ে নিয়েছে সে। এখন পর্যন্ত ১০ হাজারের অধিক পরীক্ষা করে ৬ হাজার ভুয়া রিপোর্ট দিয়েছে সাহেদের প্রতিষ্ঠান। একদিকে রোগীর কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিয়েছে, আরেক দিকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিলের জন্য জমা দিয়েছে সাহেদের হাসপাতাল রিজেন্ট।
র‌্যাবের অভিযান ও মামলা প্রসঙ্গ তুলে ধরে র‌্যাব ডিজি সাংবাদিকদেরকে বলেন, প্যাথলজিক্যাল লাইন্সেস নিয়ে ভুয়া সনদপত্র দেখিয়ে সে করোনাভাইরাসের রোগীর পরীক্ষার নমুনা সংগ্রহ করছিল। ১৭ জনের নামে উত্তরা পশ্চিম থানায় র‌্যাব বাদি হয়ে একটি মামলা দায়ের করেছেন। ওই মামলায় প্রথমে ৮জনকে আটক করা হয়। পরবর্তীতে ঢাকা ও গাজীপুর থেকে মামলার দুই নম্বর আসামী রিজেন্ট হাসপাতালের (এমডি) মাসুদ পাভেজ ও শিবলী নোমানকে আটক করা হয়েছে।