বন্যা-দূর্গতদের ত্রাণ সহায়তা কাযক্রম চালিয়ে যাওয়ার সক্ষমতা সরকারের রয়েছে : ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী

201

ঢাকা, ১৪ জুলাই, ২০২০ (বাসস) : দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান বলেছেন, বন্যা-দূর্গতদের ত্রাণ সহায়তা কাযক্রম চালিয়ে যাওয়ার সক্ষমতা সরকারের রয়েছে ।
তিনি বলেন, ‘আরও যত বড় দুর্যোগ আসুক না কেন এবং তা যতই দীর্ঘস্থায়ী হোক না কেন, দুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের মাঝে ত্রাণ সহায়তা দেয়ার মতো সক্ষমতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের আছে।’
ডা. মো. এনামুর রহমান আজ মঙ্গলবার রাজধানীর সচিবালয়স্থ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন-কক্ষে আয়োজিত ‘অন-লাইন জুমে’ দেশের সার্বিক বন্যা-পরিস্থিতি ও সরকারের ত্রাণ কার্যক্রম সম্পর্কে এক প্রেস-ব্রিফিংয়ে এ কথা বলেন। মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মহসিন এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
প্রতিমন্ত্রী এ সময় বন্যা-দুর্গত মানুষের মাঝে সরকারি ত্রাণ-সহায়তার বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, ‘বন্যার পানি আসার সাথে-সাথে মানুষের কাছে যাতে ত্রাণ পৌঁছে যেতে পারে সেজন্য বন্যা-পূর্বাভাসের পর-পরই বন্যা-প্রবন জেলাগুলোতে ৮ হাজার ২১০ টন চাল, নগদ ২ কোটি ৮২ লাখ ৫০ হাজার টাকা, ৭৪ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার, গো-খাদ্য কেনার জন্য ৪৮ লাখ টাকা এবং শিশু খাদ্য কেনার জন্য আরো ৪৮ লাখ টাকা আমরা পাঠিয়ে দিয়েছি।’ কোথাও কোথাও নদী ভাঙ্গনে ঘর ভেঙ্গেছে জেনে ঘর মেরামতের জন্য ৩শ’ বান্ডিল ঢেউটিন ও নগদ ৯ লাখ টাকা প্রদান করা হয়েছে বলেও প্রতিমন্ত্রী উল্লেখ করেন।
ডা. এনামুর রহমান বলেন, উত্তর-পূর্বঞ্চলীয় ১২টি জেলা বেশী বন্যা কবলিত হয়েছে এবং এসব জেলায় দুর্গতদের অনুপাত-হারে ১ হাজার ৩৫টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে।
তিনি বলেন, এসব আশ্রয়-কেন্দ্রে অবস্থান নেওয়া দুর্গত-মানুষের কাছে রান্না করে তৈরী খাবার পৌঁছে দিতে সংশ্লিষ্ট জেলার জেলা প্রশাসকের অনুকূলে ইতোমধ্যেই জেলা-প্রতি ৫ লাখ টাকা করে মোট ৬০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। শুধুমাত্র রান্না-করা খাবার যাতে আশ্রিতরা ঠিকমত পায় সে-লক্ষ্যেই নগদ টাকা প্রদান করা হয়।
এই মুহূর্তে বন্যা আক্রান্ত জেলার সংখ্যা ১৭টি উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী জানান, ‘দেশে মোট বন্যা আক্রান্ত ইউনিয়নের সংখ্যা ৪৬৪টি, পানিবন্দি পরিবারের সংখ্যা ২ লাখ ৯৪ হাজার ২৭৪ এবং বন্যায় মোট ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা ১৪ লাখ ৫৭ হাজার ৮২৭ জন।’
সাংবাদিদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, আমাদের মাঠ প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধি, দলীয় নেতা-কর্মী ও স্বেচ্ছাসেবকরা যদি ত্রাণসামগ্রী প্রস্তুত ও বিতরণের কাজে অংশগ্রহণ করেন তাহলে অতীতে যেমন বড় বড় বন্যা মোকাবেলা করেছি, একইভাবে এবারও বন্যা-মোকাবেলা করে মানুষের দুঃখ-কষ্টও লাঘব করতে পারব।’
ত্রাণ-তৎপরতা ছাড়াও এই ব্রিফিংয়ে প্রতিমন্ত্রী বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের সর্বশেষ তথ্যও তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, ‘ব্রহ্মপুত্র-অববাহিকায় ব্রহ্মপুত্র নদ ও যমুনা নদীর এবং গঙ্গা অববাহিকায়, পদ্মা নদীসহ অন্যান্য নদ-নদীর পানি বাড়ছে। আগামী ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে।’
অপরদিকে কুশিয়ারা ছাড়া উত্তর-পূর্বাঞ্চলের আপার মেঘনা অববাহিকায় পানির সমতল কমছে, এটা আগামী ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে এবং আগামী ২৪ ঘণ্টায় যমুনা নদীর পানি আরিচা পয়েন্টে বিপদসীমা অতিক্রম করবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
ডা. এনামুর বলেন, আগামী ২৪ ঘণ্টায় তিস্তা ও ধরলার পানি কমবে। এজন্য নীলফামারী, লালমনিরহাট, সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোণা ও রংপুরের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে। অপরদিকে কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, দিনাজপুর, বগুড়া, জামালপুর, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, নাটোর, নওগাঁ, মুন্সিগঞ্জ, ফরিদপুর, মাদারীপুর, রাজবাড়ী ও ঢাকা জেলার নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির অবনতির সম্ভাবনা রয়েছে।