বাসস ক্রীড়া-১৩ : আত্মবিশ্বাস ফিরে পেতে মনোবিদের দ্বারস্থ হয়েছিলেন পাইন

124

বাসস ক্রীড়া-১৩
ক্রিকেট-পাইন
আত্মবিশ্বাস ফিরে পেতে মনোবিদের দ্বারস্থ হয়েছিলেন পাইন
সিডনি, ১২ জুলাই ২০২০ (বাসস) : মানসিক যন্ত্রণায় সোফায় বসে কাঁদতেন অস্ট্রেলিয়ার টেস্ট দলের অধিনায়ক টিম পাইন। ব্যাটিংএ আত্মবিশ্বাস না থাকায় ও ইনজুরির কারনে, এমনটি হয়েছে বলে জানালেন পাইন।
মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে আলোচনায় ‘বাউন্স ব্যাক পডকাস্ট’-এ নিজের জীবনের সেই সব দুঃসময় নিয়ে খোলামেলা কথা বলেন পাইন।
মানসিক যন্ত্রনা পাইনের মধ্যে ভর করে ব্রিসবেনে একটি প্রদর্শনী ম্যাচে। নিজ দেশের বাঁ-হাতি পেসার ডার্ক ন্যানেসের ১৪৮ কিলোমিটার গতির একটি ডেলিভারি পাইনের আঙ্গুলে লেগেছিলো। যার প্রেক্ষিতে ইনজুরি নিয়ে দীর্ঘদিন জন্য মাঠের বাইরে ছিটকে পড়েন তিনি।
আঙ্গুলের চোটের সাথে আরও অনেক ইনজুরি ভর করেছিলো পাইনের শরীরে। তাই সাতবার অস্ত্রোপচারের মুখোমুখি হতে হয় তাকে। আর চোটের কারনে দীর্ঘদিন ক্রিকেট থেকে দূরে থাকতে হয় পাইনকে। এমন অবস্থায় মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েন তিনি।
পাইন বলেন, ‘ইনজুরির কাটিয়ে অনুশীলনে ফেরার পর আত্মবিশ্বাসীই ছিলাম। কিন্তু পেস বোলারদের খেলতে গিয়েই ঘটতো যতো বিপত্তি। যখনই বোলার দৌড় শুরু করত, আমার মনে হতো, আবার আঙ্গুলের ইনজুরিতে পড়বো। তখন দেখতাম, আমার মধ্যে কোন আত্মবিশ্বাস নেই। পুরো আত্মবিশ্বাসই হারিয়ে ফেললাম। ব্যাটিংয়ে মনোযোগে বিপত্তি ঘটতো। শুধু ভাবনায় আসতো, বল গায়ে লাগবে বা অন্য কিছু ঘটে যাবে।’
আত্মবিশ্বাসে চিড় ধরায়, ব্যাটিং করতে ভয় পেতেন পাইন, ‘লম্বা সময় ধরে রান করতে পারছিলাম না। খেতে পারছিলাম না, ঘুমাতে পারছিলাম না। প্রতিটি ম্যাচের আগেই ভয় কাজ করতো। ভয়ঙ্কর সময় ছিল তখন। আমার ব্যাটিংয়ের সময় আসলেই ভয়-আতঙ্ক শুরু হয়ে যেত। আমরা মনে হতো, আমি এবারও ব্যর্থ হব। কেউই জানত না আমার মানসিক অবস্থা। আমার সঙ্গিনী, কাছের বন্ধু কাউকেই বলতাম না আমার মনের অবস্থা।’
আত্মবিশ্বাস হারানোয় মানসিক যন্ত্রার মধ্যে পড়ে যান পাইন। তাই খেতে, ঘুমাতে বা কোন কিছুই করতে পারতেন না। অসহায়ত্বে কান্নায় ভেঙে পড়তেন তিনি, ‘আমার স্পষ্ট মনে আছে, এমনও দিন গেছে, যে স্ত্রী কাজে গেছে, আমি খালি বাসায় সোফায় বসে কাঁদছি। খুবই ভয়ানক ও যন্ত্রণাময় অভিজ্ঞতা সেটি, ব্যাখা করা কঠিন। আমরা মনে হতো, আমি মানুষকে হতাশ করছি। আমি পারফরমেন্সে ব্যর্থ হচ্ছি।’
দীর্ঘদিন অসহায়ত্বের মধ্যে পা করে দেয়ায়, বাধ্য হয়ে তাসমানিয়ার ক্লাবের মনোবিদের কাছে যান পাইন। মনোবিদই তার মধ্যে আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দেন বলে জানান পাইন। তিনি বলেন, ‘আমি তাসমানিয়ার মনোবিদকে প্রথমবারের মত আমার মনে অবস্থার কথা বলি। তার কাছে দিয়ে সবকিছু খুলে বলি। ২০-২৫ মিনিটের মত তার সাথে আলাপ হয় আমার। মনে পড়ে, তার রুম থেকে বের হবার পর নিজের মধ্যে পরিবর্তন লক্ষ্য করলাম। মনে হলো, আমি আত্মবিশ্বাস ফিরে পাচ্ছি। তখন মনে হলো, তার কাছে আরও আগে আমার যাওয়া উচিত ছিল।’
অস্ট্রেলিয়ার সাবেক অধিনায়ক স্টিভেন স্মিথ ও সহ-অধিনায়ক ডেভিড ওয়ার্নার বল-বিকৃতির দায়ে এক বছর ক্রিকেটে নিষিদ্ধ ছিলেন। স্মিথ-ওয়ার্নার না থাকায়, চরম বিপর্যয় নেমে আসে অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেটে। ঐ সময় শক্ত হাতে দলের হাল ধরেন পাইন।
সাত বছর পর ২০১৭-১৮ অ্যাশেজ সিরিজে অধিনায়ক হিসেবে অস্ট্রেলিয়ার টেস্ট দলে ডাক পান। এরপর থেকে যোগ্য নেতার মত দলকে নেতৃত্ব দিয়ে চলেছেন তিনি। আর তার নেতৃত্বেই গেল পহেলা মে টেস্ট ফরম্যাটের র‌্যাংকিংএর শীর্ষে উঠে অস্ট্রেলিয়া।
বাসস/এএমটি/১৯৩০/স্বব