চট্টগ্রামে কোরবানির পশুর সংকট নেই

212

চট্টগ্রাম, ১২ জুলাই, ২০২০ (বাসস) : চট্টগ্রামে কোরবানির পশুর সংকট নেই। বরং চাহিদার চেয়ে বেশি পশু কোরবানির সময়ে চট্টগ্রামের বাজারে থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এবার চট্টগ্রামে কোরবানির জন্য সম্ভাব্য পশুর চাহিদা ধরা হয়েছে ৭ লাখ ৩০ হাজার। কোরবানিকে উদ্দেশ্য করে চট্টগ্রামের ১৫ উপজেলা ও নগরের তিনটি থানায় ৬ লাখ ৯০ হাজার পশু লালন-পালন করা হয়েছে। প্রতিবছর অন্যান্য জেলা বিশেষকরে উত্তরবঙ্গের কয়েকটি জেলা থেকে এক থেকে দেড় লাখ পশু আনা হয় স্থানীয় বাজারে বিক্রির জন্য।
মৌসুমী সৌখিন ব্যবসায়ীরা প্রতিবছর এককভাবে অথবা কয়েকজনে মিলে এসব পশু এনে থাকেন। এবার অন্য জেলা থেকে এক লাখ পশু যোগ হলেও চট্টগ্রামে কোরবানির পশুর সংখ্যা দাঁড়াবে ৭ লাখ ৯০ হাজার। ফলে চাহিদার চেয়ে প্রায় ৬০ হাজার বেশি পশু মজুদ থাকার কথা।
জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় সূত্র জানায়, চট্টগ্রামে ১৪শ’ গরুর খামার রয়েছে। এরমধ্যে কর্ণফুলী উপজেলার শিকলবাহা, পটিয়া ও আনোয়ারা এলাকায় সবচেয়ে বেশি খামার রয়েছে। শুধুমাত্র শিকল বাহায় রয়েছে প্রায় ৫০০টি খামার। এছাড়া, চন্দনাইশ, সাতকানিয়া ও বাঁশখালীতে প্রায় প্রতিঘরে এক বা একাধিক গরুপালন ও মোটা তাজাকরা হয় কোরবানি উপলক্ষে।
চসিক সূত্রে জানা গেছে, নগরে এবার তিনটি স্থায়ীসহ সাতটি কোরবানি পশুরহাট বসবে। এরমধ্যে অস্থাায়ী বাজারগুলো হচ্ছে কর্ণফুলী পশুর বাজার, কমল মহাজন হাট পশুবাজার, সল্টগোলা গরুর বাজার ও ৪১ নংওয়ার্র্ড বাটার ফ্লাই পার্কের দক্ষিণে টিকে গ্রুপের খালি মাঠ। স্থায়ী বাজারগুলো হচ্ছে সাগরিকা পশুরবাজার, বিবিরহাট গরুর হাট ও পোস্তার পাড় ছাগলের বাজার।
সাগরিকা বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকার খামারি ও উত্তরাঞ্চলের ব্যবসায়ীরা নিজেদের লালন-পালনকরা গরু এনেছেন বিক্রিরজন্য। এখনো বিকিকিনি শুরু হয়নি। সাধারণত জিলহজ মাসের চাঁদ দেখা যাওয়ার পর বেপারিরা কোরবানির পশু বিক্রিতে আগ্রহ দেখিয়ে থাকেন। তার আগে কোরবানিদাতারাও গরু-ছাগল নিতে চাননা। বেশ কয়েকদিন ঘরে রেখে লালন-পালনের ঝক্কি-ঝামেলার সাথে রোগ-বালাইয়ের শঙ্কাও থাকে। সাধারণত ঈদুল আজহার এক সপ্তাহের মধ্যে কোরবানির পশু বিকিকিনির তোড়জোড় শুরু হয়।
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের অস্থায়ী ইজারা দেয়া চারটি পশুরহাট এখনও শুরু হয়নি। স্থায়ী তিনটি বাজারের একটি, সাগরিকার ইজারাদার বলেন, ‘সাধারণত এ সময়ে পশু বেচাকেনা হয়না, এবারও হচ্ছেনা। তবে, করোনার কারণে এবার লোকসানের ভয় হচ্ছে। যদিও আমরা করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি রোধে পর্যাপ্ত প্রস্ততি নিয়েই বাজার পরিচালনা করছি। স্বাস্থ্য বিধিমানার ব্যাপারে ক্রেতা ও ব্যবসায়ীদের সচেতন করা হচ্ছে। বাজারে আসার ব্যাপারে মানুষের ভীতি কতটুকু কমানো যাবে সেটা সময়ই বলে দেবে।’
এদিকে, এবার কোরবানিদাতাদের মধ্যেও এক ধরণের দ্বিধা-শঙ্কা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বাজারে গিয়ে কোরবানির পশু কেনাকে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি হিসেবে মনে করছেন অনেকে। কেউ-কেউ কোরবানির পশুর সংখ্যা কমিয়ে ফেলবেন বলে ঠিক করেছেন এবং সংগ্রহের ক্ষেত্রেও বিকল্প পন্থার ওপর জোর দিচ্ছেন।
বিকল্প পন্থার সুযোগটি খুব বেশি করে মানুষের সামনে তুলে এনেছেন বেশকিছু প্রতিষ্ঠিত খামার। এবার আগে থেকে তারা তাদের খামারে গরু-ছাগল রাখবেন, অনলাইনে এসব পশুর ছবি সহ বিস্তারিত ব্যাখ্যা থাকবে, অনলাইনে দরদামও করা যাবে। সব ফাইনাল হলে ক্রেতারা হয় খামারে গিয়ে চুড়ান্ত ভাবে পছন্দ করে পেমেন্ট করে গরু নিয়ে আসবেন অথবা বিক্রেতাকে আস্থায় রেখে অনলাইনে পেমেন্ট করে গরু পাঠিয়ে দিতে বলবেন। ইতিমধ্যে বেশকিছু এগ্রোফার্ম তাদের নিজস্ব ওয়েবসাইট এবং ফেসবুকে পেজ খুলে গরুর ছবি ও দাম উল্লেখ করে নির্দিষ্ট নম্বরে যোগাযোগ করতে বলেছেন।
চট্টগ্রাম চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম বাসসকে জানান, হাটে গিয়ে পশু কেনা এবং কোরবানির দিন জবাই ও বিলি-বণ্টন কালে করোনার স্বাস্থবিধি পুরোপুরি মেনে চলা সম্ভব নয়। এজন্য একটু বেশি সচেতন ও সংকোচন নীতি অনুসরণের তাগিদ দেন তিনি।
তিনি বলেন, সামর্থবান অনেকে অধিক পশু দিয়ে কোরবানি দিয়ে থাকেন। এবার তারা ইচ্ছ করলে সংকোচন নীতি মেনে কম পশু জবাই দিতে পারেন। এ ক্ষেত্রে কোরবানির জন্য বাজেটের অর্থ অসচ্ছল পরিবারকে দান অথবা করোনা রোগীর চিকিৎসায় ব্যয় করতে পারেন। একজন মানুষের জীবন বাঁচানোর চেষ্টার চেয়ে মহৎ কোনো কাজ নেই বলে জানান তিনি।