বাজিস-১ : আমার বাড়ি, আমার খামার প্রকল্পে’ কুমিল্লায় স্বাবলম্বী হচ্ছে হতদরিদ্ররা

141

বাজিস-১
কুমিল্লা-আমার বাড়ি
আমার বাড়ি, আমার খামার প্রকল্পে’ কুমিল্লায় স্বাবলম্বী হচ্ছে হতদরিদ্ররা
॥ কামাল আতাতুর্ক মিসেল ॥
কুমিল্লা (দক্ষিণ), ১২ জুলাই, ২০২০, (বাসস) : মোঃ রেজু মিয়া সারাজীবন পরের জমিতে শ্রমিকের কাজ করেছেন। দিন এনে দিন খেয়েছেন। তাও দুবেলা। কোনো সঞ্চয় করতে পারেননি। কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার কাদুটিতে তার গ্রাম। ভেবেছিলেন জীবনটা এভাবেই কেটে যাবে। কিন্তু তার সে দুর্দিন আর এখন আর নেই। ঘুচে গেছে। সরকারের ‘আমার বাড়ি আমার খামার’ প্রকল্প বদলে দিয়েছে তার জীবন।
প্রকল্পের অধীনে গ্রাম উন্নয়ন সমিতির সদস্য হয়েছেন রেজু মিয়া। সমিতি থেকে ঋণ নিয়ে বাড়ির পাশে শাক-সবজি চাষ শুরু করেন। গরু পালন করেন। এছাড়া গ্রাম উন্নয়ন সমিতির সঞ্চয় জমা করে এককালীন ১৪ হাজার টাকাও পেয়েছেন তিনি। এভাবে রেজু মিয়া স্বল্প পুঁজি গড়ে তোলেন। সবজি ও গরু বিক্রি করে ওই পুঁজিকে ক্রমান্বয়ে আরো বড় করেন। এখন রেজু মিয়া আর কামলা খাটেন না। রেজু এখন নিজেই স্বাবলম্বী।
আমার বাড়ি, আমার খামার প্রকল্পের উদ্যোগ বদলে দিয়েছে তার ভাগ্যের চাকা। শুহিলপুর গ্রাম উন্নয়ন সমিতির আরেক সুবিধাভোগী সদস্য নাজমা বেগম। একমাত্র ছেলেকে নিয়ে অনেক কষ্টে তার জীবন কাটছিল। ‘আমার বাড়ি, আমার খামার’ প্রকল্পের আওতায় আর্থিক অনুদান নিয়ে তিনি একটি গাভী, হাঁস-মুরগি পালন শুরু করেন। এতে তার আর্থিক অনটনতো দূর হয়েছে, ছেলেকেও স্কুলে পড়াতে পারছেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অগ্রাধিকারমূলক ‘আমার বাড়ি আমার খামার’ প্রকল্প বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে কুমিল্লাসহ সারাদেশে এ প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় কাজ করে যাচ্ছে। প্রকল্প এলাকার উপজেলাগুলোতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিয়ন্ত্রণে এসব প্রকল্পের বাস্তবায়ন করা হচ্ছে সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে। প্রকল্প সমন্বয়ে রয়েছেন জেলা প্রশাসক। প্রকল্পটির লক্ষ্য দারিদ্র্য দূরীকরণ, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন, স্থানীয় সম্পদ আহরন ও তার যথাযথ ব্যবহার, উন্নয়নমূলক ও আয়বর্ধক কর্মকান্ডে গ্রামের দরিদ্র জনগোষ্ঠী বিশেষ করে নারীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা।
এ প্রসঙ্গে আমার বাড়ি আমার খামার প্রকল্পের কুমিল্লার জেলা সমন্বয় কারী মোঃ নাজমুল হক বাসসকে জানান, ‘সরকার এ প্রকল্পের আওতায় তহবিল সংগ্রহ ও খামার গড়ে তোলার মাধ্যমে দারিদ্র্য নিরসন এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য কুমিল্লায় দরিদ্র মানুষের আত্মনির্ভরশীল হওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
তিনি জানান, এ পর্যন্ত কুমিল্লায় মোট ৩ হাজার ৫৬টি গ্রাম উন্নয়ন সমিতি গঠন করা হয়েছে। এর মাধ্যমে ৭০ হাজার দরিদ্র ও হতদরিদ্র মানুষ প্রকল্পের বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা নিয়ে তাদের জীবন মান উন্নত করছে। তিনি আরও বলেন, প্রকল্পের সুবিধাভোগীরা এ পর্যন্ত মোট ২৩ কোটি ৪ লাখ ৬৫ হাজার টাকা সঞ্চয় করেছে এবং সরকার এ সঞ্চয়ের সঙ্গে ২১ কোটি ৭৮ লাখ ৮৭ হাজার টাকা সঞ্চয় বোনাস দিয়েছে। শুধু তাও নয় সরকার এছাড়াও আবর্তক ঋণ তহবিল হিসেবে ৬৭ কোটি ১২ লাখ ৪৫ হাজার টাকা দিয়েছেন।
কুমিল্লার ‘আমার বাড়ি আমার খামার’ প্রকল্পের আওতাধীন পল্লী সঞ্চয়ী ব্যাংক (পিএসবি) এর জেলা কার্যালয়ের দায়িত্ব প্রাপ্ত কর্মকর্তা মুনতাজের রাশেদী বাসসকে বলেন, পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক (পিএসবি)’র ১৬টি শাখা থেকে আর্থিক সহায়তা নিয়ে কুমিল্লার ১৬টি উপজেলায় মোট ৫০,৫১৯ জন দরিদ্র ও অতি দরিদ্র পরিবারকে স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছেন।
তিনি বলেন, জামানত-বিহীন আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে এবং তাদের ক্ষুদ্র সঞ্চয়কে একটি চক্রবৃদ্ধি ঋণ প্রকল্পের আওতায় নিয়ে আসছে। তিনি বলেন, ২০১৬ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে পিএসবি গ্রামীণ দরিদ্রদের জামানত-বিহীন ঋণ সরবরাহের মাধ্যমে সুবিধা বঞ্চিত মানুষদের বিশেষত মহিলা উদ্যোক্তাদের আর্থিক সেবা সুবিধার আওতায় নিয়ে আসার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে।
কুমিল্লার সদর দক্ষিণ উপজেলার বেলঘর উত্তর ইউনিয়নের উন্দ্রানিয়া গ্রামের মফিজুল ইসলাম বলেন, ‘আমার বাড়ি, আমার খামার থেকে তিনি যে উপকার পেয়েছেন তা বলার মত নয়। ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে গেলে বিভিন্ন কাগজপত্র, সুদ, ঘুষ দিতেহয়। আর সেখান থেকে তিনি সহজ শর্তে দুফায় ৪৫ হাজার ঋণ নিয়ে একটি গরু কিনেছেন। বর্তমানে গরুটির মূল্য ৮০ হাজার টাকা। সরকারের এ প্রকল্পটি কথা যদি আরও ৫ বছর আগে জানতম তাহলে আরো আগেই বেশি উপকৃত হতাম।’
কুমিল্লা জেলা প্রশাসক আবুল ফজল মীর বাসসকে জানান, আমার বাড়ি, আমার খামার প্রকল্প দারিদ্র্য বিমোচনে প্রধানমন্ত্রীর একটি অগ্রাধিকারমূলক কর্মসূচি। কুমিল্লায় জেলায় এ কর্মসূচি সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়িত হচ্ছে। এ প্রকল্প দারিদ্র্য দূরীকরণে ব্যাপক ভূমিকা পালন করছে।
বাসস/সংবাদদাতা/১১১৫/নূসী