বাসস প্রধানমন্ত্রী-২ (দ্বিতীয় ও শেষ কিস্তি) : চাঁদাবাজি টেন্ডারবাজি সন্ত্রাস ও মাদক নির্মূলে কঠোর ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রশাসকদের প্রতি নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

153

বাসস প্রধানমন্ত্রী-২ (দ্বিতীয় ও শেষ কিস্তি)
শেখ হাসিনা- জেলা প্রশাসক সম্মেলন
চাঁদাবাজি টেন্ডারবাজি সন্ত্রাস ও মাদক নির্মূলে কঠোর ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রশাসকদের প্রতি নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

একটি দেশের উন্নয়নে দেশে গণতন্ত্র বিদ্যমান থাকা এবং সরকারের ধারাবিহিকতা বজায় থাকা অত্যন্ত জরুরি বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা একটানা দুই মেয়াদে প্রায় সাড়ে ৯ বছর সরকার পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছি। এরফলে আমরা অনেক উন্নয়ন কাজ সম্পন্ন করতে পেরেছি। আর্থ-সামাজিক খাতে আজ বাংলাদেশের যে অভাবনীয় অগ্রগতি, তা সম্ভব হয়েছে এই ধারাবাহিকতা বজায় থাকার জন্য।
জাতিসংঘের স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আর্থ-সামাজিক সূচকের ক্ষেত্রে আমরা শুধু দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলিকে নয়, অনেক উন্নত দেশকেও ছাড়িয়ে যেতে পেরেছি।
তিনি দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নের চুম্বক অংশ তুলে ধরে বলেন, তাঁর সরকার ধারাবাহিকভাবে প্রবৃদ্ধির উচ্চ হার বজায় রাখতে সক্ষম হয়েছে। গত অর্থ-বছরে প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ৭ দশমিক ৭৮ শতাংশে। আর মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশের নিচে রাখতে সক্ষম হয়েছে। বর্তমানে এই মূল্যস্ফীতির পরিমান ৫ দশমিক ৪ শতাংশ।
তিনি বলেন, মাথাপিছু জাতীয় আয় ২০০৬ সালের ৫৪৩ মার্কিন ডলার থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ১ হাজার ৭৫২ মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে। ২০০৫-০৬ অর্থ-বছরে বাজেটের আকার ছিল ৬৩ হাজার কোটি টাকা। ২০১৮-১৯ অর্থ-বছরে বাজেটের আকার দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকায়। ২০০৫-০৬ অর্থ-বছরে এডিপি’র আকার ছিল ২৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। ২০১৮-১৯ অর্থ-বছরে এডিপি’র আকার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৭৩ হাজার কোটি টাকা। দারিদ্র্যের হার ২০০৬ সালের ৪১ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে হ্রাস পেয়ে বর্তমানে ২২ শতাংশে নেমে এসেছে। শিক্ষার হার বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার আমলের ৪৫ শতাংশ থেকে ৭৩ শতাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রত্যন্ত অঞ্চলের ২৮ লাখ ৪০ হাজার স্কুল শিক্ষার্থীকে ‘মিড-ডে মিল’ কর্মসূচির আওতায় আনা হয়েছে এবং প্রায় ২ কোটি ৩ লাখ ছাত্রছাত্রীকে বিভিন্ন ধরনের উপবৃত্তি এবং বৃত্তির আওতায় আনা হয়েছে।
‘উপবৃত্তির টাকা মোবাইল ব্যাংকিং-এর মাধ্যমে সরাসরি মায়েদের একাউন্টে পাঠানো হচ্ছে। এসব কর্মসূচির ফলে বাংলাদেশের বিদ্যালয়গামী প্রায় সবশিশু আজ বিদ্যালয়ে যাচ্ছে। ঝরে পড়া বন্ধ হয়েছে, ’বলেন প্রধানমন্ত্রী।
সারাদেশে প্রায় সাড়ে ১৮ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। যেখান থেকে বিনামূল্যে ৩০ প্রকারের ওষুধ প্রদান করা হচ্ছে, – যোগ করেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, দারিদ্র নিরসন এবং বৈষম্য দূর করে আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে তাঁর সরকার পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার পাশাপাশি ১০ বছর মেয়াদি প্রেক্ষিত পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে।
তিনি এ সময় ২০২১ সাল থেকে ২০৪১ সালের বাংলাদেশকে আমরা কেমন দেখতে চাই সেই প্রেক্ষিত পরিকল্পনা প্রণয়নের কাজ চলছে উল্লেখ করে জেলা প্রশাসকদের এসব পরিকল্পনা প্রণয়নে তাঁদের অভিজ্ঞতালব্দ জ্ঞানের সন্নিবেশন ঘটানোর আহবান জানান।
সরকার প্রধান বলেন, তাঁর সরকার দুর্নীতি দমন ও শুদ্ধাচার প্রতিষ্ঠায় ‘জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট তথ্য প্রকাশ (সুরক্ষা) বিধিমালা, ২০১৭’ প্রণয়ন করেছে। সাধারণ মানুষের সেবা প্রাপ্তিতে যেকোন সমস্যা নিরসনে গণশুনানি কার্যক্রম চলমান রয়েছে। সরকারি কাজে গতিশীলতা আনয়নে সকল সরকারি দপ্তরে ই-সেবার পাশাপাশি পর্যায়ক্রমে ই-ফাইলিং বাস্তবায়ন ও সম্প্রসারণ করা হচ্ছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।
সরকারি সেবা পেতে সাধারণ মানুষ যাতে কোনভাবেই হয়রানি বা বঞ্চনার শিকার না হন, সেদিকে কঠোর নজরদারি রাখা এবং চলমান মাদকবিরোধী অভিযান অব্যাহত রাখাসহ অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসকদের ২৩ দফা নির্দেশনা প্রদান করেন প্রধানমন্ত্রী ।
২৩ দফা নির্দেশনা ছাড়াও জাতীয় গৌরব, মুক্তিযুদ্ধ এবং ভাষা আন্দোলন সম্পর্কে আগামী প্রজন্মকে জানানোর জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পর্যায়ে বিভিন্ন প্রতিযোগিতার আয়োজন, পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা, ট্রাফিক রুল সম্পর্কে গণসচেতনতা গড়ে তোলা এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সচেতনতা গড়ে তোলার আহবান জানান তিনি।
শেখ হাসিনা তাঁর রাজনৈতিক অঙ্গীকার পুণব্যক্ত করে বলেন, বাংলাদেশকে আমরা ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়তে চাই। এজন্য সকলকে যার যার জায়গা থেকে কাজ করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগামীতে দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে ঢাকা- চট্টগ্রাম, সিলেট, দিনাজপুর এবং বরিশালের মধ্যে বুলেট ট্রেন (দ্রুতগতির ট্রেন) চালুর পরিকল্পনা তাঁর সরকারের রয়েছে।
তিনি এ সময় রেল যোগাযোগের পরিসর আরো বাড়ানোর জন্য ঢাকা থেকে বরিশালসহ পায়রা বন্দর পর্যন্ত রেল যোগাযোগ স্থাপন এবং ভবিষ্যতে বিমান ও হেলিকপ্টার নির্মাণের লক্ষ্যে লালমনির হাটে একটি অ্যারোনটিক্যাল সেন্টার স্থাপনের পরিকল্পনার কথাও উল্লেখ করেন।
প্রধানমন্ত্রী জেলা প্রশাসকদের উদ্দেশ্যে আরো বলেন, সরকারের একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প, কমিউনিটি ক্লিনিক, শিক্ষা ও সামাজিক উন্নয়নে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে।
তিনি বলেন, আমাদের দেশে ছোট ছোট জমি চাষ করার চাইতে কিভাবে জমি বড় করে সমবায়ভিত্তিক চাষাবাদ করা যায় তা দেখতে হবে। এছাড়া কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। এটা হলে বাংলাদেশের কৃষিপণ্য যেমন বিদেশে বাজার পাবে তেমনি দেশেও বিক্রি করা যাবে।
বাসস/এএসজি-এফএন/একেএইচ/১৫৩৫/আরজি