যুক্তরাজ্যের মানবাধিকার কর্মী জুলিয়ান ফ্রান্সিসের স্বপ্ন পূরণ হলো

766

ঢাকা, ২৩ জুলাই, ২০১৮ (বাসস) : ব্রিটিশ মানবাধিকার কর্মী জুলিয়ান হেনরি ফ্রান্সিস আজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে নাগরিকত্বের সনদ গ্রহণ করেছেন। এর ফলে বাংলাদেশের নাগরিক হওয়ার স্বপ্ন পূরণ হলো তার।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে তার অবদান এবং মানবতার প্রতি সেবার স্বীকৃতি স্বরূপ বাংলাদেশ সরকার ৭৩ বছর বয়স্ক এই মানবতাবাদীকে নাগরিকত্ব প্রদান করে। জুলিয়ান ফ্রান্সিস দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশে বসবাস করে আসছেন।
আজ বিকেলে গণভবনে এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জুলিয়ান ফ্রান্সিসের হাতে বাংলাদেশের নাগরিকত্বের সনদ তুলে দেন। প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের একথা জানান।
প্রেস সচিব বলেন, নাগরিকত্ব গ্রহণ করে ফ্রান্সিস অভিভূত হয়ে বলেন, ‘এটি আমার প্রতি এক বিরাট সম্মান।’ ফ্রান্সিস ১৯৭২ সালের ২০ জানুয়ারি প্রথম বাংলাদেশে আসেন। তিনি বর্তমান সরকারের আমলে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে এখন আর মঙ্গা নেই।’
এ সময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, প্রধানমন্ত্রীর কন্যা ও বিশিষ্ট অটিজম বিশেষজ্ঞ সায়মা ওয়াজেদ হোসেন, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. নজিবুর রহমান এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিরাপত্তা বিভাগের সচিব ফরিদ উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অসামান্য অবদানের জন্য ২০১২ সালের মার্চে ফ্রান্সিসকে ‘ফ্রেন্ডস অব বাংলাদেশ’ সম্মাননা প্রদান করা হয়।
বাংলাদেশী বন্ধুদের কাছে জুলিয়ান ভাই হিসেবে পরিচিত ফ্রান্সিস ১৯৬৮ সালে ভারতের বিহারে অক্সফামের একটি প্রকল্পে যোগ দেন। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ভারতে আশ্রয় নেয়া বাংলাদেশ শরণার্থী শিবিরে তিনি কাজ শুরু করেন।
তিনি ১৯৭১ সালে অক্সফামের ত্রাণ তৎপরতায় সমন্বয় করেন। ভারতের সীমান্ত এলাকাগুলোতে তখন অক্সফাম বাংলাদেশী শরণার্থী শিবিরগুলোতে সহায়তা প্রদান করে।
স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় থেকেই ফ্রান্সিস বাংলাদেশের ত্রাণ ও উন্নয়ন কর্মকান্ডের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন।
ফ্রান্সিসের জন্ম ১৯৪৮ সালের ২৯ এপ্রিল যুক্তরাজ্যের মলভারেনে। ১৯৭২ সালের ২০ জানুয়ারি তিনি প্রথম বাংলাদেশে আসেন এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
জাতির পিতার পরামর্শে এবং অক্সফামের সহায়তায় তিনি কস্তুরি, কামিনী এবং করবী এ তিনটি ফেরী সংগ্রহ করেন। ফ্রান্সিস ১৯৭৮ থেকে ১৯৮৩ সাল পর্যন্ত বেশ কয়েকবার বাংলাদেশ সফর করেন এবং শারীরিকভাবে অক্ষম ব্যক্তিদের সেবায় আত্মনিয়োগ করেন। এছাড়া ১৯৮৭ ও ’৮৮ সালের বন্যায় এবং ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সহায়তায় তিনি কাজ করেন।
১৯৯৭ সালে ঐতিহাসিক পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তির পর তিনি রেড ক্রস/রেড ক্রিসেন্টের কর্মকান্ডের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন। তিনি সিএলপি কর্মসূচির মাধ্যমে অতিদরিদ্র মানুষের জীবনমান উন্নয়নেও কাজ করেন।
ফ্রান্সিস তার বাকি জীবন বাংলাদেশের মাটিতে কাটানোর ইচ্ছা প্রকাশ করেন। তিনি যুক্তরাজ্যে বসবাসরত তার বোন এবং দুই সন্তানের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষায় ব্রিটিশ নাগরিকত্ব অক্ষুণœ রেখে বাংলাদেশের নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করেন।