বাসস বিদেশ-৬ : পশ্চিম তীর অন্তর্ভূক্তিকরণ প্রস্তাবে ইসরাইলী পদক্ষেপের বিরুদ্ধে রামাল্লায় রাস্তায় প্রতিবাদ আন্দোলনের প্রস্তুতি

150

বাসস বিদেশ-৬
ইসরাইল-ফিলিস্তিনী
পশ্চিম তীর অন্তর্ভূক্তিকরণ প্রস্তাবে ইসরাইলী পদক্ষেপের বিরুদ্ধে রামাল্লায় রাস্তায় প্রতিবাদ আন্দোলনের প্রস্তুতি
রামাল্লাহ, ফিলিস্তিনী অঞ্চল, ৩০ জুন, ২০২০ (বাসস ডেস্ক) : লাউড স্পিকারে ঘোষণার সাথে সাথে ফিলিস্তিনের পতাকা উত্তোলিত হয়েছিল এবং সরকারি কর্মচারীরা অনুমতি পেয়েছিল কাজ বন্ধ করার, দখলকৃত পশ্চিম তীরে ইসরাইলের অন্তর্ভূক্তিকরণের পরিকল্পনার বিরুদ্ধে রামাল্লায় একটি বিশাল প্রতিবাদের জন্য সবকিছুই প্রস্তুত করা হয়েছিল। কিন্তু ৮ ই জুনের ওই বিক্ষোভে অংশগ্রহন করে মাত্র ২০০ জন। ওই বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন ফিলিস্তিনী কর্তৃপক্ষের (পিএ) ইসরাইলের সম্ভাব্য পদক্ষেপের বিরুদ্ধে রাস্তায় ক্ষোভ সৃষ্টির প্রয়াসের ইঙ্গিত দেয়। খবর এএফপি’র।
১ জুলাই ইহুদিবাদী রাষ্ট্রটি মার্কিন প্রস্তাবিত মধ্যপ্রাচ্য শান্তি পরিকল্পনার অংশ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে প্রথম পদক্ষেপ নিতে গেলে ইসরাইলি অন্তর্ভূক্তি নিয়ে আন্তর্জাতিক নিন্দাবাদ ভীষণভাবে বেড়ে যায়।
এদিকে, ট্রাম্পের প্রস্তাবসমূহে পশ্চিম তীরের জনবসতিসহ বেশিরভাগ অংশে সংখ্যাগরিষ্ঠের দখলকে অবৈধ বিবেচনায় নিয়ে পশ্চিম তীরের মূল অংশগুলি অন্তর্ভূক্তির পথকে সুগম করা উদযোগকে পুরোপুরিভাবে প্রত্যাখ্যান করে ফিলিস্তিনীরা। কিন্তু ইসরাইলিদের পদক্ষেপ ক্রমান্বয়ে কিছুটা কমে যাওয়ায় ফিলিস্তিনের রাস্তার আন্দোলন স্থিমিত হয়ে যায়।এরই প্রেক্ষাপটে পশ্চিম তীর অন্তর্ভূক্তি প্রস্তাবের বিরুদ্ধের এ্ই আন্দোলনে ফিলিস্তিন জনসাধারণ ও নেতাদের মধ্যে দূরত্বের কারণে রাস্তার আন্দোলন সংহত নয় বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। ভাইরাস পরিস্থিতি, দীর্ঘদিন কোনো নির্বাচন না হওয়া, ফিলিস্তীন নেতাদের হতাশাজনক মনোভাবের কারণে এ ধরণের দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করছেন তারা।
ফিলিস্তিনী বিশ্লেষক নূর ওদেহ এএফপি’র কাছে এ সম্পর্কে মন্তব্য করেছেন, ‘ক্লান্তি দেখা দিয়েছে।’
এদিকে ট্রাম্পের পরিকল্পনার নিন্দা জানিয়ে সোমবার পশ্চিম তীরের শহর জেরিকোতে একটি বড় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়, সেখানে ঐক্যবদ্ধ হয়ে গান গাওয়া হয় এবং ‘ফিলিস্তিন বিক্রির জন্য নয়’ এ ধরণের ঘোষণা সম্বলিত ব্যানার টানানো হয়। ফিলিস্তিন মুক্তি সংস্থা ও ফাতাহ পার্টির আয়োজকগণ তালিকা করা বাসের কয়েক হাজার যাত্রিকে সমাবেশে নিয়ে আসে, তবে অনেকেই বক্তৃতা শুরুর আগেই সেখান থেকে চলে যান।
ফিলিস্তিন নেতারা অনেকাংশে হতাশগ্রস্ত উল্লেখ করে ওদেহ বলেন, তারা ‘আলোচনার মাধ্যমে শান্তি আনার শ্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তাতে তারা ব্যর্থ হয়েছেন।’
ইসরাইল ১৯৬৭ সালে ছয় দিনের যুদ্ধে পশ্চিম তীরে দখল করে নেয়। ১৯৯৩ সালে ইসরাইল-ফিলিস্তিন সংঘাতের অবসান ঘটাতে এবং পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনী স্বায়ত্তশাসনের সুযোগ তৈরির লক্ষ্যে ওসলো শাস্তি চুক্তি করা হয়। তবে প্রায় তিন দশক পরে ইসরাইেলের সাথে গ্রহনযোগ্য একটি চুক্তির সুরক্ষা নিয়ে কিছু সংখ্যক ফিলিস্তিনী তাদের নেতাদের ক্ষমতা নিয়ে শংকিত হয়ে পড়েন।
শিক্ষাবিদ ও সাবেক পিএ কর্মকর্তা ফর ঘাসন খতিব মন্তব্য করেছেন, ফিলিস্তিন জনসাধারণ এবং তাদের নেতাদের মধ্যে সৃষ্ট “ দুরত্ব “অন্তর্ভূক্তির সম্ভাবনা সম্পর্কে উদাসীনতার ভাব প্রকাশ করে। খতিব এই ব্যবধানের জন্যে ‘নির্বাচনের অনুপস্থিতিকে’ কিছুটা দায়ী করেন।
ফিলিস্তিনী বয়োজেষ্ঠ নেতৃত্ব ও একটি তরুণ জনগণের মধ্যে যোগাযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে সর্বশেষ ২০০৬ সালে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ওই নির্বাচনটি গাজা উপত্যকায় ইসলামপন্থী দল হামাসের ক্ষমতা গ্রহণের এক বছর আগে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ফাতাহ দল হামাসের প্রতিদ্বন্দ্বী ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস এর আগে একাধিকবার নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি দেন, তবে তিনি তা পুরণ করেননি।
জেরুজালেম মিডিয়া অ্যান্ড কমিউনিকেশনস সেন্টার ( জেএমসিসি) এবং জার্মান ফ্রিডরিচ-এবার্ট-স্টিফটং ফাউন্ডেশনের এই সপ্তাহে প্রকাশিত একটি জরিপে দেখা গেছে যে ৮৩ শতাংশ ফিলিস্তিনী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়া জরুরি বলে মনে করছেন। ‘কার উপর সবচেয়ে বেশি আস্থা রয়েছে?’ জানতে চাইলে উত্তরদাতাদের মাত্র ১৩ শতাংশ ‘৮৫ বছর বয়সী আব্বাসের নাম উল্লেখ করেছেন। তবে ৭৬ শতাংশ তার পিএ-এর নেতৃত্ব দূর্নীতিগ্রস্ত বলে বর্ণনা করেছেন। খতিব উল্লেখ করেন, ফিলিস্তিনীরা পশ্চিম তীরে করোনাভাইরাস সংক্রমণের নতুন উত্থানের পাশাপাশি এ মহামারী দ্বারা ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক সংকটের মুখোমুখি হওয়ার প্রাক্কালে এই অন্তর্ভূক্তি প্রস্তাবের হুমকির মধ্যে পড়েছে।
‘এই সময়ে জনগণের মাথায় নানান সমস্যা’ যা তাদের সুসংহত হতে দিচ্ছে না’ বলে খতিব মত দেন। তিনি আরো বলেন, ফিলিস্তিনী জনসাধারণের মধ্যে কেউ কেউ নতুন অন্তর্ভূক্তিকে দেখেছেন দীর্ঘদিন ধরে ইসরাাইল পরিচালিত ‘একত্রে দখল’ প্রচারের ধারাবাহিকতা হিসেবে। তারা (সম্ভবত) মনে করছেন (সংযুক্তি) এ ব্যবস্থা তাদের প্রতিদিনের জীবনে নাটকীয় প্রভাব ফেলবে না।’
ফিলিস্তিন বিশ্লেষক ওদেহ ইসরায়েলের এই অন্তর্ভূক্তির পদক্ষেপের বিষয়ে ফিলিস্তিনীদের প্রতিক্রিয়ার জন্য সাম্প্রতিক বিক্ষোভের মাত্রাকে ‘ব্যারোমিটার’ হিসেবে ব্যবহারে সতর্ক করেন। তিনি বলেন,‘ জনগণ নির্দেশের অপেক্ষায় নেই (কর্মকর্তাদের কাছ থেকে)। রাস্তা তাঁরাই নেতৃত্ব দেবে।’ ১৯৮৭ সালের ফিলিস্তিনী বিদ্রোহ শুরুর উল্লেখ করে তিনি বলেন,‘ প্রথম ইন্তিফাদার কথা কেউই ভবিষ্যদ্বাণী করেনি।’
বাসস/ অনু- জেজেড/১৪০০/কেএমকে