মুজিব বর্ষে দেশের প্রতিটি ঘর আলোকিত করার লক্ষ্যে কাজ করছে সরকার

317

॥ সৈয়দ শুকুর আলী শুভ ॥
ঢাকা, ২৮ জুন, ২০২০ (বাসস) : মুজিববর্ষে দেশের প্রতিটি ঘরকে আলোকিত করার লক্ষ্যে কাজ করছে সরকার। স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে দেশব্যাপি নিরবচ্ছিন্ন, মানসম্পন্ন এবং সাশ্রয়ী মূল্যে বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে সর্বাত্মক কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বাসসকে বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকার মুজিববর্ষে দেশের সকল ঘর আলোকিত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। এ লক্ষ্য অর্জনে সরকার নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘মুজিববর্ষে সকল বাড়িতে নিরবচ্ছিন্ন, সাশ্রয়ী এবং মানসম্পন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ় প্রতিশ্রুতি পূরণে আমরা অঙ্গীকারবদ্ধ।’
তিনি জানান, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আন্তরিক প্রচেষ্টায় দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ২৩ হাজার ৪৩৬ মেগাওয়াটে পৌঁছেছে। এর ফলে বর্তমানে ৯৭ শতাংশ মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধা ভোগ করছে। সকল বাড়িতে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার এ প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের জন্য ২০২০-২১ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়কে ২৬ হাজার ৭৫৮ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
বাসস-এর সঙ্গে আলাপকালে পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ হোসেন বলেন, সরকার ২০২১ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ ক্ষমতা ২৪,০০০ মেগাওয়াটে উন্নয়নের জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, বর্তমানে সর্বমোট ১৬,৮৭৫ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন ৪৮ টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে। এছাড়াও ২,৭৮৫ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন ১২ টি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের চুক্তি স্বাক্ষরের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, ৬৫০ মেগাওয়াট ক্ষমতার ছয়টি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের টেন্ডার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। আগামীতে ১৯,১০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার আরো ১৬ টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনা গৃহীত হয়েছে।
সূত্র আরো জানায়, আগামী ২০২৩ সালের মধ্যে সরকার ২৮,০০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং ২৩,০০০ সার্কিট কিলোমিটার ট্রান্সমিশন লাইন নির্মাণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। বর্তমানে দেশে ১২,২৮৩ সার্কিট কি:মি: এবং ৫,৬৪,০০০ কি:মি: বিদ্যুৎ বিতরণ লাইন রয়েছে।
এছাড়াও বর্তমানে দেশে ১৩৭ টি বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে যার মধ্যে ছয়টি বন্ধ হয়ে গেছে। সরকার ২০৪১ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ৬০,০০০ মেগাওয়াটে উন্নীত করার জন্য কাজ করে যাচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, গত দশকে সরকার ২৯,৬৪৮ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন ১৪৮ টি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের লক্ষ্যে বেশ কয়েকটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। এর মধ্যে ১২১ টি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপিত হয়েছে। যা জাতীয় গ্রিডে ১৫,৫৭৩ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সংযোজন করেছে। ২০০৯ সালে জাতীয় বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ছিল মাত্র ৩,২০০ মেগাওয়াট।
প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, ‘২০২১ সালের মধ্যে সাশ্রয়ী মূল্যে প্রত্যেক নাগরিককে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা আমাদের লক্ষ্য।’ এছাড়া ২০৩০ সালের মধ্যে উৎপাদন ক্ষমতা ৪০,০০ মেগাওয়াট এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০,০০০ মেগাওয়াটে উন্নীত হবে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
বিদেশি বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশ একটি আদর্শ স্থান হয়ে উঠেছে উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘এখানে বিনিয়োগের পরিস্থিতি এখন আগের তুলনায় অনেক উন্নত। তাই, বিভিন্ন দেশ বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খাতে বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করছে।
মন্ত্রণালয়ের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, সরকার ১,৩২০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র, ১২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন মাতারবাড়ি এবং ১,৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ একাধিক মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে।
নসরুল হামিদ বলেন, মহেশখালীতে যৌথ উদ্যোগে ১০,০০০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের পাশাপাশি তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) ভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এছাড়া রূপপুরে ২,৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে।
এছাড়া আঞ্চলিক ও উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতার অধীনে প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকে ১,১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করা হচ্ছে। অন্যদিকে দ্বিপাক্ষিক জ্বালানি বাণিজ্যের আওতায় নেপালের সাথে একটি সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে এবং ইনডিপেনডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসার (আইপিপি) থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির জন্য সমঝোতা চূড়ান্ত হয়েছে।
মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনে নবায়নযোগ্য জ্বালানির অবদান ১০ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্যে সরকার সৌরশক্তি ভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের ওপর জোর দিচ্ছে। নবায়নযোগ্য উৎস থেকে বর্তমান বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ৬৩০.৯৬ মেগাওয়াট।
ইতিমধ্যে সরকার প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাদে সোলার প্যানেল স্থাপনের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এ ছাড়া, ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট অনুয়ায়ী অফ গ্রিড (বিদ্যুৎ সুবিধাবিহীন) অঞ্চলের মানুষদের মাঝে ৫৮ লক্ষ সোলার হোম সিস্টেমের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২৫৭ টি উপজেলায় পূর্ণাঙ্গ বিদ্যুতায়ন কার্যক্রম উদ্বোধন করেন এবং আরো ১৫৩ টি উপজেলায় সম্পূণ বিদ্যুতায়নের অপেক্ষায় রয়েছে।
এছাড়াও সরকার গ্যাসের উৎপাদন বাড়াতে ভূমি ও সমুদ্র উভয়স্থান গ্যাস অনুসন্ধানের লক্ষ্যে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী র পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে।
প্রতিবেশী মিয়ানমার ও ভারতের সঙ্গে সমুদ্রসীমা নির্ধারণের বিষয়টি সুরাহা হওয়ায় বাংলাদেশ শেষ পর্যন্ত এক লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটারের টেরিটোরিয়াল সমুদ্র, ২০০ নটিক্যাল মাইল একচ্ছত্র অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং চট্টগ্রাম উপকূল থেকে ৩৫৪ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত মহীসোপানের তলদেশে অবস্থিত সব ধরনের প্রাণিজ ও অপ্রাণিজ সম্পদের ওপর সার্বভৌম অধিকার প্রতিষ্ঠা নিশ্চিত করতে পেরেছে।
নতুন সমুদ্রসীমা অর্জনের পরে, বাংলাদেশ ওনশোর মডেল পিএসসি (প্রোডাকশন শেয়ারিং মডেল)-২০১৯ এবং অফশোর মডেল পিএসসি-২০১৯ প্রনয়নের মাধ্যমে অনশোর ও অফশোর এলাকাতে ব্লক নিয়ে নতুন করে বিডিং (দরকষাকষি) শুরু করেছে।
এর বাইরেও গ্যাসের অপচয় রোধে সরকার প্রি-পেইড গ্যাস মিটার স্থাপন করছে। ইতিমধ্যে ঢাকা শহর ও চট্টগ্রাম অঞ্চলে ২,৬০,০০০ প্রি-পেইড মিটার স্থাপন করা হয়েছে।
সরকার মাতারবাড়িতে ১০০০-এমএমসিএফডি ক্ষমতা সম্পন্ন একটি ভূমি ভিত্তিক এলএনজি টার্মিনাল স্থাপনের পরিকল্পনাও গ্রহণ করেছে এবং বর্তমানে এর সম্ভাব্যতা যাচাই এবং টার্মিনাল ডভেলপার নিয়োগের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।