বাসস দেশ-১ : করোনাকালীন দুর্যোগে বিশেষ ত্রাণ সহায়তা পাচ্ছেন রংপুরের আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৪০,১০৭ পরিবার

212

বাসস দেশ-১
দশ-উদ্যোগ-আশ্রয়ণ
করোনাকালীন দুর্যোগে বিশেষ ত্রাণ সহায়তা পাচ্ছেন রংপুরের আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৪০,১০৭ পরিবার
রংপুর, ২৬ জুন, ২০২০ (বাসস) : করোনা পরিস্থিতিতে প্রকল্পের বাসিন্দাদের জীবনের ঝুঁকি কমাতে বিভাগের আট উপজেলার ৪২৮টি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৪০,১০৭টি পরিবারকে শুরু থেকেই বিশেষ ত্রাণ সহায়তা দেয়া হচ্ছে।
বৈশ্বিক মহামারী করোনার সংক্রমণ প্রতিরোধে দেশে চলছে লকডাউন। এ পরিস্থিতিতে সারাদেশের মতোই অসহায় হয়ে পড়েছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে আশ্রয়ণ প্রকল্পে জায়গা করে নেয়া দরিদ্র পরিবারগুলোও। এই প্রকল্পের বাসিন্দাদের করোনা পরিস্থিতিতে যাতে খাবারের কষ্ট না করতে হয়, সেজন্য রয়েছে সরকারের এই বিশেষ ত্রাণ তৎপরতা।
রংপুরের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (রাজস্ব) আবু তাহের মো. মাসুদ রানা বাসস’কে বলেন, এসব আশ্রয়ণ প্রকল্পে বসবাসরত প্রতিটি পরিবারের দোড়গোড়ায় ত্রাণ সহায়তা পৌঁছে দেওয়ার বিষয়টি আমরা অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে তদারক করছি। বিভাগের জেলা, উপজেলা এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে এই বিশেষ ত্রাণ সহায়তা তাদের কাছে পৌঁছে দেয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দাদের ত্রাণ সহায়তা দেওয়ার পাশাপাশি আমরা তাদের কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়ে অনুপ্রাণিত করে আসছি। যাতে, কোভিড-১৯ এর কমিউনিটি ট্রান্সমিশন (গুচ্ছ সংক্রমণ) প্রতিরোধ করা যায়।
প্রকল্প কার্যালয় সুত্রে জানা যায়, বিভাগের ৪০ হাজার ১০৭টি পরিবারের মধ্যে রংপুরেরর ৫২টি প্রকল্পে ৫,৪৪০টি পরিবার, কুড়িগ্রামের ৭৩টি প্রকল্পে ৬,১১৩টি পরিবার, গাইবান্ধার ১০৩টি প্রকল্পে ৮,৩০০টি পরিবার, নীলফামারীর ৩২ টি প্রকল্পে ৬,৩০০টি পরিবার লালমনিরহাটের ৩৫টি প্রকল্পে ৪,৩৯০টি পরিবার, দিনাজপুরের ৯০টি প্রকল্পে ৬,৫৭৯টি পরিবার, ঠাকুরগাঁওয়ের ছয়টি প্রকল্পে ১৬০টি পরিবার এবং পঞ্চগড় জেলার ৩৭টি প্রকল্পে ২,৮২৫ টি পরিবার পুনর্বাসন করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা অনুযায়ী, স্থানীয় প্রশাসন এসব আশ্রয়ণ প্রকল্পে বসবাসরত সবক’টি পরিবারের কাছে ত্রাণ সহায়তা পৌঁছে দিচ্ছে। যাতে, বর্তমান এই মহামারীর সময়ে প্রতিটি পরিবারের জীবন ও জীবিকা নিরাপদ থাকে।
গংগাচড়া উপজেলার সমবায় কর্মকর্তা মো. আফতাবুজ্জামান বলেন, নদী ভাঙ্গনের কারণে বিভাগের গংগাচড়া উপজেলার ১৯টি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ২,৬৬০টি পুনর্বাসিত পরিবারকে বর্তমানে সরকারের বিশেষ ত্রাণ সহায়তার আওতায় আনা হয়েছে। এছাড়াও, এই বৈশ্বিক মহামারীর সময়ে এসব এলাকায় বসবাসরত পরিবারগুলোর কাছ থেকে প্রদত্ত ক্ষুদ্র ঋণের সাপ্তাহিক কিস্তি আদায়ও বন্ধ রাখা হয়েছে।
গংগাচড়া উপজেলার নোহালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ টিটুল বলেন, উপজেলার পূর্ব কচুয়া-১, পূর্ব কচুয়া-২ এবং চর নোহারী আশ্রয়ণ প্রকল্পে বসবাসরত ২৮০টি পরিবারের কাছে ইতোমধ্যে তিন দফায় দশ কেজি করে চাল দেয়া হয়েছে। করোনার শুরু থেকে এই তিনটি আশ্রয়ণ প্রকল্পে বসবাসরত প্রতিটি পরিবার ইতোমধ্যে ৩০ কেজি চাল ত্রাণ সহায়তা হিসেবে পেয়েছে।
পূর্ব কচুয়া-১ আশ্রয়ণ প্রকল্পে বসবাসরত আলেফ উদ্দিন, বিউটি খাতুন এবং মশিউর রহমান এবং পূর্ব কচুয়া-২ এর সাবিনা ইয়াসমিন এবং অন্য আরো অনেকে ইতোমধ্যে প্রত্যেকে ৩০ কেজি করে চাল সহায়তা পেয়েছেন বলে জানান।
গংগাচড়া উপজেলার চেংগামারি আশ্রয়ণ পর্যায়-২ সমবায় সমিতির সভাপতি দুলা মিয়া বলেন, এখানে বসবাসরত ৫০টি পরিবারের কাছে স্থানীয় উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) করোনার সময়ে দু’বার চাল সহায়তা দিয়েছেন।
এই প্রকল্পে বসবাসরত আব্দুর রাজ্জাক, নূর আলম, মশিউর রহমান, নুরুল ইসলাম এবং লাকী বেগম বলেন, তারা সবাই এ পর্যন্ত দু’বার করে চাল, মাস্ক, আলু, ডাল এবং অন্যান্য ত্রাণ সামগ্রী পেয়েছেন। কিন্তু এ পরিস্থিতি মোকাবেলায় তাদের আরো সহযোগিতা দরকার বলে জানান তারা।
গংগাচড়া সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আল সুমন আব্দুল্লাহ বলেন, এই ইউনিয়নের চেঙ্গামারী আশ্রয়ণ পর্যায়-২ এ বসবাসরত ৫০টি পুনর্বাসিত পরিবার এবং চেঙ্গামারী আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের ১০০টি পরিবার সরকারের বিশেষ ত্রাণ সহায়তা পেয়েছে।
গংগাচড়া উপজেলার ইউএনও তাসলিমা বেগম বলেন, করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত আশ্রয়ণ প্রকল্পে বসবাসরত বাসিন্দাদের বিশেষ ত্রাণ সহায়তা প্রদান এবং সচেতনতা সৃষ্টির কার্যক্রম অব্যহত থাকবে।
কাউনিয়া উপজেলার বিশ্বনাথ আশ্রয়ণ প্রকল্প সমবায় সমিতির সভাপতি আবুল কালাম আজাদ বলেন, এখানে বসবাসরত প্রায় ১০০টি পরিবার ১৫ কেজি চাল, মাস্ক এবং অন্যান্য নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি বিশেষ ত্রাণ সহায়তা হিসেবে পেয়েছে।
এখানে বসবাসরত বিধবা মাহফুজা বেগম এবং জাহেদা খাতুন এবং জয়নাল আবেদিন বলেন, তারা প্রথম পর্যায়ে ১ কেজি চাল, দ্বিতীয় পর্যায়ে পাঁচ কেজি চাল এবং ডাল সরকারের বিশেষ ত্রাণ সহায়তা হিসেবে পেয়েছেন।
কাউনিয়ার ইউসিইউ মাসুদ রানা বলেন, বিশ্বনাথ আশালতা আশ্রয়ণ প্রকল্পে বসবাসরত বাসিন্দাদের কাছ থেকে এই পরিস্থিতিতে প্রদত্ত ক্ষুদ্র ঋণের সাপ্তাহিক কিস্তিু আদায় বন্ধ রাখা হয়েছে।
কাউনিয়ার ইউএনও উলফাত আরা বেগম বলেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত বিশ্বনাথ আশালতা আশ্রয়ণ প্রকল্পে বসবাসরত বাসিন্দাদের মাঝে ত্রাণ সহায়তা প্রদান এবং সচেতনতা তৈরীর কার্যক্রম চলমান থাকবে।
বিভাগের বদরগঞ্জ উপজেলার ওসমানপুর আবাসন থানার দাঙ্গা আশ্রয়ণ প্রকল্প সমবায় সমিতির সভাপতি আজমল হোসেন বলেন, এখানে বসবাসরত ২০০টি পরিবার ইতোমধ্যে দু’দফায় ১৫ কেজি চাল, আলু এবং ডাল সহায়তা পেয়েছেন।
এই প্রকল্পের বাসিন্দা রাশিদা বেগম, মিনারা খাতুন, এবং মনোয়ারা বেগম বলেন, প্রথম দফায় তারা প্রত্যেকে দশ কেজি চাল এবং দ্বিতীয় দফায় পাঁচ কেজি চাল, আলু এবং ডাল ত্রাণ সহায়তা হিসেবে পেয়েছেন।
অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) মো. জাকির হোসেন বলেন, প্রধানমন্ত্রীর দশটি বিশেষ উদ্যোগের মধ্যে আশ্রয়ণ প্রকল্প একটি। এই প্রকল্পে পুনর্বাসিত প্রতিটি পরিবারের মাঝে ত্রাণ সহায়তা পৌঁছে দেয়া হচ্ছে এবং তাদের মাঝে করোনা ভাইরাস বিষয়ে সচেতনতা তৈরীর কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
বাসস/এমআই-পিএসবি/আরজি/১০১০/এমজে