বাসস দেশ-৩১ : বৈশ্বিক মহামারি করোনা পরিস্থিতিতে জনগণ তথ্যপ্রযুক্তির সবরকম সুবিধা ভোগ করছে

174

বাসস দেশ-৩১
দশ-উদ্যোগ-ডিজিটাল
বৈশ্বিক মহামারি করোনা পরিস্থিতিতে জনগণ তথ্যপ্রযুক্তির সবরকম সুবিধা ভোগ করছে
॥ সৈয়দ এলতেফাত হোসাইন ॥
ঢাকা, জুন ২৪, ২০২০ (বাসস) : সরকারের যথাযথ পদক্ষেপের ফলে বাংলাদেশ ইতোমধ্যে ডিজিটাল প্রযুক্তির ফল ভোগকারী দেশগুলোর তালিকাভুক্ত হয়েছে। বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের মধ্যেও বাংলাদেশের জনগণ ঘরে বসেই উন্নত বিশ্বের রাষ্ট্রগুলোরমত দেশের তথ্যপ্রযুক্তির সুবিধা কাজে লাগিয়ে স্বাভাবিক জীবন পরিচালনা করতে সক্ষম হচ্ছে।
সারাবিশ্ব যখন করোনাভাইরাসের থাবায় ক্ষত-বিক্ষত। দাপ্তরিক কাজ ফেলে যখন মানুষ জীবন বাঁচাতে ঘরে বন্দী থাকতে বাধ্য হচ্ছে, তখন বাংলাদেশে তথ্যপ্রযুক্তির উৎকর্ষতা দেশের জনগণের জন্য আশীর্বাদ হিসবে আভির্ভূত হয়েছে। ফলে মানুষ এখন ডিজিটাল মাধ্যম ব্যাবহার করেই দাপ্তরিক কাজ থেকে শুরু করে দৈনন্দিন জীবন পরিচালনায় সকল কাজ সম্পন্ন করতে সক্ষম হচ্ছে। ব্যাংকিং, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, ব্যাবসা ও গণমাধ্যমসহ সকল খাতের কার্যক্রম বর্তমানে ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে সম্পন্ন করা হচ্ছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরুর পরপরই ১৭ মার্চ থেকে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করলেও থেমে নেই শিক্ষা কার্যক্রম। বাংলাদেশ টেলিভিশন ও সংসদ টেলিভিশনের মাধ্যমে ৬ষ্ঠ থেকে ৯ম শ্রেণীর ক্লাস নেয়া হচ্ছে। অন্যদিকে বেশ কিছু সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।
বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনাল্স (বিইউপি) এর উপাচার্য মেজর জেনারেল আতাউল হাকিম সরওয়ার হাসান বলেন, ‘করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের সাথে সাথেই আমরা বুঝতে পেরেছিলাম যে, এই সংকট দ্রুত শেষ হবে না। তাই শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সাথে আলোচনা করে আমরা ২২ মার্চ থেকেই অনলাইনে ক্লাস নেয়া শুরু করি’।
তিনি আরো বলেন, একটা বিষয় লক্ষ্যনীয় যে, সাধারণত ক্লাসে ৮২ থেকে ৮৫ শতাংশ শিক্ষার্থী উপস্থিত থাকতো। কিন্তু অনলাইন ক্লাসে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি প্রায় ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশ। “আমরা ইতোমধ্যে ১ম সেমিস্টার সম্পন্ন করে ফেলেছি। এখন চূড়ান্ত পরীক্ষা নেয়ার অপেক্ষায় আছি। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি’র) অনুমতি পেলেই ১ম সেমিস্টারের চূড়ান্ত পরীক্ষা নেয়া হবে। তবে আগামী জুলাই মাসের ১ তারিখ থেকে যথারীতি ২য় সেমিস্টার শুরু করবো”।
বিইউপির উপাচার্য আরো বলেন, “অনলাইনে ক্লাস নেওয়ার বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী ও ইউজিসি চেয়ারম্যান সব ধরনের দিকনির্দেশনা ও সহযোগিতা দিয়েছেন। আমরা শিক্ষামন্ত্রী ও ইউজিসি’র স্পিরিট ও আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার যে স্বপ্ন, সেটাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছি। আমরা অনলাইন ক্লাস নিচ্ছি। আমরা সন্তোষ্ট যে, আমরা যথেষ্ট (অনলাইনে ক্লাস নেয়ার) সক্ষমতা অর্জন করেছি”।
অনলাইন ব্যাংকিং ব্যাবস্থার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির বিপ্লবের অন্যতম সুবিধাভোগী হলো দেশের ব্যাংকিং খাত।
তিনি বলেন, ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যাবহারের মাধ্যমে বর্তমানে প্রায় ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ কার্যক্রম অনলাইনে সম্পন্ন করা হচ্ছে। পাশাপাশি বর্তমানে করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে সব ধরনের বোর্ড সভা, যেগুলোতে আগে শারিরীকভাবে উপস্থিতির প্রয়োজন হতো, তা এখন অনলাইনে জুমের মাধ্যমে হচ্ছে।
গত দশ-এগারো বছরে আওয়ামী লীগ সরকারের নেতৃত্বে বাংলাদেশের আইসিটি খাতে যে উন্নতি সাধিত হয়েছে এর ফল দেশের গণমাধ্যম ভোগ করছে বলে মন্তব্য করেছেন দেশের অন্যতম বাংলা দৈনিক ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত।
শ্যামল দত্ত বলেন, আধুনিক প্রযুক্তিগত সুবিধার কারণেই এখন করোনা দুর্যোগকালীন সময়ে অনলাইন অফিস বা হোম অফিস করা সম্ভব হচ্ছে। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে, দেশে এখন ইন্টারনেট ব্যবহারের সংখ্যা বেড়েছে। মোবাইল গ্রহকের সংখ্যা বেড়েছে। এই যে ১৩-১৪ কোটি লোক মোবাইল ব্যবহার করছে। ৭-৮কোটি মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করছে, এই সুবিধাটি নিয়ে আমরা বিকল্প একটা মিডিয়া রিসোর্সের মত ব্যবহার করছি।
তিনি বলেন, “এর ফলে আমারা সাধারণ মানুষের দোড়গোড়ায় পৌঁছতে পারছি। অনেক জায়গায় করোনার দুর্যোগে লকডাউন বা অন্যান্য কারণে পত্রিকার হার্ড কপি পৌঁছাতে পরছি না। মানুষ কিন্তু অনলাইনে পত্রিকা পড়ছে, খবর দেখছে, টেলিভিশন দেখছে, বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান দেখছে। এই পুরো কাজটি সম্ভব হচ্ছে প্রযুক্তিগত উন্নতির কারণে,”।
তিনি আরো বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশের কারণেই আজ প্রযুক্তির মাধ্যমে যোগাযোগ সম্ভব হয়েছে। বাংলাদেশে এই মূহুর্তে প্রযুক্তির কারণে প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্স করে সারা বাংলাদেশের সাথে যুক্ত আছেন। তাঁকে বিভিন্ন উপজেলা লেভেলে কোনো একটি প্রকল্পের উদ্বোধন করতে যেতে হচ্ছে না। অন্যান্য মন্ত্রীরাও তাই করছেন। তারা সংযুক্ত থাকছেন সর্বক্ষণ।
অনলাইন অফিস ব্যাবস্থাপনার বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের যুগ্ম সচিব ও এটুআই’র যুগ্ম প্রকল্প পরিচালক ড. দেওয়ান মোহাম্মদ হুমায়ুন কবীর বলেন, বর্তমান সরকার ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর দেশকে ২০২১ সালের মধ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশে রূপান্তর করার ঘোষণা দেয়। এরই ধারাবাহিকতায় সরকার অনেক আগেই কাগজ-বিহীন অফিস তৈরীর লক্ষ্যে ই-নথি চালু করে।
তিনি বলেন, ৯০ শতাংশ দাপ্তরিক কাজ ই-নথি’র আওতায় চলে। প্রায় দেড় কোটি ই-নথি ব্যবহারকারীতো আগেই ছিলো। এই করোনাকালীন সময়ে যেহেতেু কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অফিসে যেতে পারছেন না, ই-নথির ব্যবহার তিনগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে”।
তিনি আরো বলেন, “আমরাও এই মহামারির সময়ে ই-নথি’র ব্যাবহার বৃদ্ধির জন্য কাজ করছি। পাশাপাশি অফিসগুলোকে ভার্চুয়াল অফিসে রূপান্তর করার প্রক্রিয়াও চলমান রয়েছে”।
ই-কমার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব)-এর সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওয়াহেদ তমাল বলেন, তাদের এসোসিয়েশনের ১২ শ’র অধিক সদস্য এই লকডাউন পরিস্থিতিতে মানুষের ঘরে ঘরে দ্রব্য সামগ্রী পৌঁছে দিচ্ছে, যাতে মানুষ নিরাপদে ঘরে থাকতে পারে।
তিনি আরো বলেন, আমরা আমাদের সদস্যদের নির্দেশনা দিয়ে দিয়েছি। কীভাবে তারা তাদের গুদাম জীবানুমুক্ত করবে, কর্মচারীদের নিরাপদ রাখবে, সেসব বিষয়ে। আমরা তাদের যাতায়াতকে নির্বিঘœ করতে প্রত্যেককে স্টিকার দিয়েছি। সরাসরি লেনদেনের মাধ্যমে করোনাভাইসের সংক্রমণ কমাতে, ই-ক্যাব বর্তমানে ক্রেতাদের ই-পেমেন্ট ব্যাবহারে উব্দুদ্ব করছে।
তমাল বলেন, “আমরা আমদের অফিসকে পুরোপুরি ভার্চুয়াল অফিসে রূপান্তরিত করেছি। এখন অনলাইনেই সদস্য পদের জন্য আবেদন করা যায় এবং অনলাইনেই সদস্যপদ দেয়া হয়। কাউকেই অফিসে যেতে হয়না”।
বৈশ্বিক মহামারি করোনাকালীন সময়ে ডিজিটাল প্রযুক্তি মানুষের জন্য আশীর্বাদ হিসেবে আভির্ভূত হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, মোবাইল এবং ইন্টারনেটের ব্যাবহার বৃদ্ধির ফলে মানুষ এখন অনলইনে কেনাকাটা করতে পারছে, স্বাস্থ্যসেবা নিতে পারছে। পাশাপাশি অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রমও পরিচালনা করতে পারছে।
এদিকে, প্রযুক্তির কল্যাণে বৈশ্বিক মহামারির সময় এখন জনগণ অনলাইনে স্বাস্থ্যসেবাও গ্রহণ করতে সক্ষম হচ্ছে। এ লক্ষ্যে এটুআইয়ের সহযোগিতায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) একটি বিশেষায়িত টেলিমেডিসিন সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে। আইসিটি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক গত ১৩ ই মে টেলিমেডিসিন সেন্টারটি একটি অনলাইন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে উদ্বোধন করেন।
বিএসএমএমইউ’র তথ্যমতে, দেশের যে কোনো প্রান্ত হতে ০৯৬১১৬৭৭৭৭৭ এই নম্বর ডায়াল করে অডিও ও ভিডিও কলের মাধ্যমে সেবা গ্রহণ করা যাচ্ছে। মোট ২৮জন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার এই টেলিমেডিসিন সেন্টারের মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবা দিচ্ছেন। সেন্টারটি স্থাপনের পর থেকে এখন পর্যন্ত ২০ হাজারের মানুষ সেবা গ্রহণ করেছে।
পাশাপাশি, এটুআই’র জাতীয় হেল্পলাইন ‘৩৩৩’ করোনা বিষয়ে স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করছে। প্রায় ৪ হাজার ৫ শ’র বেশি নিবন্ধিত ডাক্তার নিয়ে গঠিত একটি ডক্টর’স পুল মোবাইলে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। এটুআই’র তথ্যমতে, এখন পর্যন্ত ৩ লাখ ৫০ হাজারের বেশি মানুষ ‘৩৩৩’ থেকে সেবা গ্রহণ করেছে।
বাসস/দশ/এসএএইচ/আসাচৌ/১৯৪৫/এমজে