বাসস দেশ-৩২ : বাজেটে তামাক কর ও মূল্য বৃদ্ধি সংক্রান্ত প্রস্তাব গ্রহণ হলে ১১ হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত রাজস্ব আয়

227

বাসস দেশ-৩২
বাজেট – তামাক
বাজেটে তামাক কর ও মূল্য বৃদ্ধি সংক্রান্ত প্রস্তাব গ্রহণ হলে ১১ হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত রাজস্ব আয়
ঢাকা, ২২ জুন, ২০২০ (বাজেট) : স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং তামাক বিরোধীদের দাবি অনুযায়ী বাজেটে তামাক কর ও মূল্য বৃদ্ধি সংক্রান্ত প্রস্তাব গ্রহণ করা হলে তামাক পণ্য ব্যবহার হ্রাসের পাশাপাশি তামাক খাত থেকে ১১ হাজার কোটি টাকা পর্যন্ত অতিরিক্ত রাজস্ব আয় অর্জন করা সম্ভব। যা করোনা মোকাবেলা সংক্রান্ত থোক বরাদ্দ এবং প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নে ব্যয় করার সুযোগ রয়েছে।
প্রজ্ঞা (প্রগতির জন্য জ্ঞান) এবং অ্যান্টি টোব্যাকো মিডিয়া এলায়ন্স- আত্মা’র উদ্যোগে আজ ২০টি তামাক বিরোধী সংগঠন আয়োজিত অনলাইন বাজেট প্রতিক্রিয়া অনুষ্ঠানে বক্তারা এ মন্তব্য করেন।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন, বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ এবং জাতীয় তামাক বিরোধী মঞ্চের আহ্বায়ক ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ , বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গর্ভনর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ, বিশিষ্ট সাংবাদিক এবং টিভি টুডে’র এডিটর ইন মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ (বিআইডিএস) এর সিনিয়র রিসার্চ ফেলো অর্থনীতিবিদ ড. নাজনীন আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. রুমানা হক ,বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল এন্ড স্ট্রাটেজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস) এর রিসার্চ ডিরেক্টর ড. মাহফুজ কবীর প্রমুখ। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন এটিএন বাংলার নিউজ এডিটর নাদিরা কিরণ।
ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলেন, আমরা বার বার বলছি তামাকের ক্ষতি থেকে মানুষকে রক্ষার জন্য তামাক পণ্যের কর ও মূল্য বাড়াতে হবে। কিন্তু সেটার বাস্তবায়ন হচ্ছেনা। আমাদের উন্নয়ন দর্শন এখন বাজার অর্থনীতি নির্ভর হয়ে গেছে। সুতরাং জনস্বাস্থ্য অগ্রাধিকার পাচ্ছে না। তবে আমরা তামাক পণ্যের দাম বৃদ্ধির কথা বলেই যাব।
খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেন, বাজেট অর্থায়নে ব্যাংকিং খাতের উপর অতিমাত্রায় নির্ভরতা অর্থনীতির জন্য মোটেও ভালো নয়। সরকারের হাতে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে বাড়তি রাজস্ব আহরণের একটি সুযোগ রয়েছে। আমরা দেখলাম, তামাকপণ্য থেকে অতিরিক্ত ১১ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায় সম্ভব, যা বাজেট অর্থায়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে।
ড. নাজনীন আহমেদ বলেন, তামাকপণ্যের কর ও দাম বাড়ানোর সবচেয়ে বড় সুফল হচ্ছে তরুণ প্রজন্মকে তামাক ব্যবহার শুরু করা থেকে নিরুৎসাহিত করা। আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, দরিদ্র মানুষের তামাক ব্যবহারের স্বাস্থ্যক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার সামর্থ্য অনেক কম। সুতরাং দাম বৃদ্ধির মাধ্যমে তাদেরকেও তামাকপণ্য ব্যবহার নিরুৎসাহিত করা হলে এটা তাদের জন্য উপকারই হবে।
ড. মাহফুজ কবীর বলেন, বাজেটে তামাকপণ্যের দাম এবং কর বৃদ্ধির মাধ্যমে বাড়তি রাজস্ব আয়ের সুযোগ ছিল। কারণ এ মূহুর্তে বড় ধরনের রাজস্ব ঘাটতি রয়েছে। সেক্ষেত্রে সকল তামাক পণ্যের খুচরা মূল্যের ওপর ৩ শতাংশ সারচার্জ এবং সুনির্দিষ্ট করারোপের মাধ্যমে রাজস্ব বাড়ানোর সুযোগ এখনও রয়েছে।
অনলাইন বাজেট প্রতিক্রিয়া অনুষ্ঠানের মূল উপস্থাপনায় প্রজ্ঞা জানায়, তামাক বিরোধীদের পক্ষ থেকে ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে সিগারেটের ৪টি মূল্যস্তরের পরিবর্তে ২টি মূল্যস্ত প্রচলন এবং সম্পূরক শুল্কের একটি অংশ সুনির্দিষ্ট কর (স্পেসিফিক ট্যাক্স) হিসেবে আরোপ করার দাবি জানানো হলেও প্রস্তাবিত বাজেটে এর কোনো প্রতিফলন নেই। সিগারেটের মূল্য স্তর সংখ্যা অপরিবর্তিত রাখায় ভোক্তা তার সামর্থ্য অনুযায়ী ব্য্রান্ড বেছে নিতে পারবে, ফলে সিগারেটের ব্যবহার কমবেনা।
অনলাইন বাজেট প্রতিক্রিয়া অনুষ্ঠানে আরো জানানো হয় প্র¯াÍবিত ২০২০-২১ বাজেটে মাথাপিছু আয়বৃদ্ধির তুলনায় সিগারেটের নাম মাত্র মূল্যবৃদ্ধির ফলে সিগারেটের প্রকৃতমূল্য হ্রাস পাবে এবং ব্যবহার বাড়বে। অন্যদিকে, টানা চতুর্থ বছরের মতো সিগারেটের সম্পূরক শুল্ক প্রায় অপরিবর্তিত রাখায় লাভবান হবে তামাক কোম্পানিগুলো।
বাজেট প্রতিক্রিয়া অনুষ্ঠানে ২০২০-২১ সালের চূড়ান্ত বাজেটে অন্তর্ভুক্তির জন্য তামাক পণ্যে সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপসহ কার্যকর কর ও মূল্য পদক্ষেপ গ্রহণ, সিগারেটের মূল্যস্তর সংখ্যা ৪টি থেকে ২টিতে (নিম্ন এবং প্রিমিয়াম) নামিয়ে আনাসহ বশকয়েকটি প্রস্তাব তুলে ধরা হয়।
এতে বলা হয় ,তামাক-কর ও মূল্য বৃদ্ধির প্রস্তাব বাস্তবায়ন করা হলে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা পর্যন্ত অতিরিক্ত রাজস্ব আয় অর্জিত হবে। এছাড়াও ৩ শতাংশ সারচার্জ থেকে প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা বাড়তি রাজস্ব আয় অর্জন করা সম্ভব হবে। অতিরিক্ত এই অর্থ সরকার তামাক ব্যবহারের ক্ষতি হ্রাস এবং করোনা মহামারী সংক্রান্ত স্বাস্থ্য ব্যয় এবং প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নে ব্যয় করতে পারবে বলে জানানো হয়।
তামাকবিরোধী সংগঠন বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটি, বিসিসিপি, এসিডি, ইপসা, এইড ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ তামাকবিরোধী জোট, বিএনটিটিপি, বিটা, গ্রাম বাংলা উন্নয়ন কমিটি, নাটাব, প্রত্যাশা, টিসিআরসি, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন, ঢাকা আহছানিয়া মিশন, উফাত, তাবিনাজ, ভয়েস, ডব্লিউবিবি ট্রাস্ট, অ্যান্টি টোব্যাকো মিডিয়া এলায়েন্স- আত্মা এবং প্রজ্ঞা এই বাজেট অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
বাসস/কেসি/১৯৪৭/স্বব