সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতা আরো সম্প্রসারিত হচ্ছে

629

॥ আতাউর রহমান ॥
ঢাকা, ২১ জুন, ২০২০ (বাসস) : আগামীতে সামাজিক নিরাপত্তার বেষ্টনীর আওতা আরো সম্প্রসারিত হচ্ছে। এ লক্ষ্যে আরও ২০ লক্ষ অক্ষম মানুষকে সুযোগ-সুবিধার আওতায় আনা হবে।
এই কার্যক্রমের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, বর্তমানে প্রায় ৫ কোটি মানুষ পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষভাবে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় সরকারি বিভিন্ন ভাতার সুবিধা ভোগ করছেন। এই কর্মসূচির আওতায় বর্তমানে ৮০ লাখ হতদরিদ্র সরাসরি বিভিন্ন ধরনের ভাতা পাচ্ছেন।
সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয় এই কর্মসূচির আওতায় অক্ষম ও অস্বচ্ছল ব্যক্তিকে ভাতা দিচ্ছেন।
আগামী ২০২০-২১ অর্থবছরে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী খাতে প্রায় ৯৬ হাজার কোটি টাকার বাজেট বরাদ্দ রাখা হয়েছে। চলতি বছর এই খাতে মোট বরাদ্দ ছিল প্রায় ৮১ হাজার ৮৬৫ কোটি টাকা। পল্লী এলাকায় করোনা জনিত কারণে প্রণোদনা হিসেবে ২০২০-২১ অর্থবছরে অতিরিক্ত ১০০ কোটি টাকার একটি বিশেষ বরাদ্দ দিয়ে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হবে।
সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নূরুজ্জামান আহমেদ বলেন, ভাতা ও ত্রাণ বিতরণে সারাদেশে উপকারভোগী হয়েছে ৮০ লক্ষাধিক মানুষ।
মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে ও তত্ত্বাবধানে সারাদেশের জেলা-উপজেলা পর্যায়ে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় জুন মাস পর্যন্ত ৮০ লক্ষ ৯ হাজার উপকারভোগীর মধ্যে প্রায় সাড়ে ২৬ কোটি টাকার ভাতা বিতরণ করা হয়েছে।
এদের মধ্যে বৃদ্ধ, বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা মহিলা, অসচ্ছল প্রতিবন্ধী হিজড়া বেদে, চা-শ্রমিক, ক্যান্সার, কিডনী, লিভার সিরোসিস, জন্মগত হৃদরোগী, প্যারালাইজড, থ্যালাসেমিয়া রোগী এবং সুবিধাবঞ্চিত শিশুসহ এতিম শিশুরা রয়েছে।
সমাজকল্যাণ মন্ত্রী বলেন, করোনাকালীন সময়ে বিশেষ ত্রাণ হিসেবে ২ লক্ষ ৭৬ হাজার ৬৭৩ জনকে খাদ্য সহায়তা ও নগদ-অর্থ প্রদান করা হয়েছে। উপকারভোগীর মধ্যে চট্টগ্রাম বিভাগে ১লাখ ২ হাজার ৭৩৬ জন, ঢাকা বিভাগে ৮৭ হাজার ৯৩২ জন , রংপুর বিভাগে ২২হাজার ৯৯৪ জন, বরিশাল বিভাগে ১৫ হাজার ৭০০ জন, খুলনা বিভাগে ১২ হাজার ৫৮৩ জন, রাজশাহী বিভাগে ১১ হাজার,১২৩ জন, ময়মনিসিংহ বিভাগে ৫ হাজার ৫৭৪ জন, সিলেট্ বিভাগে ৫ হাজার ২৮৬ জন ও ঢাকা সিটির ১২ হাজার ৭৪৫ জন বিশেষ সহায়তা পেয়েছেন।
চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে বরাদ্দের পরিমাণ ছিল ৪,৪০৪ কোটি টাকা, যা মোট বাজেটের ১৪.২১ শতাংশ।
তিনি বলেন, দেশে ৬৪টি জেলা ও সকল উপজেলা পর্যায়ে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় জুন মাস পর্যন্ত (অগ্র্রিম ভাতাসহ) ৮০ লক্ষ ৯ হাজার উপকারভোগীর মধ্যে প্রায় সাড়ে ২৬ কোটি টাকার ভাতা বিতরণ করা হয়েছে।
চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ৬৪ হাজার ৪০৪ কোটি টাকা, যা চলতি অর্থবছরের বাজেটের ১৪ দশমিক ২১ শতাংশ। দারিদ্র্য নিরসন ও বৈষম্য হ্রাসে সামাজিক নিরাপত্তা কৌশলপত্র ২০১৫ প্রণয়ন করা হয়েছে। এই কৌশলপত্র বাস্তবায়নে ২০১৬-২১ সাল পর্যন্ত অ্যাকশন প্ল্যান অনুমোদিত হয়েছে। দারিদ্র্য নিরসনের লক্ষ্যে প্রতিবছর এ খাতে ক্রমশ বরাদ্দ বাড়ানো হচ্ছে। নির্বাচনি ইশতেহার অনুযায়ী প্রতি বছরে এ খাতে বরাদ্দ আরও দ্বিগুণ করা হবে।
সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি ও সামাজিক ক্ষমতায়নের আওতায় ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে প্রায় সব ধরনের ভাতা, সম্মানী ও অনুদান বেড়েছে। বেড়েছে কয়েকটি কর্মসূচির উপকারভোগীদের সংখ্যাও।
এই কর্মসূচির আওতায় মুক্তিযোদ্ধারা বর্তমানে ১২ হাজার টাকা করে মাসিক সম্মানী পেয়ে থাকেন। ২ লাখ মুক্তিযোদ্ধার জন্য চলতি অর্থবছরে সম্মানী বাবদ ৩ হাজার ৩০৫ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়। বিজয় দিবস ও পয়লা বৈশাখে দুটি উৎসব ভাতাও পান তারা। ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১৬ লাখ প্রতিবদ্ধীদের জন্য ৮৪০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়। ২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রাথমিক বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের বৃত্তির পরিমাণও বাড়ানো হয়েছে।
সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীকে আরো যুগোপযোগী ও কার্যকর করতে এবং টেকসই দারিদ্র বিমোচন এবং রূপকল্প-২০২১ ও ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার আলোকে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি ফলপ্রসু করার লক্ষ্যে নীতি ও কৌশল নির্ধারণ পূর্বক একটি জাতীয় সামাজিক নিরাপত্তা কৌশল গ্রহণ করা হয়েছে।
জাতীয় মহিলা শ্রমিক লীগের কার্যকরী সভাপতি ও শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য শামসুন নাহার ভুইয়া এমপি বলেন, সরকার শ্রমজীবী মানুষের কল্যাণে সামাজিক নিরাপত্তার আওতা বাড়িয়েছে। করোনাকালীন সময়ে বিপুল সংখ্যক শ্রমজীবী মানুষ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ উদ্যোগের সুবিধা ভোগ করেছেন। সরকার আগামী ২০২৩-২৪ সালের মধ্যে দারিদ্র্যের হার ১২.৩০ শতাংশে এবং চরম দারিদ্র্যের হার ৪.৫০ শতাংশে এ নামিয়ে আনার ঘোষণা দিয়েছে।
ভবিষ্যতে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচির আওতায় সুবিধাভোগীদের ভাতাসমূহ ইলেক্ট্র্রোনিক পদ্ধতিতে সরাসরি সুবিধাভোগীদের মাঝে বিতরণ করা হবে। যাতে, ডিজিটাল পদ্ধতিতে সুবিধাভোগীদের ভাতাসমূহ সরাসরি পাবেন। এতে মধ্যসত্ত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য দূর হবে এবং উপকারভোগীগণ নির্বিঘেœ প্রাপ্য ভাতা গ্রহণ করতে পারবেন।