দেশে ২৪ ঘন্টায় মারা গেছেন ৩৯ জন, নতুন শনাক্ত ৩,৫৩১ জন

338

ঢাকা, ২১ জুন, ২০২০ (বাসস) : দেশে গত ২৪ ঘন্টায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ৩৯ জন মৃত্যুবরণ করেছেন।
গতকালের চেয়ে আজ ২ জন বেশি মৃত্যুবরণ করেছেন। গতকাল ৩৭ জন মৃত্যুবরণ করেছিলেন। এখন পর্যন্ত এই ভাইরাসে দেশে মৃত্যুবরণ করেছেন ১ হাজার ৪৬৪ জন।
শনাক্তের বিবেচনায় আজ মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৩০ শতাংশ। আগের দিন এই হার ছিল ১ দশমিক ৩১ শতাংশ। গতকালের চেয়ে আজ দশমিক ০১ শতাংশ কম।
আজ দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদফতরের করোনাভাইরাস সংক্রান্ত নিয়মিত অনলাইন হেলথ বুলেটিনে অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা এসব তথ্য জানান।
ডা. নাসিমা সুলতানা জানান, গত ২৪ ঘন্টায় ১৫ হাজার ৫৮৫ জনের নমুনা পরীক্ষায় ৩ হাজার ৫৩১ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। গতকালের চেয়ে আজ ২৯১ জন বেশি শনাক্ত হয়েছেন। গতকাল শনাক্ত হয়েছিল ৩ হাজার ২৪০ জন। দেশে বর্তমানে করোনা আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ১ লাখ ১২ হাজার ৩০৬।
তিনি জানান, নমুনা পরীক্ষায় আজ শনাক্তের হার ২২ দশমিক ৬৬ শতাংশ। আগের দিন এ হার ছিল ২৩ দশমিক ০৯ শতাংশ। আগের দিনের চেয়ে আজ শনাক্তের হার দশমিক ৪৩ শতাংশ কম।
এদিকে করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে গত ২৪ ঘন্টায় হাসপাতাল এবং বাসায় মিলিয়ে সুস্থ হয়েছেন ১ হাজার ৮৪ জন। গতকালের চেয়ে আজ ৩৬ জন বেশি সুস্থ হয়েছেন। গতকাল সুস্থ হয়েছিলেন ১ হাজার ৪৮ জন। মোট সুস্থ হয়েছেন ৪৫ হাজার ৭৭ জন।
নাসিমা সুলতানা জানান, আজ শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৪০ দশমিক ১৪ শতাংশ। আগের দিন এই হার ছিল ৪০ দশমিক ৪৪ শতাংশ। আগের দিনের চেয়ে আজ সুস্থতার হার দশমিক ৩ শতাংশ কম।
অতিরিক্ত মহাপরিচালক জানান, ‘করোনাভাইরাস শনাক্তে গত ২৪ ঘন্টায় নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে ১৫ হাজার ৭১০টি। আগের দিন সংগ্রহ করা হয়েছিল ১৩ হাজার ৭৭৯টি। গতকালের চেয়ে আজ ১ হাজার ৯৩১টি নমুনা বেশি সংগ্রহ করা হয়েছে। গত ২৪ ঘন্টায় দেশের ৬০টি পরীক্ষাগারে নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ১৫ হাজার ৫৮৫টি। আগের দিন নমুনা পরীক্ষা হয়েছিল ১৪ হাজার ৩১টি। গত ২৪ ঘন্টায় আগের দিনের চেয়ে ১ হাজার ৫৫৪টি বেশি নমুনা পরীক্ষা হয়েছে। এ পর্যন্ত দেশে মোট ৬ লাখ ১২ হাজার ১৬৪টি নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ।
তিনি জানান, মৃত্যুবরণকারীদের মধ্যে ৩৫ জন পুরুষ এবং ৪ জন নারী। বয়স বিশ্লেষণে দেখা যায়, ৮১ থেকে ৯০ বছরের মধ্যে ১ জন, ৭১ থেকে ৮০ বছরের মধ্যে ২ জন, ৬১ থেকে ৭০ বছরের মধ্যে ৪ জন, ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে ১২ জন, ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে ১২ জন, ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে ৬ জন, ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে ১ জন, শূন্য থেকে ১০ বছরের মধ্যে ১ জন। অঞ্চল বিবেচনায় মৃত্যুবরণকারীদের মধ্যে ঢাকা বিভাগে ১৬ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ১১ জন, রাজশাহী বিভাগে ২ জন, খুলনা বিভাগে ৪ জন, সিলেট বিভাগে ১ জন, রংপুর বিভাগে ১ জন এবং বরিশাল বিভাগে ৪ জন রয়েছেন। এদের মধ্যে হাসপাতালে মারা গেছেন ৩৩ জন এবং বাসায় মৃত্যুবরণ করেছেন ৬ জন।
অতিরিক্ত মহাপরিচালক জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশনে রাখা হয়েছে ৬৩১ জনকে এবং ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশন থেকে মুক্ত হয়েছেন ৩৫৬ জন। এখন পর্যন্ত ছাড় পেয়েছেন ৭ হাজার ৬২৪ জন। বর্তমানে আইসোলেশনে আছেন ১২ হাজার ১৯০ জন।
তিনি জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় প্রাতিষ্ঠানিক ও হোম কোয়ারিন্টিন মিলে কোয়ারিন্টিন করা হয়েছে ২ হাজার ৮১৯ জনকে। এখন পর্যন্ত ৩ লাখ ৩৯ হাজার ৫৮৩ জনকে কোয়ারিন্টিন করা হয়েছে। কোয়ারিন্টিন থেকে গত ২৪ ঘণ্টায় ছাড় পেয়েছেন ২ হাজার ১৩২ জন, এখন পর্যন্ত মোট ছাড় পেয়েছেন ২ লাখ ৭৬ হাজার ৩৭৮ জন। বর্তমানে মোট কোয়ারিন্টিনে আছেন ৬৩ হাজার ২০৫ জন। দেশে কোয়ারিন্টিনের জন্য ৬২৯টি প্রতিষ্ঠান প্রস্তুত রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তাৎক্ষণিকভাবে সেবা দেয়া যায় ৩১ হাজার ৯৯১ জনকে।
অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা জানান, কেন্দ্রীয় ঔষধাগার থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী (পিপিই) গত ২৪ ঘন্টায় বিতরণ হয়েছে ৬ হাজার ৬০৯টি। এ পর্যন্ত সংগ্রহ ২৫ লাখ ২৮ হাজার ২৪৫টি। এ পর্যন্ত বিতরণ হয়েছে ২৩ লাখ ৪৮ হাজার ২২৪টি। বর্তমানে ১ লাখ ৮০ হাজার ৩১টি পিপিই মজুদ রয়েছে।
গত ২৪ ঘন্টায় হটলাইন নম্বরে ১ লাখ ৭৬ হাজার ৫৯৭টি এবং এ পর্যন্ত প্রায় ১ কোটি ২৪ লাখ ২০ হাজার ১০৩টি ফোন কল রিসিভ করে স্বাস্থ্য সেবা ও পরামর্শ দেয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।
তিনি জানান, করোনাভাইরাস চিকিৎসা বিষয়ে এ পর্যন্ত ১৬ হাজার ৩৮৩ জন চিকিৎসক অনলাইনে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন। ২৪ ঘন্টায় আরও ২ জন চিকিৎসক প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। এদের মধ্যে ৪ হাজার ২১৭ জন স্বাস্থ্য বাতায়ন ও আইইডিসিয়ার’র হটলাইনগুলোতে স্বেচ্ছাভিত্তিতে সপ্তাহে ৭ দিন ২৪ ঘন্টা জনগণকে চিকিৎসাসেবা ও পরামর্শ দিচ্ছেন।
ডা. নাসিমা সুলতানা জানান, দেশের বিমানবন্দর, নৌ, সমুদ্রবন্দর ও স্থলবন্দর দিয়ে গত ২৪ ঘন্টায় ৬৭০ জনসহ সর্বমোট বাংলাদেশে আগত ৭ লাখ ২৩ হাজার ৭১৪ জনকে স্কিনিং করা হয়েছে।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার পরিস্থিতি তুলে ধরে অতিরিক্ত মহাপরিচালক জানান, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০ জুন পর্যন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী ২৪ ঘন্টায় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ১৯ হাজার ২৪৪ জন। এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ৫ লাখ ৬০ হাজার ২৮৫ জন। ২৪ ঘন্টায় মৃত্যুবরণ করেছেন ৪৫৪ জন এবং এ পর্যন্ত ১৬ হাজার ৮১৪ জন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০ জুন পর্যন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী সারাবিশ্বে ২৪ ঘন্টায় করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ১ লাখ ৩৮ হাজার ৯৮০ জন। এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ৮৫ লাখ ২৫ হাজার ৪২ জন। ২৪ ঘন্টায় মৃত্যুবরণ করেছেন ৬ হাজার ২৭১ জন এবং এ পর্যন্ত ৪ লাখ ৫৬ হাজার ৯৭৩ জন বলে তিনি জানান।
করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে সবাইকে ঘরে থাকা, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, জনসমাগম এড়িয়ে চলা, সর্বদা মুখে মাস্ক পরে থাকা, সাবান পানি দিয়ে বারবার ২০ সেকেন্ড ধরে হাত ধোয়া, বাইরে গেলে হ্যান্ড গ্লাভস ব্যবহার, বেশি বেশি পানি ও তরল জাতীয় খাবার, ভিটামিন সি ও ডি সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া, ডিম, মাছ, মাংস, টাটকা ফলমূল ও সবজি খাওয়াসহ শরীরকে ফিট রাখতে নিয়মিত হালকা ব্যায়াম এবং স্বাস্থ্য অধিদফতর ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ-নির্দেশনা মেনে চলার অনুরোধ জানানো হয়।
তিনি বলেন, ধূমপান থেকে বিরত থাকতে হবে, কারণ তা অতিরিক্ত ঝুঁকি তৈরি করে।