বাসস ক্রীড়া-৭ : বিশ্বকাপ থেকে বিদায়ের পর আমি বলের দিকে তাকাতে পারিনি : নেইমার

144

বাসস ক্রীড়া-৭
ফুটবল-বিশ্বকাপ-ব্রাজিল-নেইমার
বিশ্বকাপ থেকে বিদায়ের পর আমি বলের দিকে তাকাতে পারিনি : নেইমার
পারাইয়া গ্রান্ডে (ব্রাজিল), ২২ জুলাই ২০১৮ (বাসস/এএফপি) : বেলজিয়ামের কাছে হেরে বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে বিদায় নেয়ার পর বিশ্বকাপের বাকী ম্যাচগুলো আর দেখেননি বলে জানিয়েছেন ব্রাজিল সুপার স্টার নেইমার। এমনকি কোন ফুটবলের দিকেও তাকাতে পারেননি বলে জানান বিশ্বের এই সবচেয়ে দামী খেলোয়াড়।
শনিবার বার্তা সংস্থা এএফপি’কে দেয়া বিশেষ এক সাক্ষাৎকারে প্যারিস সেন্ট জার্মেইয়ের (পিএসজি) এই ফুটবল তারকা বলেন, ‘এ সময় আমার এমন অবস্থা হয়ে গিয়েছিল যে, বলতে শুধু বাকী ছিল আমি আর ফুটবল খেলতে পারবো না। কিন্তু আমি কোন ফুটবলের দিকেই তাকাতে পারছিলাম না। বিশ্বকাপের বাকী ম্যাচগুলোও আমি দেখার ইচ্ছে হারিয়ে ফেলি।’
‘নেইমার প্রাইয়া গ্র্যান্ড ইনস্টিটিউটে রেড বুল নেইমার জুনিয়র ফাইভ এ সাইড টুর্নামেন্ট’ চলাকালে সেখানে উপস্থিত ২৬ বছর বয়সি এই ফুটবল তারকা এসব কথা বলছিলেন। ছয় বছর বয়সি ছেলে ড্যাভি লুক্কাকে নিয়ে একটি হাতা কাটা টি-শার্ট পড়ে উপস্থিত হওয়া নেইমারকে এ সময় বেশ নির্ভার মনে হচ্ছিল।
বিশ্বকাপ পরবর্তী প্রতিক্রিয়ায় নেইমার বলেন, ‘এ সময় আমি শোকাচ্ছন্ন হয়ে পড়ি। ওই ঘটনায় আমি সত্যিই বিমর্ষ হয়ে পড়ি। তবে এখন দু:খ বোধ কাটিয়ে উঠেছি। আমার ছেলে , পরিবার, বন্ধুবান্ধব সাবই এখানে রয়েছে। তারা কেউ আমাকে মলিন অবস্থায় দেখতে চায় না।’
রিয়াল মাদ্রিদে যোগ দিতে স্পেনের সঙ্গে যোগাযোগের প্রসঙ্গে নেইমার বলেন, এসব গণমাধ্যমের জল্পনা কল্পনা। যে বা যারা এই সব রিপোর্ট লিখেছে আমার মনে হয়েছে তারা মামার কাছে মাসির গল্প বলছে। আমার জীবন সম্পর্কে আমার চেয়ে তারাই বেশি জানে। এ ধরনের প্রশ্নের তাই কোন উত্তর আমি দিতে চাই না। কারণ এ ধরনের কোন কিছুই ঘটছে না।
গত বছর রেকর্ড ২২২ মিলিয়ন ইউরোর চুক্তিতে বার্সেলোনা থেকে পিএসজিতে যোগ দেয়া এই ব্রাজিলীয় সুপার স্টার মনে করেন, ক্লাব হোক কিংবা জতীয় , প্রত্যাশার দ্বৈত চাপ কাঁধের উপর থাকবেই। এর ওজন পরিমাপ করা যায় না। আমি যখন ১৭, ১৮ বছর তখনো শুধু ব্রাজিল দল নয়, ক্লাব ফুটবলেও চাপ নিয়ে খেলেছি। সব সেরা খেলোয়াড়রাই এমন চাপ অনুভব করেন। এমন চাপ মোকাবেলা করার জন্য আমি নিজেকে প্রস্তুত করে নিয়েছি। জানি, সমর্থকদের প্রত্যাশা মাফিক ফলাফল না পেলে এই চাপ আরো বাড়তে থাকে। ’
বিশ্বকাপে ফাউলের কবলে পড়ার পর নেইমারের অতি নাটকীয় আচরণ ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়েছে। তবে তিনি বলেছেন, তাকে আরো বেশি সুরক্ষা দেয়া উচিৎ ছিল। নেইমার বলেন,‘ মানুষ খুব দ্রুত সমালোচনা শুরু করে। সেখানে একজন ফাউল করেন এবং অন্যজন ফাউলের শিকার হন। আমি বিশ্বকাপ খেলতে চাই, প্রতিপক্ষকে হারাতে। কারো লাথি খেতে নয়। আমাকে নিয়ে সমালোচনা ছিল অতিরঞ্জিত। কিন্তু আমি একজন খেলোয়াড়। এ ধরনের বিষয়ের সঙ্গে মানিয়ে নিতে অভ্যস্ত। একই সময়ে আমি খেলতে এবং রেফায়িং করতে পারবো না। তবে আমার প্রত্যাশা মাফিক কিছু করার মতো সুযোগ সেখানে থাকে।’
চলতি সপ্তাহের শুরুতে ব্যঙ্গাত্বক একটি ভিডিও প্রকাশের মাধ্যমে নেইমার তার সমালোচকদের সমালোচনার জবাব দিয়েছেন, যেখানে দেখা গেছে নেইমার শিশুদের শিক্ষা দিচ্ছেন কিভাবে ডাইভ দিতে হয়।
রাশিয়া বিশ্বকাপে ব্রাজিলীয় এই সুপার স্টার প্রতিপক্ষের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করার সময় ঘন ঘন মাটিতে পড়ে গিয়ে গড়াগড়ি খাওয়ায় ব্যপকভাবে সমালোচিত হন। তবে বৃহস্পতিবার ইনস্টাগ্রাম একাউন্টে ব্যাঙ্গাত্বক ভিডিও প্রকাশ করে ওই সমালোচনার প্রতিশোধ নেন বিশ্বের সবচেয়ে দামী ফুটবল তারকা।
ভিডিওতে দেখা যায়, একটি পার্কিং লটে প্রায় এক ডজন শিশুকে নিয়ে নেইমার চিৎকার করছেন ‘ওয়ান, টু, থ্রি, গো’- আর তারা মাটিতে লুটিয়ে পড়ছে। তখনই ওই ব্রাজিলীয় হাসতে হাসতে লুটিয়ে পড়ে বলছেন, ‘এটি হচ্ছে একটি ফ্রি-কীক’।
তিনি ভিডিওটির শিরোনাম করেছেন # চ্যালেঞ্জ ডিফলটা। পুর্তগীজে ফ্রি-কীক চ্যালেঞ্জ।
রাশিয়া বিশ্বকাপ চলাকালে ‘নেইমার চ্যালেঞ্জ’ দারুণভাবে ছড়িয়ে পড়ে। যেখানে নেইমারকে ইচ্ছেমত উপহাস করা হয়েছে।
এদিকে পিএসজিতে যোগ দেয়া নবাগত কোচ থমাস টাসেলকে ক্লাবের জন্য একটি দারুণ সংযুক্তি বলে মন্তব্য করেছেন নেইমার। ব্রাজিলীয় তারকা বলেন, ‘তিনি (থমাস) অসাধারণ একজন কোচ। আশা করছি দারুণ একটি মৌসুম পার করতে পারব। সত্যি আমি এ জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি। আমরা দারুণ এক ফুটবল কিংবদন্তীকেও (ইতালীয় গোলরক্ষক জিয়ানলুইজি বুফন) দলভুক্ত করেছি। যিনি বিশাল অভিজ্ঞতা সঙ্গে নিয়ে আসছেন, যা আসন্ন মৌসুমে আমাদের দারুণ উপকারে আসবে।’
বাসস/এএফপি/এমএইচসি/১৭০৫/মোজা/স্বব