দেশে গত ২৪ ঘন্টায় মারা গেছেন ৪৫ জন, নতুন শনাক্ত ৩,২৪৩

419

ঢাকা, ১৯ জুন, ২০২০ (বাসস) : দেশে গত ২৪ ঘন্টায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ৪৫ জন মৃত্যুবরণ করেছেন।
গতকালের চেয়ে আজ ৭ জন বেশি মৃত্যুবরণ করেছেন। গতকাল ৩৮ জন মৃত্যুবরণ করেছিলেন। এখন পর্যন্ত এই ভাইরাসে দেশে মৃত্যুবরণ করেছেন ১ হাজার ৩৮৮ জন।
শনাক্তের বিবেচনায় আজ মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৩২ শতাংশ। আগের দিন এই হার ছিল ১ দশমিক ৩১ শতাংশ। গতকালের চেয়ে আজ দশমিক ০১ শতাংশ বেশি।
আজ দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদফতরের করোনাভাইরাস সংক্রান্ত নিয়মিত অনলাইন হেলথ বুলেটিনে অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা এসব তথ্য জানান।
ডা. নাসিমা সুলতানা জানান, গত ২৪ ঘন্টায় ১৫ হাজার ৪৫ জনের নমুনা পরীক্ষায় ৩ হাজার ২৪৩ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। গতকালের চেয়ে আজ ৫৬০ জন কম শনাক্ত হয়েছে। গতকাল শনাক্ত হয়েছিল ৩ হাজার ৩০৮ জন। দেশে বর্তমানে করোনা আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ১ লাখ ৫ হাজার ৫৩৫।
তিনি জানান, নমুনা পরীক্ষায় আজ শনাক্তের হার ২১ দশমিক ৫৬ শতাংশ। আগের দিন এ হার ছিল ২৩ দশমিক ৩৯ শতাংশ। আগের দিনের চেয়ে আজ শনাক্তের হার ১ দশমিক ৮৩ শতাংশ কম।
এদিকে করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে গত ২৪ ঘন্টায় হাসপাতাল এবং বাসায় মিলিয়ে সুস্থ হয়েছেন ২ হাজার ৭৮১ জন। গতকালের চেয়ে আজ ৮০৬ জন বেশি সুস্থ হয়েছেন। গতকাল সুস্থ হয়েছিলেন ১ হাজার ৯৭৫ জন। এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ৪২ হাজার ৯৪৫ জন।
নাসিমা সুলতানা জানান, আজ শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৪০ দশমিক ৬৯ শতাংশ। আগের দিন এই হার ছিল ৩৯ দশমিক ২৬ শতাংশ। আগের দিনের চেয়ে আজ সুস্থতার হার ১ দশমিক ৪৩ শতাংশ বেশি।
অতিরিক্ত মহাপরিচালক জানান, ‘করোনাভাইরাস শনাক্তে গত ২৪ ঘন্টায় নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে ১৬ হাজার ৩২৭টি। আগের দিন সংগ্রহ করা হয়েছিল ১৭ হাজার ৩৪৯টি। গতকালের চেয়ে আজ ১ হাজার ২২টি নমুনা কম সংগ্রহ করা হয়েছে। গত ২৪ ঘন্টায় নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ১৫ হাজার ৪৫টি। আগের দিন নমুনা পরীক্ষা হয়েছিল ১৬ হাজার ২৫৯টি। গত ২৪ ঘন্টায় আগের দিনের চেয়ে ১ হাজার ২১৪টি কম নমুনা পরীক্ষা হয়েছে। এ পর্যন্ত দেশে মোট ৫ লাখ ৮২ হাজার ৫৪৮টি নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ।
তিনি জানান, গত ২৪ ঘন্টায় করোনায় মৃত্যুবরণকারীদের মধ্যে পুরুষ ৩২ জন, নারী ১৩ জন। বয়স বিভাজনে ১১ থেকে ২০ বছরের মধ্যে ১ জন, ২১ থেকে ৩০ বছরে মধ্যে ৩ জন, ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে ৪ জন, ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে ১০ জন, ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে ৯ জন, ৬১ থেকে ৭০ বছরের মধ্যে ১১ জন, ৭১ থেকে ৮০ বছরের মধ্যে ৪ জন, এবং ৮১ থেকে ৯০ বছরের মধ্যে ৩ জন। এদের মধ্যে ৩১ জন হাসপাতালে এবং ১৪ জন বাসায় মারা গেছেন। বিভাগ অনুযায়ী ঢাকা বিভাগে ২১ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ১৬ জন, রাজশাহী এবং খুলনা বিভাগে ২ জন করে, বরিশাল এবং সিলেট বিভাগে ১ জন করে এবং ময়মনসিংহ বিভাগে ৪ জন।
ডা. নাসিমা সুলতানা জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশনে নেয়া হয়েছে আরও ৬৮৪ জনকে এবং এ পর্যন্ত আইসোলেশনে নেয়া হয়েছে ১৮ হাজার ৫৫৫ জনকে। গত ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশন থেকে ছাড় পেয়েছেন ২৩৬ জন এবং এ পর্যন্ত ছাড় পেয়েছেন ৭ হাজার ৮১ জন। বর্তমানে আইসোলেশনে রয়েছেন ১১ হাজার ৪৭৪ জন।
তিনি জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় হোম ও প্রাতিষ্ঠানিক মিলিয়ে কোয়ারিন্টিনে নেয়া হয়েছে ২ হাজার ৫৮৫ জনকে। এ পর্যন্ত কোয়ারিন্টিনে নেয়া হয়েছে ৩ লাখ ৩৫ হাজার ২২৬ জনকে। গত ২৪ ঘণ্টায় কোয়ারিন্টিন থেকে ছাড় পেয়েছেন ২ হাজার ২৩৭ জন। এ পর্যন্ত কোয়ারিন্টিন থেকে মোট ছাড় পেয়েছেন ২ লাখ ৭২ হাজার ১৭২ জন। বর্তমানে হোম ও প্রাতিষ্ঠানিক মিলিয়ে কোয়ারিন্টিনে রয়েছেন ৬৩ হাজার ৫৪ জন। দেশে কোয়ারিন্টিনের জন্য ৬২৯টি প্রতিষ্ঠান প্রস্তুত রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তাৎক্ষণিকভাবে সেবা দেয়া যায় ৩১ হাজার ৯৯১ জনকে।
অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা জানান, কেন্দ্রীয় ঔষধাগার থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী (পিপিই) গত ২৪ ঘন্টায় বিতরণ হয়েছে ৬ হাজার ৮শ’টি। এ পর্যন্ত সংগ্রহ ২৫ লাখ ২৪ হাজার ২৮৫টি। এ পর্যন্ত বিতরণ হয়েছে ২৩ লাখ ৪১ হাজার ৬০৫টি। বর্তমানে ১ লাখ ৮২ হাজার ৬৮০টি পিপিই মজুদ রয়েছে।
গত ২৪ ঘন্টায় হটলাইন নম্বরে ১ লাখ ৯৬ হাজার ১৯২টি এবং এ পর্যন্ত প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ ৫৮ হাজার ৭৮৬টি ফোন কল রিসিভ করে স্বাস্থ্য সেবা ও পরামর্শ দেয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।
তিনি জানান, করোনাভাইরাস চিকিৎসা বিষয়ে এ পর্যন্ত ১৬ হাজার ৩৭৮ জন চিকিৎসক অনলাইনে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন। ২৪ ঘন্টায় আরও ৮ জন চিকিৎসক প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। এদের মধ্যে ৪ হাজার ২১৭ জন স্বাস্থ্য বাতায়ন ও আইইডিসিয়ার’র হটলাইনগুলোতে স্বেচ্ছাভিত্তিতে সপ্তাহে ৭ দিন ২৪ ঘন্টা জনগণকে চিকিৎসাসেবা ও পরামর্শ দিচ্ছেন।
ডা.নাসিমা সুলতানা জানান, দেশের বিমানবন্দর, নৌ, সমুদ্রবন্দর ও স্থলবন্দর দিয়ে গত ২৪ ঘন্টায় ৮০৮ জনসহ সর্বমোট বাংলাদেশে আগত ৭ লাখ ২২ হাজার ২৮৫ জনকে স্কিনিং করা হয়েছে।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার পরিস্থিতি তুলে ধরে অতিরিক্ত মহাপরিচালক জানান, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ১৮ জুন পর্যন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী ২৪ ঘন্টায় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ১৮ হাজার ৫৪৮ জন। এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ৫ লাখ ৩১ হাজার ৫৮২ জন। ২৪ ঘন্টায় মৃত্যুবরণ করেছেন ৪২৩ জন এবং এ পর্যন্ত ১৫ হাজার ৯২১ জন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ১৮ জুন পর্যন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী সারাবিশ্বে ২৪ ঘন্টায় করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ১ লাখ ২১ হাজার ২৩২ জন। এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ৮২ লাখ ৪২ হাজার ৯৯৯ জন। ২৪ ঘন্টায় মৃত্যুবরণ করেছেন ৫ হাজার ২৪৫ জন এবং এ পর্যন্ত ৪ লাখ ৪৫ হাজার ৫৩৫ জন বলে তিনি জানান।
করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে সবাইকে ঘরে থাকা, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, জনসমাগম এড়িয়ে চলা, সর্বদা মুখে মাস্ক পরে থাকা, সাবান পানি দিয়ে বারবার ২০ সেকেন্ড ধরে হাত ধোয়া, বাইরে গেলে হ্যান্ড গ্লাভস ব্যবহার, বেশি বেশি পানি ও তরল জাতীয় খাবার, ভিটামিন সি ও ডি সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া, ডিম, মাছ, মাংস, টাটকা ফলমূল ও সবজি খাওয়াসহ শরীরকে ফিট রাখতে নিয়মিত হালকা ব্যায়াম এবং স্বাস্থ্য অধিদফতর ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ-নির্দেশনা মেনে চলার অনুরোধ জানানো হয়।
তিনি বলেন, ধূমপান থেকে বিরত থাকতে হবে, কারণ তা অতিরিক্ত ঝুঁকি তৈরি করে।