দেশে করোনা আক্রান্ত ১ লাখ ছাড়িয়েছে, কমেছে মৃত্যুর সংখ্যা

529

ঢাকা, ১৮ জুন, ২০২০ (বাসস) : দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ১ লাখ ছাড়িয়েছে। তবে গত ২৪ ঘন্টায় এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা কমেছে এবং বেড়েছে সুস্থতার হার।
গত ২৪ ঘন্টায় ১৬ হাজার ২৫৯ জনের নমুনা পরীক্ষায় ৩ হাজার ৮০৩ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। গতকালের চেয়ে আজ ২০৫ জন কম শনাক্ত হয়েছে। গতকাল শনাক্ত হয়েছিল ৪ হাজার ৮ জন। বর্তমানে দেশে এ ভাইরাসে আক্রান্ত ১ লাখ ২ হাজার ২৯২ জন রোগী রয়েছেন।
নমুনা পরীক্ষায় আজ শনাক্তের হার ২৩ দশমিক ৩৯ শতাংশ। আগের দিন এ হার ছিল ২২ দশমিক ৮৭ শতাংশ। আগের দিনের চেয়ে আজ শনাক্তের হার দশমিক ৫২ শতাংশ বেশি।
আজ দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদফতরের করোনাভাইরাস সংক্রান্ত নিয়মিত অনলাইন হেলথ বুলেটিনে অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা এসব তথ্য জানান।
ডা. নাসিমা সুলতানা জানান, গত ২৪ ঘন্টায় ৩৮ জন মৃত্যুবরণ করেছেন। গতকালের চেয়ে আজ ৫ জন কম মৃত্যুবরণ করেছেন। গতকাল ৪৩ জন মৃত্যুবরণ করেছিলেন। এই পর্যন্ত এ ভাইরাসে দেশে মৃত্যুবরণ করেছেন ১ হাজার ৩৪৩ জন।
শনাক্তের বিবেচনায় আজ মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৩১ শতাংশ। আগের দিন এই হার ছিল ১ দশমিক ৩৩ শতাংশ। গতকালের চেয়ে আজ দশমিক ০২ শতাংশ কম।
এদিকে করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে গত ২৪ ঘন্টায় সুস্থ হয়েছেন ১ হাজার ৯৭৫ জন। এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ৪০ হাজার ১৬৪ জন।
নাসিমা সুলতানা জানান, আজ শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৩৯ দশমিক ২৬ শতাংশ। আগের দিন এই হার ছিল ৩৮ দশমিক ৭৭ শতাংশ। আগের দিনের চেয়ে আজ সুস্থতার হার দশমিক ৪৯ শতাংশ বেশি।
অতিরিক্ত মহাপরিচালক জানান, ‘করোনাভাইরাস শনাক্তে গত ২৪ ঘন্টায় নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে ১৭ হাজার ৩৪৯টি। আগের দিন সংগ্রহ করা হয়েছিল ১৮ হাজার ৯২২টি । গতকালের চেয়ে আজ ১ হাজার ৫৭৩টি নমুনা কম সংগ্রহ করা হয়েছে। গত ২৪ ঘন্টায় দেশের ৬১টি পরীক্ষাগারে নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ১৬ হাজার ২৫৯টি। আগের দিন নমুনা পরীক্ষা হয়েছিল ১৭ হাজার ৫২৭টি। গত ২৪ ঘন্টায় আগের দিনের চেয়ে ১ হাজার ২৬৮টি কম নমুনা পরীক্ষা হয়েছে। এ পর্যন্ত দেশে মোট ৫ লাখ ৬৭ হাজার ৫০৩টি নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ।
তিনি জানান, গত ২৪ ঘন্টায় মৃত্যুবরণকারী ৩৮ জনের মধ্যে পুরুষ ৩১ জন এবং নারী ৭ জন। বয়স বিবেচনায় ১০ বছরের মধ্যে ১ জন, ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে ২ জন, ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে ৫ জন, ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে ৩ জন, ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে ৬ জন, ৬১ থেকে ৭০ বছরের মধ্যে ১৪ জন, ৭১ থেকে ৮০ বছরের মধ্যে ৫ জন এবং ৮১ থেকে ৯০ বছরের মধ্যে ২ জন রয়েছেন। এলাকা বিবেচনায়, ঢাকা বিভাগে ১৪ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ১৮ জন, রাজশাহী বিভাগে ১ জন, খুলনা বিভাগে ২ জন এবং বরিশাল, ময়মনসিংহ ও রংপুরে ১ জন করে রয়েছেন। এদের মধ্যে হাসপাতালে মারা গেছেন ২৪ জন এবং বাড়িতে মারা গেছেন ১৪ জন।
অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশনে যুক্ত হয়েছেন ৬৭৪ জন, আর ছাড় পেয়েছেন ৪শ’ জন। এ পর্যন্ত মোট আইসোলেশনে গেছেন ১৭ হাজার ৮৭১ জন এবং ছাড় পেয়েছেন ৬ হাজার ৮৪৫ জন। বর্তমানে আইসোলেশনে আছেন ১১ হাজার ২৬ জন।
তিনি জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় হোম ও প্রাতিষ্ঠানিক মিলিয়ে কোয়ারিন্টিনে নেয়া হয়েছে ২ হাজার ৮২১ জনকে। এ পর্যন্ত কোয়ারিন্টিনে নেয়া হয়েছে ৩ লাখ ৩২ হাজার ৬৪১ জনকে। গত ২৪ ঘণ্টায় কোয়ারিন্টিন থেকে ছাড় পেয়েছেন ২ হাজার ৬০৫ জন। এ পর্যন্ত কোয়ারিন্টিন থেকে মোট ছাড় পেয়েছেন ২ লাখ ৬৯ হাজার ৯৩৫ জন। বর্তমানে হোম ও প্রাতিষ্ঠানিক মিলিয়ে কোয়ারিন্টিনে রয়েছেন ৬৫ হাজার ৭০৬ জন। দেশের ৬৪ জেলা-উপজেলা পর্যায়ে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারিন্টিনের জন্য ৬২৯টি প্রতিষ্ঠান প্রস্তুত রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তাৎক্ষণিকভাবে সেবা দেয়া যাবে ৩১ হাজার ৯৯১ জনকে।
অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা জানান, কেন্দ্রীয় ঔষধাগার থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী (পিপিই) গত ২৪ ঘন্টায় বিতরণ হয়েছে ৮শ’টি। এ পর্যন্ত সংগ্রহ ২৫ লাখ ২৪ হাজার ২৮৫টি। এ পর্যন্ত বিতরণ হয়েছে ২৩ লাখ ৩৪ হাজার ৮০৫টি। বর্তমানে ১ লাখ ৮৯ হাজার ৪৮০টি পিপিই মজুদ রয়েছে।
গত ২৪ ঘন্টায় হটলাইন নম্বরে ২ লাখ ২ হাজার ৭২৫টি এবং এ পর্যন্ত প্রায় ১ কোটি ১৮ লাখ ৬২ হাজার ৫৯৪টি ফোন কল রিসিভ করে স্বাস্থ্য সেবা ও পরামর্শ দেয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।
তিনি জানান, করোনাভাইরাস চিকিৎসা বিষয়ে এ পর্যন্ত ১৬ হাজার ৩৭০ জন চিকিৎসক অনলাইনে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন। ২৪ ঘন্টায় আরও ৮ জন চিকিৎসক প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। এদের মধ্যে ৪ হাজার ২১৭ জন স্বাস্থ্য বাতায়ন ও আইইডিসিয়ার’র হটলাইনগুলোতে স্বেচ্ছাভিত্তিতে সপ্তাহে ৭ দিন ২৪ ঘন্টা জনগণকে চিকিৎসাসেবা ও পরামর্শ দিচ্ছেন।
ডা.নাসিমা সুলতানা জানান, দেশের বিমানবন্দর, নৌ, সমুদ্রবন্দর ও স্থলবন্দর দিয়ে গত ২৪ ঘন্টায় ৫৮১ জনসহ সর্বমোট বাংলাদেশে আগত ৭ লাখ ২১ হাজার ৪৭৭ জনকে স্কিনিং করা হয়েছে।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার পরিস্থিতি তুলে ধরে অতিরিক্ত মহাপরিচালক জানান, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ১৭ জুন পর্যন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী ২৪ ঘন্টায় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ১৬ হাজার ৩৬১ জন। এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ৫ লাখ ৩ হাজার ৩৪ জন। ২৪ ঘন্টায় মৃত্যুবরণ করেছেন ২ হাজার ৮৯ জন এবং এ পর্যন্ত ১৫ হাজার ৪৯৮ জন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ১৭ জুন পর্যন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী সারাবিশ্বে ২৪ ঘন্টায় করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ১ লাখ ১৯ হাজার ৭৫৯ জন। এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ৮০ লাখ ৬১ হাজার ৫৫০ জন। ২৪ ঘন্টায় মৃত্যুবরণ করেছেন ৫ হাজার ৪৯৪ জন এবং এ পর্যন্ত ৪ লাখ ৪০ হাজার ২৯০ জন বলে তিনি জানান।
করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে সবাইকে ঘরে থাকা, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, জনসমাগম এড়িয়ে চলা, সর্বদা মুখে মাস্ক পরে থাকা, সাবান পানি দিয়ে বারবার ২০ সেকেন্ড ধরে হাত ধোয়া, বাইরে গেলে হ্যান্ড গ্লাভস ব্যবহার, বেশি বেশি পানি ও তরল জাতীয় খাবার, ভিটামিন সি ও ডি সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া, ডিম, মাছ, মাংস, টাটকা ফলমূল ও সবজি খাওয়াসহ শরীরকে ফিট রাখতে নিয়মিত হালকা ব্যায়াম এবং স্বাস্থ্য অধিদফতর ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ-নির্দেশনা মেনে চলার অনুরোধ জানানো হয়।
তিনি বলেন, ধূমপান থেকে বিরত থাকতে হবে, কারণ তা অতিরিক্ত ঝুঁকি তৈরি করে।
আজ বুলেটি উপস্থাপনের শুরুতেই কথা বলেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ।
তিনি জানান, তিনি নিজে করোনা সংক্রমিত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন দীর্ঘদিন। সুস্থ হয়ে আজ ব্রিফিংয়ে যুক্ত হয়েছেন। দেশের করোনা পরিস্থিতি দীর্ঘমেয়াদি হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি। সেই অনুযায়ী সরকারের প্রস্তুতি ও পরিকল্পনা সম্পর্কে তিনি তুলে ধরেন।