কুড়িগ্রামে ১২ কোটি টাকার লটকন উৎপাদন

223

কুড়িগ্রাম, ২২ জুলাই, ২০১৮ (বাসস) : সদর উপজেলার কাঁঠালবাড়ি ও পার্শ্ববর্তী রাজারহাট উপজেলার ছিনাই ইউনিয়নে এ বছর ১২ কোটি টাকার লটকন উৎপাদন হয়েছে। এ দু’টি এলাকায় ভরা মৌসুমে লটকনের মোকাম থেকে প্রতিদিন গড়ে ৫শ’ মণ লটকন ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে চলে যাচ্ছে। গত বছরের চেয়ে দাম কিছুটা কম থাকলেও ফলন ভালো হওয়ায় লটকন চাষিরা এবার বেশ লাভবান হচ্ছেন বলে জানিয়েছেন।
লটকন ব্যবসায়ী কাশেম, মনির, জাহাঙ্গীর ও আলতাফ, জানান, তারা গত ১০-১২ বছর ধরে লটকনের ব্যবসা করছেন। সুস্বাদু এ ফলটির চাহিদা ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় বেশি। বর্তমানে কাঁঠালবাড়ি ও ছিনাই ইউনিয়নে প্রচুর পরিমাণ লটকন চাষ হচ্ছে। ফলে প্রতিদিন এখান থেকে নৈশ কোচের ছাদে করে প্রায় ২০০টি লটকনের খাঁচা ঢাকা, সাভার, টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ, গাজিপুর, বগুড়াসহ বিভিন্ন আড়তে চলে যাচ্ছে। প্রতিটি খাঁচায় গড়ে ১০০ কেজি পর্যন্ত লটকন ভরা হয়। গড়ে ৮০০ টাকা মণ হিসেবে প্রতিদিন ৪ লাখ টাকার লটকন চলে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন এলাকায়। প্রায় এক মাস ধরে লটকনের এ ব্যবসা চলছে। সেই হিসেবে এ বছর ১২ কোটি টাকার লটকন উৎপাদন হয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষক ও ব্যবসায়ীরা।
টাঙ্গাইল থেকে আসা ব্যবসায়ী শহীদ জানান, তারা বাগানে আগাম লটকন কিনেছেন। তবে দাম কম হওয়ায় লাভ করতে পারছেন না। বর্তমানে বাগান ও স্থানীয় বাজারে প্রতিমন লটকন ৬০০ থেকে ১ হাজার টাকা মণ দরে কিনে ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা দরে বিক্রি করছেন।
সরেজমিন দেখা গেছে, সুপারি গাছের ফাঁকে নামমাত্র পরিচর্যা আর খরচ করেই লাখ লাখ টাকার লটকন বিক্রি করছেন অনেক লটকন চাষি। কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার শিবরাম গ্রামের আবু বক্কর সিদ্দিক (৫৪) সফল লটকন চাষি হিসেবে সবার নজর কেড়েছেন। তিনি জানান, প্রায় ৩২ বছর আগে তার বাবা ৫ একর জমিতে সুপারিসহ অন্যান্য ফলমুলের বাগান করেন। বাগানের চারপাশে সারিবদ্ধভাবে কিছু লটকন গাছ লাগান। গত ১৮ বছর ধরে এসব গাছ ফল দিতে শুরু করে।
বর্তমানে ২০০টি গাছ থেকে লটকন উৎপাদন করা হচ্ছে। এ বছর লটকন উৎপাদন হবে ৩ লাখ টাকারও বেশি। তিনি জানান, সারা বছরে বাগানের পেছনে খরচ পড়েছে মাত্র ২০ হাজার টাকা। শুস্ক মৌসুমে দু’য়েক বার সেচ প্রদান, মুকুল আসার সময় দু’তিনবার কীটনাশক ¯েপ্র ও গাছের গোড়ায় সামান্য রাসায়নিক সার প্রয়োগ করা ছাড়া লটকন চাষে আর কোন পরিচর্যা করতে হয় না। সুপারি বাগানের ছায়ার মধ্যে আস্তে আস্তে লটকন গাছ বেড়ে ওঠে।
এ ছাড়াও শিবরাম গ্রামের আনোয়ার হোসেন ৭০ হাজার, রাজারহাটের ছিনাই এলাকার দেলোয়ার হোসেন ১ লাখ টাকায় লটকন বাগান বিক্রি করেছেন। পূর্ব দেবোত্তর গ্রামের মহির খোকা ৭০ মণ, মহেন্দ্রনারায়ন গ্রামের কৌশল চন্দ্র ১০০ মণ লটকন উৎপাদনের আশা করছেন। পাইকাররা গ্রামে গ্রামে ঘুরে লটকন সংগ্রহ ছাড়াও হাটবারে কাঁঠালবাড়ি হাটে বিক্রি হচ্ছে লটকন। বেশিরভাগ সময় পাইকাররা কম দামে চাষীদের কাছ থেকে আগাম লটকন কিনে নেন। কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার কাঁঠালবাড়ি ও রাজারহাট উপজেলার ছিনাই ইউনিয়নের মাটি লটকন চাষের উপযোগী প্রমাণিত হবার পর অনেকেই ঝুঁকে পড়েছে লটকন চাষের দিকে। ফলে প্রতিবছর বাড়ছে উৎপাদন।
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা ষষ্টিচন্দ্র রায় জানান, লটকন চাষ করে অনেকে লাভবান হওয়ায় এবং বিপণনে কোন সমস্যা না হওয়ায় বাণিজ্যিকভাবে লটকন চাষ করার উদ্যোগ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এ বছর আমের সাথে লটকনের বাম্পার ফলন হওয়ায় দাম কিছুটা কমলেও বাড়তি ফলনের কারণে লাভবান হচ্ছেন কৃষক ও ব্যবসায়ীরা।