২৪ ঘন্টায় করোনায় রেকর্ড সংখ্যক ৫৩ জনের মৃত্যু, নতুন আক্রান্ত সর্বোচ্চ ৩,৮৬২

714

ঢাকা, ১৬ জুন, ২০২০ (বাসস) : দেশে গত ২৪ ঘন্টায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে রেকর্ড সংখ্যক ৫৩ জন মৃত্যুবরণ করেছেন। এই পর্যন্ত এ ভাইরাসে মৃত্যুবরণ করেছেন ১ হাজার ২৬২ জন।
এরআগে শুক্রবার একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড ছিল। ওইদিন ৪৬ জন করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছিলেন। গতকালের চেয়ে আজ ১৫ জন বেশি মারা গেছেন। শনাক্তের বিবেচনায় আজ মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৩৪ শতাংশ। আগের দিনও এই হার ছিল ১ দশমিক ৩৩ শতাংশ। গতকালের চেয়ে আজ দশমিক ০১ শতাংশ বেশি।
আজ দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদফতরের করোনাভাইরাস সংক্রান্ত নিয়মিত অনলাইন হেলথ বুলেটিনে অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা এসব তথ্য জানান।
ডা. নাসিমা সুলতানা জানান, দেশে বর্তমানে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৯৪ হাজার ছাড়িয়েছে। বর্তমানে দেশে এ ভাইরাসে আক্রান্ত ৯৪ হাজার ৪৮১ জন রোগী রয়েছেন। গত ২৪ ঘন্টায় সর্বাধিক ১৭ হাজার ২১৪ জনের নমুনা পরীক্ষায় ৩ হাজার ৮৬২ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এটিও একদিনে সর্বোচ্চ শনাক্তের রেকর্ড। গতকালের চেয়ে আজ ৭৬৩ জন বেশি শনাক্ত হয়েছেন। গতকাল শনাক্ত হয়েছিল ৩ হাজার ৯৯ জন।
তিনি জানান, নমুনা পরীক্ষায় আজ শনাক্তের হার ২২ দশমিক ৪৪ শতাংশ। আগের দিন এ হার ছিল ২০ দশমিক ৬১ শতাংশ। আগের দিনের চেয়ে আজ শনাক্তের হার ১ দশমিক ৮৩ শতাংশ বেশি।
এদিকে করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে গত ২৪ ঘন্টায় সুস্থ হয়েছেন ২ হাজার ২৩৭ জন। এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ৩৬ হাজার ২৬৪ জন।
নাসিমা সুলতানা জানান, আজ শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৩৮ দশমিক ৩৮ শতাংশ। আগের দিন এই হার ছিল ৩৭ দশমিক ৫৫ শতাংশ। আগের দিনের চেয়ে আজ সুস্থতার হার দশমিক ৮৩ শতাংশ কম।
তিনি জানান, মৃত্যুবরণকারীদের মধ্যে ৪৭ জন পুরুষ এবং ৬ জন নারী। বয়স বিশ্লেষণে দেখা যায় যায়, ৮১ থেকে ৯০ বছরের মধ্যে ১ জন, ৭১ থেকে ৮০ বছরের মধ্যে ৮ জন, ৬১ থেকে ৭০ বছরের মধ্যে ১০ জন, ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে ১৯ জন, ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে ৯ জন, ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে ২ জন, ২১ থেকে ৩০ বছরের ৩ জন, ১১ থেকে ২০ বছরের মধ্যে ১ জন। এদের মধ্যে ঢাকা বিভাগে ৩০ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ১৪ জন, রাজশাহী বিভাগে ৪ জন, খুলনা বিভাগে ৩ জন, ময়মনসিংহে ১ জন এবং বরিশাল বিভাগে ১ জন। এদের মধ্যে হাসপাতালে মারা গেছেন ৩৪ জন, বাসায় মারা গেছেন ১৮ জন এবং হাসপাতালে মৃত অবস্থায় এসেছেন ১ জন।
অধ্যাপক নাসিমা বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশনে রাখা হয়েছে ৬৩৫ জনকে। বর্তমানে আইসোলেশনে আছেন ১০ হাজার ৩০২ জন। ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশন থেকে ছাড় পেয়েছেন ৩৫৯ জন। এখন পর্যন্ত ছাড় পেয়েছেন ৬ হাজার ১৭৭ জন।
তিনি বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় প্রাতিষ্ঠানিক ও হোম কোয়ারিন্টিন মিলে কোয়ারিন্টিন করা হয়েছে ৩ হাজার ৪২১ জনকে। এখন পর্যন্ত ৩ লাখ ২৬ হাজার ৭৭৯ জনকে কোয়ারিন্টিন করা হয়েছে। কোয়ারিন্টিন থেকে গত ২৪ ঘণ্টায় ছাড় পেয়েছেন ২ হাজার ৫৪৪ জন। এখন পর্যন্ত ছাড় পেয়েছেন ২ লাখ ৬৪ হাজার ২৩৩ জন। বর্তমানে মোট কোয়ারিন্টিনে আছেন ৬২ হাজার ৫৪৬ জন। দেশের ৬৪ জেলা-উপজেলা পর্যায়ে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারিন্টিনের জন্য ৬২৯টি প্রতিষ্ঠান প্রস্তুত রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তাৎক্ষণিকভাবে সেবা দেয়া যাবে ৩১ হাজার ৯৯১ জনকে।
অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা জানান, কেন্দ্রীয় ঔষধাগার থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী (পিপিই) এ পর্যন্ত সংগ্রহ ২৪ লাখ ৮৫ হাজার ১৪২টি। ২৪ ঘন্টায় বিতরণ হয়েছে ৭ হাজার ৭৮০টি। এ পর্যন্ত বিতরণ হয়েছে ২৩ লাখ ১৭ হাজার ৫০৭টি। বর্তমানে ১ লাখ ৬৭ হাজার ৪৩৭টি পিপিই মজুদ রয়েছে।
গত ২৪ ঘন্টায় হটলাইন নম্বরে ১ লাখ ৫৯ হাজার ৮৮০টি এবং এ পর্যন্ত প্রায় ১ কোটি ১৪ লাখ ৭০ হাজার ৭শ’টি ফোন কল রিসিভ করে স্বাস্থ্য সেবা ও পরামর্শ দেয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।
তিনি জানান, করোনাভাইরাস চিকিৎসা বিষয়ে এ পর্যন্ত ১৬ হাজার ৩৫৭ জন চিকিৎসক অনলাইনে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন। ২৪ ঘন্টায় আরও ৮ জন চিকিৎসক প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। এদের মধ্যে ৪ হাজার ২১৭ জন স্বাস্থ্য বাতায়ন ও আইইডিসিয়ার’র হটলাইনগুলোতে স্বেচ্ছাভিত্তিতে সপ্তাহে ৭ দিন ২৪ ঘন্টা জনগণকে চিকিৎসাসেবা ও পরামর্শ দিচ্ছেন।
ডা.নাসিমা সুলতানা জানান, দেশের বিমানবন্দর, নৌ, সমুদ্রবন্দর ও স্থলবন্দর দিয়ে গত ২৪ ঘন্টায় ৯৮৫ জনসহ সর্বমোট বাংলাদেশে আগত ৭ লাখ ১৯ হাজার ৯০৬ জনকে স্কিনিং করা হয়েছে।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার পরিস্থিতি তুলে ধরে অতিরিক্ত মহাপরিচালক জানান, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ১৫ জুন পর্যন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী ২৪ ঘন্টায় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ১৫ হাজার ৯১৩ জন। এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ৪ লাখ ৭১ হাজার ৩৯৩ জন। ২৪ ঘন্টায় মৃত্যুবরণ করেছেন ৪০১ জন এবং এ পর্যন্ত ১২ হাজার ৯২৭ জন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ১৫ জুন পর্যন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী সারাবিশ্বে ২৪ ঘন্টায় করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ১ লাখ ৩২ হাজার ৫৮১ জন। এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ৭৮ লাখ ২৩ হাজার ২৮৯ জন। ২৪ ঘন্টায় মৃত্যুবরণ করেছেন ৩ হাজার ৯১১ জন এবং এ পর্যন্ত ৪ লাখ ৩১ হাজার ৫৪১ জন বলে তিনি জানান।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সকলকে স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে মেনে চলতে সকলের প্রতি আহবান জানান তিনি।
করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে সবাইকে ঘরে থাকা, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, জনসমাগম এড়িয়ে চলা, সর্বদা মুখে মাস্ক পরে থাকা, সাবান পানি দিয়ে বারবার ২০ সেকেন্ড ধরে হাত ধোয়া, বাইরে গেলে হ্যান্ড গ্লাভস ব্যবহার, বেশি বেশি পানি ও তরল জাতীয় খাবার, ভিটামিন সি ও ডি সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া, ডিম, মাছ, মাংস, টাটকা ফলমূল ও সবজি খাওয়াসহ শরীরকে ফিট রাখতে নিয়মিত হালকা ব্যায়াম এবং স্বাস্থ্য অধিদফতর ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ-নির্দেশনা মেনে চলার অনুরোধ জানানো হয়।
তিনি বলেন, ধূমপান থেকে বিরত থাকতে হবে, কারণ তা অতিরিক্ত ঝুঁকি তৈরি করে।