বাসস দেশ-১ : সিলেটের সাবেক মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরান আর নেই

218

বাসস দেশ-১
কামরান-ইন্তেকাল
সিলেটের সাবেক মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরান আর নেই
ঢাকা, ১৫ জুন, ২০২০ (বাসস) : সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরান আর নেই।
ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ ভোর রাতে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্নালিল্লাহি …রাজিউন)।
বদর উদ্দিন আহমদ কামরান ১৯৫১ সালের ১ জানুয়ারি সিলেটে জন্মগ্রহণ করেন। তার বয়স হয়েছিল ৬৯ বছর।
সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রথম মেয়র বদরউদ্দিন আহমদ কামরানের মৃত্যুতে সিলেট মহানগরসহ দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে আসে। সিলেটের মানুষের সুখে-দুঃখে সাথী ছিলেন তিনি । করোনা ভাইরাস পরিস্থিতিতে লকডাউনের কারণে অসহায় হয়ে পড়া মানুষের জন্য মানবিক হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন কামরান।
এই দুর্দিনে তিনি করোনায় সংক্রমিত হতে পারেন জেনেও অসহায় মানুষের বাড়িতে নিজে খাদ্যসামগ্রী বহন করে নিয়ে গেছেন।
গত ৫ জুন সিলেটের ওসমানী মেডিকেল কলেজের ল্যাবে নমুনা পরীক্ষায় তার শরীরে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ে। এরআগে ২৭ মে তার স্ত্রী আসমা কামরান করোনায় আক্রান্ত হন। করোনা আক্রান্ত হওয়ার পর বাসায় আইসোলেশনে ছিলেন তিনি। শারীরিক অবস্থার কিছুটা অবনতি হলে গত ৬ জুন তাকে সিলেট শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালের করোনা আইসোলেশন সেন্টারে ভর্তি করা হয়। অবস্থার আরও অবনতি হলে ৭ জুন সন্ধ্যায় তাকে শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতাল থেকে বিমানবাহিনীর এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে ঢাকায় নিয়ে এসে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তাকে প্লাজমা থেরাপিও দেয়া হয়েছিল।
বিএনপি-জামাত জোট সরকারের সময় কামরানকে লক্ষ্য করে দুই দফা গ্রেনেড হামলা করে জঙ্গিরা। দুই দফাতেই অলৌকিকভাবে প্রাণে বেঁচে যান তিনি।
সিলেট পৌরসভাকে সিটি করপোরেশনে উন্নীত করা হয় ২০০২ সালের ২৮ জুলাই। বিলুপ্ত পৌরসভার চেয়ারম্যান বদর উদ্দিন আহমদ কামরানকে নবগঠিত সিলেট সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত মেয়র করা হয়। এর পর ২০০৩ সালের ২০ মার্চের নির্বাচনে তিনি আনারস প্রতীক নিয়ে তৎকালীন সরকারি দল বিএনপির প্রার্থী এমএ হককে বিপুল ভোটে পরাজিত করে সিলেটের প্রথম মেয়র নির্বাচিত হন। এর আগে ১৯৭৩ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পড়াকালীন সিলেট পৌরসভার সর্বকনিষ্ঠ কমিশনার নির্বাচিত হয়েছিলেন কামরান।
২০০৭-০৮ সালে সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় আরও অনেক রাজনীতিবিদের মত কামরানকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। ওই সময় জনপ্রিয়তার তুঙ্গে থাকা কামরান কারাগারে থেকেও বিএনপির প্রার্থী বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা এম এ হককে ফের পরাজিত করে ১ লাখ ভোটের ব্যবধানে দ্বিতীয় বারের মতো মেয়র নির্বাচিত হন।
সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রথম মেয়র কামরান সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব দিয়েছেন দীর্ঘদিন। তিনি কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগেরও কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য।
বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী বদর উদ্দিন আহমদ কামরান ১৯৬৮ সালে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হন। তিনি দীর্ঘদিন সিলেট শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ২০০২ সালে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন তিনি। ২০১৯ সাল পর্যন্ত তিনি পদে ছিলেন।
সর্বশেষ ২০১৯ সালের ত্রিবার্ষিক কাউন্সিলে নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি করা হয় মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদকে। আর কামরানকে করা হয় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য। এর আগের মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতির পাশাপাশি দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যের দায়িত্ব পালন করেন কামরান।
কামরানের মরদেহ সিলেটে নিয়ে গিয়ে সেখানেই তাকে দাফন করা হবে বলে পারিবারিক সূত্র জানায়।
বাসস/এমএসএইচ/১০০৫/-আরজি