বাসস সংসদ-৪ (প্রধানমন্ত্রী) (দ্বিতীয় ও শেষ কিস্তি) : উচ্চহারে সংক্রমিত এলাকাগুলোতে লকডাউনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে : প্রধানমন্ত্রী

267

বাসস সংসদ-৪ (প্রধানমন্ত্রী) (দ্বিতীয় ও শেষ কিস্তি)
শেখ হাসিনা- সংসদ শোক প্রস্তাব-ভাষণ
উচ্চহারে সংক্রমিত এলাকাগুলোতে লকডাউনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে : প্রধানমন্ত্রী

সংসদ নেতা তাঁর ভাষণে বলেন, ‘আজকে আমি সংসদে আসবো কিন্তু আমাকে অনেক জায়গা থেকে নিষেধ করা হয়েছে। ভীষণভাবে বাধা দেওয়া হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘তাঁদের আমি বললাম হুমকি, বোমা, গ্রেনেড কত কিছুই তো মোকাবিলা করে করে এ পর্যন্ত এসেছি। এখন কী একটা অদৃশ্য শক্তি তার ভয়ে ভীত হয়ে থাকবো।
তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের আওয়ামী লীগ পরিবারের একজন পার্লামেন্ট মেম্বার তাঁকে হারিয়েছি,আমাদের ক্যাবিনেট সদস্য একজন তাঁকেও হারালাম, সেখানে আমি যাবো না, এটা তো হয় না।’
‘নেতাকর্মীদের মৃত্যুতে পাশে দাঁড়ানো আওয়ামী লীগের ঐতিহ্য হলেও করোনা সংক্রমণের কারণে সেটা সম্ভব হচ্ছে না,’ উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘অথচ, আমরা আওয়ামী লীগের যেকোনো একজন কর্মী মারা গেলে ছুটে গিয়েছি। জানাজায় অংশ নেওয়া, ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো, পরিবারের সঙ্গে দেখা করা, সবই করেছি। কিন্তু এখন এমন একটা অস্বাভাবিক পরিবেশ, সেটা আর করতে পারছি না।’
প্রচন্ড আক্ষেপের সুরে তিনি বলেন, ‘পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে একটু দেখা করা, তাদের একটু সান্ত¦না দেওয়া সেই সুযোগটা পেলাম না কেন, এটা সব থেকে কষ্টকর।’
এ সময় মোহাম্মদ নাসিমের মৃত্যুকে তিনি ‘অপূরণীয় ক্ষতি’ আখ্যায়িত করে বলেন, ‘রাজনীতি করতে গিয়ে নাসিম ভাইকে সবসময় আমার পাশে পেয়েছি। রাজনীতিতে পাশে থেকে যারা সাহস ও সমর্থন দিয়েছেন, তারা একে একে আমাদের ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। নাসিম ভাইয়ের পর ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ আব্দুল্লাহ ভাইও চলে গেলেন। এটা আমার জন্য খুবই দুঃখজনক।’
বক্তব্যের শুরুতেই প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন গণ আন্দোলন-সংগ্রাম এবং বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে মোহাম্মদ নাসিমের অবদানের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তাঁকে ১৪ দলের দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। কারণ, তিনি সকলকে নিয়ে চলতে পারতেন। শরিক দলের সদস্যরাও তাকে ভালো জানতেন।’
‘তিনি সফলতার সঙ্গে সেই দায়িত্ব পালন করেছেন। তার মৃত্যুতে বিরাট ক্ষতি হয়েছে নিঃসন্দেহে। শেখ আব্দুল্লাহর মৃত্যুতেও যে ক্ষতি হয়েছে তা পূরণ হওয়ার নয়,’যোগ করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মোহাম্মদ নাসিমের বাবা মো. মনসুর আলী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে রাজনীতি করতেন। যখন ছোট ছিলাম তখন থেকেই চিনতাম। সে সময় মোহাম্মদ নাসিম ভাইদের সাথে আমাদের একটা পারিবারিক সম্পর্ক ছিল, আসা-যাওয়া ছিল।’
শেখ হাসিনা স্মৃতি রোমন্থনে বলেন, ১৯৭৫ সালে জাতির পিতাকে হত্যার পর খন্দকার মোশতাক যখন মোহাম্মদ নাসিমের বাবাকে মন্ত্রী হওয়ার জন্য ডেকে নিয়ে যায় তখন তিনি সে প্রস্তাব ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেন।
‘তোমার হাতে বঙ্গবন্ধুর রক্ত, তুমি কী করে ভাবলে আমি তোমার মন্ত্রিসভায় আসব, তা কখনই আমার কাছে গ্রহণযোগ্য নয়,’ ক্যাপ্টেন মনসুর আলীর এই কথার উদ্ধৃতি দেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘১৫ আগস্ট আমাদের বাসায় আক্রমণ হয়েছে শুনে মনসুর আলী অনেক জায়গায় টেলিফোন করেন, অনেক চেষ্টাও করেছিলেন। এমনকি বাসা থেকে চলে গিয়েছিলেন কিছু করা যায় কিনা। যেহেতু মোশতাকের প্রস্তাব ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন এ জন্য জাতীয় চার নেতার সাথে তাঁকেও কারাগারে হত্যা করা হয়।’
‘মোহাম্মদ নাসিম একজন রাজনৈতিক নেতা হিসেবে অত্যন্ত দক্ষ ছিলেন,’ উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি ’৮১ সালে দেশে ফেরার পর আমার একটা প্রচেষ্টা ছিল শহীদ পরিবারগুলোর ছেলেমেয়েদের নিয়ে আওয়ামী লীগকে আবার পুনরুজ্জীবিত করা, শক্তিশালী ও ঐক্যবদ্ধ করা। সেই রাজনীতি করতে গিয়ে নাসিম ভাইকে সবসময় আমার পাশে পেয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘এটা ঠিক যে চলার পথ এত সহজ ছিল না,বার বার বাধা এসেছে। সে (নাসিম) প্রতিটি ক্ষেত্রে আমার পাশে থেকেছে, সমর্থন দিয়েছে।’
সংসদ নেতা বলেন, ‘মোহাম্মদ নাসিম অত্যন্ত সাহসী ছিলেন। যে কারণে যেকোন অবস্থার মোকাবেলা করতে যেতেন। আর এ কারণে তাঁকে বার বার অত্যাচার-নির্যাতন সহ্য করতে হয়েছে। জিয়াউর রহমানের আমলে যেমন তিনি নির্যাতিত হয়েছিলেন এরশাদের আমলেও সেভাবেই নির্যাতিত হয়েছেন।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘এরশাদ ক্ষমতায় থাকার সময় মার্শাল ল’ জারির পরপরই সাভারে ফুল দেয়ার জন্য সেনারা তাদের হকিস্টিক দিয়ে প্রত্যেকের ওপর নির্যাতন করেছিল। অনেককেই সাভার থানায় নিয়ে বন্দি করে রাখা হয় সেই সময়। তিনিও (নাসিম) ঘাড়ে ও হাতে আঘাত পান।’
তিনি বলেন, ‘এরপর খালেদা জিয়ার আমলেতো আরো অত্যাচার। যেটার সীমা পরিসীমা নেই। এরপর এলো ওয়ান ইলেভেন। তাঁকে গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়া হলো এবং সে সময় তাঁর স্ট্রোক হয়।’
‘তখন হাসপাতালে সময় মত পৌঁছাতে পারার কারণে সে যাত্রায় নাসিম ভাই বেঁচে যান,’ উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘তবে স্ট্রোক করার পর তাঁর শরীরের একটা দিক প্যারালাইজড হয়ে যায়।’
শেখ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১০টা সাড়ে ১০টার দিকে শুনলাম তিনি (আব্দুল্লাহ) খুব অসুস্থ। তাঁকে হাসপাতালে নিতে হবে। তাঁর বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেখানে না নিয়ে যাওয়া হলো সিএমএইচে।
তিনি বলেন, জাহাঙ্গীর গেট পার হতে না হতেই তার আরেকটা হার্ট অ্যাটাক হলো এবং খুব অল্প সময়ের মধ্যে পর পর তিনটা অ্যাটাক। রাত ১১টা প্রায় বাজে তখন খবর এলো তিনি নেই।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জিয়া, এরশাদ, খালেদা জিয়া- যে সময় যে ক্ষমতায় এসেছে তাদের যেন একটা লক্ষই ছিল (রোষানল) গোপালগঞ্জের প্রতি, বহু নেতা-কর্মী নির্যাতিত হয়েছে। সেই দুঃসময়গুলোতে সংগঠনকে ধরে রাখা, নেতা-কর্মীদের দিকে নজর দেওয়া, এই কাজগুলো অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গেই তিনি সামলেছেন।
শেখ হাসিনা বলেন,‘ যাঁরা সবসময় পাশে থেকেছেন। একইদিনে এমন দু’জনের মৃত্যু আমাদের জন্য অত্যন্ত কষ্টদায়ক। আমার অত্যন্ত কষ্ট হচ্ছে বলতে।’
বাসস/এএসজি-এফএন/২০০০/কেএমকে