বাংলাদেশ থেকে কৃষি-শ্রমিক নেওয়ার জন্য স্পেনের প্রতি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আহবান

302

ঢাকা, ১৪ জুন, ২০২০ (বাসস) : পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন স্পেনের কৃষিখাতের উন্নয়নের লক্ষ্যে বাংলাদেশ থেকে কৃষি-শ্রমিক নেয়ার জন্য স্পেন সরকারের প্রতি আহবান জানিয়েছেন।
তিনি সম্প্রতি স্পেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরানচা গনজালেজ লায়ারের সাথে টেলিফোনে আলাপকালে এ আহবান জানান।
বাংলাদেশ ও স্পেনের মধ্যে বিদ্যমান চমৎকার সম্পর্কের উল্লেখ করে ড. মোমেন বলেন,‘কৃষি-খাত’ উন্নয়নে স্পেন বাংলাদেশ থেকে কৃষি শ্রমিক নিতে পারে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এসময় স্পেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে জানান, বাংলাদেশ ধান উৎপাদনের ক্ষেত্রে পৃথিবীতে চতুর্থ ও সবজি উৎপাদনকারি দেশ হিসেবে ৫ম স্থানে রয়েছে।তিনি বলেন, করোনা (কোভিড-১৯) পরবর্তী পরিস্থিতিতে কৃষি-উৎপাদন সামলে নিতে স্পেন বাংলাদেশের কৃষি শ্রমিকদের কাজে লাগাতে পারবে।
এসময় ড.মোমেন, বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের পাশাপাশি চিংড়ী, জাহাজ,পাটজাত-পণ্য, ওষুধ ও পিপিইসহ সেদেশের জন্য প্রযোজন এমন দ্রব্যসামগ্রী আমদানি করার জন্য স্পেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে অনুরোধ করেন।
বাংলাদেশ রেলওয়ের উন্নয়ন ও সংযোগ বাড়ানোর ক্ষেত্রে স্পেনের বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে বলে তিনি জানান। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এসময় স্পেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মনোযোগ আকর্ষণে বিশেষভাবে উল্লেখ করেন, বিভিন্ন দেশের ক্রেতারা যাতে বাংলাদেশের ‘তৈরি পোশাক খাতে’ ক্রয়াদেশ বাতিল না করে সে ব্যাপারে স্পেনকে ভূমিকা নিতে হবে। এজন্য তিনি স্পেন সরকারের সহযোগিতা কামনা করেন।
আরানচা গনজালেজ লায়ার আশাবাদ ব্যক্ত করেন, কোভিড-১৯ পরবর্তী পরিস্থিতিতে অথনৈতিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ও স্পেনের পারস্পরিক সহযোগিতা আরো বৃদ্ধি পাবে।
বাংলাদেশে বিনিয়োগ বান্ধব-পরিবেশের উল্লেখ করে ড. মোমেন বলেন, এদেশের অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগ করলে স্পেনের কোম্পানিগুলো অন্য যে-কোন দেশের তুলনায় লাভবান হবে। এতে বাংলাদেশিদেরও কর্মসংস্থান হবে। কারণ বাংলাদেশের তথ্য-প্রযুক্তিতে দক্ষ জনগোষ্ঠীকে এসব কোম্পানি কাজে লাগাতে পারবে।
ড. মোমেন করোনা পরবর্তী অথনৈতিক সমস্যা মোকাবিলায় বিভিন্ন দেশের অংশীদারিত্ব্য ও সহয়োগিতা বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তার ওপরও গুরুত্ব আরোপ করেন।
তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বিশ্বের অনেক দেশ করোনার চেয়েও ভয়াবহ বিপর্যয়ের মধ্যে পড়তে পারে। এজন্য এখন থেকেই এ বিষয়ে সতর্ক থাকা দরকার।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী উল্লেখ করেন সমুদ্র-তল মাত্র ১ মিটার সমতলের দিকে বৃদ্ধি পেলে বাংলাদেশের এক-চতুর্থাংশ পানির নিচে তলিয়ে যেতে পারে। ফলে এদেশের ৩৫ থেকে ৪০ মিলিয়ন মানুষ তাদের বাসস্থান হারাতে পারে।
ক্লাইমেট ভার্নারেবল ফোরামের সভাপতি হিসেবে তিনি বাংলাদেশ জলবায়ু বিষয়েও স্পেনের সহায়তা কামনা করেন। এ বিষয়ে স্পেনের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে বলে আরানচা গনজালেজ ড. মোমেনকে আশ^স্ত করেন।
রোহিঙ্গা প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বংলাদেশ মানবিক কারণে মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যূত ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে সাময়িকভাবে আশ্রয় দিয়েছে। মিয়ানমার সরকার তাদের জনগোষ্ঠীকে ফিরিয়ে নিতে চাইলেও গত তিনবছরেও মিয়ানমার আশ্রিত রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসনের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করেনি এবং কোনো রোহিঙ্গাকে ফেরত নেয়নি।
তিনি রোহিঙ্গাদের দ্রুত প্রত্যাবাসনের বিষয়েও স্পেনের সহযোগিতা কামনা করেন।
স্পেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ সময় উল্লেখ করেন, স্পেন রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসনের ওপর সবসময়ই জোর দিয়েছে এবং এখনো দেয়।
স্পেনে কর্মরত তিন শতাধিক বাংলাদেশি দেশে এসে করোনার কারণে আটকা পড়েছে উল্লেখ করে ড. মোমেন এসব বাংলাদেশীকে চাটার্ড-ফ্লাইটে স্পেনে ফিরিয়ে নেয়ার বিষয়ে সেদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সহযোগিতা চাইলে গনজালেজ এ বিষয়ে সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
এ সময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী কারোনা-মহামারী পরিস্থিতে স্পেনে প্রবাসী বাংলাদেশিদের সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করায় সেদেশের সরকারকে ধন্যবাদ জানান।