বাসস দেশ-১০ : সমুদ্র অর্থনীতির উন্নয়নে জাতীয় নীতি প্রণয়নের আহ্বান

169

বাসস দেশ-১০
সমুদ্র-অর্থনীতি-সেমিনার
সমুদ্র অর্থনীতির উন্নয়নে জাতীয় নীতি প্রণয়নের আহ্বান
ঢাকা, ২১ জুলাই, ২০১৮ (বাসস) : বাংলাদেশের সমুদ্র অর্থনীতির উন্নয়ন ও বিকাশে অতি দ্রুত স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ এবং এ বিষয়ে জাতীয় নীতি প্রণয়নের জন্য সরকারের প্রতি সুপারিশ করেছেন অর্থনীতিবিদসহ এখাতের বিশিষ্ট বিশেষজ্ঞরা।
আজ শনিবার দুপুরে রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে কোস্টাল এসোসিশেন ফর সোসাল ট্রান্সফরমেশন ট্রাস্টের (কোস্ট ট্রাস্ট) উদ্যোগে ‘বাংলাদেশের সমুদ্র অর্থনীতি : প্রেক্ষাপট, দারিদ্র দূরীকরণ ও টেকসই উন্নয়ন’ শীর্ষক এক সেমিনারে তারা এই সুপারিশ করেন।
অনুষ্ঠানে পল্লী কর্মসংস্থান ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) চেয়ারম্যান, বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদের সভাপতিত্বে এনজিও ব্যুরোর মহাপরিচালক কে এম আব্দুস সালাম প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন।
বিশেষজ্ঞরা সেমিনারে বলেন, সমুদ্র অর্থনীতি নিয়ে জাতীয় নীতিমালা প্রণয়নের ক্ষেত্রে দেশীয় পরিকল্পনাবিদ ও বিশেষজ্ঞদের যুক্ত করার পাশাপাশি বিদেশীদের কাছ থেকে অভিজ্ঞতা ও পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে। এই নীতিমালা প্রণয়নের সময় সরকারেক অবশ্যই দরিদ্র জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানের সুযোগ এবং জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলা ও পরিবেশ সুরক্ষার বিষয়গুলো নিশ্চিত করতে হবে। তারা আরও বলেন, সাগর এবং উপকূলে মৎস্য আহরণের ক্ষেত্রে বিদেশী ট্রলার নয়, বরং দেশীয় ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীর অভিগম্যতা নিশ্চিত করতে হবে।
সেমিনারে জানানো হয়, সরকার ব্লু ইকোনমি বাস্তবায়নের জন্য গত বছর ব্লু ইকোনমি সেল গঠন করে সেখানে কিছু জনবলও নিয়োগ দিয়েছে।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে মৎস্য অদিদপ্তরের পরিচালক (মেরিন) ড. এ কে এম অমিনুল হক, বিমসটেক-এর প্রতিনিধি পংকজ হাজারিকা, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মেরিন সাইন্স এন্ড ফিসারিজ ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সাইদুর রহমান চৌধুরী, বোট মালিক সমিতির সভাপতি চৌধুরী গোলাম মোস্তফা, বিলস-এর প্রতিনিধি খন্দকার সালাম প্রমুখ বক্তব্য দেন।
কোস্ট ট্রাস্টের নির্বাহি পরিচালক রেজাউল ইসসলাম চৌধুরীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক লাইলুফার ইয়াসমিন, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিসারিজ ও মেরিন বিভাগের অধ্যাপক ড. এম মসিউর রহমান ও কোস্ট ট্রাস্টের কো-অর্ডিনেটর সালেহীন সরফরাজ সমুদ্র অর্থনীতির উপর পৃথক তিনটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলেন, বাংলাদেশের সমুদ্র অর্থনীতির উন্নয়ন ও বিকাশে অতি দ্রুত স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। এখাতে আমাদেরকে অগ্রাধিকার নির্ধারণ এবং সময়মতো সেই কাজ বাস্তনবায়ন নিশ্চিত করতে হবে। তিনি দেশের ধারাবাহিক সামাজিক ও আর্থিক প্রবৃদ্ধি উন্নয়নের প্রশংসা করেন এবং তা টেকসই করার প্রয়োজনীতার উপরও গুরুত্বারোপ করেন।
খলীকুজ্জমান বলেন, মৎস্যখাতে যেসব জলাভূমি রয়েছে, সেগুলো কোথাও যেন আর লিজ দেয়া না হয়, সে বিষয়ে সরকারকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
তিনি বলেন, সমন্বিত উন্নয়ন পরিকল্পনা ছাড়া টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয়। সমন্বিত উন্নয়নের ক্ষেত্রে সব খাতকে সমানভাবে গুরুত্ব দিতে হবে।
খলীকুজ্জমান আরো বলেন, জাহাজ ভাঙা শিল্প পরিবেশের প্রতি নেতিবাচক কোন প্রভাব ফেলছে কিনা, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। বিশেষ করে এই শিল্পের প্রভাবে মৎস্য উৎপাদন ও বিকাশের ক্ষতি হচ্ছে, সেই বিষয়টি যাতে না ঘটে সেজন্য পদক্ষেপ নিতে হবে।
কে এম আবদুস সালাম বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শাসনামলে আমরা সমুদ্রের বিশাল এলাকা আমাদের নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়েছি। আদালতের রায়ে আন্তর্জাতিকভাবে এখানে আমরা বিজয়ী হয়েছি। এটা শেখ হাসিনার সরকারের বড় একটি সাফল্য।
তিনি বলেন, মৎস্যজীবী, কৃষক সকলকে দাদনের হাত থেকে মুক্ত করতে হবে। দেশে এটা আর চলতে দেয়া যাবে না। বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থাকে (এনজিও) দরিদ্র মানুষের জন্য দেয়া ক্ষুদ্র ঋণের সুদের হার অবশ্যই কমাতে হবে। তিনি এনজিওগুলোকে তাদের প্রফিট রেট কমানোর তাগিদ দেন।
সাইদুর রহমান চৌধুরী বলেন, সমুদ্র সম্পদ সুরক্ষায় অবারিত মৎস্য আহরণ বন্ধ করতে হবে। প্রজাতি সুরক্ষা ও মৎস্য রেনু সংরক্ষণ ও সমৃদ্ধকরণের জন্য ক্ষেত্র বিশেষে নির্র্দিষ্ট কিছু সময়ে মৎস্য শিকার নিষিদ্ধ করতে হবে।
বিলস-এর প্রতিনিধি খন্দকার সালাম সমুদ্র অর্থনীতির গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, মৎস্যজীবীদের জন্য সমবায়ের ভিত্তিতে স্বল্প সুদে ঋণ দিতে হবে এবং দরিদ্র ও প্রকৃত মৎস্যজীবীরা সেই ঋণ যেন পান সেই বিষয়টি প্রশাসনকে নিশ্চিত করতে হবে।
চৌধুরী গোলাম মোস্তফা বলেন, বর্তমান সরকারের গৃহীত নানামুখী উন্নয়ন কর্মসূচির প্রেক্ষিতে বিগত দুই অর্থ বছরে ইলিশের উৎপাদন অভাবনীয়ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। গত দুই বছর মৎস্যজীবীরা যে বিপুল পরিমাণ ইলিশ মাছ ধরেছেন তা- বিগত দশ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জেলেদের জন্য পুরস্কার হিসেবে কার্ড দিয়েছেন।
সেমিনারে জানানো হয়, আন্তর্জাতিক আদালতের রায়ে ২০১২ সালে মিয়ানমারের সাথে এবং ২০১৪ সালে ভারতের সাথে সমুদ্রসীমা বিরোধ নিষ্পত্তি হওয়ায় মোট ১ লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গ কিলোমিটারের বেশি টেরিটোরিয়াল সমুদ্র এলাকা এখন বাংলাদেশের। সাথে আছে ২০০ নটিক্যাল মাইল একচ্ছত্র অর্থনৈতিক অঞ্চল ও চট্ট্রগ্রাম উপকূল থেকে ৩৫৪ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত মহীসোপানের তলদেশে সব ধরণের প্রণিজ-অপ্রাণিজ সম্পদের ওপর সার্বভৌম অধিকার। ১ লাখ ৪৪ হাজার বর্গকিলোমিটারের বাংলাদেশের জন্য মোট ১ লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটারের সমুদ্রসীমা আরেকটি গোটা বাংলাদেশই বটে। এখন এই বিজয়কে প্রকৃত অর্থে অর্থনৈতিকভাবে তাৎপর্যপূর্ণ করতে এর সম্পদ ব্যবহার করে উন্নয়ন তরান্বিত করতে হবে।
বাসস/এএসজি/এমএন/১৭১৫/জেহক