২০২০- ২১ অর্থবছরের জন্য ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার প্রস্তাবিত বাজেট পেশ

469

২০২০- ২১ অর্থবছরের জন্য ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার প্রস্তাবিত বাজেট পেশ
ঢাকা, ১১ জুন, ২০২০ (বাসস): বৈশ্বিক মহামারি করোনার (কোভিড-১৯) প্রেক্ষাপটে সৃষ্ট অর্থনৈতিক অভিঘাত সফলভাবে মোকাবলা করে চলমান উন্নয়ন বজায় ও উচ্চতর প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্য সামনে রেখে ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার জাতীয় বাজেট আজ সংসদে পেশ করা হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী আ.হ.ম মুস্তফা কামাল আজ বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ‘অর্থনৈতিক উত্তরণ ও ভবিষ্যত পথপরিক্রমা’ শ্লোগান সম্বলিত এ বাজেট পেশ করেন। তিনি পাওয়ার পয়েন্টে প্রস্তাবিত বাজেটের গুরুত্বপূর্ণ দিক, সরকারের পদক্ষেপ এবং বিভিন্ন খাতে বরাদ্দ প্রস্তাব তুলে ধরেন।
প্রস্তাবিত বাজেটে মোট রাজস্ব আয় ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সূত্রে আয় ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা এবং এনবিআর বহির্ভূত সূত্র থেকে কর রাজস্ব ধরা হয়েছে ১৫ হাজার কোটি টাকা। কর বহির্ভুত খাত থেকে রাজস্ব আয় ধরা হয়েছে ৩৩ হাজার কোটি টাকা।
প্রস্তাবিত বাজেটে পরিচালনসহ অন্যান্য খাতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৬২ হাজার ৮৫৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে আবর্তক ব্যয় ৩ লাখ ১১ হাজার ১৯০ কোটি টাকা। অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ বাবদ ৫৮ হাজার ২৫৩ কোটি ও ৫ হাজার ৫৪৮ কোটি টাকা, বৈদেশিক ঋণের সুদ বাবদ ৩৬ হাজার ৯৯০ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে ব্যয় ধরা হয়েছে ২ লাখ ৫ হাজার ১৪৫ কোটি টাকা।
প্রস্তাবিত বাজেটে সামগ্রিক বাজেট ঘাটতি ১ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা দেখানো হয়েছে, যা জিডিপির ৬ শতাংশ। এ ঘাটতি অর্থায়নে বৈদেশিক সূত্র থেকে ৭৬ হাজার ৪ কোটি টাকা, অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ১ লাখ ৯ হাজার ৯৮৩ কোটি টাকা আহরণ করা হবে। অভ্যন্তরীণ উৎসের মধ্যে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ৮৪ হাজার ৯৮০ কোটি টাকা এবং ব্যাংক বহির্ভূত উৎস থেকে ২৫ হাজার ৩ কোটি টাকা সঞ্চয়পত্র ও অন্যান্য খাত থেকে ২৫ হাজার ৩ কোটি টাকা সংস্থানের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
প্রস্তাবিত বাজেটে মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৮.২ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া প্রস্তাবিত বাজেটে মূল্যস্ফীতি ৫.৪ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে।
এর আগে আজ দুপুরে সংসদ ভবনের মন্ত্রিসভা কক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিপরিষদের সভায় প্রস্তাবিত বাজেট অনুমোদন করা হয়। এরপরই রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ প্রস্তাবিত বাজেটে সম্মতি প্রদান করেন।
এছাড়াও, অর্থমন্ত্রী আজ ২০১৯-২০ অর্থবছরের জন্য ৫ লাখ ১ হাজার ৫৭৭ কোটি টাকার সংশোধিত বাজেট পেশ করেন। চলতি অর্থবছরের মূল বাজেট ছিল ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকা।
২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠনের পর এটি হচ্ছে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকারের এ মেয়াদের দ্বিতীয় বাজেট। বৈশ্বিক মহামারি করোনা পরিস্থিতিতে এবার সংক্ষিপ্ত পরিসরে বাজেট পেশ করা হয়। বাজেট পেশের সময় সংসদ সচিবালয়ের ক্যালেন্ডার অনুযায়ি ৮০ থেকে ৯০ জন সংসদ সদস্য বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। অধিবেশন কক্ষে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে আসন বিন্যাস করা হয়।
অর্থমন্ত্রী বিকেল ৩টা ০৫ মিনিটের দিকে বাজেট বক্তৃতার শুরুতে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্টের অন্যান্য শহীদ, চার জাতীয় নেতা, মহান ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধে শহীদ, অকুতোভয় বীর মুক্তিযোদ্ধা, নির্যাতিতা ২ লাখ মা বোন এবং অন্যান্য শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এছাড়া তিনি বৈশ্বিক মহামারি কোভিড- ১৯ আক্রান্ত হয়ে প্রাণ হারানো সকলের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে তাদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান।
অর্থমন্ত্রী বলেন, ২০২০ সালটি জাতীয় জীবনে এক বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ বছর। এ বছর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপিত হচ্ছে। করোনা প্রাদুর্ভাবের কারণে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকীর অনুষ্ঠানসমূহ পুনর্বিন্যাস করে জনসমাগম এড়িয়ে ডিজিটাল পদ্ধতিতে উদযাপন করা হচ্ছে। ২০২১ সালের ১৭ মার্চ পর্যন্ত এটি চলমান থাকবে। এর বাইরে ২০২১ সাল হলো বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী। জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী ও সুবর্ণ জয়ন্তীর অনুষ্ঠান যুগপৎভাবে চলবে।
রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ সংসদে বাজেট বক্তৃতা শোনেন।
বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী বলেন, দেশে কোভিড-১৯ করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরুর সাথে সাথেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার এ সংকট মোকাবেলায় বিভিন্ন কার্যকর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। অর্থনীতির ওপর এর বিরূপ প্রভাব উত্তরণে সরকার একটি সামগ্রিক কর্মপন্থা নির্ধারণ করে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদে তা বাস্তবায়ন শুরু করেছে।
বক্তৃতায় তিনি সরকারের নেয়া কর্মপন্থার উল্লেখ করে বলেন, এ কর্মপন্থার চারটি প্রধান কৌশলগত দিক রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে কর্মসৃজনকে প্রাধান্য দেয়া এবং বিলাসী ব্যয় নিরুৎসাহিত করা। এছাড়া, স্বল্প সুদে বিভিন্ন উৎপাদন খাতে ঋণ সুবিধা প্রদান, কর্মহীন হয়ে পড়া নি¤œ আয়ের এবং অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে নিয়োজিত জনগণকে সুরক্ষা দিতে সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমের আওতা বৃদ্ধি ও বাজারে মুদ্রা সরবরাহ বৃদ্ধি করা। এর বাইরে প্রয়োজনীয় প্রণোদনা প্রদানের ব্যবস্থাও এ বাজেটে রাখা হয়েছে। এ চারটি কর্মপন্থা বিষয়ে প্রস্তাবিত বাজেটে বিভিন্ন খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী বাজেট বক্তৃতায় করোনা মহামারির ফলে আর্থিক ক্ষতি মোকাবেলায় সরকারের পক্ষ থেকে নেয়া বিভিন্ন কার্যকর পদক্ষেপের কথা বিস্তারিতভাবে তুলে ধরেন।
প্রস্তাবিত বাজেটে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে মোট বাজেটের ১৫.১ শতাংশ, পরিবহন- যোগাযোগ খাতে ১১.২ শতাংশ, সুদ খাতে ১১.২ শতাংশ, স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন খাতে ৭ শতাংশ, ভর্তুকী ও প্রণোদনা খাতে ৬.৮ শতাংশ, জনপ্রশাসন খাতে ৬.৭ শতাংশ, প্রতিরক্ষা খাতে ৫.৪ শতাংশ, স্বাস্থ্য খাতে ৫.২ শতাংশ, সামাজিক নিরাপত্তা ও কল্যাণ খাতে ৪.৭ শতাংশ, জনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা খাতে ৪.৯ শতাংশ, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ৪.৭ শতাংশ, কৃষি খাতে ৩.৬ শতাংশ, পেনশন খাতে ৫.৯ শতাংশ, বিবিধ ব্যয় খাতে ৫.৯ শতাংশ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
প্রস্তাবিত বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা, যোগাযোগ অবকাঠামো, ভৌত অবকাঠামো, আবাসন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিজ্ঞান-প্রযুক্তি, কৃষি, মানবসম্পদ উন্নয়ন খাতকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে।