করোনায় ২৪ ঘন্টায় নতুন শনাক্ত ৩,১৮৭ : মারা গেছেন ৩৭ জন

324

ঢাকা, ১১ জুন, ২০২০ (বাসস) : দেশে গত ২৪ ঘন্টায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন ৩৭ জন। গতকালও মৃত্যুর সংখ্যা একই ছিল।
এখন পর্যন্ত দেশে করোনায় মৃত্যুবরণ করেছেন ১ হাজার ৪৯ জন। শনাক্ত বিবেচনায় আজ মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৩৪ শতাংশ। আগের দিন এই হার ছিল ১ দশমিক ৩৫ শতাংশ।
এ দিকে দেশে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৭৮ হাজার ছাড়িয়েছে। বর্তমানে দেশে এ ভাইরাসে আক্রান্ত ৭৮ হাজার ৫২ জন রোগী রয়েছেন। গত ২৪ ঘন্টায় ১৫ হাজার ৭৭২ জনের নমুনা পরীক্ষায় ৩ হাজার ১৮৭ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। গতকালের চেয়ে আজ ৩ জন কম শনাক্ত হয়েছেন। গতকাল শনাক্ত হয়েছিল ৩ হাজার ১৯০ জন।
আজ দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদফতরের করোনাভাইরাস সংক্রান্ত নিয়মিত অনলাইন হেলথ বুলেটিনে অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা এসব তথ্য জানান।
নমুনা পরীক্ষায় আজ আক্রান্তের হার ২০ দশমিক ২১ শতাংশ। আগের দিন এ হার ছিল ১৯ দশমিক ৯৮ শতাংশ। আগের দিনের চেয়ে আজ আক্রান্তের হার দশমিক ২৩ শতাংশ বেশি।
অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা জানান, করোনাভাইরাস আক্রান্তদের মধ্যে এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ১৬ হাজার ৭৪৭ জন। গত ২৪ ঘন্টায় নতুন সুস্থ হয়েছেন ৮৪৮ জন। আজ শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ২১ দশমিক ৪৬ শতাংশ। আগের দিন এই হার ছিল ২১ দশমিক ২৪ শতাংশ। আগের দিনের চেয়ে আজ সুস্থতার হার দশমিক ২২ শতাংশ বেশি।
তিনি জানান, ‘করোনাভাইরাস শনাক্তে গত ২৪ ঘন্টায় ১৬ হাজার ১১৪টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। আগের দিন সংগ্রহ করা হয়েছিল ১৬ হাজার ৯৯৪টি। গতকালের চেয়ে আজ ৮৮০টি নমুনা কম সংগ্রহ করা হয়েছে। গত ২৪ ঘন্টায় নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ১৫ হাজার ৭৭২টি। আগের দিন নমুনা পরীক্ষা হয়েছিল ১৫ হাজার ৯৬৫টি। গত ২৪ ঘন্টায় আগের দিনের চেয়ে ১৯৩টি কম নমুনা পরীক্ষা হয়েছে। এ পর্যন্ত দেশে মোট ৪ লাখ ৫৭ হাজার ৩৩২টি নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ।
তিনি জানান, মৃত্যুবরণকারী ৩৭ জনের মধ্যে পুরুষ ৩০ জন ও নারী ৭ জন। এদের মধ্যে ঢাকা বিভাগে ২০ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৭ জন, রাজশাহী বিভাগে ৪ জন, সিলেট বিভাগে ৩ জন, বরিশাল বিভাগে ২ জন এবং রংপুর বিভাগে ১ জন রয়েছেন। বয়স বিবেচনায়, ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে ২ জন, ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে ৪ জন, ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে ৮ জন, ৬১ থেকে ৭০ বছরের মধ্যে ২২ জন, ৭১ থেকে ৮০ বছরের মধ্যে ১ জন রয়েছেন। এদের মধ্যে হাসপাতালে মারা গেছেন ২৮ জন, বাড়িতে মারা গেছেন ৯ জন।
অতিরিক্ত মহাপরিচালক জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আইসোলেশনে রাখা হয়েছে ৬৭১ জনকে। আইসোলেশন থেকে মুক্ত হয়েছেন ১৫৫ জন। এ পর্যন্ত ১৩ হাজার ৬৩৭ জনকে আইসোলেশনে রাখা হয়েছে। আর আইসোলেশন থেকে মোট ছাড় পেয়েছেন ৪ হাজার ৮৩৭ জন। বর্তমানে আইসোলেশনে আছে ৮ হাজার ৭৬৪ জন। দেশে মোট আইসোলেশন শয্যা রয়েছে ১৩ হাজার ২৮৪টি। এর মধ্যে রাজধানী ঢাকায় ৭ হাজার ২৫০টি এবং ঢাকার বাইরে বিভিন্ন হাসপাতালে ৬ হাজার ৩৪টি শয্যা রয়েছে। সারাদেশে আইসিইউ শয্যার সংখ্যা ৩৯৯টি এবং ডায়ালাইসিস ইউনিট রয়েছে ১১২ টি।
গত ২৪ ঘণ্টায় হোম ও প্রাতিষ্ঠানিক মিলিয়ে কোয়ারিন্টিনে নেয়া হয়েছে ৩ হাজার ১৬১ জনকে। এ পর্যন্ত কোয়ারিন্টিনে নেয়া হয়েছে ৩ লাখ ১২ হাজার ৩৪৪ জনকে। গত ২৪ ঘণ্টায় কোয়ারিন্টিন থেকে ছাড় পেয়েছেন ১ হাজার ৮৭৩ জন। এ পর্যন্ত মোট ছাড় পেয়েছেন ২ লাখ ৫৩ হাজার ৩৪৫ জন। বর্তমানে হোম ও প্রাতিষ্ঠানিক মিলিয়ে কোয়ারিন্টিনে রয়েছেন ৫৮ হাজার ৯৯৯ জন। দেশের ৬৪ জেলা-উপজেলা পর্যায়ে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারিন্টিনের জন্য ৬২৯টি প্রতিষ্ঠান প্রস্তুত রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তাৎক্ষণিকভাবে সেবা দেয়া যাবে ৩১ হাজার ৯৯১ জনকে।
অতিরিক্ত মহাপরিচালক জানান, কেন্দ্রীয় ঔষধাগার থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী (পিপিই) এ পর্যন্ত সংগ্রহ ২৫ লাখ ৯ হাজার ১৪২টি। ২৪ ঘন্টায় বিতরণ হয়েছে ১০ হাজার ৬শ’টি এবং এ পর্যন্ত বিতরণ হয়েছে ২২ লাখ ৮৩ হাজার ৫৭৫টি। বর্তমানে ২ লাখ ২৫ হাজার ৫৬৭টি পিপিই মজুদ রয়েছে।
গত ২৪ ঘন্টায় হটলাইন নম্বরে ১ লাখ ৭১ হাজার ৪৮টি এবং এ পর্যন্ত প্রায় ১ কোটি ৬ লাখ ৩৪ হাজার ৮৩০টি ফোন কল রিসিভ করে স্বাস্থ্য সেবা ও পরামর্শ দেয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।
তিনি জানান, করোনাভাইরাস চিকিৎসা বিষয়ে এ পর্যন্ত ১৬ হাজার ৩২০ জন চিকিৎসক অনলাইনে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন। ২৪ ঘন্টায় আরও ১২ জন চিকিৎসক প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। এদের মধ্যে ৪ হাজার ২১৭ জন স্বাস্থ্য বাতায়ন ও আইইডিসিয়ার’র হটলাইনগুলোতে স্বেচ্ছাভিত্তিতে সপ্তাহে ৭ দিন ২৪ ঘন্টা জনগণকে চিকিৎসাসেবা ও পরামর্শ দিচ্ছেন।
ডা.নাসিমা সুলতানা জানান, দেশের বিমানবন্দর, নৌ, সমুদ্রবন্দর ও স্থলবন্দর দিয়ে গত ২৪ ঘন্টায় ১ হাজার ১৮০ জনসহ সর্বমোট বাংলাদেশে আগত ৭ লাখ ১৩ হাজার ৯৫৮ জনকে স্কিনিং করা হয়েছে।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার পরিস্থিতি তুলে ধরে তিনি জানান, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ১০ জুন পর্যন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী ২৪ ঘন্টায় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ১৪ হাজার ৫৫৬ জন। এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ৩ লাখ ৯২ হাজার ৬৭৪ জন। ২৪ ঘন্টায় মৃত্যুবরণ করেছেন ৩৬৫ জন এবং এ পর্যন্ত ১০ হাজার ৭৪১ জন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ১০ জুন পর্যন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী সারাবিশ্বে ২৪ ঘন্টায় করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ১ লাখ ৫ হাজার ৬২১ জন। এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ৭১ লাখ ৪৫ হাজার ৫৩৯ জন। ২৪ ঘন্টায় মৃত্যুবরণ করেছেন ৩ হাজার ৬২৯ জন এবং এ পর্যন্ত ৪ লাখ ৮ হাজার ২৫ জন।
করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে সবাইকে ঘরে থাকা, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, জনসমাগম এড়িয়ে চলা, সর্বদা মুখে মাস্ক পরে থাকা, সাবান পানি দিয়ে বারবার ২০ সেকেন্ড ধরে হাত ধোয়া, বাইরে গেলে হ্যান্ড গ্লাভস ব্যবহার, বেশি বেশি পানি ও তরল জাতীয় খাবার, ভিটামিন সি ও ডি সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া, ডিম, মাছ, মাংস, টাটকা ফলমূল ও সবজি খাওয়াসহ শরীরকে ফিট রাখতে নিয়মিত হালকা ব্যায়াম এবং স্বাস্থ্য অধিদফতর ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ-নির্দেশনা মেনে চলার অনুরোধ জানানো হয়।
তিনি বলেন, ধূমপান থেকে বিরত থাকতে হবে, কারণ তা অতিরিক্ত ঝুঁকি তৈরি করে।