দেশে করোনাভাইরাসে গত ২৪ ঘন্টায় রেকর্ড সংখ্যক ৪২ জনের মৃত্যু

653

ঢাকা, ৭ জুন, ২০২০ (বাসস) : দেশে গত ২৪ ঘন্টায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে রেকর্ড সংখ্যক ৪২ জন মারা গেছে। এনিয়ে দেশে এই পর্যন্ত মোট মৃতের সংখ্যা ৮৮৮ জনে দাঁড়িয়েছে।
এর আগে একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড ছিল ৩১ মে রোববার। ওইদিন ৪০ জন করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। আজ গতকালের চেয়ে ৭ জন বেশি মারা গেছে।
এ দিকে দেশে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৬৫ হাজার ছাড়িয়েছে। বর্তমানে দেশে এই ভাইরাসে আক্রান্ত ৬৫ হাজার ৭৬৯ জন রোগী রয়েছে। গত ২৪ ঘন্টায় দেশে ২ হাজার ৭৪৩ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়েছে।
আজ দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদফতরের করোনাভাইরাস সংক্রান্ত নিয়মিত অনলাইন হেলথ বুলেটিনে অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা এসব তথ্য জানান।
গতকালের চেয়ে আজ ১০৮ জন বেশি শনাক্ত হয়েছে। গতকাল শনাক্ত হয়েছিল ২ হাজার ৬৩৫ জন।
নমুনা পরীক্ষায় আজ আক্রান্তের হার ২০ দশমিক ৮৮ শতাংশ। আগের দিন এ হার ছিল ২১ দশমিক ১০ শতাংশ। আগের দিনের চেয়ে আজ আক্রান্তের হার দশমিক ২২ শতাংশ কম।
অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা জানান, করোনাভাইরাস আক্রান্তদের মধ্যে এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছে ১৩ হাজার ৯০৩ জন। গত ২৪ ঘন্টায় নতুন সুস্থ হয়েছে ৫৭৮ জন।
নাসিমা সুলতানা জানান, ‘করোনাভাইরাস শনাক্তে গত ২৪ ঘন্টায় নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে ১২ হাজার ৮৪২টি। আগের দিন নমুনা সংগ্রহ হয়েছিল ১২ হাজার ৯০৯টি। গতকালের চেয়ে আজ ৬৭টি নমুনা কম সংগ্রহ হয়েছে। গত ২৪ ঘন্টায় দেশে ৫২টি পরীক্ষাগারে নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ১৩ হাজার ১৩৬ টি। আগের দিন নমুনা পরীক্ষা হয়েছিল ১২ হাজার ৪৮৬টি। গত ২৪ ঘন্টায় আগের দিনের চেয়ে ৬৫০টি বেশি নমুনা পরীক্ষা হয়েছে। এ পর্যন্ত মোট নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ৩ লাখ ৯৭ হাজার ৯৮৭টি।
তিনি জানান, গত ২৪ ঘন্টায় মৃত্যুবরণকারী ৪২ জনের মধ্যে ৩৫ জন পুরুষ এবং ৭ জন নারী। এদের মধ্যে ৩০ জন হাসপাতালে এবং ১২ জনের বাড়িতে মৃত্যু হয়। বয়সের ভিত্তিতে ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে ১ জন, ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে ৭ জন, ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে ৯ জন, ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে ৭ জন, ৬১ থেকে ৭০ বছরের মধ্যে ১৪ জন, ৭১ থেকে ৮০ বছরের মধ্যে ৩ জন এবং ৯১ থেকে ১০০ বছরের মধ্যে ১ জন রয়েছে। এলাকা ভিত্তিতে মৃতের সংখ্যা ঢাকা বিভাগে ২৭ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৮ জন, সিলেট বিভাগে ২ জন, রাজশাহীতে ২ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ১ জন এবং খুলনা বিভাগে ২ জন।
অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশনে নেয়া হয়েছে আরও ৪৬৭ জনকে এবং বর্তমানে আইসোলেশনে রয়েছে ৭ হাজার ৩৯৯ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশন থেকে ছাড় পেয়েছে ২৩০ জন এবং এ পর্যন্ত ছাড় পেয়েছে ৪ হাজার ১৭৫ জন। দেশে মোট আইসোলেশন শয্যা রয়েছে ১৩ হাজার ২৮৪টি। এর মধ্যে রাজধানী ঢাকায় ৭ হাজার ২৫০টি এবং ঢাকার বাইরে বিভিন্ন হাসপাতালে ৬ হাজার ৩৪টি শয্যা রয়েছে। সারাদেশে আইসিইউ শয্যার সংখ্যা ৩৯৯টি এবং ডায়ালাইসিস ইউনিট রয়েছে ১১২ টি।
তিনি জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় হোম ও প্রাতিষ্ঠানিক মিলিয়ে কোয়ারিন্টিনে নেয়া হয়েছে এক হাজার ৯৭৫ জনকে। এ পর্যন্ত কোয়ারিন্টিনে নেয়া হয়েছে ৩ লাখ ১ হাজার ১৯৭ জনকে। গত ২৪ ঘণ্টায় কোয়ারিন্টিন থেকে ছাড় পেয়েছে ২ হাজার ৫৭৬ জন। এ পর্যন্ত মোট ছাড় পেয়েছে ২ লাখ ৪৫ হাজার ৫০১ জন। বর্তমানে হোম ও প্রাতিষ্ঠানিক মিলিয়ে কোয়ারিন্টিনে রয়েছে ৫৫ হাজার ৬৯৬ জন। দেশের ৬৪ জেলা-উপজেলা পর্যায়ে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারিন্টিনের জন্য ৬২৯টি প্রতিষ্ঠান প্রস্তুত রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তাৎক্ষণিকভাবে সেবা দেয়া যাবে ৩১ হাজার ৯৯১ জনকে।
অতিরিক্ত মহাপরিচালক জানান, কেন্দ্রীয় ঔষধাগার থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী (পিপিই) এ পর্যন্ত সংগ্রহ ২৫ লাখ ৯ হাজার ১৪২টি। ২৪ ঘন্টায় বিতরণ হয়েছে ২০ হাজার ৮শ’টি এবং এ পর্যন্ত বিতরণ হয়েছে ২২ লাখ ৩৭ হাজার ২৭৫টি। বর্তমানে ২ লাখ ৭১ হাজার ৮৬৭টি পিপিই মজুদ রয়েছে।
গত ২৪ ঘন্টায় হটলাইন নম্বরে ১ লাখ ৭৪ হাজার ৫৩৯টি এবং এ পর্যন্ত প্রায় ৯৯ লাখ ৫৭ হাজার ১শ’টি ফোন কল রিসিভ করে স্বাস্থ্য সেবা ও পরামর্শ দেয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।
তিনি জানান, করোনাভাইরাস চিকিৎসা বিষয়ে এ পর্যন্ত ১৬ হাজার ২৮৬ জন চিকিৎসক অনলাইনে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছে। ২৪ ঘন্টায় আরও ৭ জন চিকিৎসক প্রশিক্ষণ নিয়েছে। এদের মধ্যে ৪ হাজার ২১৭ জন স্বাস্থ্য বাতায়ন ও আইইডিসিয়ার’র হটলাইনগুলোতে স্বেচ্ছাভিত্তিতে সপ্তাহে ৭ দিন ২৪ ঘন্টা জনগণকে চিকিৎসাসেবা ও পরামর্শ দিচ্ছেন।
ডা. নাসিমা সুলতানা বলেন, দেশের বিমানবন্দর, নৌ, সমুদ্রবন্দর ও স্থলবন্দর দিয়ে গত ২৪ ঘন্টায় ১ হাজার ৩৩ জনসহ সর্বমোট বাংলাদেশে আগত ৭ লাখ ৯ হাজার ৫৯৩ জনকে স্কিনিং করা হয়েছে।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার পরিস্থিতি তুলে ধরে তিনি জানান, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ৬ জুন পর্যন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী ২৪ ঘন্টায় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় করোনা আক্রান্ত হয়েছে ১৩ হাজার ৭১৪ জন। এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছে ৩ লাখ ৩৬ হাজার ৫৭৭ জন। ২৪ ঘন্টায় মৃত্যুবরণ করেছেন ৩৭৪ জন এবং এ পর্যন্ত ৯ হাজার ৩১৬ জন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ৬ জুন পর্যন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী সারাবিশ্বে ২৪ ঘন্টায় করোনা আক্রান্ত হয়েছে ১ লাখ ২৭ হাজার ৯৫০ জন। এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছে ৬৬ লাখ ৬৩ হাজার ৩০৪। ২৪ ঘন্টায় মৃত্যুবরণ করেছে ৫ হাজার ৬৪৭ জন এবং এ পর্যন্ত ৩ লাখ ৯২ হাজার ৮০২ জন।
স্বাস্থ্য অধিদফতর ও ব্র্যাক পরিচালিত করোনা নমুনা সংগ্রহ বুথ থেকে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে সেবা প্রদান করা হচ্ছে উল্লেখ করে এই বুথগুলোতে কোনো ধরনের আর্থিক লেনদেন না করার জন্য নাসিমা সুলতানা সবাইকে আহ্বান জানান। এখন থেকে অনলাইন নিবন্ধনের মাধ্যমে করোনার নমুনা সংগ্রহ করা হবে। নিবন্ধনের লিংক হচ্ছে- পড়ৎড়হধঃবংঃ.নৎধপ.হবঃ।
আপনার সুস্থতা আপনার হাতে উল্লেখ করে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সকলকে স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে মেনে চলতে তিনি সকলের প্রতি আহবান জানান।
করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে সবাইকে ঘরে থাকা, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, জনসমাগম এড়িয়ে চলা, সর্বদা মুখে মাস্ক পরে থাকা, সাবান পানি দিয়ে বারবার ২০ সেকেন্ড ধরে হাত ধোয়া, বাইরে গেলে হ্যান্ড গ্লাভস ব্যবহার, বেশি বেশি পানি ও তরল জাতীয় খাবার, ভিটামিন সি ও ডি সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া, ডিম, মাছ, মাংস, টাটকা ফলমূল ও সবজি খাওয়াসহ শরীরকে ফিট রাখতে নিয়মিত হালকা ব্যায়াম এবং স্বাস্থ্য অধিদফতর ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ-নির্দেশনা মেনে চলার অনুরোধ জানানো হয়।
তিনি বলেন, ধূমপান থেকে বিরত থাকতে হবে, কারণ তা অতিরিক্ত ঝুঁকি তৈরি করে।