আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ : সিলেটে টিনের ঘরের টাকায় আধা পাকা ঘর

453

॥ শুয়াইবুল ইসলাম ॥
ঢাকা, ৬ জুন, ২০২০ (বাসস) : আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর আওতায় এক লক্ষ টাকা ব্যয়ে গরিব মানুষের জন্য টিনের ঘর নির্মাণ করে দেয়ার কথা ছিল। সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার নন্দিরগাঁও ইউনিয়নে প্রায় একই পরিমাণ টাকা খরচ করে অন্তত ৩০টি আধা পাকা ঘর নির্মাণ করা হয়েছে।
ইউপি চেয়ারম্যানের এমন আন্তরিকতা ও সততার দৃষ্টান্ত অন্যদের অনুপ্রাণিত করবে বলে মনে করছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নাজমুস সাকিব। তিনি বলেন, নন্দিরগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এস কামরুল হাসান আমিরুলের এমন উদ্যোগ প্রশংসার দাবিদার। এ থেকে অন্য সবার শিক্ষা নেয়া উচিত।
জমি আছে, ঘর নেই- বাংলাদেশের এমন সব মানুষের জন্য টিনের ঘর নির্মাণ করে দিচ্ছে সরকার। প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর আওতায় সারাদেশে এক লাখ ৭০ হাজার অসহায় মানুষকে ঘর করে দেয়া হচ্ছে।
গোয়াইনঘাট উপজেলায় এ প্রকল্পের আওতায় ৩৫৬ ঘর নির্মাণের হওয়ার কথা রয়েছে। প্রকল্প অনুযায়ী, প্রতিটি ঘরের দৈর্ঘ্য হবে সাড়ে ১৬ ফুট এবং প্রস্থ সাড়ে ১০ ফুট। একইসাথে ৫ ফুটের একটি বারান্দা ও একটি বাথরুম থাকবে। পাকা ভিটার ওপর টিনের বেড়া ও টিনের ছাউনি থাকবে।
নন্দিরগাঁও ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এস কামরুল হাসান (আমিরুল) জানান, প্রকল্পটির বরাদ্দ পাওয়ার পর তিনি পরিষদের সদস্য ও স্থানীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি জানতে পারেন একই খরচে গরিব মানুষকে একটি আধা পাকা ঘর নির্মাণ করে দেয়া সম্ভব।
তিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে নিজে আধা পাকা ঘর নির্মাণ করে দেন। যোগাযোগ ও দূরত্ব বিবেচনায় কোথাও কমবেশি পাঁচ থেকে দশ হাজার টাকা খরচ হয়েছে।
ইউপি চেয়ারম্যান বলেন, টিনের ঘর নির্মাণ করে দিলে একজন গরিব মানুষ হয়তো পাঁচ-সাত বছর পর্যন্ত নিশ্চিন্তে থাকতে পারবে। আধাপাঁকা ঘর নির্মাণ করে দেয়ায় এখন তারা অন্তত ২০ থেকে ২৫ বছর থাকতে পারবে । যেহেতু প্রায় একই খরচে আধা পাকা ঘর বানানো যায়, তাই এসব বিবেচনায় আমি উদ্যোগ গ্রহণ করি।
করোনার এই দুঃসময়ে নন্দিরগাঁও ইউনিয়নের নোওয়াগাঁও গ্রামের বিধবা মহিলা মিনারা বেগম একটি পাঁকা ঘর পেয়েছেন। স্বামী মারা যাওয়ার পর চার সন্তান নিয়ে তিনি অসহায় জীবন যাপন করছিলেন। স্বামীর রেখে যাওয়ার ভিটায় আধাপাকা ঘর নির্মাণ পেয়ে মিনারা এখন নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছেন।
মিনারা বেগম বলেন, সরকারের এই উদ্যোগ আমি ও আমার সন্তানদের জন্য একটি নিরাপদ আশ্রয় দিয়েছে। করোনাকালীন সময়ে শিশু সন্তানদের নিয়ে একেবারে অসহায় ছিলাম। চেয়ারম্যানের আন্তরিকতায় আমি পাকা ঘর পেয়েছি। কৃতজ্ঞতা জানানোর ভাষা আমার নেই। যাদের কল্যাণে ঘর পেয়েছি তাদের জন্য দোয়া করছি।
মিনারা বেগমের প্রতিবেশি রুহুল আমীন বলেন, মিনারা বেগমের স্বামী মারা যাওয়ার পর তিনি একেবারে অসহায় ছিলেন। সরকার গরিব মানুষকে ঘর দিচ্ছে এটা অত্যন্ত ভাল উদ্যোগ। চেয়ারম্যান পাকা ঘর দিয়ে আরো ভাল কাজ করেছেন।
ইউনিয়নের আঙ্গারজুর গ্রামের ভানু বিবি জানান, মাত্র তিন শতক জমির ওপর পাটখড়ির বেড়ার ঘর ছিল। এখন ইট দিয়ে পাকা ঘর করে দিয়েছে সরকার। সেই ঘরে তারা নিরাপদে বসবাস করছেন।
আধা পাকা ঘর নির্মাণ করে দেয়ার পাশাপাশি ইউনিয়নের এই ৩০টি পরিবারের একজন করে সদস্যকে সেলাই ও হাঁস-মোরগ পালন বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। যাতে তারা নিজেরা স্বাবলম্বি হতে পারে।
চেয়ারম্যান আমিরুল বলেন, করোনাকালীন দুর্যোগে কেবল এই ৩০ পরিবারই নয়; ইউনিয়নের সকল অসহায় ও কর্মহীন মানুষকে সরকারি সহায়তা পৌঁছে দেয়া হয়েছে।
স্থানীয় দশগাঁও নওয়াগাঁও উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের অধ্যক্ষ মো. খলিলুর রহমান বলছেন, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বরাদ্দকৃত অর্থের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করেছেন। সদিচ্ছা থাকলে কম টাকায়ও ভাল কাজ করা যায়।
ইউনিয়নের পিয়াইনগুল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শওকত আলী বলেন, এটি অত্যন্ত ভাল উদ্যোগ। আমরা বিষয়টি জানতাম না। সরকারের ভাল উদ্যোগগুলোকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া দেশের সকল মানুষের কর্তব্য।
গোয়াইনঘাট উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা শীর্ষেন্দু পুরকায়স্থ বলেন, নন্দীরগাওঁ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান একটা অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। সরকারি টাকা যথেচ্ছ খরচ না করে তিনি এর সঠিক ব্যবহার করেছেন। এতে গরিব মানুষগুলো উপকৃত হয়েছে।