বাসস ইউনিসেফ ফিচার-১ : নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে হেল্প লাইন ‘১০৯’ ও ‘জয়’ আ্যাপস গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখছে

135

বাসস ইউনিসেফ ফিচার-১
নারী-সহিংসতা
নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে হেল্প লাইন ‘১০৯’ ও ‘জয়’ আ্যাপস গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখছে
ঢাকা, ৬ জুন, ২০২০ (বাসস) : মাত্র দেড় মাস আগে বিয়ে হয় সিমি (ছদ্মনাম) আর পলাশের। এখনো হাতের মেহেদির রং শুকায়নি সিমির হাত থেকে। এরই মধ্যে যৌতুকের জন্য নির্যাতন শুরু করেছে তার শাশুড়ী আর দেবর। প্রথম কয়েক দিন স্বামী কিছু না বললেও, পরে সেও যুক্ত হয়। তিনজন মিলেই নির্যাতন করে। প্রায় প্রতি রাতেই মারধর করা হয় সিমিকে। শ্বশুর বাড়ির লোকজনদের কথা একটাই- বাপের বাড়ি থেকে পলাশের ব্যবসার জন্য পাঁচ লাখ টাকা এনে দিতে হবে। আর সিমির কথা এতো টাকা তার সামান্য চাকরিজীবী বাবার কাছে নেই।
এভাবে কিছুদিন চলার পর পাশের বাড়ির এক বিশ্ববিদ্যালয় পড়–য়া মেয়ে সিমির চিৎকার, কান্না শুনে ফোন করে ‘১০৯’ নম্বরে। এক ঘন্টার মধ্যে হাজির হয় পুলিশ। আটক করে পলাশসহ তার মা আর ভাইকে।
ছায়দুর আর রেশমী দু’জনেই চাকরিজীবী। বাড়িতে থাকেন তাদের শাশুড়ি, এক ননদ আর তাদের দুই সন্তান। সাথে থাকে ১৩ বছর বয়সী গৃহপরিচারিকা। কিন্তু প্রায় সারাক্ষণই মারধর আর বকাবকি শুনতে হয় সেই গৃহপরিচারিকাকে। রাতে রেশমী অফিস থেকে ফিরে আসার পর আবার শুরু হয় নির্যাতন। ছায়দুর সব দেখেও কিছু বলে না। উপরন্তু মাঝে মাঝে আরো জোরে মারতে বলে। এভাবে মারধরের ফলে একদিন অজ্ঞান হয়ে পড়ে মেয়েটি। পরে তারা ভয় পেয়ে ভর্তি করায় পাশের এক বেসরকারী হাসপাতালে। সেখানে ডাক্তার রোগী দেখার পর ফোন করেন থানায়। থানা থেকে পুলিশ এসে সব কিছু শুনে সে রাতেই আটক করে সায়দুর আর রেশমীকে।
মূলত নারী ও শিশুদের নির্যাতনের হাত থেকে রক্ষার উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ সরকারের মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ২০১২ সালের ১৯ জুন চালু করা হয় ‘১০৯’ হেল্পলাইন নম্বরটি। টোল ফ্রি এই নাম্বারটি ২৪ ঘন্টাই চালু থাকে।
মানবাধিকার কর্মীদের মতে বাংলাদেশে কিছু কিছু ক্ষেত্রে নারী ও শিশুদের প্রতি নির্যাতন কমলেও কোন কোন ক্ষেত্রে আবার বেড়েছে। বাংলাদেশের অনেক পুরুষই প্রত্যক্ষ অথবা পরোক্ষভাবে নারীর প্রতি সহিংসতার সাথে জড়িত। পর্দার বাহিরে অথবা অন্তরালে অনেক নারী ও শিশু প্রতিনিয়ত শিকার হচ্ছে সহিংসতার। অনেক নারী অপরিচিতদের দ্বারা সহিংসতার শিকার হলেও আবার অনেকে শিকার হচ্ছেন পরিচতি এবং আপনজনদের দ্বারা। এরফলে সহিংসতার শিকার এসব শিশু ও নারী ভুগছে মানসিক এবং শারিরীক সমস্যায়।
তাদের মতে বিভিন্ন ধরনের সহিংসতার শিকার হচ্ছে বাংলাদেশের নারীরা। এমনকি তারা (নারী) তাদের নিজেদের অধিকার সম্পর্কেও সচেতন নয়। এসব নারী ও শিশুদের জন্যই খোলা হয় এই হেল্প লাইন নাম্বারটি। সপ্তাহের সাতদিন ২৪ ঘন্টাই খোলা থাকে নাম্বারটি। এছাড়া যেকোন ফোন- ল্যান্ড অথবা মোবাইল- থেকে এ নাম্বারে কোন ধরনের টোল ছাড়া কথা বলা যায়।
মানবাধিকার কর্মী এডভোকেট মনোয়ারা হক বলেন, এই হেল্প লাইন নাম্বার এবং এ্যান্ড্রয়েট মোবাইল ফোন ভিত্তিক ‘জয়’ অ্যাপসের বিষয়ে সাধারন মানুষের মধ্যে আরো ব্যপক প্রচার-প্রচারনা চালাতে হবে। বর্তমান সময়ে নারী এবং শিশুদের প্রতি সহিংসতা কিছুটা বেড়েছে। আর তাই সাধারন মানুষ বিশেষ করে নারীরা যত বেশী এই নাম্বার এবং অ্যাপসের বিষয়ে জানতে পারবে তত বেশি সহিংসতার ঘটনা কমে আসবে।
তিনি বলেন, প্রতিনিয়ত কোন না কোন ভাবে মেয়েরা সহিংসতার শিকার হচ্ছেন। এ থেকে উত্তোরন পেতে হলে সচেতনতামূলক কার্যক্রম বাড়াতে হবে। এছাড়া দোষীদের শাস্তিও নিশ্চিত করতে হবে।
বাসস/ইউনিসেফ ফিচার/কেটিকে/স্বব/আহো/১১০০/এসএইচ