অর্থনৈতিক কর্মকান্ড পুনর্বহালে অধিক সাবধান হতে বললেন ব্যবসায়ীরা

387

ঢাকা, ৫ জুন, ২০২০ (বাসস) : লকডাউন পরবর্তীতে অর্থনৈতিক কর্মকান্ড পুনর্বহালের ক্ষেত্রে যথেষ্ট সাবধানতা অবলম্বনের পরামর্শ দিয়েছে ‘রিসারজেন্ট বাংলাদেশ’ নামে ব্যবসায়ীদের নবগঠিত একটি মঞ্চ। গতকাল এক র্ভাচুয়াল আলোচনায় প্ল্যাটফর্মটি লকডাউন প্রস্থান কৌশল কাঠামোর মডেল তুলে ধরে এই সুপারিশ করে।
তারা বলেন, লকডাউন প্রস্থান কৌশল কাঠামোর মূল লক্ষ্য হতে হবে কোভিড-১৯ এর কোন রকম ঝুঁকি ছাড়াই কিভাবে অর্থনৈতিক কর্মকান্ড ও স্বাভাবিক জীবনযাত্রার গতিকে ফিরিয়ে আনা যায়। কেন্দ্রীভূত পর্যালোচনা এবং পর্যবেক্ষণ পদ্ধতির আলোকে সাবধানতা পর্যালোচনা, ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোকে বিশেয়ায়িত জোনের আওতায় আনা, ধাপে ধাপে খুলে দিতে নির্দিষ্ট অর্থনৈতিক খাত বা সামাজিকখাত সুনির্দিষ্টকরণসহ চ্যালেঞ্জ নির্ধারণের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে।
অনুষ্ঠানে মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই)’র সভাপতি নিহাদ কবির বক্তব্য দেন। এরপর লকডাউন থেকে কিভাবে বের হয়ে আসা যায় তার উপর প্রস্তাবিত কৌশলকাঠামো এবং রিসারজেন্ট বাংলাদেশের কার্যক্রম, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান ড. মাশরুর রিয়াজ। বিল্ড চেয়ারম্যান আবুল কাসেম খান বেসরকারিখাতের দৃষ্টিতে তার মতামত তুলে ধরেন ও ডিসিসিআই সভাপতি শামস মাহমুদ।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে আলোচনায় অংশ নেন শ্রীলংকায় নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত রিয়াজ হামিদুল্লাহ, বেসিসের সাবেক সভাপতি হাবিবুল্লাহ এন করিম, সাবেক আইন সচিব মোহাম্মদ শহিদুল হক, প্রধানমন্ত্রীর সাবেক মুখ্য সচিব আব্দুল করিম, এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া, সিপিডির ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এনএইচএস ট্রাস্ট ডাক্তার শাকিল ফরহাদ, ডেলয়েটের নির্বাহী উপদেষ্টা শরিফ ইসলাম, ইকোনমিক রিপোটার্স ফোরামের সাধারণ সম্পাদক এস এম রাশিদুল ইসলাম, পিডব্লিউসির পরিচালক প্রাণশু জৈন, অস্ট্রেলিয়ার মোনাশ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আসাদ ইসলাম এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক রাশেদুর রহমান। চট্রগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ লিমিটেডের চেয়ারম্যান আসিফ ইব্রাহীম।
রিসারজেন্টবাংলাদেশ’ মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই), ঢাকা চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই), চট্রগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ লিমিটেড, বিল্ড এবং পলিসি এক্সচেঞ্জ এর যৌথ উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত একটি প্ল্যাটফর্ম।
এমসিসিআই সভাপতি নিহাদ কবির বলেন, প্রবৃদ্ধি কি হবে না হবে এটা নিয়ে এখন ভাবার সময় নয়। এখন মূল ভাবনার বিষয় হচ্ছে বৃহত্তর অর্থনীতির স্বার্থে কিভাবে লকডাউন পরিস্থতি থেকে সর্বোচ্চ জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করে বের হয়ে আসা যায়। যদি করোনা পরিস্থিতি খুব একটা স্থিতিশীলতার দিকে সহসাই না যায় তবে তিনি অল্প কিছুদিনের জন্য পুনরায় কঠোর লকডাউন দেয়ার পরামর্শ প্রদান করেন, যাতে সামগ্রিক অর্থনীতি সামনে একটি সুদিন দেখতে পায়। চাহিদা ও জোগানের সাপ্লাই চেইন যদি স্বাভাবিক হয়ে আসে তবে অর্থনীতি আবারো তার গতি ফিরে পাবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
পলিসি এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান ড. মাশরুর রিয়াজ বলেন, কোভিড-১৯ প্রাদূর্ভাবের ফলে বৈশ্বিক অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি এ বছর ৩ শতাংশ কমে যেতে পারে। বৈশ্বিক বাণিজ্য ১৩ থেকে ৩০ শতাংশ কমবে। এশিয়ার রপ্তানি ৩৬ শতাংশ কমে আসতে পারে এবং সারাবিশ্বে প্রায় ১৯৫ মিলিয়ন কর্মজীবি তাদের চাকরি হারাবে। কিন্তু প্রকৃত ক্ষতি নিরুপণে ও করোনার প্রভাব যাচাই করতে আমাদের সঠিক, নির্ভরযোগ্য, নির্ভুল তথ্য উপাত্ত প্রয়োজন।
বিল্ডের চেয়ারম্যান আবুল কাসেম খান বলেন, করোনা পরিস্থিতি এখন ও নিয়ন্ত্রণে আসেনি যদিও কিছু কিছু অর্থনৈতিক কর্মকা- সীমিত পরিসরে চলছে। লকডাউন পরবর্তী অর্থনৈতিক কর্মকান্ড পরিচালনায় কৌশল নির্ধারণে আইন ও নীতিমালার কঠোর প্রয়োগ প্রয়োজন। সেজন্য আমাদের দরকার সঠিক, নির্ভরযোগ্য, তথ্য-উপাত্তভিত্তিক নির্ভুল ডাটা যাতে করে করোনার প্রকৃত প্রভাব পর্যালোচনা করা যায়। কোভিড-১৯ আক্রান্ত ব্যতিত জনগোষ্টীর স্বাস্থ্য নিরাপত্তার বিষয়টিকেও গুরুত্ব সহকারে বিবেচনায় রাখতে হবে বলে তিনি মনে করেন।
ডিসিসিআই সভাপতি শামস মাহমুদ কুটির, অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসা সমূহের সুরক্ষার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। কর্মসংস্থান সৃষ্টি এখন একটি কঠিন চ্যালেঞ্জ বলে তিনি মন্তব্য করেন। তবে তিনি এ মহামারী থেকে উত্তোরণের জন্য স্টেকহোল্ডারদের মধ্যে সমন্বয় ও সরকারের বিধিসমূহের কঠোর বাস্তবায়ন জরুরী বলে মত দেন।
শ্রীলংকায় নিযুক্ত বাংলাদেশে ররাষ্ট্রদূত রিয়াজ হামিদুল্লাহ সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরসমূহের মধ্যে সুষম সমন্বয় প্রয়োজন বলে উল্লেখ করেন। তিনিএ মহামারী থেকে উত্তোরণে প্রযুক্তির ব্যবহারকে বাড়ানোর পরামর্শ দেন।
প্রধানমন্ত্রীর সাবেক মুখ্য সচিব আব্দুল করিম বলেন, সরকারি-বেসরকারি সমন্বয়ছাড়া একটি কৌশল কাঠামো নির্ধারণ করা যাবে না। কৃষির উপর এ সময় অধিক গুরুত্ব দেয়ার প্রয়োজন বলে তিনি মন্তব্য করেন।
পিআরআই নির্বাহি পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, যদি মহামারী যেতে আরো দেরি হয়, তাহলে ভবিষ্যতের সুন্দর অর্থনীতির স্বার্থে হলেও কিছুদিনের জন্য একটি ‘কঠোর’ লকডাউন প্রদানকরা যেতে পারে। আপাত দৃষ্টিতে কিছুদিনের লকডাউন অর্থনীতির সামান্য ক্ষতি করলেও পরিস্থিতির উন্নয়ন ঘটলে এর সুফল ও পাওয়া যাবে।
এনবিআর’র সাবেক চেয়ারম্যান মো. মোশাররফ হোসেন ভুঁইয়া বেসরকারিখাতকে সরকারের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করে যেতে পরামর্শ দেন। যাতে করে একটি সমন্বিত লকডাউন প্রস্থান পদ্ধতি পরিকল্পনা করা যায়।
সিপিডির ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, দেশ একটি ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। আর্থ-সামাজিকখাতে যাতে করে কোনরকম অসামঞ্জস্যতার সৃষ্টি না হয় সেদিকে খেয়াল রাখার পরামর্শ দেন তিনি।