বাসস প্রধানমন্ত্রী-২ (দ্বিতীয় ও শেষ কিস্তি) : বাংলাদেশ দুর্যোগ মোকাবেলার ক্ষেত্রে অন্যদের শিক্ষা দিতে পারে : প্রধানমন্ত্রী

237

বাসস প্রধানমন্ত্রী-২ (দ্বিতীয় ও শেষ কিস্তি)
প্রধানমন্ত্রী-নিবন্ধ-গার্ডিয়ান
বাংলাদেশ দুর্যোগ মোকাবেলার ক্ষেত্রে অন্যদের শিক্ষা দিতে পারে : প্রধানমন্ত্রী

প্রিন্স অফ ওয়েলস প্রিন্স চার্লস এর আগে বাংলাদেশে করোনাভাইরাস মোকাবেলায় পদক্ষেপের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রশংসা করেছেন।
গত ৬ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পাঠানো একটি চিঠিতে তিনি লিখেছেন, “আপনি এই মারাত্মক রোগের প্রাদুর্ভাবের প্রথম পর্যায়ে কীভাবে এই রোগের বিস্তার নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম হয়েছেন এবং মৃতের সংখ্যা এতো কম রাখতে পেরেছেন তা শুনে আমি অভিভূত হয়েছি।”
ক্লাইমেট ভালনেরাবল ফোরামের সভাপতি শেখ হাসিনা নিবন্ধে উল্লেখ করেছেন যে, প্রাকৃতিক দুর্যোগের তাৎক্ষণিক প্রভাব মোকাবেলা করা যথেষ্ট নয়; জনগোষ্ঠীকে পরবর্তী ঝড়ের জন্য আরও ভালভাবে প্রস্তুত রাখা দরকার।
নিবন্ধে আরো বলা হয়, “অবকাঠামো পুননির্মান ও জীবিকা নির্বাহ করা অবশ্য অন্য বিষয়। বাংলাদেশ এর আগে অনেকবার ঘূর্ণিঝড়ের পর পুনর্গঠন করেছে। গ্রীষ্মমন্ডলীয় ঝড়ের ঝুঁকিতে থাকা বিশ্বের অন্যতম ঝুঁকিপূর্ণ বাংলাদেশের ভূমির দুই-তৃতীয়াংশ সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৫ মিটারেরও কম উচ্চতায় অবস্থিত। এখানে পুননির্মাণ একটি বড় কঠিন কাজ।”
“জলবায়ু সংকট এ কাজকে আরও কঠিন করে তুলেছে। ঘূর্ণিঝড়গুলো দিন দিন আরও তীব্র ও ঘন ঘন তৈরী হচ্ছে। সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে কূপ ও কৃষি জমি বিষাক্ত হয়ে ওঠছে। মহামারী ও গভীর অর্থনৈতিক সঙ্কটের অর্থ হচ্ছে সরকারকে এখন একই সঙ্গে স্বাস্থ্য, জলবায়ু এবং অর্থনৈতিক জরুরী পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হবে।”
ভারত ও বাংলাদেশে ঘূর্ণিঝড়ের ফলে ক্ষয়ক্ষতির উল্লেখ করে নিবন্ধে বলা হয়, ঘূর্ণিঝড় আম্ফান যে ক্ষতি করেছে তার পরিমাণ আনুমানিক ১৩ বিলিয়ন ডলার (১০.৪ মিলিয়ন পাউন্ড)।
“বাংলাদেশে এই ঝড়ে ৪১৫ কিলোমিটার রাস্তা, ২০০ টি সেতু, কয়েক হাজার ঘরবাড়ি, বিস্তীর্ণ কৃষিজমি এবং মৎস্য সম্পদ ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। জলোচ্ছাস রোধের জন্য তৈরী করা ১৫০ কিলোমিটারেরও বেশি দীর্ঘ বাঁধ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।”
যে কোনও দুর্যোগের জন্য পূর্ব প্রস্তুতির প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিয়ে নিবন্ধে উল্লেখ করা হয়, এই ঝড় বিপর্যয়কর হয়েছে। তবে পরিকল্পনা থাকলে দেশগুলো বিপর্যয় মোকাবেলায় আরও ভালভাবে প্রস্তুত থাকে। ”প্রাকৃতিক দুর্যোগের তাৎক্ষণিক প্রভাব মোকাবেলা করার পক্ষে এই প্রস্তুতি যথেষ্ট নয়; পরবর্তী ঝড়ের জন্য লোকজনকে আরও ভালভাবে প্রস্তুত রাখ দরকার।”
প্রধানমন্ত্রী তাঁর নিবন্ধে আরো বলেছেন যে, বাংলাদেশ ২০১৪ সালে ক্লাইমেট ফিসক্যাল ফ্রেমওয়ার্ক প্রণয়ন করেছে। জলবায়ু সহিষ্ণুতা তহবিল গঠনের উদ্যোগ গ্রহনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিশ্বের প্রথম দেশ।
তারা নিবন্ধে লিখেছেন যে, এই কাঠামোতে দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব মোকাবেলায় দীর্ঘমেয়াদী ব্যয়ের জন্য প্রাক্কলন করা হয়েছে এবং কৃষি, গ্রহায়ন ও জ্বালানি সহ ২০ টি মন্ত্রণালয়ের জলবায়ু সম্পর্কিত ব্যয় পর্যালোচনা করা হয়েছে।
এতে আরো বলা হয়েছে, ৩০ মিলিয়ন লোকের বাসস্থান এই বদ্বীপ অঞ্চলের জন্য ২০১৮ সালে আট দশকের জলবায়ু অভিযোজন পরিকল্পনা গ্রহন করা হয়েছে। ডেল্টা প্ল্যান ২১০০ অনুযায়ী জলোচ্ছাস মোকাবেলায় আরো উচ্চ বাঁধ তৈরির মতো অবকাঠামো শক্তিশালীকরণের উপর জোর দেয়া হয়েছে।
নিবন্ধে বলা হয়েছে, আম্ফানের পরে স্কুল, হাসপাতাল ও ঘরগুলো আরও মজবুত করে পুনরায় তৈরি করতে হবে, যাতে এগুলো উপকূলীয় অঞ্চলে ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছাস প্রতিরোধ করতে পারে এবং আশ্রয়কেন্দ্র হিসাবে দ্বিগুণ লোক ধারণ করতে পারে।
বিশ্বজুড়ে, কোভিড-১৯ সরকারী অর্থায়নে একটি বড় ধরণের চাপ সৃষ্টি করেছে। তবে আমরা বিশ্বাস করি, দীর্ঘমেয়াদী আর্থিক কাঠামো এবং জলবায়ু অভিযোজন পরিকল্পনা এসব দেশকে দুর্যোগ মোকাবেলায় আরও ভাল সহায়তা দেবে। স্বাস্থ্য, অর্থনীতি এবং জলবায়ু সহিষ্ণুতা একে অপরের সাথে সম্পর্কিত।
“এই কারণেই ডেল্টা পরিকল্পনায় জমি ও পানি ব্যবস্থাপনা প্রকল্পসমূহ এবং জনগণকে স্বাস্থ্যবান ও আরও স্বচ্ছল করার ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, প্রতিটি ধ্বংসাত্মক ঝড়ের পরে রোগ প্রতিরোধ করতে দূষিত পানি ফিল্টার করার জন্য সৌরচালিত হোম কিট ব্যবহার করা যেতে পারে।”
নিবন্ধে আরো বলা হয়েছে, “এই বছর কেবল বাংলাদেশই স্বাস্থ্য, অর্থনৈতিক ও জলবায়ু জরুরী পরিস্থিতি মোকাবেলা করছে না। তাই আন্তর্জাতিক সহযোগিতা গুরুত্বপূর্ণ। আমরা সারা বিশ্বের সাফল্য থেকে শিখতে এবং একে অপরকে সহায়তা করতে পারি। একসাথে আমরা আরও শক্তিশালী এবং আরও সহিষ্ণু হয়ে ওঠতে পারবো।
বাসস/এএইচজে-এসএইচ/অনু-শআ/০০২৩/-এবিএইচ