বাসস ইউনিসেফ ফিচার-১ : ফিডারে খাওয়ানো শিশুর স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়ায়

150

বাসস ইউনিসেফ ফিচার-১
শিশু-যত্ন
ফিডারে খাওয়ানো শিশুর স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়ায়
ঢাকা, ৩ জুন, ২০২০ (বাসস) : মাত্রই প্রথমবারের মত মা হয়েছেন চুমকী। মেয়ের বয়স সবে মাত্র ১০ দিন। এর মধ্যেই চুমকী স্বামীকে বলতে লাগল মেয়েকে মায়ের দুধের পাশাপাশি বাইরের অর্থাৎ বাজার থেকে কিনে গুড়ো দুধও খাওয়াতে হবে। স্বামী পলাশ তাকে বারবার বুঝালেও সে বুঝতে নারাজ। চুমকীর মতে মেয়ে পরিমাণ মত বুকের দুধ পাচ্ছে না। আর বাইরের গুড়ো দুধ খাওয়ালে বাচ্চার স্বাস্থ্য ভাল হয়। বাসার আশপাশের কয়েকজন মা চুমকীকে বুঝানোর চেষ্টা করে। কিন্তু তাতেও কোন কাজ হয়নি। শেষ পর্যন্ত মেয়ের মাত্র ২৫ দিনের বয়স থেকে মায়ের দুধের পাশাপাশি ফিডারে করে বাইরের গুড়ো দুধ খাওয়ানো শুরু হল।
এভাবে কয়েক দিন চলার পর মেয়ে হঠাৎ একদিন পাতলা পায়খানা শুরু হয়। পরে ডাক্তারের পরামর্শে ওষুধ সেবনে সুস্থ হয়ে উঠে বাচ্চাটি। কিন্তু কিছুদিন পরপরই অসুস্থ হয়ে পড়ে পলাশ আর চুমকীর বাচ্চা।
পাঁচ মাস বয়সী আফসানের গল্পটি একটু অন্যরকম। জন্মের মাত্র সাড়ে তিন মাস বয়সের পর থেকে ফিডারে দুধ খাওয়া শুরু করে সে। মূলত মা রাফিজা বেসরকারী একটি কোম্পানীতে চাকরী করেন। মাতৃত্বকালীন ছুটি শেষ হওয়ায় তাকে অফিসে যোগদান করতে হয়। আর তাই রাফিজা অফিসে যাওয়ার আগে বেশ কয়েকটি ফিডারে বুকের দুধ রেখে যান। পরে রাফিজার শাশুড়ী এবং বাসার কাজের সহযোগী আফসানকে সেই দুধ পান করান। প্রথম কয়েক দিন ভালো থাকলেও পরে তার পেট খারাপ হতে থাকে। প্রায় সময়ই পেট ফুলে থাকে আফসানের।
পরবর্তীতে এ নিয়ে ডাক্তারের কাছে যান রাফিজা। ডাক্তার জানান মুলত ফিডারের কারনে আফসান অসুস্থ হয়ে পড়ছে বারবার। তাই ফিডার বন্ধ করে দিতে হবে। কিন্তু রাফিজা অন্য কোন উপায়ও খুঁজে পাচ্ছেন না এখনো।
শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের মতে, শিশুকে ফিডারে খাওয়ানোর ক্ষেত্রে অনেক ঝুঁকি আছে। তাদের মতে, অনেক বাবা-মা’ই তাদের শিশু সন্তানদের ফিডার দিয়ে দুধ, পানি এবং অন্য তরল জাতীয় খাবার দিয়ে থাকেন। এর ফলে অনেক শিশুই কয়েকদিন পরপর অসুস্থ হয়ে পড়ে। আবার অনেকে একটি ফিডার বারবার ব্যবহার করেন।
ঢাকা শিশু হাসপাতালের ডা. সাইদুর রহমান বলেন, মূলত মায়ের দুধ যথেষ্ট পাচ্ছে না, এ ধরনের ভুল ধারণা থেকে প্রথম শিশুকে ফিডারে খাওয়ানো শুরু হয়। শুধু এ কারণেই শিশুরা কানপাকা, অ্যাজমা, ডায়াবেটিস, একজিমা, নিউমোনিয়া, অতিরিক্ত ওজন, এক বছর বয়সে হঠাৎ মৃত্যু, শিশু বয়সের ক্যানসারসহ নানা রকম স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ে।
তিনি বলেন, ফর্মুলা খাবার শিশুর ছোট পাকস্থলীতে বেশিক্ষণ থাকে বলে সে আর তখন বুকের দুধ পান করতে চায় না। তা ছাড়া ফিডারের নিপলের তুলনায় মায়ের নিপল খানিকটা শক্ত বলে তা পরিশ্রম করে পান করতে হয়। এতে শিশু বিভ্রান্তিতে পড়ে। সব মিলিয়ে মায়ের দুধের প্রবাহ স্তিমিত হয়ে আসে। বোতলে বা ফিডারে খাওয়ানোর কারণে শিশুর নানা বিপদ ঘটতে পারে।
তিনি বলেন, ফিডার বা বোতলে খাওয়ানোর সময় নিপলের ছিদ্রপথে শিশুর পেটে বাতাস ঢোকে, তাতে শিশুর পেটব্যথা উপসর্গ তৈরি হয়। শিশুর অন্ত্রে নানা রকম জীবাণুর প্রবেশ ঘটে, ফলে সে দুধের অ্যালার্জি-জনিত অসুখ ছাড়াও উদরাময় রোগে ভোগে। সঙ্গে দেখা দেয় কোষ্ঠবদ্ধতা।
এছাড়া ফিডারে খাওয়ানো শুরু করলে শিশু আর মাতৃদুগ্ধ পান করতে চায় না। এতে সে মায়ের দুধের সব উপকার থেকে বঞ্চিত হয়। মায়ের দুধ প্রথম ছয় মাস পান করেনি, এ ধরনের শিশুর মৃত্যু হার অন্যদের তুলনায় বেশি।
অধ্যাপক প্রণব কুমার চৌধুরী বলেন, ফিডার দিয়ে দুধ পান করালে অনেক ধরনের সমস্যা তৈরী হয়। ক্ষেত্র বিশেষে তা মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে। ফিডারের নিপলের সাহায্যে শিশুর ছোট মুখগহ্বরে ফর্মুলা দুধের ধারা কখনো সরু, কখনো জোরে নেমে আসে। শিশু যদি তাল মিলিয়ে তা গিলতে না পারে, তবে হঠাৎ গলায় আটকে যায়। এতে দুধ শ্বাসনালি বা ফুসফুসে ঢুকে মারাত্মক সমস্যা তৈরি করে।
এছাড়া ঘুমন্ত অবস্থায় শিশুর মুখে যদি বোতল ধরিয়ে দেওয়া হয়, তবে দুধের ধারা মুখের ভেতর জমা হয়ে শ্বাসরোধ করতে পারে। দাঁতের গর্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। শিশু বয়সে কানপাকা অসুখের অন্যতম প্রধান কারণ ফিডারে খাওয়ানো। ঘুমন্ত শিশুর মুখের ভেতর জমে থাকা ফর্মুলা দুধ সংযোগনালী বেয়ে কানে প্রবেশ করে ও সংক্রমণ ঘটায়।
বাসস ইউনিসেফ ফিচার/সুঘো/আহো/১০৩০/-স্বব