বেকার ইমরুল কায়েস এখন মাছ চাষ করে স্বাবলম্বী

303

॥ ইমাম উদ্দিন মুক্তা ॥
ময়মনসিংহ,২০ জুলাই, ২০১৮ (বাসস) : ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ প্রকল্পের মাধ্যমে ইমরুল কায়েস বাদশা বর্তমানে সফল মৎস্য চাষী। প্রবল ইচ্ছাশক্তি, শ্রম, মেধা, দৃঢ়তা, সঠিক পরিকল্পনা, সঠিক বিনিয়োগ ও সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে গেলে যে কোন মানুষ যে নিজেকে আর্থিক ও সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠা লাভ করতে পারে তা প্রমাণ করেছেন এক সময় বেকারত্বে জর্জরিত ইমরুল কায়েস বাদশা । অভাব অনটনের সংসারে ময়মনসিংহ আলমগীর মনসুর মেমোরিয়াল কলেজ থেকে এইচ.এস.সি পাশ করার পর অর্থের অভাবে তার উচ্চ শিক্ষা সম্ভব হয়নি।
কায়েস বাসসকে জানান, ‘আমার ইচ্ছা ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করে ভাল চাকরি করবো কিন্তু আর্থিক দৈন্যতার কারণে তা হয়ে উঠেনি। চাকরির জন্য আমি বিভিন্ন জায়গায় ছুটাছুটি করেছি কিন্তু কোথাও সুযোগ পাইনি। শেষ পর্যন্ত পার্শ্ববর্তী এক মৎস্য চাষীর প্রেরণায় চাকরির আশা ছেড়ে মাছ চাষের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহের উদ্যোগ নেই। মাছ চাষে যে অর্থ বিনিয়োগ করতে হয় তা আমার ছিল না। অবশেষে একদিন একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের মাটিয়ামতলা গ্রাম উন্নয়ন সমিতির কয়েকজন সদস্য ও মাঠ সুপারভাইজার নয়ন চন্দ্র ভৌমিকের সাথে দেখা করি। আমি তার কাছ থেকে একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের মাধ্যমে সদস্যদের দিন বদলের পালার কথা শুনে ২০১১ সালে ময়মনসিংহ সদর উপজেলার কুষ্টিয়া ইউনিয়নের মাটিয়ামতলা গ্রাম উন্নয়ন সমিতির সদস্য হই। বাদশা বলেন, ‘এখান থেকে আমার দিন বদলের যাত্রা শুরু। এর আগে ছিলাম একেবারেই বেকার। তেমন কোন আয় রোজগার ছিল না। তারপরও সামান্য কিছু টাকা যোগাড় করে সাহসের সাথে আমি বাড়ির পাশে নিজস্ব পুকুরে মাছ চাষ করতে শুরু করি। এ থেকে সামান্য কিছু আয় হয়।
কিছুদিন চলার পর সমিতি থেকে ১০ হাজার টাকা ঋণ নেই। তা পুকুরে মৎস্য চাষে বিনিয়োগ করি।’ এতে তার ৩০ হাজার টাকা লাভ হয়। আগ্রহ আরও বেড়ে যায়। লাভের টাকায় তিনি সমিতির ঋণ পরিশোধ করেন। দ্বিতীয় মেয়াদে তিনি ১৫ হাজার টাকা ঋণ নেন এবং পূর্বের ঋণ পরিশোধের পর লাভের যে অংশ হাতে ছিল পুনরায় তা মৎস্য চাষে বিনিয়োগ করেন। এভাবেই তিনি মৎস্য চাষে এগিয়ে যান। পরের বারও তার ভালই লাভ হয় এবং সহজেই তিনি ঋণের টাকা পরিশোধ করেন। তৃতীয় মেয়াদে তিনি ২৫ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে লাভের অংশসহ তার মৎস্য খামারে বিনিয়োগ করেন এতে লাভ হয় লাখ টাকার উপরে।
বর্তমানে ইমরুল কায়েস বাদশা ৪ টি ছোট পুকুরে দেশী শিং, মাগুরসহ বিভিন্ন জাতের মাছ চাষ করছেন। মৎস্য চাষ সম্প্রসারণের ফলে পুঁজির পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা ঋণ হিসেবে তিনি ৫০ হাজার টাকা ঋণ নেন। তিনি বিগত ১৪ ই ফেব্রুয়ারী ২০১৮ তারিখে ময়মনসিংহ তারেক স্মৃতি অডিটোরিয়ামে একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের উপকারভোগীদের সম্মেলনে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী, ইঞ্জিনিয়ার মো. মোশাররফ হোসেনের হাত থেকে ৫০ হাজার টাকা ঋণের চেক গ্রহণ করেন। মন্ত্রীর হাত থেকে ঋণের চেক গ্রহণ করতে পেরে তিনি খুবই খুশি। এ ঋণের অর্থ তিনি আরো দুটি পুকুর নিয়ে সম্প্রসারিত মৎস্য প্রকল্পে বিনিয়োগ করেন। তিনি আশা করছেন সব খরচ মিটিয়ে সম্প্রসারিত মৎস্য প্রকল্প থেকে তার ২ লক্ষ টাকা লাভ হবে।
ইমরুল কায়েস বাদশার ১ ছেলে ১ মেয়ে। তার মেয়ে প্রথম শ্রেনীতে পড়ে ও ছেলের বয়স ৩ বছর। তিনি বলেন, ভবিষ্যতে মৎস্য চাষ আরও সম্প্রসারিত করার পরিকল্পনা রয়েছে। এ জন্য আরও বড় আকারের সরকারী ঋণ সুবিধা পেলে মৎস্য চাষ আরও সম্প্রসারণ করা সম্ভব হবে বলে তিনি জানান।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পটি তার ভাগ্যে পরিবর্তন এনে দিয়েছে। বর্তমানে সমিতিতে তার ব্যক্তিগত সঞ্চয় দাড়িয়েছে ৮ হাজার টাকা। সমিতির সদস্যদের মোট সঞ্চয় ৪ লাখ ৬৫ হাজার ৬৩০ টাকা। সরকারী কল্যাণ অনুদান ২ লাখ ৮৮ হাজার টাকা এবং আবর্তক তহবিল ৩ লাখ টাকা।
ময়মনসিংহ সদর উপজেলার একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের সমন্বয়কারী রাজিব কুমার সরকার বাসসকে জানান, সমিতির সদস্যদের ঋণ প্রদান ও ঋণের অর্থ যথাযথ বিনিয়োগ করে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার ক্ষেত্রে সমিতিগুলো নিয়মিত পরিদর্শন এবং সদস্যদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে।
একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের ময়মনসিংহের জেলা সমন্বয়কারী ও বিআরডিবি, ময়মনসিংহ জেলার উপপরিচালক, মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম বাসসকে জানান, ময়মনসিংহে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা ঋণ প্রকল্পের মাধ্যমে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা সৃষ্টির লক্ষ্যে সর্বপ্রথম ময়মনসিংহ সদর উপজেলায় ২৫ জন ক্ষুদ্র উদ্যোক্তার মধ্যে ১২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী, খন্দকার মোশাররফ হোসেন গত ১৪ ই ফেব্রুয়ারী, ২০১৮ তারিখে ময়মনসিংহ তারেক স্মৃতি অডিটোরিয়ামে একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের উপকারভোগীদের সম্মেলনে এ ঋণের চেক বিতরণ করেন। প্রকল্পের অগ্রগতি বিবেচনা করে ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধির বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজরে রয়েছে। সমিতিগুলো যথাযথ তদারকি ও সদস্যদের দক্ষতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে প্রশিক্ষকণসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
তিনি জানান, ময়মনসিংহে একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের মাধ্যমে প্রান্তিক পর্যায়ের সুবিধা বঞ্চিত মানুষদের ভাগ্যোন্নয়নে সরকার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে। একই সাথে এর মাধ্যমে প্রকল্পভুক্ত দরিদ্র মানুষ স্বাবল¤ী^ হয়ে উঠছে।