বাসস দেশ-২৪ : কোভিড সঙ্কটে পারিবারিক উপার্জন কমেছে ৭৪ শতাংশ, ১৪ লাখের বেশি প্রবাসী শ্রমিক বেকার

128

বাসস দেশ-২৪
ব্র্যাক-সমন্বয়
কোভিড সঙ্কটে পারিবারিক উপার্জন কমেছে ৭৪ শতাংশ, ১৪ লাখের বেশি প্রবাসী শ্রমিক বেকার
ঢাকা, ১ জুন, ২০২০ (বাসস) : কোভিড-১৯ মহামারি নিন্মআয়ের মানুষকে অস্বাভাবিকভাবে প্রভাবিত করেছে। দেশের প্রায় ১০ কোটি ২২ লাখ মানুষ অর্থনৈতিক ও স্বাস্থ্যগত দুর্বলতার ঝুঁকিতে রয়েছেন। প্রায় ৭৪ শতাংশ পরিবারের উপার্জন কমে গেছে। চৌদ্দ লাখেরও বেশি প্রবাসী শ্রমিক চাকরি হারিয়ে দেশে ফিরে এসেছেন।
ব্র্যাক, ডেটা সেন্স এবং উন্নয়ন সমন্বয় এর এক যৌথ সমীক্ষায় এই তথ্য উঠে এসেছে। ‘কোভিড-১৯ এবং জাতীয় বাজেট ২০২০-২০২১: নিম্নআয়ের মানুষের জন্য কৌশল পুনর্বিবেচনা’ শীর্ষক এই সমীক্ষার ফলাফল আজ সোমবার এক ডিজিটাল সংবাদ সম্মেলনে প্রকাশ করা হয়।
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টারের (পিপিআরসি) চেয়ারম্যান ও ব্র্যাকের চেয়ারপারসন ড. হোসেন জিল্লুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান। ব্র্যাকের উর্ধ্বতন পরিচালক কেএএম মোর্শেদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে গবেষণা প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন আইসোশ্যাল এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. অনন্য রায়হান। প্যানেল আলোচক ছিলেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের (বিআইডিএস) সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. নাজনীন আহমেদ এবং ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্নেন্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (বিআইজিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইমরান মতিন।
সমীক্ষাটিতে ব্র্যাক,বিআইজিডি,পিপিআরসি,আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)সহ বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থা পরিচালিত গবেষণা-সমীক্ষার পর্যালোচনার পাশাপাশি একটি জরিপও পরিচালনা করা হয়েছে এবং প্রাপ্ত ফলাফল সমন্বয় করে মূল প্রতিবেদনটি প্রণয়ন করা হয়েছে। জরিপটি দেশের ২৫ জেলায় দ্বৈবচয়নে নির্বাচিত ৯৬২ জন উত্তরদাতার অংশগ্রহণে মে মাসের ১৫-১৮ তারিখের মধ্যে সম্পাদন করা হয়।
গবেষণা ফলাফলে দেখা যায় দেশে অর্থনৈতিক ও স্বাস্থ্যগত ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠীর মধ্যে ৫ কোটি ৩৬ লাখ মানুষ চরম দরিদ্র। এদের মধ্যে নতুন করে চরম দরিদ্র হয়ে পড়া পরিবারগুলোও রয়েছে। উচ্চ অর্থনৈতিক ঝুঁকিতে থাকা চরম দরিদ্রের সংখ্যা ৪ কোটি ৭৩ লাখ এবং উচ্চ স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছেন ৩ কোটি ৬৩ লাখ মানুষ।
জরিপে দেখা যায় কোভিড-১৯ এর কারণে নিম্নআয়ের মানুষের উপর বহুবিধ নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। যেসব পরিবারের তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে, এর মধ্যে ৩৪ দশমিক ৮ শতাংশ পরিবারের কমপক্ষে একজন সদস্য চাকরি হারিয়েছেন। মার্চ থেকে মে মাসের মধ্যে গড় পারিবারিক উপার্জন ৭৪ শতাংশ কমে গেছে। দিনমজুরসহ অনানুষ্ঠানিক খাতে কর্মরতরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। উৎপাদনখাতেও বড় ধাক্কা লেগেছে। উদাহরণ হিসেবে, তৈরি পোশাক খাতে রফতানি এপ্রিল-২০১৯ এর তুলনায় ২০২০ সালের এপ্রিলে ৮৪ শতাংশ কমেছে। এ বছর মার্চের মাঝামাঝি থেকে ৭ই এপ্রিলের মধ্যে ১,১১৬টি কারখানা বন্ধ ঘোষিত হয়েছে এবং চাকরি হারিয়েছেন প্রায় ২২ লাখ শ্রমিক।
সমীক্ষায় আরো জানা যায়-
নিম্নআয়ের মানুষের এই রোগের সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি বেশি। এসব পরিবারের উপার্জনশীল সদস্যের মৃত্যু হলে নারী ও শিশুদের মধ্যে অনাহার এবং অপুষ্টির শিকার হওয়ার উচ্চ আশঙ্কা সৃষ্টি হবে।
দেশব্যাপী সমন্বয়ের অভাবের কারণে দরিদ্র ও অতি দরিদ্রদের কাছে সরকারের দেওয়া খাদ্য এবং নগদ সহায়তা সঠিকভাবে পৌঁছাচ্ছে না বলে বিভিন্ন প্রতিবেদন ও গবেষণা-সমীক্ষা থেকে প্রতীয়মান হয়।
কোভিড-১৯ নতুন অর্থনৈতিক বিভাজন,সামাজিক বিভাজন এবং ডিজিটাল বিভাজন সৃষ্টি করেছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, কেবল ৩৪ শতাংশ পরিবারের স্মার্টফোন রয়েছে এবং ৫৪ শতাংশ পরিবারের টিভি দেখার সুযোগ রয়েছে। অতএব নিচের অংশে বসবাসকারী শিশুরা ডিজিটাল মাধ্যমে পরিচালিত শিক্ষা কার্যক্রম থেকে বাদ পড়তে যাচ্ছে।
চৌদ্দ লাখেরও বেশি প্রবাসী শ্রমিক চাকরি হারানোর কারণে ফিরে এসেছেন বা দেশে ফিরে আসছেন।
কোভিড-১৯ প্রতিবন্ধী ব্যক্তি এবং তাঁদের পরিবারগুলোকে আরও বেশি অসুবিধার মুখে ঠেলে দিয়েছে।
ড. আতিউর রহমান বলেন,‘মানুষকে আগে বাঁচাতে হবে,তারপর স্বপ্নপূরণ আর সুখে থাকার চিন্তা। তাই এবারের বাজেট হোক বেঁচে থাকার বা টিকে থাকার বাজেট। কোভিড-১৯ এর এই মহামারিতে সবচেয়ে হুমকির মুখে স্বাস্থ্যব্যবস্থা। স্বাস্থ্যখাত ঠিক না করলে বিদেশি বিনিয়োগ আসবে না, আমাদের অর্থনীতিও আগাবে না।‘
গবেষণার আলোকে আসন্ন বাজেটে অন্তর্ভূক্তির জন্য কিছু প্রস্তাব পেশ করা হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে-
নিম্নআয়ের যেসব পরিবারের উপার্জনকারী কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত হয়ে উপার্জনহীন হয়েছেন বা মারা গেছেন সেইসব ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারে অন্তত তিন বছরের জন্য নগদ সহায়তা প্রবর্তন করা। ২০২০-২০২১ অর্থবছর থেকে চরম দরিদ্র ও দরিদ্রদের জন্য এবং ২০২১-২০২২ অর্থবছর থেকে অন্যান্য বেকার গোষ্ঠীগুলির জন্য সার্বজনীন বেকারত্ব সুবিধা স্কিম চালু করা।
সরকারি পরিষেবা ও সুবিধাগুলো নাগরিকদের কাছে সহজলভ্য করতে ২০২০-২০২১ অর্থবছরে নাগরিকদের বয়স নির্বিশেষে সার্বজনীন পরিচয় ব্যবস্থা তৈরি এবং প্রবর্তন করা। সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বের মাধ্যমে সামাজিক সুরক্ষা স্কিম, ঋণ, সঞ্চয় এবং বিমা ইত্যাদি সুবিধা পাওয়ার জন্য সকল নাগরিককে সর্বজনীন ডিজিটাল পরিষেবা দিতে অন্তর্ভূক্ত করা। জীবিকা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা প্রাপ্তির সুযোগ নিশ্চিত করার জন্য ১৬ বছরের বেশি বয়সী সকলবাংলাদেশি নাগরিকের জন্য পৃথক ডিজিটাল যন্ত্রাদি এবং নির্ভরযোগ্য ইন্টারনেট পরিষেবা চালু করা।
বাসস/এএসজি/আরআই/১৯০১/স্বব