বাসস দেশ-২১ : দুঃসময়ে মফস্বলের রোগীদের আস্থার প্রতীক হয়ে উঠেছেন উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসারগণ

247

বাসস দেশ-২১
কমিউনিটি-মেডিকেল-অফিসার
দুঃসময়ে মফস্বলের রোগীদের আস্থার প্রতীক হয়ে উঠেছেন উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসারগণ
॥ একেএম খায়রুল বাশার বুলবুল ॥
বরগুনা, ৩১ মে, ২০২০ (বাসস) : করোনা ভাইরাস মহামারীর এই দুঃসময়ে উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসারগণ মফস্বল বিশেষ করে গ্রাম পর্যায়ে সাধারণ মানুষের আস্থার প্রতীক হয়ে উঠেছেন।
এমবিবিএস চিকিৎসকরা যখন প্রান্তিক পর্যায়ে যেতে অনেকটাই অনাগ্রহী, তখন বিশেষ করে দরিদ্র তৃণমূল জনগোষ্ঠীর চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করে যাচ্ছেন মধ্যম সারির এই চিকিৎসকরা। ব্যত্যয় ঘটেনি এই মহামারি করোনার দুর্যোগেও। ইউনিয়ন পর্যায় থেকে জেলা সদর হাসপাতালেও এই চিকিৎসকরা জরুরী চিকিৎসা সেবা থেকে শুরু করে সাধারণ প্রায় সব রোগীর চিকিৎসা এবং করোনা আক্রান্তদেরও সেবা প্রদান করে যাচ্ছেন দিনের পর দিন নিরলসভাবে।
বরগুনার গ্রামাঞ্চলের সাধারণ রোগীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এমনিতেই সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসক সংকট রয়েছে। প্রাইভেট প্রাকটিস করা নামী-দামী চিকিৎসকদের অধিকাংশই করোনার কারণে ব্যক্তিগত চেম্বার বন্ধ রেখেছেন। এ অবস্থায় এই উপ-সহকারী মেডিকেল অফিসারেরই তাদের ভরসা।
বরগুনার সিভিল সার্জন ডা. হুমায়ুন শাহীন খান জানিয়েছেন, গ্রাম পর্যায় থেকে চারজন উপ-সহকারী মেডিকেল অফিসারকে প্রেষণে জেলা সদর হাসপাতালে এনে চিকিৎসা সেবা দেয়া হচ্ছে। সামান্যতম নিরাপত্তা সরঞ্জাম নিয়েই মারাত্মক করোনা ঝুঁকি নিয়ে তারা নিরলস সেবা দিয়ে যাচ্ছে। তৃণমূল পর্যায়েও এদের চিকিৎসা সেবা নিয়ে গ্রামের মানুষ ভালো আছেন।
স্বাধীনতার পর যুদ্ধবিধ্বস্ত গ্রাম বাংলার জনগণের দোড়গোড়ায় দ্রুত চিকিৎসা সেবা পৌঁছে দেয়ার জন্য জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার মাধ্যমে মধ্যম সারির ডিপ্লোমা চিকিৎসক তৈরি করার উদ্যোগ নেন। ১৯৭৩ সাল থেকে গ্রাম ও শহরের মানুষদের চিকিৎসা সেবা দিয়ে আসছেন এই মেডিকেল ডিপ্লোমাধারী চিকিৎসকগণ। ১৯৯৬ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে ডিপ্লোমা চিকিৎসকদের পদ পরিবর্তন করে নতুন নামকরণ হয় উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার। এ দুর্যোগময় পরিস্থিতিতেও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে বিশেষ করে করোনা রোগীদের পরামর্শ ও চিকিৎসা সেবা দিয়ে আসছেন উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসারগণ।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় অনুমোদিত বিভিন্ন মেডিকেল এসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং স্কুল তথা ম্যাটস থেকে চারবছর মেয়াদি মেডিকেল ডিপ্লোমা কোর্স শেষে বাংলাদেশ রাষ্ট্রীয় চিকিৎসা অনুষদ থেকে ‘ডিএমএফ’ ডিপ্লোমা অর্জন করেন উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসাররা (সেকমো-এসএসিএমও)। পরে বাংলাদেশ মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমএন্ডডিসি) থেকে ‘ডিপ্লোমা চিকিৎসক পেশাদার’ হিসেবে রেজিস্ট্রেশন সনদ লাভ করেন। পরবর্তীতে উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার হিসেবে নিয়োগ পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে কর্মক্ষেত্রে যোগদান করেন।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে প্রতিটি ইউনিয়ন উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে একটি, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে একটি, (একটি স্বাস্থ্য বিভাগের একটি পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের) উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২ টি করে উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসারের পদ রয়েছে।
নিয়োগপ্রাপ্ত এসকল উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসারগণ ২৪ ঘন্টা গ্রামের ক্লিনিকগুলো থেকে তৃণমূল জনগোষ্ঠীর জরুরী স্বাস্থ্যসেবা, মাতৃস্বাস্থ্য সেবা, প্রসূতি সেবা নিশ্চিত করেন। কোন-কোন উপজেলা এবং জেলায় র্গ্যাজুয়েট চিকিৎসক সংকট থাকায় এ সকল উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসাররা জরুরী বিভাগসহ আউটডোর, ইনডোরে চিকিৎসা সেবা প্রদান করে যাচ্ছেন।
বরগুনা স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, কোভিড-১৯ বিষয়ে সচেতনতামূলক পরামর্শ ও করোনা মহামারী দুর্যোগেও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অর্পিত দায়িত্ব যথাযথ পালন করে যাচ্ছেন বরগুনা জেলায় কর্মরত স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের ৫৪ জন উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার। এই চিকিৎসকগণ সেবাদানে দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। বিভিন্ন ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র, ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও জেনারেল হাসপাতালে তাদের চিকিৎসায় রোগীরা সুস্থ্য হচ্ছেন। এ কারণে, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং জেনারেল হাসপালে রোগীদের ভিড়ও অনেকটা কম হয়।
স্বাস্থ্য বিভাগের বরিশাল বিভাগীয় প্রাক্তন উপ-পরিচালক ডা. মোশতাক আল মেহেদী জানান, দেশে এখন সরকারি ৯টি এবং বেসরকারী ২০৯ টির মতো মেডিকেল এ্যাসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং স্কুল-ম্যাটস রয়েছে। প্রতি বছর এখান থেকে প্রায় ৩০ হাজার শিক্ষার্থী পাশ করে বের হয়। দেশে প্রায় ১৩ হাজার ৫০০ টি কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে। এই কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে ডিপ্লোমাধারী চিকিৎসকদের নিয়োগ দেয়া হলে তৃণমূল জনগোষ্ঠির চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত হবে।
বরগুনা ১ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় সরকার কেভিড-১৯ মোকাবেলায় সতর্কতার সাথে কাজ করছে। সারাদেশে উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসাররাও ফ্রন্টলাইনার হিসেবে করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে চলেছেন। বর্তমান সরকার স্বাস্থ্যখাত উন্নয়নে সচেষ্ট রয়েছে। সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা সুরক্ষায় চিকিৎসক তৈরী, নিয়োগ, পদায়ন, ওষুধ শিল্প, ব্যবস্থাপনা, সকল ক্ষেত্রে সরকার কাজ করছে।
বাসস/বি.প্র./সংবাদদাতা/কেজিএ/১৮৪০/আরজি