বাসস প্রধানমন্ত্রী-২ (দ্বিতীয় ও শেষ কিস্তি) : করোনায় ক্ষতিগ্রস্তদের ব্যাংক ঋণের ২ হাজার কোটি টাকা সুদ মওকুফের ঘোষণা প্রধানমন্ত্রীর

120

বাসস প্রধানমন্ত্রী-২ (দ্বিতীয় ও শেষ কিস্তি)
শেখ হাসিনা-এসএসসি-ফলাফল- ভাষণ
করোনায় ক্ষতিগ্রস্তদের ব্যাংক ঋণের ২ হাজার কোটি টাকা সুদ মওকুফের ঘোষণা প্রধানমন্ত্রীর

প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনা ভাইরাসের কারণে দেশের অর্থনীতিতে একটি বিরাট ধাক্কা এলেও তাঁর সরকার শিক্ষা খাতে যেসব সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছিল সেগুলো বন্ধ হবে না।
তিনি বলেন, ‘প্রাইমারী থেকে উচ্চ শিক্ষা পর্যন্ত সরকারের দেওয়া বৃত্তি এবং উপবৃত্তি সুবিধা অব্যাহত থাকবে।’
‘অর্থনৈতিকভাবে আমরা যতই ক্ষতিগ্রস্থ হই না কেন আমাদের ছেলে-মেয়েদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে আমরা এই সহযোগিতাটা অব্যাহত রাখবো, ’যোগ করেন তিনি।
পাশাপাশি, বছরের শুরুতে প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক শ্রেণী পর্যন্ত বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ এবং নানা শিক্ষা উপকরণ বিতরণ কর্মসূচিও এ সময় অব্যাহত থাকবে, বলেন প্রধানমন্ত্রী।
তাঁর সরকারের ডিজিটাল পদ্ধতিতে অনলাইনে ফল ঘোাষণার প্রসঙ্গ টেনে শেখ হাসিনা বলেন, পরীক্ষার ফলাফলে কেউ হয়তো পাশ করেছেন আবার কেউ হয়তো পাশ করতে পারেননি। যারা পাশ করতে পারেননি তাদের মন খারাপ না করে আবার লেখাপড়া করে যেসব বিষয়ে অনুত্তীর্ণ হয়েছে সেসব বিষয়ে উত্তীর্ণ হওয়ার সুযোগ গ্রহণের আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি কৃতকার্য হওয়া শিক্ষার্থী এবং তাঁদের অভিভাবক, শিক্ষক এবং সংশ্লিষ্ট শিক্ষাবোর্ডের কর্মকর্তাদের অভিনন্দন জানান।
একইসঙ্গে কোভিড-১৯ পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে নিজেদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টিও সকলকে তিনি স্মরণ করিয়ে দেন।
তিনি বলেন, ‘সকলকে নিজেদের স্বাস্থ্য সুরক্ষিত রাখতে হবে এবং সেক্ষেত্রে সকলকে স্বাস্থ্যবিধিগুলো মেনে চলতে হবে।’
তিনি লকডাউনের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, ‘সবকিছু দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল। কিন্তু, একটা দেশ এভাবে চলতে পারে না। তাই, আমি দেখতে পাচ্ছি অন্য দেশগুলোও তাঁদের অর্থনৈতিক ক্ষেত্র এবং যাতায়াতসহ নানা বিষয় অল্প অল্প করে উন্মুক্ত করছে। কাজেই আমরাও সেই পদ্ধতিতে যাচ্ছি।’
তাঁর সরকারের লকডাউনসহ বিভিন্ন সময়োচিত পদক্ষেপের কারণেই করোনা ভাইরাস সংক্রমণ এবং এতে মুত্যুর হার কিছুটা হলেও বাংলাদেশ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পেরেছে উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, ‘সকলে যদি স্বাস্থ্যবিধিটা মেনে চলেন তাহলে নিজেকে, পরিবারকে, পাড়া প্রতিবেশীকেও আপনারা সুরক্ষিত রাখতে পারবেন। যাতে এই ভাইরাসটি আর বেশি করে সংক্রমিত হতে না পারে।’
দেশের অর্থনীতিকে সচল রাখতে বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশের মানুষের কষ্ট লাঘবে তাঁর সরকারের নগদ অর্থ সহায়তা সহ বিভিন্ন প্রণোদনা প্যাকেজ প্রদানের বিষয়টিও প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে উল্লেখ করেন।
সরকার প্রদান বলেন,‘আমরা এক লাক কোটি টাকার উপরে বিশেষ প্রণোদনা দিয়েছি। যেটা আমাদের জিডিপি’র ৩ দশমিক ৭ ভাগ। এত প্রণোদনা পৃথিবীর আর অন্য কোন দেশ দিয়েছে কিনা জানিনা।’
ঋণ গ্রহিতাদের জন্য ঋণের সুদ স্থগিত এবং শর্ত শিথিল করাসহ কৃষকদের জন্য ৫ হাজার কোটি টাকার পৃথক ঋণের ব্যবস্থা। ক্ষুদ্র, মাঝারি এবং বৃহৎ শিল্প এবং ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য আলাদা প্রণোদনা দেওয়ার তথ্যেরও পুনরুল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
করোনাভাইরাস পরিস্থিতি সৃষ্টির পূর্বে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনকে কেন্দ্রে করে এ বছরের মধ্যে দেশের দারিদ্রের হার বেশ খানিকটা কমিয়ে আনার তাঁর সরকারর প্রদত্ত ঘোষণার উল্লেখ করে তিনি বলেন,‘ দারিদ্রের হার যে ২০ দশমিক ৫ শতাংশে নামিয়ে এনেছিলাম তাকে আরো কমিয়ে আনবো বলে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনকে কেন্দ্র করে আমরা ঘোষণা করেছিলাম এবং স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে যে গ্রাজুয়েশন লাভ করেছি সেটাও ধরে রাখবো। অর্জিত প্রবৃদ্ধি এ বছরের ৮ দশমিক ১৫ থেকে আরো উপরে নিয়ে যাব- এমন অনেক আকাঙখা ও ছিল।’
তিনি বলেন, ‘কিন্তু কোভিড-১৯ ভাইরাসটি খালিচোখে দেখা না গেলেও এর এমন একটা শক্তি যে, সারা বিশ্বকে নাড়িয়ে দিয়েছে, অর্থনীতির চাকাসহ সবকিছু স্থবির করে দিয়েছে এবং সেইরকম একটা পরিস্থিতিতে আমাদের চলতে হচ্ছে।’
তিনি চলতি বোরো মওসুমে তাঁর আহ্বানে সাড়া দিয়ে কৃষকদের ধানকাটায় সহযোগিতা করায় ছাত্রলীগ, কৃষক লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ আওয়ামী লীগ এবং এর সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের এগিয়ে আসার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে সকলকে আবারো ধন্যবাদ জানান।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘এরফলে আমাদের খাদ্যের অভাব হবে না। খাদ্য নিরাপত্তা আমরা নিশ্চিত করতে পারবো। যে কারণে আমরা সকলকে প্রচুর পরিমানে নানারকম সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছি।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের পার্টির লোক থেকে আইন শৃংখলা রক্ষাকারি বাহিনী, সশ¯্রবাহিনী, স্বাস্থ্যকর্মী এবং স্থানীয় প্রশাসন প্রত্যেকেই নিজ নিজ দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করছেন। যেটাকে একটি অভ’তপূর্ব ঘটনা বলেই আমি মনে করি।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘সমগ্র জাতিই আজ ঐক্যবদ্ধ হয়ে যাঁর যতটুকু সামর্থ আছে তা নিয়ে বিপন্ন মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। এজন্য আমি সকলকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই।’
তিনি ছাত্র-ছাত্রীদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘তোমরা লেখাপড়া শিখবে এবং মানুষের মত মানুষ হবে।’
শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘শিক্ষকদেরকে আমি বলবো তাঁদেরকে সেই শিক্ষাই দেবেন। সেই শিক্ষাটা হচ্ছে শুধু নিজে ভাল থাকা নয়, দেশের কল্যাণে এবং মানুষের কল্যাণে কাজ করা। যা জাতির পিতা আমাদেরকে বার বার শিখিয়েছেন। সেই মানুষের কল্যাণেই যেন আজকের শিক্ষার্থীরা নিবেদিত প্রাণ হয়।’
‘দেশকে ভালবাসা, মানুষকে ভালবাসা এবং মানুষের প্রতি কর্তব্য করার শিক্ষাটাই যেন ছেলে-মেয়েরা গ্রহণ করে’ উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, ‘আমার যেটা অধিকার অপরের জন্য সেটা কর্তব্য। আবার আমার যেটা কর্তব্য সেটা অপরের জন্য অধিকার-এভাবেই যেন সবাই চিন্তা করে।’
সরকার প্রধান বলেন, ছেলে-মেয়েরা লেখাপড়া শিখে মানুষের মত মানুষ হয়ে বাংলাদেশকে বিশ্ব দরবারে একটি মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করবে, সেটাই আমি চাই।’
তিনি বলেন, ‘আমি সব সময় এটাই মনে করি আমাদের ছাত্র-ছাত্রীরা অনেক মেধাবী এবং একটু সুযোগ পেলেই তাঁরা সেই মেধার বিকাশ ঘটাতে পারে।’
তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন করোনা ভাইরাসের কবল থেকে আমাদের দেশ এবং সমগ্র বিশ্ব একদিন মুক্তি পাবে। তবে, এজন্য তিনি আত্মবিশ্বাসী হওয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যেকোন সংকটে আত্মবিশ্বাস রাখতে হবে। নিজের আত্মবিশ্বাসটা হচ্ছে সবথেকে বড় যে, যে কোন পরিস্থিতি আমরা মোকাবেলা করতে পারবো। কারণ, আমরা মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ী জাতি ।’
করোনার মাঝেই সুপার সাইক্লোন আমপান মোকাবেলার প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যেকোন পরিস্থিতি বা ঝড়-ঝাপটা আসুক না কেন আত্মবিশ্বাসের সাথে আমরা তা মোকাবেলা করবো।’
তিনি আরো বলেন, ‘এখনকার মত সকলে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করেই আমরা যেকোন আপদকালিন অবস্থা থেকে নিজের উত্তোরণ ঘটাবো এবং বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলবো।’
বাসস/এএসজি-এফএন/১৭২৮/আরজি