বাসস ইউনিসেফ ফিচার-১ : শিশুর সুরক্ষা’য় কাজ করছে সরকারের এপিসি প্রকল্প

302

বাসস ইউনিসেফ ফিচার-১
শিশুর-সুরক্ষা
শিশুর সুরক্ষা’য় কাজ করছে সরকারের এপিসি প্রকল্প
ঢাকা, ২৮ মে, ২০২০ (বাসস) : সাজ্জাদ হক (১০) একটি ইট ভাটায় কাজ করে। রিকশাচালক বাবা এবং সাজ্জাদের আয় দিয়ে তাদের ছয় জনের সংসার চলে। বেশিরভাগ সময় সাজ্জাদ পুষ্টিকর খাবার পায় না। যখন তার বাবার শরীর খারাপ থাকে এবং তার কাজ থাকে না, তখন তারা শুধু রুটি খেয়েই দিন পার করে। ইচ্ছে থাকলেও সাজ্জাদ পড়ালেখা করতে পারেনি। সাজ্জাদ বলে- “যদি আমার সুযোগ থাকতো আমি কাজ না করে পড়ালেখা করতাম।”
“সাজ্জাদের অধিকার রয়েছে পড়ালেখার, পুষ্টিকর খাবারের এবং অবকাশ যাপন ও বিনোদনের। এটা তার মানবাধিকার এবং এ অধিকার রাষ্ট্র কর্তৃক স্বীকৃত। শিশু শ্রম বন্ধ করা এবং ‘শিশু অধিকার’ সুরক্ষিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব”-এমনই বললেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী।
আসলে ‘শিশু অধিকার’- কি এবং এর গুরুত্ব কি? জাতিসংঘ কনভেনশন পৃথিবীব্যাপী শিশুদের অধিকার রক্ষায় একটি দলিল বা চুক্তি করেছে। এটি ‘শিশু অধিকার সনদ’ নামেও পরিচিত। এটি এ পর্যন্ত প্রকাশিত শিশুদের জন্য সবচেয়ে পূর্ণাঙ্গ বিবৃতি এবং ইতিহাসের সবচেয়ে অনুসমর্থিত আন্তর্জাতিক মানবাধিকার চুক্তি। বাংলাদেশ এতে স্বাক্ষর ও অনুমোদন করেছে। সনদের অধিকারগুলোকে চারটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
১. বেঁচে থাকার অধিকার- স্বাস্থ্যসেবা, পুষ্টিকর খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি এবং স্বাস্থ্যসন্মত পরিবেশ। ২. বিকাশের অধিকার-শিক্ষা, উপযুক্ত পরিবেশ, জীবনমান, অবকাশ যাপন, বিনোদন ও সাংস্কৃতিক কর্মকা-ে অংশগ্রহণের অধিকার। ৩. সুরক্ষার অধিকার- ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতিতে শিশুদের অধিকারসমুহ। যেমন, শরণার্থী, পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন এবং শোষণ, নির্যাতন ও অবহেলার শিকার হবার সম্ভাবনা রয়েছে এমন শিশু। ৪. অংশগ্রহণের অধিকার- স্বাধীনভাবে কথা বলা, অন্যদের সাথে অবাধে সম্পর্ক গড়ে তোলা এবং তথ্য ও ধারণা চাওয়া, পাওয়া ও প্রকাশের অধিকার।
বাংলাদেশে শিশু অধিকারের বিষয়গুলো কি রকম জানতে ‘ইউনিসেফ’- প্রকাশিত ‘বাংলাদেশের শিশু’ প্রতিবেদন থেকে জানা যায় অনেক কিছু। সেখানে উল্লেখ আছে, “বাংলাদেশে ১৬ কোটি মানুষের মধ্যে শতকরা ৪০ ভাগ শিশু অর্থাৎ ৬ কোটি শিশু। বাংলাদেশ দ্রুত পাঁচবছরের কম বয়সী শিশুমৃত্যুর হার কমাছে কিন্তু এখানে প্রতিবছর জন্মের পর মারা যায় ৬২ হাজার নবজাতক। এসব শিশুর মৃত্যু হয় জীবনের প্রথম মাসে এবং অর্ধেক শিশু মারা যায় পৃথিবীতে জন্মানোর প্রথম দিনেই। জন্ম থেকে আট বছর বয়সের মধ্যে শিশুর মস্তিস্কের বিকাশ অনেক জরুরি। কিন্তÍু এদেশের অনেক বাবা-মা শিশুর প্রারম্ভিক যতœ ও বিকাশের নিয়মগুলোর সাথে পরিচিত নয়। শিক্ষা, পুষ্টি, এবং শিশুর শারিরীক ও মানসিক নিরাপত্তার বিষয়েও ঘাটতি রয়েছে। শিশুর প্রতি সহিংসতার ক্ষেত্রে ‘দারিদ্র’ একটি বড় ভূমিকা পালন করে। প্রতিবন্ধীদের প্রতিও সহিংসতার ঘটনা এখানে স্বাভাবিক মাত্রায় বিরাজ করে।”
শিশুর সুরক্ষার বিষয়গুলো এখানে কেনো অবহেলিত, এগুলো কেনো কম গুরুত্ব পায় কিংবা এগুলো বাস্তবায়নে বাধা বা চ্যালেঞ্জগুলো কোথায় জানতে চাইলে ‘ইউনিসেফ’- এর চাইল্ড প্রটেকশন স্পেশালিস্ট শাবনাজ জাহিরিন বলেন, “কাজ করতে গিয়ে বুঝতে পারি, শিশুদের নিয়ে কাজ করার জন্য সরকারের লোকবল খুবই সামান্য। তাই সরকারের পলিসি ম্যাকিং-এ শিশুদের বিষয়গুলো তেমন গুরুত্ব পায় না। স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে শিশুদের জন্য কিছু বরাদ্দ থাকে। এছাড়া শিশু সুরক্ষার অন্যান্য যে বিষয়গুলো রয়েছে সেগুলো তেমন গুরুত্ব পায় না। যেমন সহিংসতা, শিশু পাচার, শিশু শ্রম, বাল্যবিবাহ ইত্যাদি বিষয়ে সরকার বা ডেভলপমেন্ট পার্টনারগুলো ততটা আগ্রহী নন বা এসব বিষয়ে কাজ কম হয়। এমনকি ১০-১৯ বছর বয়সী কিশোর-কিশোরিদের জন্য তেমন কোনো উন্নয়ন প্রকল্প নেই। যার মাধ্যমে তাদের বিকাশ ঘটবে কিংবা কোনো কর্মমুখী শিক্ষা, ভাতা বা ভোকেশনাল ট্রেনিং থাকলে তাদেরকে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা যেতো।”
সরকারের ‘এক্সিডেলিরেশন প্রটেকশন ফর চিলড্রেন (এপিসি)’ নামে একটি প্রকল্প ‘শিশুর সুরক্ষা’ বিষয়ে কাজ করছে। এর প্রকল্প পরিচালক উপ-সচিব এস এম লতিফ বলেন, “আমরা ইউনিসেফের সাথে যৌথভাবে সারা দেশে ২১০০ চাইল্ড ক্লাব করেছি। এছাড়াও সরকার তার নিজস্ব উদ্যোগে দেশব্যাপী প্রত্যেকটা ইউনিয়নে ৪,৭০০টি চাইল্ড ক্লাব করেছে। ক্লাবগুলোতে প্রত্যেক সপ্তাহে দুইদিন করে তাদের প্রতি সহিংসতা, বাল্যবিয়ে, জেন্ডার ইস্যু, নৈতিকতা ইত্যাদি বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য আলোচনা হয়। এসব ক্লাব লিডারদের আমরা প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকি। তারা শুধু আলোচনাই করে না, এসব বিষয়ে কোনো সমস্যা দেখলে তারা উদ্যোগ নিয়ে কাজও করে। তাদের সচেতনতা বৃদ্ধি ও ভূমিকা নিয়ে রেডিও টেলিভিশনে ‘ইচ্ছেডানা’ নাটক এবং ‘আমি মীনা বলছি’ কার্টুনও প্রকাশ করছি।”
তিনি আরো বলেন, “করনার এ সময় ক্লাবগুলো বন্ধ থাকলেও অনলাইনে আমরা বিভিন্নভাবে তাদের সাথে যুক্ত আছি। আগে দুই একটা মন্ত্রণালয় তাদের জন্য বাজেট করতো। এখন ১৪-১৫টা মন্ত্রণালয় তাদের বাজেটে শিশুদের জন্য সামান্য কিছু হলেও বরাদ্দ রাখে। পরে এগুলো আমরা বিশ্লেষণ করে দেখি তাদের জন্য কতটা কাজ হয়েছে এবং আরো কি করতে হবে। তবে এগুলোই যথেষ্ট নয়। আমরা আরো ভালো করতে চাই।”
“এই ভালোর শেষ নেই। তবে বাস্তবে শিশুদের প্রতি সহিংসতা, শিশু শ্রম, যৌন নিপীড়ন, বাল্য বিবাহ, পথশিশুদের হয়রানি ইত্যাদি বন্ধ করতে হবে। প্রতিবন্ধী শিশুদের সুরক্ষা এবং শিশুদের মানসিক বিকাশে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। আর এসব সমস্যা তুলে ধরতে মিডিয়াকেও এগিয়ে আসতে হবে।”- বলে আবারো জানান অধ্যাপক চৌধুরী।
বাসস ইউনিসেফ ফিচার/শানু/আহো/১০০৫/-কেজিএ